কক্সবাজারের টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাজারে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে মুখোশ পরা একদল সন্ত্রাসী।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নে ২৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাজারে এ ঘটনা ঘটে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং ওই ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম।
অপহৃত ব্যবসায়ী মো. ইউসুফ কালু (৪০) হ্নীলা ইউনিয়নের পূর্ব লেদা এলাকার বাসিন্দা। ওই বাজারে তার মুদির দোকান ছিল।
এ ঘটনার বিষয়ে ১৬ এপিবিএন সদস্যদের জানানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন,‘‘ব্যবসায়ীকে অপহরণের খবর শুনেছি। টেকনাফ থানায় জানানো হয়েছে’’
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘‘হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ব্যবসায়ীকে উদ্ধারের জন্য কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে টেকনাফ থানার দুটি দল উদ্ধারাভিযান চালাচ্ছে।’’
এছাড়া পুলিশ অপহৃত ব্যবসায়ীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলেও জানান ওসি। এর আগে, বুধবার টেকনাফের হোয়াইক্যং চাকমারকুল এলাকার ২১ নম্বর ক্যাম্প থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন তিন রোহিঙ্গা যুবক। তাদের পরিবারের কাছে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ২১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা (মাঝি) মো. আজিজুল হক।
নাগরিকত্ব ছাড়া ঘরে ফিরবে না রোহিঙ্গা শরণার্থীরা
06:25
অপহৃতরা হলেন-হোয়াইক্যং ইউপি চাকমারকুল ২১ নম্বর ক্যাম্পের সি/১ ব্লকের রিজিম উল্লাহ (২৫), একই ব্লকের রিয়াজ উদ্দিন (২১) ও মজিবুল্লাহ (২৬)।
এ বিষয়ে ওই ক্যাম্পের দায়িত্বরত এপিবিএন পুলিশের ইনচার্জ পরিদর্শক সরোজ চন্দ্র ডেইলি স্টারকে বলেন, "বুধবার সকালে তিন রোহিঙ্গা যুবক বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর আর ফেরত আসেননি। বৃহস্পতিবার সকালে মিয়ানমারের একটি মোবাইল নম্বর থেকে তাদের পরিবারের কাছে ফোন করে মুক্তিপণের টাকা দাবি করা হচ্ছে বলে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো আমাদের জানিয়েছে।"
প্রসঙ্গত, গত সাত মাসে টেকনাফে অন্তত ৭৯ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে তিন জনের মরদেহ উদ্ধার হলেও বাকিরা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। এই পর্যন্ত এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ৩৯টি।
জেকে/এসিবি (দ্য ডেইলি স্টার)
রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় যত সমস্যা
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে বনভূমি উজাড় হয়েছে, পানির স্তর নীচে নেমে গেছে৷ স্থানীয়ভাবে অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে৷ এছাড়া রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা কাজ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
বনভূমির উপর প্রভাব
২০১৯ সালে বনবিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয় কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের কারণে ৮ হাজার একর বন ধ্বংস হয়েছে৷ এরমধ্যে বসতি নির্মাণ করা হয়েছে ৬ হাজার ১৬৪ একরের উপর৷ আর রোহিঙ্গাদের জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে ধ্বংস হয়েছে ১ হাজার ৮৩৭ একর জমি৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
পানির স্তর নেমে যাচ্ছে
বনবিভাগের ঐ রিপোর্টে আরও জানানো হয় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে এ পর্যন্ত ৯ হাজারের বেশি টিউবওয়েল স্থাপন করতে হয়েছে৷ এ কারণে পানির স্তর ক্রমান্বয়ে নীচে নামছে৷
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
অপরাধ
কক্সবাজার জেলা পুলিশের দেয়া তথ্যের বরাতে সময়নিউজ জানিয়েছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২ ধরণের অপরাধে ২ হাজার ৪৩৮টি মামলা হয়েছে৷ এর মধ্যে অস্ত্র উদ্ধার মামলা ১৮৫টি, মাদক উদ্ধার মামলা ১ হাজার ৬৩৬টি৷ ধর্ষণ মামলা ৮৮টি৷ অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় বা আদায় চেষ্টায় মামলা ৩৯টি৷ ৫ বছরে হত্যাকাণ্ড হয়েছে ১১০টিরও বেশি৷ এসব মামলায় আসামির সংখ্যা পাঁচ হাজার ২২৬ জন৷
ছবি: bdnews24.com
শ্রমবাজারের রোহিঙ্গা
রোহিঙ্গা ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, রোহিঙ্গারা অনেক সময় কম পারিশ্রমিকে দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন৷ অনলাইন মিডিয়া ‘সারাবাংলা ডটনেট’ গত এপ্রিলে জানায়, কক্সবাজারের শ্রমবাজারে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিক্ষোভ করেছে ‘কক্সবাজার দিনমজুর ঐক্যপরিষদ’৷ তাদের অভিযোগ, মজুরি ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে৷ কিন্তু রোহিঙ্গারা অল্প টাকাতেই কাজে নেমে পড়ছেন৷
ছবি: Guven Yilmaz/AA/picture alliance
হাতির সমস্যা
গত ১১ আগস্ট এক সেমিনারে কক্সবাজার বনবিভাগের দক্ষিণ বিভাগীয় কর্মকর্তা সারওয়ার আলম জানান, কক্সবাজার ও বান্দরবান এলাকায় ৭০ থেকে ৮০টি হাতি রয়েছে৷ এসব হাতি রোহিঙ্গাদের কারণে চলাচলে বাধা পাচ্ছে৷ ফলে মানুষ আর হাতির মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে৷ এছাড়া বনাঞ্চলের নানা স্থাপনা, জবর দখল, রাস্তাঘাট তৈরি হওয়ায় হাতির আবাসস্থল নষ্ট হয়ে গেছে৷
ছবি: Zobaer Ahmed/DW
বছরে ৩০ হাজার শিশুর জন্ম
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার শিশুর জন্ম হচ্ছে বলে সরকার জানিয়েছে৷ তাই সেখানে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম আরও জোরদার করতে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএফপিএ-কে অনুরোধ করেছে সরকার৷ পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সম্প্রতি বলেন, ‘‘প্রতিবছর যে ৩০ হাজার করে যোগ হচ্ছে, এতে করে ক্যাম্পে ওভারঅল পপুলেশন বেড়ে যাচ্ছে৷’’
ছবি: ED JONES/AFP
‘পরিবেশের যোগ খোঁজা ঠিক নয়’
পরিবেশ, প্রতিবেশের ক্ষতি প্রসঙ্গে শরণার্থী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিক বলেন, ‘‘তারা মানবিক কারণে এখানে আছেন৷ এর সাথে পরিবেশের যোগ খোঁজা ঠিক নয়৷ সারাদেশে বন উজার করা হচ্ছে৷ গাছপালা কাটা হচ্ছে, সেদিকে আমাদের নজর নেই৷ আর নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বাড়িয়ে বলে আসলে আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিতদের জন্য বাজেট বাড়ানো হয়৷ তারা ক্যাম্পের মধ্যে থাকেন৷ সেখানে যে পরিবেশে থাকেন তাতে সামাজিক অপরাধ হতেই পারে৷’’