মে মাসে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার পর জনবহুল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা ছিল৷ তবে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ায় তা সফলভাবে ঠেকানো গেছে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ৷
মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ক্যাম্পের ৭২৪ জন রোহিঙ্গাকে পরীক্ষা করা হয়েছে৷ এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৫৪ জন৷ এখন পর্যন্ত ভাইরাসটি আক্রান্ত হয়ে পাঁচজন মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার৷ বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সফলতার সাথে প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে পেরেছি৷’’
গোটা কক্সবাজার জেলায় ২৪ লাখ মানুষের বাস৷ তার মধ্যে দুই হাজার ৭৭৬ জনকে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে৷ মারা গেছেন ৬০ জন, জানান মাহবুব আলম তালুকদার৷
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাস্থ্যবিধি মানার সুযোগ কতটা?
03:47
This browser does not support the video element.
রোহিঙ্গাদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ার শুরুর পর্যায়েই ত্রিশটির বেশি ক্যাম্পে লকডাউন কার্যকর করা হয়৷ রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে যাওয়ার উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়৷ পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানতে কৃর্তৃপক্ষ ক্যাম্পে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে বলে জানান কুতুপালং আশ্রয়কেন্দ্রের শিক্ষক মোহাম্মদ শাফি৷ এই সময়ে ক্যাম্পের বেশিরভাগ দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে৷ বাহির থেকে সহায়তা কর্মীদের ক্যাম্পে প্রবেশেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়৷ রোহিঙ্গাদের মধ্যে সাবানও বিতরণ করেছে কর্তৃপক্ষ৷
তবে গত কয়েক সপ্তাহে অনেকে মৌসুমি ফ্লু, মাথা ও শরীর ব্যথা আর ডায়রিয়ায় ভুগেছেন বলে জানিয়েছেন শাফি৷
‘‘বেশিরভাগই হাসপাতালে যেতে পারেননি৷ তার বদলে তারা (ক্যাম্পের) স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়েছেন,’’ বলেন তিনি৷ ক্যাম্পে পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়নি এবং সেখানে যারা মারা গেছেন তাদেরকেও পরীক্ষার আওতায় আনা হয়নি৷
এফএএস/এসিবি (এএফপি)
গত বছরের সেপ্টেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...
ভাসান চর কি রোহিঙ্গাদের জন্য স্বর্গ?
প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের জন্য বসতি গড়ে তুলেছে বাংলাদেশ৷ তবে দ্বীপটি ঘূর্ণিঝড়প্রবণ হওয়ায় তা রোহিঙ্গাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: DW/A. Islam
মূল ভূখন্ড থেকে দূরে
বিশ বছরেরও কম সময় আগে ভাসান চর জেগে উঠেছিল৷ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে এটি ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ সেখানে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে যেতে চাইছে বাংলাদেশ৷
ছবি: DW/A. Islam
যাওয়া সহজ নয়
ভাসান চরে যেতে সাধারণ মানুষের উপযোগী কোনো বাহন নেই৷ ঐ দ্বীপের কয়েকজন দোকানি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, বর্ষার সময় সাগর উত্তাল থাকায় সাধারণ মাছ ধরার নৌকায় করে ভাসান চরে পৌঁছানো কঠিন হয়ে যায়৷
ছবি: DW/A. Islam
তিন মিটার উঁচু বাঁধ
উঁচু ঢেউ ও বন্যার হাত থেকে ভাসান চরকে বাঁচাতে সরকার ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ও তিন মিটার উঁচু বাঁধ নির্মাণ করেছে৷ এক দোকানি জানালেন, মাসে দু’বার বাঁধের বাইরের দিকে থাকা বাজার এক মিটার পর্যন্ত ডুবে যায়৷
ছবি: DW/A. Islam
একইরকম ভবন
রোহিঙ্গাদের জন্য ১,৪৪০টি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে৷ প্রতিটি ভবনে ১৬টি ঘর রয়েছে৷ ১২x১৪ ফুটের একেকটি ঘরে একটি পরিবারের অন্তত চার জন সদস্যকে থাকতে হবে৷ ঘূর্ণিঝড়ের সময় ব্যবহারের জন্য ১২০টি চারতলা আশ্রয়কেন্দ্রও নির্মাণ করা হয়েছে৷
ছবি: DW/A. Islam
সৌরশক্তি
ভবনগুলোর জ্বালানি চাহিদা মেটাতে সেগুলোতে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে৷ এছাড়া প্রয়োজনের সময় ব্যবহারের জন্য দুটি ডিজেল জেনারেটর ও বিশাল এক মাঠে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে৷ খাবার পানির জন্য রয়েছে নলকূপ৷ আরও আছে বৃষ্টির পানি থেকে খাবার পানি পাওয়ার ব্যবস্থা৷
ছবি: DW/A. Islam
ক্ষয় রোধের ব্যবস্থা
কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবিতে ২০০২ সালে প্রথম এই দ্বীপের অস্তিত্বের কথা জানা যায়৷ এরপর কয়েকবার এটি স্থান পরিবর্তন করেছে৷ ভূমিক্ষয় ঠেকাতে সরকার চরটিতে তিন স্তরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে৷
ছবি: DW/A. Islam
দ্বীপটি কি বাসযোগ্য?
কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, দ্বীপটি এখনও বসবাসের উপযোগী নয়৷ তবে আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত মনে করছেন, বাঁধের উচ্চতা যদি সাড়ে ছয় থেকে সাত মিটার করা যায় তাহলে দ্বীপটি বসবাসযোগ্য হতে পারে৷ তবে ভাসান চরে ফসল ফলানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: DW/A. Islam
রোহিঙ্গাদের ভয়
কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গারা ডয়চে ভেলেকে বলেন, তাঁদের ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তাঁরা মারা যেতে পারেন৷ তবে প্রকল্পের প্রধান স্থপতি আহমেদ মুক্তা বলেন, ‘‘চরটি রোহিঙ্গাদের জন্য এক স্বর্গ৷’’
ছবি: DW/A. Islam
রোহিঙ্গারা কি ভাসান চরে যাবেন?
কয়েকটি সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে যে, নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে৷ তবে রোহিঙ্গারা সেখানে না গেলে গৃহহীন বাংলাদেশিদের ভবিষ্যতে সেখানে নিয়ে যাওয়া হতে পারে৷