কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় এক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার ভোরে পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী ১০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এইচ-৩২ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান।
নিহত বশির উল্লাহ (৩৫) ক্যাম্পের এইচ-৩২ ব্লকের বাসিন্দা মৃত ফজু মিয়ার ছেলে। বশির বিবাদমান কোন সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য তা নিশ্চিত করতে পারেননি পুলিশ।
রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় যত সমস্যা
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে বনভূমি উজাড় হয়েছে, পানির স্তর নীচে নেমে গেছে৷ স্থানীয়ভাবে অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে৷ এছাড়া রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা কাজ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
বনভূমির উপর প্রভাব
২০১৯ সালে বনবিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয় কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের কারণে ৮ হাজার একর বন ধ্বংস হয়েছে৷ এরমধ্যে বসতি নির্মাণ করা হয়েছে ৬ হাজার ১৬৪ একরের উপর৷ আর রোহিঙ্গাদের জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে ধ্বংস হয়েছে ১ হাজার ৮৩৭ একর জমি৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
পানির স্তর নেমে যাচ্ছে
বনবিভাগের ঐ রিপোর্টে আরও জানানো হয় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে এ পর্যন্ত ৯ হাজারের বেশি টিউবওয়েল স্থাপন করতে হয়েছে৷ এ কারণে পানির স্তর ক্রমান্বয়ে নীচে নামছে৷
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
অপরাধ
কক্সবাজার জেলা পুলিশের দেয়া তথ্যের বরাতে সময়নিউজ জানিয়েছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২ ধরণের অপরাধে ২ হাজার ৪৩৮টি মামলা হয়েছে৷ এর মধ্যে অস্ত্র উদ্ধার মামলা ১৮৫টি, মাদক উদ্ধার মামলা ১ হাজার ৬৩৬টি৷ ধর্ষণ মামলা ৮৮টি৷ অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় বা আদায় চেষ্টায় মামলা ৩৯টি৷ ৫ বছরে হত্যাকাণ্ড হয়েছে ১১০টিরও বেশি৷ এসব মামলায় আসামির সংখ্যা পাঁচ হাজার ২২৬ জন৷
ছবি: bdnews24.com
শ্রমবাজারের রোহিঙ্গা
রোহিঙ্গা ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, রোহিঙ্গারা অনেক সময় কম পারিশ্রমিকে দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন৷ অনলাইন মিডিয়া ‘সারাবাংলা ডটনেট’ গত এপ্রিলে জানায়, কক্সবাজারের শ্রমবাজারে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিক্ষোভ করেছে ‘কক্সবাজার দিনমজুর ঐক্যপরিষদ’৷ তাদের অভিযোগ, মজুরি ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে৷ কিন্তু রোহিঙ্গারা অল্প টাকাতেই কাজে নেমে পড়ছেন৷
ছবি: Guven Yilmaz/AA/picture alliance
হাতির সমস্যা
গত ১১ আগস্ট এক সেমিনারে কক্সবাজার বনবিভাগের দক্ষিণ বিভাগীয় কর্মকর্তা সারওয়ার আলম জানান, কক্সবাজার ও বান্দরবান এলাকায় ৭০ থেকে ৮০টি হাতি রয়েছে৷ এসব হাতি রোহিঙ্গাদের কারণে চলাচলে বাধা পাচ্ছে৷ ফলে মানুষ আর হাতির মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে৷ এছাড়া বনাঞ্চলের নানা স্থাপনা, জবর দখল, রাস্তাঘাট তৈরি হওয়ায় হাতির আবাসস্থল নষ্ট হয়ে গেছে৷
ছবি: Zobaer Ahmed/DW
বছরে ৩০ হাজার শিশুর জন্ম
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার শিশুর জন্ম হচ্ছে বলে সরকার জানিয়েছে৷ তাই সেখানে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম আরও জোরদার করতে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএফপিএ-কে অনুরোধ করেছে সরকার৷ পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সম্প্রতি বলেন, ‘‘প্রতিবছর যে ৩০ হাজার করে যোগ হচ্ছে, এতে করে ক্যাম্পে ওভারঅল পপুলেশন বেড়ে যাচ্ছে৷’’
ছবি: ED JONES/AFP
‘পরিবেশের যোগ খোঁজা ঠিক নয়’
পরিবেশ, প্রতিবেশের ক্ষতি প্রসঙ্গে শরণার্থী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিক বলেন, ‘‘তারা মানবিক কারণে এখানে আছেন৷ এর সাথে পরিবেশের যোগ খোঁজা ঠিক নয়৷ সারাদেশে বন উজার করা হচ্ছে৷ গাছপালা কাটা হচ্ছে, সেদিকে আমাদের নজর নেই৷ আর নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বাড়িয়ে বলে আসলে আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিতদের জন্য বাজেট বাড়ানো হয়৷ তারা ক্যাম্পের মধ্যে থাকেন৷ সেখানে যে পরিবেশে থাকেন তাতে সামাজিক অপরাধ হতেই পারে৷’’
ছবি: privat
7 ছবি1 | 7
স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, "আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠি আরসা এবং আরএসওর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে এপিবিএনের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এসময় ঘটনাস্থলে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইওএম পরিচালিত হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠান। সকাল ৯টার দিকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।"
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, ঘটনার কারণ নিশ্চিত হতে এবং জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান চালাচ্ছে।
নিহত ব্যক্তির মরদেহ ময়না তদন্ত করা হবে। এর জন্য মরদেহ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে মঙ্গলবার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।