1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘটনাবহুল ২০২১

১৪ জানুয়ারি ২০২২

গত বছর কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অগ্নিকাণ্ড থেকে শুরু করে হত্যাকাণ্ড সবই হয়েছে৷ পাওয়া গেছে অস্ত্রের কারখানা৷ ঘটেছে অপহরণের ঘটনাও৷

ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

আলোচিত মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর জাতিসংঘের বিশেষ দূত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন৷ প্রথমে বিরোধিতা করলেও পরে ভাসানচরের সঙ্গে যুক্ত হয় জাতিসংঘ৷

রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করা এপিবিএন ১৪ এর অধিনায়ক পুলিশ সুপার নাঈমুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে৷ ফলে অপরাধীদের যে গ্রুপগুলো সেখানে তৈরি হয়েছিল, তারা এখন আর নেই৷ তবে অল্প জায়গার মধ্যে বেশি মানুষ থাকার কারণে যে সমস্যাগুলো হয়, সেটা এখনও আছে৷ পুরো এলাকাটি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে পুরোপুরি এখনও ঘিরতে না পারায় বাইরে থেকে মাদক ও অস্ত্রও ক্যাম্পে চলে আসে৷ এগুলো এখন চ্যালেঞ্জ৷ পাশাপাশি আগুনের কয়েকটি ঘটনার পর এটাও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এখন ভেতরে ফায়ার সার্ভিসের একটা স্টেশন করার চিন্তাভাবনাও চলছে৷''

আগুনে পুড়ে মারা যায় ১১ রোহিঙ্গা

গতবছরের ২২ মার্চ উখিয়ার বালুখালী ৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১ জন রোহিঙ্গা মারা যান৷ এ ঘটনায় প্রায় সাড়ে পাঁচশ রোহিঙ্গা আহত হন৷ ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেটর গ্রুপ-আইএসসিজি জানায়, অগ্নিকাণ্ডে প্রায় দশ হাজার আশ্রয়স্থল আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ যদিও জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর নিহতের সংখ্যা ১৫ জন বলে উল্লেখ করে তখন একটি বিবৃতি দিয়েছিল৷

অপরাধীদের যে গ্রুপগুলো সেখানে তৈরি হয়েছিল, তারা এখন আর নেই: নাঈমুল হক

This browser does not support the audio element.

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলি চালিয়ে অপহরণ

১ আগস্ট কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থী ক্যাম্পে গুলি চালিয়ে আবু সৈয়দ ওরফে আব্দুল্লাহ নামে একজনকে অপহরণ করে রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তরা৷ ৫০/৬০ জন অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত অস্ত্রের মুখে ওই ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যায়৷ রাত সোয়া ৮টায় উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের কুতুপালং ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-৯ ব্লকের এ ঘটনায় একজন আহত হন৷ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করা এপিবিএন ১৪ এর অধিনায়ক নাঈমুল হক তখন বলেছিলেন, আধিপত্য বিস্তারের জেরে প্রতিপক্ষের রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে৷ অপহৃত ৩৮ বছর বয়সি আবু সৈয়দ ওরফে আব্দুল্লাহ উখিয়ার কুতুপালং ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ব্লকের আলী আহম্মদের ছেলে৷ আর গুলিবিদ্ধ ৩৭ বছর বয়সি এনামুল হাসান ক্যাম্পের একই ব্লকের তোফায়েল আহমদের ছেলে৷ তিনি বলেন, মোহাম্মদ জোবায়ের ও আবু সৈয়দের নেতৃত্বে পৃথক দুইটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ ক্যাম্পে সক্রিয় রয়েছে৷ আধিপত্য বিস্তারের জেরে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা আবু সৈয়দকে অপহরণ করে নিয়ে যায়৷ পরে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে৷ 

রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যা

২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-১ ইস্ট-ওয়েস্ট (ডি-ব্লক) নিজ অফিসে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহকে হত্যা করে বন্দুকধারীরা৷ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার পক্ষ হয়ে কাজ করা এই রোহিঙ্গা নেতাকে হত্যার ঘটনাটি শুধু দেশ নয়, বিশ্ব মিডিয়ায় তোলপাড় হয়৷ জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এ বিষয়ে বেশ তৎপর ছিল৷ এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মামলা করেন৷ হত্যার ঘটনায় বেশ কিছু অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷

ভাসানচরে যুক্ত হলো জাতিসংঘ, চুক্তি সই

৯ অক্টোবর জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাসানচরে সম্পৃক্তকরণ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের ইউএনএইচসিআর-এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়৷ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন এবং জাতিসংঘের পক্ষে ইউএনএইচসিআর-এর বাংলাদেশস্থ প্রতিনিধি জোহানস ভ্যান ডার ক্ল সমঝোতা স্মারকে সই করেন৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান ও মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন৷

‘আরসা কমান্ডারসহ' ১৪ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রেফতার

১২ অক্টোবর উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক অভিযানে কথিত আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) কমান্ডার ছলিম মাস্টারসহ ১৪ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ ১৫ নম্বর জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন পয়েন্টে রাতভর অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়৷ পুলিশ কর্মকর্তারা তখন জানিয়েছিলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ছলিম মাস্টার কথিত সংগঠন ‘আরসা'র স্থানীয় কমান্ডার৷ এছাড়া এনায়েত উল্লাহ, আব্দুল আমিন, নূর মোহাম্মদ, মো. রফিক, মো. আরিফ উল্লাহ আরসার অন্যতম নেতা আনাসের ঘনিষ্ঠ সহচর এবং ফিরোজ মিয়া চিহ্নিত মাদক কারবারি৷

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে সাত জন খুন

২২ অক্টোবর উখিয়া ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল ইসলামিয়াহ মাদ্রাসায় দুষ্কৃতিকারীরা হামলা চালায়৷ এতে সাতজন নিহত হন, যাদের সবাই রোহিঙ্গা৷ আরসা, আল ইয়াকিনকে ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়৷ ঘটনার পর দিন উখিয়া থানায় মামলা করেন নিহত আজিজুল হকের পিতা নুরুল ইসলাম৷ এতে এজাহারনামায় আসামি ২৫ জন৷ অজ্ঞাতনামা আসামি আরও ২৫০ জন৷ ওই ঘটনায় ১৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ সেখানে বেশ কয়েকজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন আদালতে৷ ঘটনার পর থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুলিশের অভিযান জোরদার হয়৷

সন্ত্রাসীদের গুলিতে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ নিহত

02:21

This browser does not support the video element.

হাশিমের লাশ বিতর্ক

২ নভেম্বর কথিত আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সেকেন্ড ইন কমান্ড মোহাম্মদ হাশিমকে নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ ওইদিন সন্ধ্যা থেকে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার পায়, হোয়াইক্যং উনচিপ্রাংয়ের ২২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘আরসা নেতা হাশিম গণপিটুনিতে নিহত' হয়েছেন৷ তিনি ওই ক্যাম্পের মৃত নুরুল আমিনের ছেলে৷ ঘটনার কয়েকদিন আগে তাকে র‌্যাব আটক করেছিল বলে অসমর্থিত সূত্রগুলো তখন জানিয়েছিল৷ তবে হাশিমের মৃত্যুর বিষয়টি কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেনি৷ আরসার নাম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পে ত্রাস সৃষ্টি করে আসছে হাশিম৷ প্রশাসন তাকে হন্যে হয়ে এখনও খুঁজছে৷

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাহাড়ে অস্ত্রের কারখানা

৮ নভেম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাহাড়ে অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়ে অভিযান চালায় র‌্যাব-১৫৷ এ সময় ১০টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসহ ৩ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়৷ কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক্স-৪ এর গহীন পাহাড়ে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়৷ আটককৃতরা হলেন, কুতুপালং ক্যাম্প সি-১ এর জি ব্লকের মৃত আজিজুর রহমানের ছেলে বাইতুল্লাহ (১৯), তার ভাই হাবিব উল্লাহ (৩২) ও একই ক্যাম্পের জি ব্লকের জাহিদ হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ হাছুন (২৪)৷ র‌্যাব তখন জানিয়েছিল, দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র এ কারখানা তৈরি করে অস্ত্র বানিয়ে আসছিল৷ এখান থেকে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র সরবারহ করা হচ্ছিল৷ এমন তথ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে কারখানাটি শনাক্ত করা হয়৷ তারপর চার ঘণ্টার বেশি সময় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের পর কারখানাটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়৷ পরে সেখান থেকে জব্দ করা হয় ৫ পিস্তল, ৫ বন্দুক ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম৷

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক দূত

১৮ ডিসেম্বর কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে ‘সন্ত্রাসীর' গুলিতে নিহত রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহর পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রতিনিধি মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ডরুজ৷ উখিয়ার ট্রানজিট পয়েন্টে তাদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি৷ এসময় তিনি সেই রাতে ঘটে যাওয়া হত্যার লোমহর্ষক বিবরণ শোনেন পরিবারের কাছ থেকে৷ এ ছাড়া তিনি উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবির এবং নাই্যংছড়ির ঘুমধুম কোনারপাড়া নো ম্যানস ল্যান্ড রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন৷ 

উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফের আগুন

চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফের ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে৷ ১৬ নম্বর ক্যাম্পে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে৷ সন্ধ্যা সাতটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই এক হাজার দুইশ' ঘর ছাই হয়ে যায়৷ এতে গৃহহীন হয় প্রায় পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা৷ ক্যাম্পে দায়িত্বরত ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন জানান, বি-ব্লকের মোহাম্মদ আলীর ঘরের গ্যাসের চুলার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়৷ পরে আগুন ব্লক-বি ও ব্লক-সি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে৷ উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের ৮ ইউনিট চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে৷