রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক ও সন্ত্রাস ঠেকাতে যৌথ অভিযান
২৪ মে ২০২৩
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও মাদকরোধে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে, থাকতে পারে সেনাবাহিনীও।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার সচিবালয়ে রোহিঙ্গা সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির সভায় অংশগ্রহণ শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে রক্তপাত হচ্ছে। তাদের অপতৎপরতা বাড়ছে। সেজন্য সভায় এভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা যেন ক্যাম্পের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের অপতৎপরতা চালাতে না পারে; সেই লক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল, চেকপোস্ট ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে।"
মন্ত্রী বলেন, "সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা হবে। আরসা ও আরাকান আর্মির কেউ যেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে না ঢুকতে পারে, তার জন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীসহ যৌথ অভিযান হতে পারে।"
জেকে/কেএম (ডেইলি স্টার)
রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় যত সমস্যা
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে বনভূমি উজাড় হয়েছে, পানির স্তর নীচে নেমে গেছে৷ স্থানীয়ভাবে অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে৷ এছাড়া রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা কাজ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
বনভূমির উপর প্রভাব
২০১৯ সালে বনবিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয় কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের কারণে ৮ হাজার একর বন ধ্বংস হয়েছে৷ এরমধ্যে বসতি নির্মাণ করা হয়েছে ৬ হাজার ১৬৪ একরের উপর৷ আর রোহিঙ্গাদের জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে ধ্বংস হয়েছে ১ হাজার ৮৩৭ একর জমি৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
পানির স্তর নেমে যাচ্ছে
বনবিভাগের ঐ রিপোর্টে আরও জানানো হয় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে এ পর্যন্ত ৯ হাজারের বেশি টিউবওয়েল স্থাপন করতে হয়েছে৷ এ কারণে পানির স্তর ক্রমান্বয়ে নীচে নামছে৷
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
অপরাধ
কক্সবাজার জেলা পুলিশের দেয়া তথ্যের বরাতে সময়নিউজ জানিয়েছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২ ধরণের অপরাধে ২ হাজার ৪৩৮টি মামলা হয়েছে৷ এর মধ্যে অস্ত্র উদ্ধার মামলা ১৮৫টি, মাদক উদ্ধার মামলা ১ হাজার ৬৩৬টি৷ ধর্ষণ মামলা ৮৮টি৷ অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় বা আদায় চেষ্টায় মামলা ৩৯টি৷ ৫ বছরে হত্যাকাণ্ড হয়েছে ১১০টিরও বেশি৷ এসব মামলায় আসামির সংখ্যা পাঁচ হাজার ২২৬ জন৷
ছবি: bdnews24.com
শ্রমবাজারের রোহিঙ্গা
রোহিঙ্গা ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, রোহিঙ্গারা অনেক সময় কম পারিশ্রমিকে দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন৷ অনলাইন মিডিয়া ‘সারাবাংলা ডটনেট’ গত এপ্রিলে জানায়, কক্সবাজারের শ্রমবাজারে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিক্ষোভ করেছে ‘কক্সবাজার দিনমজুর ঐক্যপরিষদ’৷ তাদের অভিযোগ, মজুরি ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে৷ কিন্তু রোহিঙ্গারা অল্প টাকাতেই কাজে নেমে পড়ছেন৷
ছবি: Guven Yilmaz/AA/picture alliance
হাতির সমস্যা
গত ১১ আগস্ট এক সেমিনারে কক্সবাজার বনবিভাগের দক্ষিণ বিভাগীয় কর্মকর্তা সারওয়ার আলম জানান, কক্সবাজার ও বান্দরবান এলাকায় ৭০ থেকে ৮০টি হাতি রয়েছে৷ এসব হাতি রোহিঙ্গাদের কারণে চলাচলে বাধা পাচ্ছে৷ ফলে মানুষ আর হাতির মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে৷ এছাড়া বনাঞ্চলের নানা স্থাপনা, জবর দখল, রাস্তাঘাট তৈরি হওয়ায় হাতির আবাসস্থল নষ্ট হয়ে গেছে৷
ছবি: Zobaer Ahmed/DW
বছরে ৩০ হাজার শিশুর জন্ম
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার শিশুর জন্ম হচ্ছে বলে সরকার জানিয়েছে৷ তাই সেখানে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম আরও জোরদার করতে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএফপিএ-কে অনুরোধ করেছে সরকার৷ পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সম্প্রতি বলেন, ‘‘প্রতিবছর যে ৩০ হাজার করে যোগ হচ্ছে, এতে করে ক্যাম্পে ওভারঅল পপুলেশন বেড়ে যাচ্ছে৷’’
ছবি: ED JONES/AFP
‘পরিবেশের যোগ খোঁজা ঠিক নয়’
পরিবেশ, প্রতিবেশের ক্ষতি প্রসঙ্গে শরণার্থী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিক বলেন, ‘‘তারা মানবিক কারণে এখানে আছেন৷ এর সাথে পরিবেশের যোগ খোঁজা ঠিক নয়৷ সারাদেশে বন উজার করা হচ্ছে৷ গাছপালা কাটা হচ্ছে, সেদিকে আমাদের নজর নেই৷ আর নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বাড়িয়ে বলে আসলে আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিতদের জন্য বাজেট বাড়ানো হয়৷ তারা ক্যাম্পের মধ্যে থাকেন৷ সেখানে যে পরিবেশে থাকেন তাতে সামাজিক অপরাধ হতেই পারে৷’’