রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমার থেকে অস্ত্র আসে:স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
৪ অক্টোবর ২০২১
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মিয়ানমার থেকে বিভিন্নভাবে অস্ত্র আসার কথা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল৷ রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহর হত্যাকারীদের ‘শিগগিরই' আইনে আওতায় আনার কথা জানালেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
শারদীয় দুর্গোৎসব সামনে রেখে রোববার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভা শেষে সংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব মন্তব্য করেন বলে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদনে প্রকাশ৷ আশ্রয় শিবিরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘যথেষ্ট ভালো' বলে দাবি রাষ্ট্রমন্ত্রীর৷
রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে মাদক পাচারের বিষয়টি বহুদিন ধরেই চলে আসছে৷ কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলো ঘিরে রোহিঙ্গা ডাকাতদের তৎপরতার খবরও আসছে সংবাদমাধ্যমে ৷ তবে রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহকে ক্যাম্পের ভেতরে গুলি করে হত্যার ঘটনাটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ তৈরি করেছে৷
বাংলাদেশ-মিয়ানমার: কার সামরিক শক্তি কেমন?
বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে কখনও সরাসরি যুদ্ধ না বাধলেও পুশ ব্যাক-পুশ ইন, জেলে আটক, রোহিঙ্গা নির্যাতন ইত্যাদি ইস্যুতে সীমান্তে বিরোধ রয়েছে দুই দেশের৷ গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী দেখুন দেশ দুটির সামরিক শক্তির তথ্য৷
ছবি: Getty Images/AFP/Phyo Hein Kyaw
ব়্যাংকিং
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী সামরিক শক্তির এই ব়্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে মিয়ানমার৷ ১৩৮ দেশের তালিকায় ৩৫ নাম্বারে মিয়ানমার, আর বাংলাদেশ রয়েছে ৪৬ নাম্বারে৷ এই তালিকায় প্রথম পাঁচটি অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত ও জাপান৷
ছবি: AP
সক্রিয় সেনাসদস্য
মিয়ানমারের চেয়ে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় তিন গুণ হলেও সেনাসদস্যের সংখ্যায় মিয়ানমার অনেক এগিয়ে৷ মিয়ানমারের সক্রিয় সেনাসদস্যের সংখ্যা মোট চার লাখ ছয় হাজার, বাংলাদেশের রয়েছে মোট এক লাখ ৬০ হাজার সক্রিয় সেনাসদস্য৷ দুই দেশের কোনোটিরই রিজার্ভ সেনাসদস্য নেই৷
ছবি: AP
প্রতিরক্ষা বাজেট
প্রতিরক্ষা বাজেটের দিক থেকে অবশ্য মিয়ানমারের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ৷ মিয়ানমারের বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেট ২৬৫ কোটি মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাজেট ৩৮০ কোটি ডলারের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Goya
এয়ারক্রাফট
এখানেও এগিয়ে মিয়ানমার৷ বাংলাদেশের ১৭৭টির বিপরীতে মিয়ানমারের রয়েছে ২৭৬টি এয়ারক্রাফট৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Karadjias
নৌবহর
নৌশক্তিতেও মিয়ানমার বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে৷ মিয়ানমারের রয়েছে ১৮৭টি জাহাজ, বাংলাদেশের রয়েছে ১১২টি৷
ছবি: AFP/Iranian Army office
যুদ্ধবিমান
বাংলাদেশের কমব্যাট এয়ারক্রাফট বা যুদ্ধবিমান রয়েছে ৪৪টি, মিয়ানমারের রয়েছে ৫৯টি৷
ছবি: Imago-Images/StockTrek Images
হেলিকপ্টার
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬৭টি হেলিকপ্টারের বিপরীতে মিয়ানমারের রয়েছে ৮৬টি হেলিকপ্টার৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Robayo
ট্যাঙ্ক
বাংলাদেশের কমব্যাট ট্যাঙ্ক রয়েছে ২৭৬টি, মিয়ানমারের রয়েছে ৪৩৪টি৷
ছবি: picture-alliance/Newscom/J. Farmer
সাঁজোয়া যান
বাংলাদেশের সাঁজোয়া যানের সংখ্যা ১২৩০টি, মিয়ানমারের ১৩০০টি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/MAXPPP
স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি
স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারিতে অনেক এগিয়ে মিয়ানমার৷ দেশটির স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারির সংখ্যা ১০৮টি, বাংলাদেশের মাত্র ১৮টি৷
ছবি: AP
ফিল্ড আর্টিলারি
ফিল্ড আর্টিলারিতেও মিয়ানমার কয়েকগুণ এগিয়ে আছে৷ মিয়ানমারের ১৬১২টি ফিল্ড আর্টিলারির বিপরীতে বাংলাদেশের রয়েছে কেবল ৪১৯টি ফিল্ড আর্টিলারি৷
ছবি: DW/S. Tanha
রকেট প্রজেক্টর
বাংলাদেশের ৭২টি রকেট প্রজেক্টরের বিপরীতে মিয়ানমারের রয়েছে ৮৪টি রকেট প্রজেক্টর৷
ছবি: imago stock&people
সাবমেরিন
সাবমেরিনের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে বাংলাদেশ৷ মিয়ানমারের একটি সাবমেরিনের বদলে বাংলাদেশের রয়েছে দুটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Kuleshov
বিমানবাহী জাহাজ
বাংলাদেশ বা মিয়ানমার কোনো দেশেরই বিমানবাহী জাহাজ নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Goldman
ডেস্ট্রয়ার
দেশদুটির কোনোটিরই ডেস্ট্রয়ার নেই৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/Zuma Wire/U.S. Navy
ফ্রিগেট
এক্ষেত্রে কিছুটা এগিয়ে বাংলাদেশ৷ দেশটির রয়েছে আটটি ফ্রিগেট, অন্যদিকে মিয়ানমারের রয়েছে পাঁচটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
করভেট
বাংলাদেশের করভেটের সংখ্যা মিয়ানমারের দ্বিগুণ৷ মিয়ানমারের তিনটির বদলে বাংলাদেশের আছে ছয়টি৷
ছবি: imago/StockTrek Images
উপকূলে পেট্রোল
উপকূলে টহল দেয়ার জন্য মিয়ানমারের রয়েছে ১১৭টি নৌযান৷ বাংলাদেশের রয়েছে ৩০টি৷
ছবি: Shwe Paw Mya Tin/NurPhoto/picture-alliance
বিমানবন্দর
মিয়ানমারে ৬৪টি বিমানবন্দর রয়েছে৷ বাংলাদেশে রয়েছে ১৮টি৷
ছবি: dapd
নৌবন্দর এবং টার্মিনাল
এক্ষেত্রে দুদেশ সমানে সমান৷ দুই দেশেরই তিনটি নৌবন্দর ও টার্মিনাল রয়েছে৷
ছবি: Reuters
20 ছবি1 | 20
মুহিবুল্লাহর হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘মিয়ানমার থেকে বিভিন্নভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিবেশ অস্থির করার জন্য অস্ত্র আসছে৷ অস্ত্র নিয়ে তাদের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য বিভিন্ন গ্রুপের মারামারিও দেখেছেন৷ যে নেতার (মুহিবুল্লাহ) কথা বলছেন, সে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সবসময় সোচ্চার ছিল৷ তার এই ঘটনাটা তদন্ত করে এর মূল কারণটা বের করতে হবে, সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করছি৷''
মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ইউএনএইচসিআরসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো৷ পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে ‘রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর' হিসেবে পরিচিত ছিলেন রাখাইন রাজ্যের মংডুর এলাকার স্কুলশিক্ষক মুহিবুল্লাহ৷ ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস' নামে রোহিঙ্গা সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন মুহিবুল্লাহ৷
একদল অস্ত্রধারী গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ায় লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪৮ বছর বয়সি মুহিবুল্লাহকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়৷ রোহিঙ্গাদের অন্য একটিব সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) মুহিবুল্লাহকে হত্যা করেছে বলে সন্দেহ তার পরিবারের৷ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের যে গ্রুপটির মধ্যে মুহিবুল্লাহর হত্যার ঘটনা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে৷
পুলিশ ইতোমধ্যে পাঁচ রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তাদের মধ্যে দুজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "যারা তাকে হত্যা করেছে বলে আমরা মনে করছি সে বিষয়ে তদন্ত চলছে, খুব শিগগিরই এর ব্যবস্থা করতে পারব বলে বিশ্বাস করি৷” রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারদিকে কাঁটাতাদের বেড়া দেওয়া হচ্ছে৷ চতুর্দিকে ওয়াচ টাওয়ারও করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান৷
"আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সেনাবাহিনী ভালো কাজ করছে৷ কক্সবাজারে লাখ লাখ পর্যটক যাচ্ছেন৷ সবকিছু মিলিয়ে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে বলেই সব কিছু ভালো অবস্থায় আছে৷'' এমন মন্তব্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর৷