রোহিঙ্গা ক্যাম্প সরিয়ে নেয়া হচ্ছে
২৮ মে ২০১৫ নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস ডয়চে ভেলেকে বৃহস্পতিবার জানান, ‘‘চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের অফিস থেকে দু'মাস আগে আমার দপ্তরে একটি চিঠি পাঠানো হয়৷ আর সরকারের সেই চিঠিতে নোয়াখালীর চরাঞ্চলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থাপনের জন্য সুবিধাজনক ও প্রশস্ত জায়গা পাওয়া যাবে কিনা জানতে চাওয়া হয়৷'' তিনি জানান, ‘‘প্রথমে নোয়াখালীর সুবর্ণ চরে জমি দেখা হয়েছিল৷ কিন্তু সেখানে পাওয়া যায়নি৷ পরে হাতিয়ার চরাঞ্চলে ৫০০ একর জায়গা পাওয়া যায়৷ সেখানে আমি রোহিঙ্গা ক্যাম্প করার প্রস্তাব পাঠিয়েছি সরকারে কাছে৷''
কবে নাগাদ কক্সবাজার থেকে হাতিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প সরিয়ে আনা হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এটা সরকারের বিষয়৷ আমরা সরকার অনুমতি পেলে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করব৷'' প্রাথমিক কাজে এ জন্য যে খরচ হচ্ছে তা সরকারি তহবিল থেকেই করা হচ্ছে বলে জানান তিনি৷
হাতিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো. মঈনুদ্দীন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘হাতিয়ার পূর্বদিকের ওই চরটি স্থানীয়ভাবে ঠেঙ্গারচর নামে পরিচিত৷ সেখানে কোনো জনবসতি নেই৷ সেখানে বন বিভাগের ১২ হাজার একর জমি রয়েছে৷ সেই জমি থেকেই ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে নোয়াখালী জেলা প্রশাসন৷''
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘‘আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, জরিপ করে ওই চরের জমি বন বিভাগের কাছ থেকে নিতে হবে৷ তবে এই প্রক্রিয়া শেষ করতে কিছুটা সময় লাগবে৷''
জেলা প্রশাসক বদরে মুনীর জানান, ‘‘জায়গাটি হাতিয়া উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরের পথ৷ আমি জায়গা পরিদর্শন করেছি৷ এখানে কোন মানুষের বসতি এখন নেই৷''
উল্লেখ্য, কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর হাতিয়ার মাঝে পুরোটাই সাগর৷ তবে দু'টি জেলাই চট্টগ্রাম বিভাগে৷
জানা গেছে, মানবপাচার নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেই সংকট কাটাতেই কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প নেয়াখালীর হাতিয়ায় সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য কয়েক মাস আগেই এই পরিকল্পনার জানান৷ তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো কক্সবাজার থেকে ‘সুবিধাজনক' স্থানে সরানোর কথা বলেছিলেন৷
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলি হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান, স্থানীয়ভাবে নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে৷ তারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে৷' তিনি জানান, ‘‘নোয়াখালীর হাতিয়ার কোনো একটা অঞ্চলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এখান থেকে সরিয়ে নেয়া হবে৷ নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি দেখছেন৷''
কবে নাগাদ ও কী প্রক্রিয়ায় ক্যাম্প সরানোর কাজ বাস্তবায়ন হবে, সে বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারছেননা কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক৷ তিনি জানান, ‘‘আনুষ্ঠানিকভাবে প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন শুরু হলেই বিস্তারিত জানানো যাবে৷''
কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়াপাড়ায় বর্তমানে রোহিঙ্গাদের দু'টি শরণার্থী ক্যাম্প রয়েছে৷ এতে নিবন্ধিত ৩৪ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী থাকলেও এর বাইরে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে বলে সরকারের হিসাব৷
মিয়ানমারে জাতিগত ও রাজনৈতিক কারণে নিপীড়নের শিকার মুসলিম রোহিঙ্গারা দুই দশক আগে ব্যাপক হারে বাংলাদেশে ঢোকা শুরু করে৷ এই শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে দীর্ঘ দিন ধরে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার৷ মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজের দেশের নাগরিক হিসেবেও মানতে নারাজ৷ এ নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপও উপেক্ষা করে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে ৷
২০১২ সালে মিয়ানমারে নতুন করে জাতিগত দাঙ্গা শুরু হলে সীমান্তে রোহিঙ্গাদের চাপ বাড়লেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভার বহন করে আসা বাংলাদেশ নতুন করে কাউকে ঢুকতে না দেয়ার অবস্থান নেয়৷
এদিকে কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সরানো হচ্ছে এই খবরে সেখানকার স্থানীয়রা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷ তারা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ তবে নোয়াখালী তথা হাতিয়ার স্থানীয়রা এর বিরোধিতা করছেন৷ নোয়াখালীর সাংবাদিক জাহিদুর রহমান শামিম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘নোয়াখালীর বাসিন্দারা তাদের এলাকা হাতিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থাপনের বিরোধিতায় আন্দোলন শুরু করতে পারে৷'' তবে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক বদরে মুনির বলেন, ‘‘হাতিয়ার চরে যেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প হবে সেটা জনবসতি থেকে অনেক দূরে৷ তাই স্থানীয় লোকদের কোন সমস্যা হবার কথা নয়৷''