রোহিঙ্গা গণহত্যা: তদন্তের সুযোগ দিচ্ছে না মিয়ানমার
হারুন উর রশীদ স্বপন
৮ জুলাই ২০২৩
রোহিঙ্গাদের ওপর সংগঠিত গণহত্যা তদন্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রতিনিধিদের মিয়ানমার সরকার দেশটিতে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন সংস্থাটির চিফ প্রসিকিউটর করিম এ খান৷
বিজ্ঞাপন
তবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি৷ ঢাকায় শুক্রবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন৷
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চলমান মামলাটি খুব জটিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘এই মামলার ট্রায়াল কবে শেষ হবে তার নির্দিষ্ট দিনক্ষণ বলা যাবে না৷ আমি ইউক্রেনের অমানবিক ঘটনারও তদন্ত করছি৷ ইউক্রেনের মামলার সঙ্গে রোহিঙ্গা মামলার পার্থক্য হচ্ছে যে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য আমি ইউক্রেন যেতে পারছি৷ কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মিয়ানমার যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি না৷সে দেশের সরকারের অনুমতি পাচ্ছি না৷''
করিম এ খান বলেন, ‘‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার মত অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন কারা ঘটিয়েছে এবং কাদের নির্দেশে এমন অমানবিক ঘটনা ঘটেছে তাদেরকে চিহ্নিত করার জন্য জন্য কাজ করছি৷ আমি আশাবাদী যে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে৷''
করিম এ খান কক্সকাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন৷ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যে গণহত্যার অভিযোগ, তা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সাক্ষ্য নিতে কক্সবাজারে যান তিনি৷
গণহত্যার জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করতে সামনের বছর আবারও বাংলাদেশে আসবেন বলে রোহিঙ্গাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি৷ করিম এ খান বলেন, ‘‘বিশ্বে যা-ই ঘটুক না কেন বিশ্ববাসী রোহিঙ্গা সংকট ভুলে যেতে পারে না৷''
রোহিঙ্গা গণহত্যার তদন্তে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশে এসে তিনি জানান, কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় তিনি রোহিঙ্গা যুব গোষ্ঠীর সঙ্গে আইসিসির কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেছেন৷তরুণেরা কিভাবে ন্যায়বিচার প্রচেষ্টায় অবদান রাখতে পারেন তা তিনি বিবেচনা করছেন৷ কুতুপালং ক্যাম্পে প্রথম বৈঠকে রোহিঙ্গা নারীদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি৷
তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের আর্থিক তহবিলে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যার কারণে গত মার্চ থেকে তাদের দুইবেলা খেতে হচ্ছে৷ রোহিঙ্গাদের খাবারে কাটছাঁট করায় তারা অনেক কষ্টে আছেন৷ এজন্য বিশ্ববাসীর আরো সমর্থন জরুরি৷''
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ন্যায়ের পতাকা ধরে রেখেছে৷''
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও মামলার শুনানি একসঙ্গে চলতে পারে৷ দুইটা দুই বিষয়৷''
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন রোহিঙ্গাদের বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব মামলা নিষ্পত্তির জন্য আইসিসির প্রচেষ্টা আশা করেন৷মঙ্গলবার আইসিসির প্রসিকিউটরকে তিনি বলেন, ‘‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মামলাটি শেষ করার জন্য আপনার প্রচেষ্টা করা উচিত৷ বিলম্বে বিচার মানে বিচারের নামে প্রহসন৷''
২০১৯ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারকরা আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করার আবেদন মঞ্জুর করেন৷ প্রসঙ্গত, মিয়ানমারে সহিংসতার মুখে পালিয়ে আসা ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশের কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন৷
রোহিঙ্গা ফেরাতে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি চীনের
তাইওয়ান নিয়ে চীনে যখন উত্তেজনা তুঙ্গে, তখনও দুনিদের সফরে বাংলাদেশে ঘুরে গেলে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ এক চীন নীতির পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থান আবারও নিশ্চিত করার পাশাপাশি আলোচনা হয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যুতেও৷
ছবি: Mahmud Hossain Opu/AP Photo/picture alliance
বিষয়বস্তু কী?
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের আগে মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, দ্বিপাক্ষিক এবং দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে আলোচনা হবে এই সফরে৷ তবে বৈশ্ব রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণে বাংলাদেশ যাতে চীনের পক্ষে থাকে বা অন্তত বিপক্ষে যাতে না যায়, সে চেষ্টা করাটাই সফরের মূল লক্ষ্য বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক৷
ছবি: Liu Chuntao/Xinhua News Agency/picture alliance
আবারো আলোচনায় রোহিঙ্গা
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফরে ঢাকার সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা ছিল রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে চীনের সহযোগিতা। বৈঠকে স্বাভাবিকভাবেই এই প্রসঙ্গটি আলোচনায় উঠে আসে৷ বৈঠকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে চীনের সহযোগিতা চায় ঢাকা৷ চীনের পক্ষ থেকে প্রয়োজন হলে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে চীনের পক্ষ থেকে৷
ছবি: Mahmud Hossain Opu/AP Photo/picture alliance
হাসিনা-ওয়াং বৈঠক
রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষা করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই৷ এই বৈঠকেও আলোচনায় আসে রোহিঙ্গা ইস্যু৷ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানের কথা বলেন চীনা মন্ত্রী। তবে তৃতীয় পক্ষের সম্পৃক্ততার প্রয়োজন হলে চীন তার ভূমিকা পালন করবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে মন্ত্রীর পক্ষ থেকে৷
ছবি: Xinhua/imago images
রোহিঙ্গাদের সহায়তা
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এরই মধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য তিন হাজার বাড়ি তৈরি করার কথা জানিয়েছে চীন৷ এছাড়া যারা ফেরত যাবে, তাদের প্রাথমিক খাদ্য সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে চীন৷ কয়েক বছর আগে অবশ্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য চীনের মধ্যস্থতায় চুক্তি হয়েছিল এবং চেষ্টাও হয়েছিল। কিন্তু সেটি কোন কাজে লাগেনি।
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
আন্তর্জাতিক সংকট
প্রধাণমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে নানা আন্তর্জাতিক ইস্যুতেও আলোচনা হয়েছে৷ এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা-অবরোধ ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা-অবরোধ এবং এ থেকে উত্তরণে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়টিও উঠে আসে৷ বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।
ছবি: Diego Herrera Carcedo/AA/picture alliance
চুক্তি, সমঝোতা স্মারক
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এর মধ্যে বৈঠকে চারটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে৷ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এসব স্মারক ও চুক্তিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কচা নদীর উপর নির্মিত সেতু হস্তান্তর, সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তি নবায়ন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মেরিন সায়েন্সেস শিক্ষা বিষয়ে সহযোগিতার বিষয় রয়েছে৷