আট বছর পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা হলো বৃহস্পতিবার৷ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স অবিলম্বে জাতিগত নিধন বন্ধ করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
তবে চীন ও রাশিয়া মিয়ানমার সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে৷
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের লক্ষ্যে শক্ত পদক্ষেপ নিতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান৷ এছাড়া অবিলম্বে রাখাইনে সামরিক অভিযান বন্ধ করতে এবং সেখানে ত্রাণকর্মীদের ঢুকতে দিতে মিয়ানমার সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন৷ পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা যেন নিরাপদে নিজেদের ঘরে ফিরতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে বলেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব৷ তিনি আশংকা প্রকাশ করেন, উত্তর রাখাইনে সহিংসতা বন্ধে উদ্যোগ না নিলে তা রাজ্যের কেন্দ্রীয় অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ সেখানে প্রায় আড়াই লক্ষ মুসলমান বাস করেন৷
জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, মানবাধিকার সংকট থেকেই ‘ব়্যাডিকালাইজেশন’ এর মতো বিষয়ের শুরু হয়৷ এছাড়া ভুক্তভোগীদের মধ্যে চোরাচালানসহ অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়৷
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত নিকি হেলি বলেন, ‘‘বার্মা কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপকে নিষ্ঠুর ও দেশের সংখ্যালঘু গোষ্ঠী নিধনের উদ্যোগ বলতে আমাদের ভয় পেলে চলবে না৷’’ তিনি বলেন, ‘‘এই পরিষদের বৈঠকে ভালো অর্থ বহন করা কথাবার্তা ও কূটনৈতিক শব্দ ব্যবহারের সময় শেষ হয়ে গেছে৷ আমাদের এখন মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে৷’’ রোহিঙ্গাদের উপর বর্বর হামলা চালানো নিরাপত্তা কর্মীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ না করতে সব দেশকে অনুরোধও জানান তিনি৷
রোহিঙ্গাদের দিকে বাংলাদেশের সাহায্যের হাত
গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৪ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷ তাঁদের আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি নানান সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷ ছবিঘরে তারই কিছু নমুনা...
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে দীর্ঘ লাইন
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের জন্য রোহিঙ্গাদের লাইন৷ কুতুপালং ছাড়াও টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি কেন্দ্রে চলছে এই নিবন্ধন কার্যক্রম৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
নিবন্ধনে বিজিবি
কতুপালং শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে কাজ করছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা৷ একেকটি কেন্দ্রে দিনে গড়ে ৭০০ জনের মতো রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন হচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
নিবন্ধিত
বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের পর দুই রোহিঙ্গা শরণার্থী হারুনুর রশীদ ও মোহাম্মদ দিনার৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
সরকারি ত্রাণ
রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিতে নানাভাবে এগিয়ে এসেছে বাংলদেশ সরকার৷ উখিয়ার কুতুপালংয়ে ট্রাক থেকে নামানো হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী৷
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে যান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী৷ ৪৬টি দেশের কূটনীতিকরাও ছিলেন তাঁর সঙ্গে৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
কূটনীতিকদের আশ্বাস
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শিবিরে গিয়ে শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন কূটনীতিকরা৷ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ সহায়তার ঘোষণাও দেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
শিশুসেবা
টেকনাফের শরণার্থী শিবিরগুলোতে সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন বয়সের শিশুদের টিকা দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
নতুন শিবির
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বালুখালীতে দুই হাজার একর জায়গায় শিবির গড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
তাঁবুর রাজ্য
শরণার্থীর চাপে এরইমধ্যে বালুখালীর এই অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রের সীমানা কয়েকগুণ বড় হয়েছে৷ উখিয়ার পাহাড়-টিলার সবখানেই এখন শরণার্থীদের অস্থায়ী তাঁবু৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
নতুন বসতি
নতুন নতুন পাহাড়ের গাছপালা কেটে প্রতিদিনই নিজেদের বসতি গড়ছেন রোহিঙ্গারা৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
11 ছবি1 | 11
তবে জাতিসংঘে চীনের উপ-রাষ্ট্রদূত য়ু হাইতাও মিয়ানমার সরকার যে জটিল চ্যালেঞ্জের মুখে আছে তা নিরপেক্ষ দৃষ্টি ও ধৈর্য্য নিয়ে বিবেচনা করে দেখতে বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, রাখাইনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দীর্ঘসময় ধরে সৃষ্টি হয়েছে এবং চট করে এই সংকটের সমাধান হবে না৷
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া সবাইকে সতর্ক করে বলেন, মিয়ানমার সরকারের উপর ‘অত্যধিক চাপ’ প্রয়োগ করলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে৷ রাখাইনে ‘দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ও জটিল’ সমস্যার সমাধানে আলোচনা ও রাজনৈতিক উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই৷
মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা উ থাউং তুন দাবি করেছেন, মিয়ানমারে কোনো জাতিগত নিধন চলছে না৷ সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখের পর রাখাইনে কোনো সামরিক অভিযান চলেনি বলেও জানান তিনি৷ তবে এরপরও যে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে যাচ্ছেন সে প্রসঙ্গে তুন বলেন, সন্ত্রাসীরা ঐ ব্যক্তিদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেয়ায় তাঁরা পালিয়ে যাচ্ছেন৷ মিয়ানমারে থাকা বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও গণমাধ্যম কর্মীরা সোমবার উত্তর রাখাইন পরিদর্শনে যাবেন বলেও জানান তিনি৷ জাতিসংঘের মহাসচিবকেও মিয়ানমার সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানান উ থাউং তুন৷ তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যের ৫০ শতাংশেরও বেশি গ্রামে মানুষজন প্রতিবেশীদের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করছেন৷
তবে জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ মোমেন নিরাপত্তা পরিষদকে জানান, মিয়ানমার সরকার দাবি করলেও রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ হয়নি৷ তিনি বলেন, ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের পালাতে বাধ্য করা হয়েছে বলে রোহিঙ্গারাই জানিয়েছেন৷ মাসুদ মোমেন বলেন, রাখাইনে যে নৃশংসতা চলছে তা একটি বিষয় প্রমাণ করে যে, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে উত্তর রাখাইনকে জনশূন্য করে সেখানকার জমির মালিকানা দখলের পরিকল্পনা করছে৷
জেডএইচ/এসিবি (এপি)
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...
টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থী
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সংঘাতের মুখে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশের টেকনাফে এসেছেন সাড়ে তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ সেখানে তাঁদের জীবনযাত্রা, তাঁদের জীবনের দুঃসহ স্মৃতির বর্ণনা জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের লম্বার বিল এলাকা দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা শরণার্থী আসছে আশ্রয়ের সন্ধানে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে এসে পৌঁছান টেকনাফে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পরিবারের অসুস্থ ও বৃদ্ধ সদস্যদের এভাবে কাঁধে নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে টেকনাফে এসেছেন অনেকেই৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শরণার্থীরা মিয়ামনমার থেকে অনেকটা খালি হাতেই পালিয়ে এসেছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শরণার্থীদের মধ্যে অনেকেই চোখের সামনে দেখেছেন স্বজন হত্যার বিভৎস দৃশ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রোহিঙ্গা শরণার্থী নারী ও শিশুরা বাংলাদেশে আসার দীর্ঘপথে নদী-খালও পাড়ি দিয়েছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছে বাংলাদেশে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফ ও নাইক্ষংছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত থেকে আসা কমে গেলেও শাহপরীর দ্বীপ থেকে এখনও দলে দলে শরণার্থীরা আসছেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের নাফ নদীর ওপারে প্রতিদিনিই দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের বসতি জ্বালিয়ে দেয়ার দৃশ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তিন দিন ধরে আগুন দেয়া হচ্ছে মংডু ও রাসিডাং এলাকার রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর৷ শাহপরীর দ্বীপ থেকে তোলা ছবি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশে আসা শরণার্থীদের অনেকেই নিয়ে আসছেন গবাদি পশু৷ এক্ষেত্রে তাঁরা ব্যবহার করছেন নাফ নদীকে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
গত কয়েকদিন ধরে আসা মানুষদের বড় একটা অংশের শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই মেলেনি৷ কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের পাশেই দিন কাটছে তাঁদের৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
অনেকে আবার জায়গা করে নিয়েছেন সড়কের পাশের বিভিন্ন টিলার উপরে৷ সোখানে খোলা আকাশের নীচেই দিন রাত পার করছেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টেকনাফের বালুখালীতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নুতন শিবির৷ বিশাল এ এলাকায় সব শরণার্থীরই জায়গা করে দিতে কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ২ লাখের বেশিই শিশু, যা এবার আসা মোট শরণার্থীর ৬০ শতাংশ৷ ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ শে আগস্টের পর থেকে ১১শ’রও বেশি শিশু অভিভাবক ছাড়া রাখাইন থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ শুরু হয়েছে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের কাজ৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসা শুরু করলে প্রথমে সীমান্ত সিল করা দেয়া হয়েছিল৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কিন্তু কয়েকদিন পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরনের নির্দেশ দিলে সীমান্ত শিথিল হয় এবং ব্যাপকহারে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা খাবারের তীব্র সংকটে ভুগছেন৷ কোনো গাড়ি থেকে শুকনা খাবার দিতে দেখলেই খাবার সংগ্রহ করতে তাঁদের মধ্যে শুরু হয় কঠিন প্রতিযোগিতা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
২৫শে আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, অস্ত্রধারী বিদ্রোহীরা ২৪টি পুলিশ চেকপোস্ট ও একটি সেনাঘাঁটিতে একযোগে হামলা চালায়৷ তাদের পাল্টা হামলা চালালে তা সহিংসতায় রূপ নেয়৷ দু’পক্ষের সংঘর্ষে সেইদিনই রাখাইন রাজ্যে অন্তত ৮৯ জন নিহত হয়৷