1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গা নেতা হত্যায় কার লাভ, কার ক্ষতি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩ অক্টোবর ২০২১

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শেষ হওয়ার আগে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না৷  

Rohingya-Führer Mohib Ullah in Bangladesch getötet
রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ (ফাইল ছবি)৷ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

জনপ্রিয় এই নেতার হত্যাকাণ্ডের তিনদিন পর এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন৷ শনিবার তিনি বলেন, ‘‘মুহিবুল্লাহ মিয়ানমারে ফেরত যেতে চেয়েছিলেন বলে স্বার্থান্বেষী মহল তাকে হত্যা করেছে৷’’

পুলিশ জানিয়েছে যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ মন্তব্যকে খুব গুরুত্ব দিয়েই দেখছে তারা৷

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজজ্জামান বলেন, ‘‘এখন ক্যাম্পের অবস্থা শান্ত রয়েছে৷ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷ মুহিবুল্লাহর পরিবারের সদস্যদের জন্য আলাদা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷’’

হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি যোগ করেন, ‘‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে মোটিভের কথা বলেছেন তা আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি৷ এর বাইরে আরো যেসব মোটিভ থাকতে পারে তাও বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত হচ্ছে৷’’

প্রসঙ্গত, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ উখিয়ার কুতুপালংয়ে ক্যাম্পে নিজ কার্যালয়ে গুলিবিদ্ধ হন৷ এরপর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷ ‘আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ নামে একটি সংগঠনের প্রধান ছিলেন তিনি৷ সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করছে৷

‘রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশ উভয়ের জন্য বড় ক্ষতি হয়ে গেল’

This browser does not support the audio element.

মুহিবুল্লাহর অনুসারী রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘‘মাস্টার মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছিলেন৷ যারা তাকে হত্যা করেছে তারা খুবই খারাপ কাজ করেছে৷’’

কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে গত কয়েকবছরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মাষ্টার মুহিবুল্লাহ৷ বাংলাদেশ সরকারসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এমনকি জাতিসংঘেও মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সরব ছিলেন৷ যে কারণে এই হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার উপর একটি বড় আঘাত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷

মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল শহীদুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা নেতা হত্যায় রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশ উভয়ের জন্য বড় ক্ষতি হয়ে গেল৷ তিনি দ্রুত এবং অল্প বয়সে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেক জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠেছিলেন৷ ২০১৯ সালে তার নেতৃত্বে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ অনেকেরই দৃষ্টি কেড়েছে৷ অনেকের ঈর্ষার পাত্র হয়েছেন৷’’

সাবেক এ কূটনীতিক আরো বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের ইয়াবা ব্যবসায় ব্যবহার করা হয়৷ এই ব্যবসার সাথে রাখাইনের প্রভাবশালী গোষ্ঠী, কিছু বুদ্ধিস্ট নেতা এবং আরাকানে যারা ক্ষমতায় তারা যুক্ত৷ রোহিঙ্গাদের উগ্রবাদী গ্রুপগুলোও এর সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ৷ আরসার বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ আছে৷ মুহিবুল্লাহ কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে একটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছিলো৷স্থানীয় পর্যায়ে যারা ইয়াবার সাথে যুক্ত তাদেরও ক্ষতি হচ্ছিল৷’’

 এদিকে, ঘটনা সম্পর্কে জানতে স্থানীয় বেশ কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করে ডয়চে ভেলে৷ তাদেরই একজন মুহিবুল্লার অনুসারী রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘‘এখানে কিছু রোহিঙ্গা আছে যারা নানা ধরনের অবৈধ ব্যবসা করে৷ সন্ত্রাসী কাজ করে টাকা আয় করে৷ অপহরণ করে টাকা আদায় করে৷ তারা দেশে ফিরতে চায়না৷ এখানেই থাকতে চায়৷ তারা মুহিবুল্লাহর কাজকে অপছন্দ করত৷ তারা মনে করে তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে৷’’

মুহিবুল্লাহকে এর আগেও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে জোবায়ের বলেন, ‘‘তার এক বন্ধুকে পাঠানো একটি ভয়েস মেসেজে শুনেছি, তাকে আগেও একাধিকবার হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে৷’’

তবে মুহিবুল্লাহকে এর আগেও হত্যার হুমকির বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজজ্জামান বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতরে প্রায়ই নানা ঘটনা থাকে৷ তার ভিত্তিতে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়৷ কিন্তু তাকে হত্যার হুমকির ব্যাপারে আমার কাছে, জেলা পুলিশের কাছে কোনো তথ্য ছিলো না৷ আমাদের লোকজন প্রায়ই তার সাথে দেখা করত৷ তার কোনো সমস্যা আছে কি না তার কাছে জিজ্ঞেস করত৷ এমন কোনো সমস্যার কথা তিনি আমাদের বলেননি৷’’

এদিকে, ক্যাম্প এলাকায় নানা গোষ্ঠীর অপতৎপরতার অভিযোগ করেছেন উখিয়ার পালংখালি ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী৷ তার দাবি, ‘‘ক্যাম্প এলাকায় রোহিঙ্গাদের চারটি সন্ত্রাসী সংগঠন তৎপর আছে৷ তাদের মধ্যে ‘আলেখিন’ নামে একটি গ্রুপ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে৷ এই গ্রুপের সদস্যরা নানা অবৈধ ব্যবসা করে৷ তাদের  ক্যাম্পে দোকানপাট আছে৷ রোহিঙ্গারা চলে গেলে তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে৷ তারা ক্যাম্পের ত্রাণসামগ্রী বাইরে বিক্রিও করে৷ তাদের মিয়ানমারের সৈনিকরা শেল্টার দেয়৷ তাদের দিয়ে ইয়াবা কক্সবাজারে পাঠায়৷ তাদের কিছু রোহিঙ্গা আছে ছয় মাস কক্সবাজার ক্যাম্পে এবং ছয় মাস মিয়ানমারে থাকে৷’’

‘মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে কাজ করছিলেন’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘এখানে আরসা এবং আরএসও নামেও দুইটি উগ্রপন্থি গ্রুপ আছে৷ তারা কেউই মিয়ানমারে ফিরতে চায়না৷ কারণ তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে৷ ফলে মুহিবুল্লাহ হত্যায় তারা সবাই লাভবান৷ তবে তাদের সঙ্গে এই ব্যবসার জন্য স্থানীয় কিছু লোকও জড়িত৷’’

তবে, এক বিবৃতিতে মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে আরসা৷ গোষ্ঠীটি লিখেছে, ‘‘তাকে (মুহিবুল্লাহ) হত্যার ঘটনা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য অনেক বড় ক্ষতির৷ এজন্য কাউকে অযথা দায়ী না করে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার সময় এখন৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ