নিউইয়র্কে বাংলাদেশের জাতিসংঘ মিশনেবার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন৷ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী ভাসান চরে জমি তৈরি, সাইক্লোন প্রতিরোধ, আবাস ও অন্যান্য অবকাঠামো তৈরি করতে এই অর্থ প্রয়োজন৷
‘‘যেহেতু এই অর্থের অংকটি অনেক বড়, তাই কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি.'' বলছিলেন তিনি৷ ‘‘এখন পর্যন্ত আমরা আমাদের অর্থ নিয়েই এগোনোর চিন্তা করছি৷ কারণ, বিদেশি সাহায্যের ব্যাপারে খুব একটা আশাবাদী হতে পারছি না৷'' শাহরিয়ার আলম জানান যে, রোহিঙ্গাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফেরত পাঠানো হবে না৷ যারা সেখানে যেতে আগ্রহী হবেন, তাদেরই পাঠানো হবে৷
গত বছরের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের কক্সবাজার এলাকায় পালিয়ে এসেছেন৷ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছন, মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবার বিষয়ে চুক্তি হলেও তা বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে বলে তাদের ভাসান চরে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া শুরু করে দিতে চাচ্ছে সরকার৷ তিনি বলেন, আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই প্রক্রিয়া শুরুর কথা ভাবছে সরকার৷
একটা সময় ছিল যখন কয়েকজন রোহিঙ্গা মিয়ানমার সংসদে সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ আর এখন রোহিঙ্গাদের ভোট দেয়ারই অধিকার নেই৷
ছবি: DW/M.M. Rahmanবর্তমানে মিয়ানমার নামে পরিচিত দেশে ১২ শতক থেকে মুসলমানরা বাস করছে বলে দাবি অনেক ইতিহাসবিদ ও রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন বলছে, মিয়ানমার যখন ব্রিটিশ শাসনের অধীন (১৮২৪-১৯৪৮) ছিল তখন বর্তমানের ভারত ও বাংলাদেশ থেকে অনেকে শ্রমিক হিসেবে সেখানে গিয়েছিল৷ তবে তারা যেহেতু ব্রিটিশ আমলে এসেছে তাই স্বাধীনতার পর মিয়ানমার তাদের অবৈধ হিসেবে গণ্য করে৷ প্রতিবেদন পড়তে ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Reuters/Z. Bensemraবাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সংসদকে জানান, বার্মায় ১৯৫১ সালের নির্বাচনে পাঁচজন ও ১৯৫৬ সালে ছ’জন রোহিঙ্গা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ সব মিলিয়ে মিয়ানমার সংসদে মোট ১৭ জন রোহিঙ্গা সাংসদ ছিলেন বলে জানান তিনি৷ এর মধ্যে দুজন ছিলেন নারী৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Gacad১৯৬২ সালে বার্মায় সামরিক অভ্যুত্থান হয়৷ এরপর সব নাগরিকদের জাতীয় নিবন্ধন কার্ড করতে বলা হলেও রোহিঙ্গাদের দেয়া হয়েছিল বিদেশি পরিচয়পত্র৷ ফলে রোহিঙ্গাদের জন্য চাকরি ও পড়াশোনার সুযোগ সীমিত হয়ে যায়৷ ছবিটি ১৯৬২ সালের ৪ মার্চ তৎকালীন বার্মার রাজধানী রেঙ্গুন থেকে তোলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AFPরোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে তাড়াতে ১৯৭৭ সালে নির্যাতন শুরু করা হয়৷ ফলে ১৯৭৮ সালের মে মাসের মধ্যে প্রায় দু’লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিল৷ এরপর জুলাইতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ জাতিসংঘও মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল৷ ফলে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল মিয়ানমার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/K. Hudaবাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে স্বাক্ষরিত হওয়া ঐ চুক্তির উপর ‘সিক্রেট’ অর্থাৎ ‘গোপন’ শব্দটি লেখা ছিল৷ ২০১৪ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়টি চুক্তিটি প্রকাশ করে৷ এতে দেখা যায়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে যাঁদের পরিবারের একসময় জাতীয় নিবন্ধন কার্ড ছিল তাঁদের মিয়ানমার সরকার ‘বার্মার বৈধ বাসিন্দা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ চুক্তিটি পড়তে উপরে (+) চিহ্ন ক্লিক করুন৷
ছবি: http://dataspace.princeton.edu১৯৮২ সালে পাস হওয়া নতুন নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের বস্তুত রাষ্ট্রহীন করে দেয়া হয়৷ ঐ আইনে মিয়ানমারের ১৩৫টি জাতিগত গোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেয়া হয়, যার মধ্যে রোহিঙ্গাদের নাম নেই৷ এই আইনের কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য পড়াশোনা, চাকরি, ভ্রমণ, ধর্মীয় রীতিনীতি পালন, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া ইত্যাদি সীমিত হয়ে যায়৷ এছাড়া রোহিঙ্গাদের ভোটের অধিকারও কেড়ে নেয়া হয়৷
ছবি: Reuters/C. McNaughton১৯৯১ ও ১৯৯২ সালে আবার রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমার৷ ফলে প্রায় আড়াই লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিল৷ এরপর তাদের ফিরিয়ে নিতে দুই দেশ একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছিল৷ বিবৃতিতে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ‘মিয়ানমারের বাসিন্দা’ এবং ‘মিয়ানমার সমাজের সদস্য’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল৷
গত আগস্টের এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে অভিযান শুরু করে৷ ইতিমধ্যে এই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ৷ নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ছয় লক্ষ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে৷ তবে তাদের ফিরিয়ে নিতে দু’দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ তারা বলছে, এই চরটি পানিতে তলিয়ে যেতে পারে৷ এ বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘‘আমরা বাঁধ নির্মাণ করছি৷ তাই উদ্বেগের কোনো কারণ নেই৷''
খুব আশাবাদী না হলেও এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ দরকার তাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সহযোগিতা আশা করছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী৷
জেডএ/এসিবি (রয়টার্স)