বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হিসেবে পাঁচ দফা পরিকল্পনা তুলে ধরেন৷ এই নিয়ে ১৪ বার জাতিসংঘ ভাষণ দিলেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
বাংলায় দেয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের দেখতে গিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানান৷ বাংলাদেশ বর্তমানে মিয়ানমার থেকে আসা আট লক্ষের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে বলে জানান তিনি৷ এর মধ্যে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসেব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে চার লক্ষ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷
এই রোহিঙ্গাদের অবশ্যই তাঁদের নিজ দেশে নিরাপদ ও সম্মানের সঙ্গে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন হাসিনা৷ তবে রোহিঙ্গারা যেন মিয়ানমারে ফিরতে না পারে সেজন্য সীমান্ত এলাকায় ল্যান্ডমাইন স্থাপন করা হয়েছে বলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তিনি৷
এদিকে, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের লক্ষ্যে পাঁচটি পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব করেছেন তিনি৷ এগুলো হলো:
অনতিবিলম্বে এবং চিরতরে মিয়ানমারে সহিংসতা ও ‘জাতিগত নিধন’ নিঃশর্তে বন্ধ করা
অনতিবিলম্বে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের নিজস্ব একটি অনুসন্ধানী দল প্রেরণ করা
জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করা এবং এ লক্ষ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলা
রাখাইন রাজ্য হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত সকল রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে তাদের নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা
কোফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার নিঃশর্ত, পূর্ণ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা
তবে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত মিয়ানমারে জাতিসংঘের উদ্যোগে সুরক্ষা বলয় গড়ে তুলতে চাইলে নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন প্রয়োজন হবে৷ কিন্তু সেখানে মিয়ানমারের সমর্থক চীনের ভেটো দেয়ার ক্ষমতা থাকায় অনুমোদন পাওয়া কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷
উল্লেখ্য, রাখাইন রাজ্যে চলা মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ৷ আর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ এক ধাপ এগিয়ে একে ‘গণহত্যা’ বলে মন্তব্য করেছেন৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)
রোহিঙ্গাদের দিকে বাংলাদেশের সাহায্যের হাত
গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৪ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে৷ তাঁদের আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি নানান সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷ ছবিঘরে তারই কিছু নমুনা...
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে দীর্ঘ লাইন
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের জন্য রোহিঙ্গাদের লাইন৷ কুতুপালং ছাড়াও টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি কেন্দ্রে চলছে এই নিবন্ধন কার্যক্রম৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
নিবন্ধনে বিজিবি
কতুপালং শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে কাজ করছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা৷ একেকটি কেন্দ্রে দিনে গড়ে ৭০০ জনের মতো রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন হচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
নিবন্ধিত
বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের পর দুই রোহিঙ্গা শরণার্থী হারুনুর রশীদ ও মোহাম্মদ দিনার৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
সরকারি ত্রাণ
রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিতে নানাভাবে এগিয়ে এসেছে বাংলদেশ সরকার৷ উখিয়ার কুতুপালংয়ে ট্রাক থেকে নামানো হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী৷
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে যান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী৷ ৪৬টি দেশের কূটনীতিকরাও ছিলেন তাঁর সঙ্গে৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
কূটনীতিকদের আশ্বাস
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শিবিরে গিয়ে শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন কূটনীতিকরা৷ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ সহায়তার ঘোষণাও দেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
শিশুসেবা
টেকনাফের শরণার্থী শিবিরগুলোতে সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন বয়সের শিশুদের টিকা দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
নতুন শিবির
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বালুখালীতে দুই হাজার একর জায়গায় শিবির গড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
তাঁবুর রাজ্য
শরণার্থীর চাপে এরইমধ্যে বালুখালীর এই অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রের সীমানা কয়েকগুণ বড় হয়েছে৷ উখিয়ার পাহাড়-টিলার সবখানেই এখন শরণার্থীদের অস্থায়ী তাঁবু৷
ছবি: DW/M. Mostqfigur Rahman
নতুন বসতি
নতুন নতুন পাহাড়ের গাছপালা কেটে প্রতিদিনই নিজেদের বসতি গড়ছেন রোহিঙ্গারা৷