আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, আইসিসি বলেছে, রোহিঙ্গা মুসলমানদের দেশত্যাগে বাধ্য করার বিষয়টি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ কিনা, সেই বিষয়ে তদন্ত করার এখতিয়ার আদালতের রয়েছে৷ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে আইসিসি৷
বিজ্ঞাপন
নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ-এ অবস্থিত আইসিসির এই বিবৃতি রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে একটুখানি আশার আলো দেখাবে বলে এক বিবৃতিতে বলেছেন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস-এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট আদিলুর রহমান খান৷
আইসিসির বিবৃতি নিয়ে মিয়ানমার সরকারের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল বার্তা সংস্থা এএফপি৷ কিন্তু কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি৷
গত এপ্রিলে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি ফাতু বেনসুদা রোহিঙ্গা বিতাড়ন নিয়ে তদন্ত করার এখতিয়ার আইসিসির আছে কিনা, তা জানতে একটি শুনানি আয়োজনের আবেদন করেছিলেন৷
এই শুনানিতে অংশ নেয়া বেশিরভাগ আইনজীবী আইসিসির তদন্ত করার এখতিয়ার আছে বলে মত দেন৷
কেমন আছে রোহিঙ্গারা?
মিয়ানমারে সেনা সদস্যদের নির্বিচার হত্যা-নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার এক বছর পূর্ণ হলো৷ কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে কেমন চলছে অসহায় এসব মানুষের জীবন, সে চিত্রই তুলে আনার চেষ্টায় এই ছবিঘর৷
ছবি: Jibon Ahmed
এক ঘরে ১০ জনের বসবাস
আট সন্তান নিয়ে এক ঘরে গাদাগাদি করে থাকেন জোহার ও উম্মে কুলসুমা দম্পতি৷ তাঁদের দুই মেয়ে বড় হয়েছে৷ আর সবার ছোটটার বয়স দুই বছর৷ রাখাইনে কৃষি কাজ করতেন জোহার৷ এখন কাজ নেই, সাহায্যে চলছে তাঁদের জীবন৷
ছবি: Jibon Ahmed
এক টিউবওয়েলে চলে ৯৯ পরিবার
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ পানি সরবরাহে ক্যাম্পে বসানো হয়েছে গভীর নলকূপ৷ একটি নলকূপের পানি নিয়ে চলছে তিন ব্লকের ৯৯টি পরিবার৷
ছবি: Jibon Ahmed
৩৩ পরিবারের জন্য চার টয়লেট
বাঁশ আর প্লাস্টিক দিয়ে পাহাড়ের ঢালে তৈরি করা হয়েছে টয়লেট৷ এক জায়গায় পাশাপাশি চারটি টয়লেট দিয়ে কাজ চালাতে হয় ৩৩টি পরিবারের সদস্যদের৷ আর দুটো গোসলখানা ব্যবহার করে ২০ থেকে ৩৫টি পরিবার৷
ছবি: Jibon Ahmed
নিউমোনিয়া
রোহিঙ্গা শিবিরের শিশুদের নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার এখনো বেশ৷ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত আট মাসের জাইনুকা বিবিকে বালুখালীতে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমের চিকিৎসকদের কাছে এনেছেন মা খালেদা বানু৷
ছবি: Jibon Ahmed
ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম
ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে বেশ কয়েকটি সংস্থা ও সংগঠন৷ এ রকম একটি টিমের চিকিৎসক সোহেল জানান, প্রতি দিন ৪০-৫০ জন রোগী দেখেন৷ তাঁদের অধিকাংশ পানিবাহিত, ঠান্ডা ও ইনফেকশনের সমস্যা নিয়ে আসেন৷
ছবি: Jibon Ahmed
ঈদে জন্ম ‘কোরবান আলীর’
শরণার্থী শিবিরে ২১ সেপ্টেম্বর জন্ম হয়েছে এজাহার হোসেন ও রেনুর একমাত্র ছেলে সন্তানের৷ কোরবানির ঈদের দিন জন্ম হওয়ায় তার নাম রাখা হয়েছে কোরবান আলী৷ এনজিও পরিচালিত একটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে জন্ম নেওয়া এই শিশু ও তার মা সুস্থ আছে বলে জানান এজাহার হোসেন৷
ছবি: Jibon Ahmed
অপরিকল্পিত বসতি
স্বল্প সময়ের মধ্যে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আসায় তাঁদের আশ্রয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই গড়ে তোলা হয় ঘর৷ বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ঘরগুলো৷
ছবি: Jibon Ahmed
ঝুঁকিপূর্ণ ঘর
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ের মধুরছড়ার এই বসতিতে আছে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা৷ পাহাড়ের ঢালে তৈরি করা হয়েছে তাঁদের ঘর৷ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এসব ঘর থেকে তাঁদের সরিয়ে নেওয়া পরিকল্পনা করেছে সরকার৷ এরইমধ্যে কিছু পরিবারকে সরিয়েও নেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Jibon Ahmed
8 ছবি1 | 8
এই রায়ের কারণে আইসিসি এখন রোহিঙ্গা বিতাড়ন নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করতে পারবে৷ এই বিষয়ে বিচার শুরু করার মতো পর্যাপ্ত প্রমাণাদি আছে কিনা, তা দেখার সুযোগ পাবেন কৌঁসুলি ফাতু বেনসুদা৷
‘রোহিঙ্গা ইস্যু গুরুত্ব পাবে’
বাংলাদেশে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে আসার কথা আর্ল রবার্ট মিলারের৷ গত মাসের ২৩ তারিখে মার্কিন সেনেটে তাঁর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়৷ সেই সময় তিনি বলেন, ‘‘আমার নিয়োগ যদি নিশ্চিত হয়, তাহলে এই বিষয়টাকে (রোহিঙ্গা) অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করার অঙ্গীকার করছি৷’’
আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হবে বলে মনে করেন না মিলার৷ সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা সন্তানদের লেখাপড়া ও তাদের জীবনযাপনের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান তিনি৷
বার্মিজ অনুবাদ সেবা বন্ধ
মিয়ানমারের মূল ভাষা বার্মিজ৷ এই ভাষায় লেখা পোস্ট ও মন্তব্য ইংরেজিতে অনুবাদ করার সেবা চালু করেছিল ফেসবুক৷ কিন্তু সম্প্রতি রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে ফেসবুকের অনুবাদ ত্রুটিপূর্ণ বলে দাবি করা হয়৷ যেমন, বার্মিজ ভাষায় লেখা রোহিঙ্গাবিরোধী এক পোস্টে লেখা হয়েছিল, ‘‘মিয়ানমারে যত ‘কালার’ দেখা যাবে তাদের সবাইকে হত্যা করো৷'' অথচ ফেসবুকের ইংরেজি অনুবাদ ছিল এরকম, ‘‘মিয়ানমারে আমার রংধনু থাকা উচিত নয়৷’’
রয়টার্সের এই প্রতিবেদনের পর গত ২৮ আগস্ট থেকে বার্মিজ অনুবাদ সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছে ফেসবুক৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
নানা কাজে যুক্ত হচ্ছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা
গতবছরের ২৫ আগস্টের পর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসেন কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করা এই শরণার্থীরা জীবন ও জীবিকার তাগিদে নানা কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছেন৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
কৈশোরেই ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান
কুতুপালং মধুরছড়া ৮নং ব্লকে পরিবারসহ থাকে আব্দুর রহমান৷ ৬ সদস্যের পরিবারটি গেল বছরের আগস্টে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে৷ তারপরই অসুস্থ হয়ে পড়েন আব্দুর রহমানের বাবা৷ তাই পরিবারের ভার এখন রহমানের কাঁধে৷ মিয়ানমারে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে ১১ বছর বয়সি রহমান৷ কিন্তু বাংলাদেশে আসার পর থেকে সে থেকে সে মুদি দোকানদার৷ ৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করা এ দোকানে রহমানের মা-ও মাঝে মাঝে বসেন৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
সেলাই করে সংসার চালান ইউনুচ
১০ জনের পরিবার৷ তাই বাংলাদেশ সরকারের দেয়া ত্রাণে সংসার চলে না৷ মিয়ানমারে ইউনুচের দর্জির দোকান ছিল৷ সে কারণে বাংলাদেশে এসেও ৩ হাজার টাকা দিয়ে সেলাই মেশিন কিনে শুরু করেছেন একই কাজ৷ পরিবারের ১০ জনের মধ্যে ৮ জনই মেয়ে৷ তাই মেয়েদের বিয়েসহ অন্যন্য খরচ জোগানোর জন্য দর্জির কাজ করেই টাকা জমাচ্ছেন ইউনুচ৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
মাতৃহারা আমির
গত বছরের ২৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর অভিযানের মূখে মিয়ানমার থেকে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে পালিয়ে আসে আমির সদু (১১)৷ মা মিয়ানমারে সেনাদের হাতে মারা যান৷ ৫ ভাই ২ বোনের মধ্যে আমির সবার ছোট৷ বাবা আবার বিয়ে করেছেন৷ ৭ ভাই-বোনকে থাকতে হয় আলাদা বাসায়৷ পরিবারের স্বার্থে আমিরও নেমে পড়েছে কাজে৷ মধুরছড়ায় রাস্তার পাশে অস্থায়ী এক মুচির দোকান দিয়েছে সে৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
নুর সেহারাও দোকানদার
আলী জোহা রাজমিস্ত্রি৷ তবে তাঁর ছেলে নুর সেহারা এখন দোকান চালায়৷ এক বছর আগে স্ত্রী’র গহনা বিক্রি করে সেই টাকায় দোকান খুলেছিলেন আলী জোহা৷ বড় পরিবারের খরচ নির্বাহ করতে নূরকে দোকানের দায়িত্ব দিয়ে নিজের পুরোনো পেশায় ফিরে গেছেন আলী জোহা৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
মোবাইল মেরামতকারী আতাউল্লাহ
আতাউল্লাহর বয়স এখন ১৯ বছর৷ মিয়ানমারে থাকতে ৮ম শ্রেনি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন৷ এখন বাংলাদেশে এসে কম্পিউটার, মোবাইল ইত্যাদি মেরামতের কাজ পারেন৷ কুতুপালং লোহার ব্রিজ এলাকার এই দোকানে চাকরি করে মাসে ৩ হাজার টাকা পান তিনি৷ ৭ সদস্যের সংসার চালাতে তাঁর বাবাকেও রাজমিস্ত্রির কাজ করতে হয়৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
মামার দোকানে চাকরি
রেজাউল করিমমনের বাবা নেই৷ তাই ১১ বছর বয়সেই সংসার চালাতে মামার দোকানে চাকরি নিতে হয়েছে তাকে৷ মাত্র ৮-৯ হাজার টাকার পুঁজির এ দোকানের আয় খুব বেশি নয়৷৭ সদস্যের পরিবারের জন্য এ মুহূর্তে অবশ্য সামান্য টাকাই অনেক৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
ফি ছাড়া রোগী দেখেন রোহিঙ্গা ‘ডাক্তার’
মিয়ানমারে একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন শামসুল আলম৷ সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কুতুপালং লম্বাশিয়া বাজারে ঔষধের দোকান দিয়েছেন৷ প্রায় ১ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে খোলা এ দোকানে রোগীদের চিকিত্সা সেবা দিতেও দেখা যায় তাঁকে৷ শামশুল জানান, রাখাইন ইউনিভার্সিটি থেকে বিএসসি পাশ করার পর হাসপাতালে চাকরি পেয়েছিলেন৷ ওই চাকরি করার সময় ডাক্তারি সম্পর্কেও ধারণা হয়ে যায় তাঁর৷ কুতুপালংয়ে তাঁর মূল পেশা ওষুধ বিক্রি৷
ছবি: DW/Jibon Ahmed
চুল কাটেন রফিক
সেলুনে চাকরি করেন রফিক৷ বালুখালীর পানবাজারের এই সেলুনে কাজ করার পর মাত্র ৬ মাসেই চুল কাটায় বেশ দক্ষ হয়েছে উঠেছেন রফিক৷ আগে এক সময় টমটম চালাতেন৷ তবে এখন চুল কাটাই রফিকের পেশা৷