আল-জাজিরার এজে প্লাস টুইটার অ্যাকাউন্টে একটি এক মিনিট পাঁচ সেকেন্ডের ভিডিও৷ বিষয়: মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন ও পলায়ন৷
বিজ্ঞাপন
একবিংশ শতাব্দীটাই যেন বিতাড়ন আর পলায়নের শতাব্দী – তার পিছনে জাতি, ধর্ম, অতীত ইতিহাস বা বর্তমান রাজনীতি, যা-ই কাজ করুক না কেন৷ কে জানে, ধর্মের উৎস খুঁজতে গেলেও আমরা শেষমেষ এই ধরনের বিতাড়ন ও পলায়নের কাহিনির সম্মুখীন হব কিনা৷
বাড়িঘর পুড়ছে, পুড়ছে একটি আস্ত গ্রাম৷ আগুন লাগিয়েছে দৃশ্যত মিয়ানমার সেনাবাহিনী৷ ভিডিও-র সূত্রধর বলছেন, সেনারা একটির পর একটি বাড়িতে আগুন দিয়েছে, একটি জ্বলন্ত কুটিরের সামনে বলছেন, ‘এটা আমার বাড়ি৷' সম্ভবত ভিডিও-র সবচেয়ে ব্যক্তিগত মুহূর্ত৷
সেনাবাহিনী নাকি বলছে, বিদ্রোহীরাই এর জন্য দায়ী৷ ২০০৬ সালেও তারা এমনই বলেছিল৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সূত্রে স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি দিয়ে দেখানো হচ্ছে ধ্বংসের পরিমাণ৷ এরপর আবার একটি স্থানীয়, ব্যক্তিগত উল্লেখ – সিমবায়া নামের শেষ বসতিটিও এখন জ্বলছে৷
সহিংসতার শিকার মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা
02:13
এবার কিছু পরিসংখ্যান: ৬০,০০০ উদ্বাস্তু সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে গেছেন; নো-ম্যানস-ল্যান্ডে আটকা পড়েছেন আরো ১০,০০০৷ জাতিসংঘ কি বলেছে, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান কি বলেছেন...
এ সবই শব্দ এবং অনুলিপি, এক মিনিট পাঁচ সেকেন্ডের ভিডিওটি জুড়ে৷ তথ্য সংগ্রহ, পরিবেশন ও বিস্তারের এই যে পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা, তার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের এই মানব ট্র্যাজেডি – মানবিক ট্র্যাজেডির চেয়েও যা বড় – তার সম্পর্ক কোথায় বা কতটুকু?
আমরা যারা মিডিয়ায় কাজ করি, তাদের দায়িত্বই বা কী? আর কবি-সাহিত্যিক-সমাজসেবী? দেশবিদেশের সরকার? নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী? জাতিসংঘ? পোপ? ইউরোপীয় ইউনিয়ন?
পথের পাঁচালীর অপুকে যদি এইরকম ধোঁয়া, আগুন আর হত্যাকাণ্ডের মধ্যে নিশ্চিন্দিপুর ছাড়তে হতো?
এসি/এসিবি
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশ যাত্রা
নিজের দেশে সহিংসতা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা৷ তবে জাতিসংঘের অনুরোধ সত্ত্বেও সীমান্তে কড়াকড়ি অব্যাহত রেখেছ বাংলাদেশ৷ আজও রোহিঙ্গাদের অবৈধ অভিবাসী মনে করে মিয়ানমার৷
আশ্রয়ের সন্ধান
মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের পরিকল্পিত হামলার জের ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর দমনপীড়ন শুরু করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী৷ ফলে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের সীমান্তের দিকে ছুটছেন রোহিঙ্গারা৷ সর্বশেষ অস্থিরতায় ইতোমধ্যে প্রাণ গেছে একশ’র বেশি মানুষের৷
ব্যাপক উদ্বাসন
বাংলাদেশের সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার মাঝখান থেকে এক রোহিঙ্গা শিশুকে পার করছেন এক ব্যক্তি৷ মিয়ানমার সরকার দাবি করেছে, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা সাতটি গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে, একটি চেকপোস্ট এবং এক শহরের দুই প্রান্তে হামলা করেছে৷
ছবি: Getty Images/R.Asad
বৌদ্ধ শরণার্থীরা ছুটছে দক্ষিণের দিকে
নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়নের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার বৌদ্ধরাও নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় খুঁজছেন৷ রোহিঙ্গা মুসলমান এবং রাখাইন বৌদ্ধদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছে৷ ২০১২ সালে সেখানে রক্তাক্ত দাঙ্গা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রবেশ নিষেধ
বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা আশ্রয়প্রত্যাশী রোহিঙ্গাদের সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন৷ তবে এ সব বাধার মাঝেও তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন৷ বাংলাদেশ ইতোমধ্যে চারলাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
মানবিক সংকট
একটি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থার কর্মী লিখেছেন: ‘‘অনেক রোহিঙ্গাকে আমরা অসুস্থ অবস্থায় পাচ্ছি৷ এর কারণ তাঁরা বাংলাদেশে প্রবেশের আগে দীর্ঘসময় সীমান্তে আটকে ছিলেন৷ অসুস্থদের মধ্যে নারী এবং শিশুদের সংখ্যা বেশি৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Alam
বাংলাদেশে স্বাগত নয়
কক্সবাজারের কুতুপালাং শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া একদল রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের একটি দ্বীপে সরিয়ে নিতে চাচ্ছে যেটি বর্ষা মৌসুমে অধিকাংশ সময় পানির নীচে তলিয়ে থাকে৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
নো ম্যান’স ল্যান্ডের আটকে থাকা
পানির মধ্যে দিয়ে হেঁটে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশের চেষ্টা করছে রোহিঙ্গা শিশুরা৷ এই মুহূর্তে ছ’হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় সীমান্তে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷