1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গারা বেশি দিন থাকলে যেসব সংকট হতে পারে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশে এখন সব মিলিয়ে প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে৷ এরমধ্যে পাঁচ লাখ এসেছে ২৫ আগস্টের পর থেকে৷ বাংলাদেশে তাদের অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী হলে নিরাপত্তা, রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংকটের আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা৷

ছবি: Reuters/C. McNaughton

মিয়ানমারের রাখাইনে নির্যাতনের মুখে ২৫ আগাষ্ট থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসা শুরু করেন৷ যাঁরা আসছেন তাঁদের বড় অংশই নারী ও শিশু৷ রোহিঙ্গারা এখনো আসছেন৷ তবে প্রবেশ পথ পরিবর্তন করেছেন তাঁরা৷ এখন টেকনাফের শাহপরী দ্বীপ থেকে নৌকায় বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন৷ গত চার দিনে ওই পথে প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু কক্সবাজারে প্রবেশ করেছে৷ ইউএনএইচসিআর-এর হিসাব মতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৫ দিনে রাখাইন থেকে মোট রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছে পাঁচ লাখ এক হাজার ৫০০৷

রোহিঙ্গাদের এক জায়গায় রাখতে কুতুপালং-এর বালুখালিতে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র করা হয়েছে৷ সেখানে এ পর্যন্ত দুই লাখ রোহিঙ্গাকে নেয়া গেছে৷ বাকিরা কক্সবাজারের বিভিন্ন এলকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান করছেন৷ বড় একটি অংশ অবস্থান নিয়েছেন মহা সড়কের পাশে৷ মহা সড়কের পাশে তাঁরা মূলত ত্রাণের জন্যই আশ্রয় নিয়েছেন৷ কারণ, জেলা প্রশাসন প্রতিদিন ১২টি স্পটে এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে রান্না করা খাবার দিচ্ছে৷ এ পর্যন্ত যেসব ত্রাণ বিদেশ থেকে এসেছে তা-ও পর্যাপ্ত নয়৷ সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠনের দেয়া ত্রাণ সামগ্রীর ওপরই মূলত টিকে আছেন এই রোহিঙ্গারা৷ ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত  বাংলাদেশে চার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবেশ করে৷ জাতিসংঘ তখন ওই হিসাব অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের জন্য আগামী ছয় মাসে ২০০ মিলিয়ন ডলারের প্রয়োজনের কথা জানায়৷ এর আগে  ৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ ৭৮ মিলিয়ন ডলার সহায়তার আবেদন জানিয়েছিল৷ কিন্তু রাখাইন থেকে নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গাদের আসা অব্যাহত থাকায় ত্রাণ সহায়তার কোনো সাময়িক হিসাবই মিলছে না৷

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীদের অন্তত ২০ হাজার হলেন গর্ভবতী মা৷ আর অনেক শিশু বাবা-মাকে হারিয়ে এতিম অবস্থায় বাংলাদেশে এসেছে৷ অন্তত দেড় লাখ শিশু আছে, যারা এখনই স্কুলে যাওয়ার উপযোগী৷ কক্সবাজারে অবস্থানরত মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা রোহিঙ্গাদের এক জায়গায় রাখতে চাইছি৷ এটা মানবাধিকারের এক ধরণের লঙ্ঘন৷ এখনো তাদের নিবন্ধণ শেষ হয়নি৷ তাদের কিভাবে রাখবো? এক এলাকার লোক এক জায়গায় রাখব কিনা তা-ও নিশ্চিত নয়৷ বাস্তবে এখনই এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে৷ গর্ভবতী মা, শিশু এবং বয়স্ক মানুষের খাবারে যে বিশেষত্ব থাকে, তা রিলিফ ওয়ার্কে এখনো দেখা যাচ্ছে না৷ সবার জন্য একই খাবার৷’’

‘রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য বন ও পাহাড় কাটা হচ্ছে’

This browser does not support the audio element.

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এই ৮-৯ লাখ মানুষের চাপের প্রভাব স্থানীয়ভাবে এখনই দেখা যাচ্ছে৷ কক্সবাজার এলকায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে৷ তাদের থাকার জন্য বন এবং পাহাড় কাটা হচ্ছে৷ স্থানীয় অধিবাসীদের চেয়ে এখন রোহিঙ্গা বেশি৷ তাদের সঙ্গে কালচারের পার্থক্য আছে৷ রোহিঙ্গা জনসংখ্যা এখানে আরো বাড়বে৷ আমরা বিষয়টি মানবিকভাবেই দেখছি৷ কিন্তু দীর্ঘ অবস্থানের কারণে এসব বিষয়ই সংকটের সৃষ্টি করতে পারে৷’’

মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক ডিফেন্স এটাশে মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক মনে করেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে দীর্ঘকাল অবস্থান করলে তিন ধরনের সমস্যা হতে পারে৷

১. নিরাপত্তা ঝুঁকি

২. সামাজিক সমস্যা

৩. রাজনৈতিক সমস্যা

‘৯০-এর দশকে যে রোহিঙ্গারা এসেছে তারা রাজনীতিতে জড়িয়েছে’

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘আমি জঙ্গি তৎপরতার অাশঙ্কার কথা বলছি না৷ আমি বলছি, এরা দীর্ঘকাল এখানে থাকলে যদি কোনো কাজ না পায়, তাহলে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে৷ শিশুরা যদি লেখাপড়ার সুযোগ না পায়, তাহলে বিপথগামী হবে, যার প্রভাব ওই এলাকায় পড়বে৷ আর এই মানুষগুলোকে দীর্ঘকাল বাংলাদেশের পক্ষে খাইয়ে-পড়িয়ে রাখা এক বড় চ্যালেঞ্জ৷ স্থানীয়ভাবে তাঁরা প্রভাব বিস্তারও করতে চাইতে পারে৷ অতীতে তা দেখা গেছে৷ তা সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করবে৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘৯০-এর দশকে যে রোহিঙ্গারা এসেছেন, তারা রাজনীতিতে জড়িয়েছে৷ তারা জামায়াতের রাজনীতির অনুসারী হয়েছে৷ আর এ কারণে তাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে৷ সাতকানিয়া এলাকায় তাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে৷ এবার এখনই ঘটবে তা আমি বলছি না৷ তবে তাদের অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী হলে তাদের মধ্যে অস্থিরতা বাড়বে৷ তারা বেশি সুযোগ- সুবিধা ও চলাচলের স্বাধীনতা চাইবে৷ ফলে তারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে চাইবে৷ এবং কোনো কোনো রাজনৈতিক দল এর সুযোগও নেবে৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ