1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গা শিশুদের বিপর্যস্ত জীবন

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২০ অক্টোবর ২০১৭

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার শিশু মানবেতর পরিস্থিতিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ৷সংস্থাটি জানায়, শিশুরা পর্যাপ্ত খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা সেবার সংকটে রয়েছে৷

Geflüchtete Rohingya in Bangladesch
ছবি: Reuters/Z. Bensemra

এপি এবং রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি সপ্তাহে ১২ হাজার শিশু শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছে৷ ক্ষুধা ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা বেশিরভাগ শিশুই এখনও মানসিকভাবে বিভীষিকা কাটিয়ে উঠতে পারেনি৷

২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর নিধনযজ্ঞ চালানো শুরু করে৷ প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা৷

ইউনিসেফের কর্মকর্তা সাইমন ইনগ্রাম জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনেবলেন, ‘‘এই সংকট স্বল্পমেয়াদী নয় এবং খুব তাড়াতাড়ি এর সমাধান হবে না৷'' তিনি বলেন, ‘‘তাই সীমান্ত খুলে দিয়ে যাঁদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে তাদের জন্য বাংলাদেশি শিশুদের মতো সকল সুবিধা নিশ্চিত করা খুব কঠিন৷''

মিয়ানমারের বেশিরভাগ রোহিঙ্গারই নাগরিকত্ব নেই৷ কোনোরকম বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই তাঁরা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে৷ ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনোরকম পরিচয় ছাড়া সমাজে বাস করাটা খুবই কঠিন৷ দুই সপ্তাহ রোহিঙ্গা শিবিরে থাকার পর ইনগ্রাম বলেছেন, এখানে খাবারের সরবরাহ খুবই কম৷ প্রতি পাঁচজনে একজন শিশুর বয়স পাঁচের নিচে৷ তাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন বলে জানান তিনি৷ ইনগ্রাম বলেন, ‘‘সেখানে ডায়রিয়া, কলেরাসহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি খুবই বেশি৷

মো. ইমরান খান

This browser does not support the audio element.

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশু মিয়ানমারে অত্যাচার দেখেছেন এবং কোনো শিশু কখনো তাদের বাবা-মাকে দেখতে পাবে না৷ এটা তাদের ভয়াবহ ক্ষতি করেছে৷''

ইউনিসেফ  সতর্ক করে বলেছে, শিশুরা ‘‘পাচারকারীদের খপ্পরে পড়লে তাদের আরো বড় বিপদ হতে পারে৷

ইউনিসেফ শিশুদের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটের ব্যবস্থা করেছে এবং কলেরার টিকা দিচ্ছে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়৷ জাতিসংঘের কাছে ৭৬ মিলিয়ন ডলার চেয়েছে ইউনিসেফ৷ কিন্তু মাত্র ৭ শতাংশ পাওয়া গেছে বলে জানান ইউনিসেফ কর্মকর্তা ইনগ্রাম৷

জাতিসংঘ সংস্থাগুলো এখনও রাখাইনে যাওয়ার অনুমতি চাইছে৷ সেখানে ঠিক কত রোহিঙ্গা না খেয়ে আছে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য নেই তাদের কাছে৷ ইনগ্রাম বলেন, ‘‘আমরা আবারও বলতে চাই, রাখাইনে শিশুদের জন্য নিরাপত্তা প্রয়োজন৷ সেখানে শিশুসহ সবার উপর হত্যাযজ্ঞ থামাতে হবে৷ আমরা এ বিষয়ে চুপ করে থাকতে পারি না৷''

আবদুস সালাম

This browser does not support the audio element.

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন আবদুস সালাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শিশুরা নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচেছ৷ তারা চর্মরোগেও আক্রান্ত হচ্ছে৷ তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷ বাংলাদেশের শিশুরা যেমন চিকিৎসা পায়, তারাও সেরকম চিকিৎসা পাচ্ছে৷ আর শিশুদের জন্য আলাদা খাবারও দেয়া হচ্ছে সাধ্যমত৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ যাদের বয়স ১০-১২ বছর সেই শিশুরা রাখাইনের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি দেখে থাকলে ট্রমায় আক্রান্ত হতে পারে৷ তাদের মানসিক সমস্যা হতে পারে৷''

রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য ‘শিশুপল্লি'

এদিকে এতিম রোহিঙ্গা শিশুদের সুরক্ষার জন্য ‘শিশুপল্লি' নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে উখিয়ার নিবন্ধিত কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধুছড়া এলাকায় ২০০ একর জমিও নির্ধারণ করা হয়েছে৷ সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ও ‘মিয়ানমার ন্যাশনাল অরফান চাইল্ড' প্রকল্পের সমন্বয়কারী সৈয়দা ফেরদৌস আক্তার বাংলাদেশের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা বাসস-কে এই তথ্য জানিয়েছেন৷ 

গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৩০ দিনে ১৮ হাজার ৪৪৯ রোহিঙ্গা এতিম শিশুকে শনাক্ত করা হয়েছে৷ সমাজসেবা অধিদপ্তরের ৮০ জন কর্মী ক্যাম্পগুলোতে গিয়ে খুঁজে খুঁজে অনাথ শিশু শনাক্তকরণের কাজ করছেন৷ যারা বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছে, যারা শুধু বাবা হারিয়েছে, যারা প্রতিবন্ধী, আর যারা মা-বাবার খোঁজ পাচ্ছে না- এমন চারটি শ্রেণিতে এদের ভাগ করা হচ্ছে৷ শিশু আইন অনুযায়ী, ১৮ বছর বয়সি পর্যন্ত শিশুদের হিসেবে গণনা করে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে৷

সমাজসেবা অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক প্রীতম কুমার চৌধুরী বলেন, ‘‘ইতোমধ্যে টেকনাফের পাঁচটি ক্যাম্পে শনাক্তকরণের কাজ শেষ হয়েছে৷ এখন চলছে বড় দুইটি ক্যাম্প কুতুপালং ও বালুখালীতে৷ শনাক্ত হওয়া এতিম শিশুদের সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে৷'' তিনি জানান, এতিম রোহিঙ্গা শিশুদের সংখ্যা ২৫ হাজার পর্যন্ত হতে পারে৷

এই প্রকল্পের পরিচালক মো. ইমরান খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা এতিম শিশুরা ট্রোমাটাইজড৷ তারা নির্যাতন ও সহিংসতা দেখেছে৷ তাদের সামনেই তাদের মা-বাবাকে হত্যা করা হয়েছে৷ তবে শুরুতে তাদের মানসিক অবস্থা যতটা খারাপ ছিল, এখন আর ততটা নাই৷ তারা ধীরে ধীরে ভয় কাটিয়ে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে৷ তাদের নিয়ে মনোচিকিৎসক, স্বেচ্ছাসেবক ও চিকিৎসকরা কাজ করছেন৷ তাদের সঙ্গে থাকছেন, মিশছেন৷ তাদের খেলাধুলাসহ নানা কাজের মধ্যে রাখা হচ্ছে৷''

তিনি জানান,‘ দীর্ঘ মেয়াদে তাদের ভাষা , তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় এবং পড়াশুনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ