1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গা শিশুদের মুখে এক টুকরো হাসি

৫ নভেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হাসির ঘটনা বিরল৷ তবে ‘ক্লাউন' দেখে ছেলেমেয়েদের আনন্দে কাঁপা কণ্ঠস্বর সত্যিই এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি করে৷ আর এভাবেই গেলো সপ্তাহে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির থেকে ভেসে এসেছে ‘শিশুদের হাসি'৷

রোহিঙ্গা শিশুদের আনন্দিত মুখ
রোহিঙ্গা শিশুদের আনন্দিত মুখছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa

দীর্ঘদিন ধরে শোকাবহ আর কঠিন এক পরিস্থিতির মধ্যে থাকা এই শিশুদেরকে মানসিক ট্রমা থেকে বের করে আনতেই এই আয়োজন৷

মা আর তিন ভাই-বোন নিয়ে মোহাম্মদ নূর কুতুপালংয়ে এক অস্থায়ী কুঁড়েঘরে থাকছে, বাঁচার জন্য একটু খাবার আর পানির অভাবের সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে যেতে হচ্ছে তাদের৷ মিয়ানমারের সেনাদের হাতে নৃশংসভাবে তার বাবার মৃত্যুর পর মা আর অন্যদের নিয়ে ১০ বছর বয়সি নূর গত মাসে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে৷

বিষাদময় জীবনে এই সার্কাসই যেন নতুন একটা কিছু নিয়ে এলো৷

নূরের ভাষায়, ‘‘এটা খুবই হাস্যকর ছিল৷ আমি আগে কখনও এমন সার্কাস দেখিনি৷ আমি আর আমার বন্ধুরা খু্ব মজা পেয়েছি৷ আমরা শুধু হেসেছি আর হেসেছি৷''

চরম হতাশাজনক পরিস্থিতিকে খানিকটা হালকা করতে ‘বাংলাদেশে থিয়েটার গ্রুপ'-এর ‘ড্রামা থেরাপি' ব্যবহার করার রেকর্ড আগেও ছিল৷ যেমন, ২০১৩ সালে রানা প্লাজার ধসের ঘটনায় ১১শ' পোশাককর্মীর মৃত্যুর পর একদিকে একটি দল নানান পারফরম্যান্স দেখিয়েছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক দুর্ঘনায় ৫০জন শিশু নিহত হওয়ায় সেখানে অন্য আরেকটি দল ভিন্ন আরেক ধরনের আয়োজন নিয়ে হাজির হয়েছিল৷  রোহিঙ্গা ক্যাম্প, যেখানে অনেক মানুষ অসুস্থ বা আহত, শোকাবহ পরিবেশ...এমন সব জায়গায় মাঝেমধ্যে এ ধরনের হাস্যরসের দরকার হয়৷ 

‘‘আমাদের একমাত্র লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের মুখে হাসি ফোটানো'' বললেন গ্রুপটির অভিনেত্রী রিনা আক্তার পুতুল৷ ‘‘ মানুষকে হাসানোর কাজটি খুবই কঠিন, বিশেষ করে যারা সহিংসতায় তাদের বাবা-মাকে হারিয়েছে,'' যোগ করেন তিনি৷

জাতিসংঘের হিসাব মতে, গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে, যার ৬০ ভাগই শিশু৷ রাখাইন রাজ্যে বাবা-মা'র মৃত্যুর পর অনেক শিশু একা একাও পালিয়ে এসেছে৷

দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নাট্যচর্চা করছেন ফকির আলী৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত যে, আমাদের শো কিছু সময়ের জন্য হলেও তাদের স্মৃতিতে থাকবে৷ এতে তাদের ভয় হয়তো একেবারে চলে যাবে না৷ তবে তাদের আত্মবিশ্বাস অনেকখানি বেড়ে যাবে৷''

কেবল শিশুরা নয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা বেশিরভাগ মানুষই উপভোগ করেছেন এই সার্কাস৷ কাজেই তাদের এই অক্লান্ত পরিশ্রম সবারই কাজে আসছে কোনো-না-কোনোভাবে৷ 

ড্রোন থেকে তোলা ছবিতে হাজারো রোহিঙ্গার দেশ ছাড়ার দৃশ্য

00:55

This browser does not support the video element.

৩৮ বছর বয়সি নিসার আহমেদ বলেন, ‘‘একেবারে মাঝেমধ্যে আমরা এরকম মজা করার সুযোগ পাই৷ এমনকি মুসলমানদের বিয়ে বা অন্যান্য ধর্মীয় উত্সবের সময়ও খুব অল্পই বিনোদনের সুযোগ থাকে৷'' 

‘‘রাখাইনের জীবন ভয়ানক,'' বললেন ৬৩ বছর বয়সি খাইরুল আমিন৷ তিনি এএফপিকে বলেন, ‘‘শিশু, তরুণ, বয়স্ক সবাই এসে তীব্র এক ভীড় সৃষ্টি করে শো-এর সময়৷'' 

তিনি আরও বলেন, ‘‘এখানে কোনো টেলিভিশন, থিয়েটার বা সিনেমা নেই৷ সার্বক্ষণিক সঙ্গী হলো, সামরিক বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া বা মারা যাওয়ার আতংক৷''

নিজের সবচেয়ে ছোট বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে এই শো দেখেছেন রেহানা৷ হাসতে হাসতে তিনি বললেন, ‘‘আমার জীবনে কখনোই আমি এই ধরনের মজা দেখিনি৷''

এএম/এসিবি (এএফপি)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ