টুইটারে রোহিঙ্গা শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নিজের শিশুদের ছবি আপলোড করলেন ফুটবলস্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো৷ তাঁর টুইট ইতিমধ্যএই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
‘আমরা প্রত্যেকে আমাদের শিশুদের ভালোবাসি৷ আসুন, পাশে দাঁড়াই রোহিঙ্গা শিশুদের৷' টুইটারে এমনই এক টুইট করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন সুপারস্টার রোনাল্ডে৷ টুইটে পাশাপাশি দু'টি ছবি আপলোড করেছেন তিনি৷ একদিকে খালি পায়ে শিশুকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন এক রোহিঙ্গা বাবা, অন্যদিকে নিজের ৪ সন্তানকে নিয়ে বসে আছেন রোনাল্ডো৷
রোনাল্ডোর টুইট সোশ্যাল মিডিয়াতে আসার পরেই ভাইরাল হয়ে যায়৷ অনেকেই তাঁকে সমর্থন করে টুইটটি শেয়ার করতে থাকেন৷ এই প্রথম রোনাল্ডোর মতো কোনো ফুটবলস্টার রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করলেন, আবেদন জানালেন রোহিঙ্গা শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর৷
২০১৫ সালের আগস্টের পর থেকে রোহিঙ্গারা আবার তাঁদের দেশ মিয়ানমার ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে আশ্রয় নিচ্ছেন৷ সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে৷ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হামলায় অন্তত প্রায় ৭ হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন বলে অভিযোগ৷ নিহতদের মধ্যে অসংখ্য শিশুও রয়েছে৷
ঘটনার সূত্রপাত, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসবাদীদের একটি সংগঠন মিয়ানমারের ৩০টি পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ করার পর৷ মিয়ানমার সেনাবাহিনী শক্ত হাতে সন্ত্রাসীদের দমনের নামে একের পর এক রোহিঙ্গা গ্রামে আক্রমণ চালায়৷
সম্ভবত সেই সমস্ত খবরই রোনাল্ডোকে নাড়িয়ে দেয়৷ রোহিঙ্গা শিশুদের বাস্তবিক অবস্থার কাহিনি পড়ে এবং ছবি দেখে এমন একটি পোস্ট করেন তিনি৷ মাঠে এবং মাঠের বাইরে বরাবরই আবেগপ্রবণ বলে পরিচিত রোনাল্ডো৷ তিনি কাঁদেন, হাসেন, রাগ প্রকাশ করেন৷ রোহিঙ্গা শিশুদের নিয়ে রোনাল্ডোর টুইট সেই আবেগেরই আরেকরকম বহিঃপ্রকাশ৷
ধ্বংসস্তূপ থেকে রোনাল্ডোর শহরে
সুনামিতে পরিবারের সবাইকে হারানোর শোক আর দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত যখন, ছেলেটি তখনও গায়ে দিয়েছে পর্তুগালের জার্সি৷ ফুটবলপ্রেমিক সেই কিশোর বড় ফুটবলার হতে রোনাল্ডোর শহরেই শুরু করেছে নতুন জীবন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. De Almeida
রোনাল্ডোর সঙ্গে দেখা...
২০০৪ সালের ডিসেম্বরে ‘প্রলয়’ নেমে এসেছিল এশিয়ার সাগর তীরের কিছু এলাকায়৷ শ্রীলঙ্কা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া মিলিয়ে মারা গিয়েছিল দু’লক্ষেরও বেশি মানুষ৷ ইন্দোনেশিয়ার মার্তুনিসের ঘর-বাড়িও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় সেই সময়৷ সুনামির পর পর্তুগাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের হয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়েছিলেন রোনাল্ডো৷ তখন ফুটবলভক্ত মার্তুনিসের পাশে দাঁড়াতেও ভোলেননি৷
ছবি: picture-alliance/EPA/M. nagi
পর্তুগালের ভক্ত যখন স্কোলারির পাশে
২০০৪ সালে যখন বাবা-মা-ভাই-বোন সবাইকে হারিয়ে সে যখন নিঃসঙ্গ, জীবনে নেমে এসেছে চরম দারিদ্র্য, সেই অবস্থাতেও পর্তুগালের জার্সি গায়ে ফুটবল খেলতে দেখা যায় তাঁকে৷ মিডিয়া লুফে নিয়েছিল বিষয়টি৷ ২০০৬ বিশ্বকাপের প্রস্তুতির এক ফাঁকে পর্তুগালের তখনকার ব্রাজিলিয়ান কোচ লুই ফেলিপ স্কোলারিও সময় কাটিয়েছিলেন মার্তুনিসের সঙ্গে৷
ছবি: picture-alliance/EPA/F. Paraiso
ইউসেবিও-র পাশে গর্বিত মার্তুনিস
খুব বড় মাপের ফুটবলার হওয়া মার্তুনিসের স্বপ্ন৷ এটা জানার পর তাকে পর্তুগলে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেই সুবাদে ইন্দোনেশীয় কিশোরের পর্তুগালের ফুটবল কিংবদন্তি ইউসেবিও-র সঙ্গেও দেখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. De Almeida
ইউসেবিও, ফিগো, রোনাল্ডোদের দেশে
প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের জীবন কেড়ে নেয়া সুনামি নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করতে গিয়ে মার্তুনিসকে পর্তুগালের জার্সি পরা অবস্থায় দেখতে পেয়েছিল স্কাই টিভির কয়েকজন কর্মী৷ সেই থেকে মার্তুনিস বিশ্বের অনেক দেশেই পরিচিত৷ পরে পর্তুগালেই নিয়ে যাওয়া হয়৷ শুরু হয় নতুন জীবন৷ ছবিতে পর্তুগালের আরেক সাবেক ফুটবল গ্রেট লুই ফিগোর সঙ্গে মার্তুনিস৷
ছবি: picture-alliance/EPA/F. Paraiso
স্বপ্ন পূরণের পথে...
২০০৪ সালের ৬ বছরের সেই কিশোরের বয়স এখন ১৭৷ বড় হয়েছে ঠিক, কিন্তু মার্তুনিসের স্বপ্নটা কিন্তু বদলায়নি৷ এখনো বড় ফুটবলার হতে চায় সে৷ সম্প্রতি পর্তুগালের স্পোর্টিং লিসবন ক্লাব তাকে ফুটবলার হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্বও নিয়েছে৷ মার্তুনিস এখন স্পোর্টিং লিসবন ফুটবল অ্যাকাডেমির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ৷ ফুটবলার হওয়া এখন ঠেকায় কে!