কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে থাকা শিশুদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ৷ মিয়ানমারের পাঠ্যসূচি অনুযায়ী তারা পড়ালেখা শিখবে৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন এএফপিকে বলেছেন, ‘‘আমরা একটি হারিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা প্রজন্ম চাই না৷ আমরা চাই তারা পড়ালেখা শিখুক৷ তারা মিয়ানমারের পাঠ্যসূচি অনুসরণ করবে৷''
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, রোহিঙ্গা শিশুরা ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত মিয়ানমারের ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে পড়ালেখা করবে৷ তাদেরকে কারিগরি প্রশিক্ষণও দেয়া হবে, যেন তারা যখন মিয়ানমারে ফিরে যাবে তখন সেখানে চাকরি করতে পারে৷
স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, শিগগিরই দশ হাজার শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি পাইলট প্রকল্প শুরু হবে৷
রোহিঙ্গা শিবিরে পাঁচ লাখের বেশি শিশু রয়েছে৷ এতদিন তারা বাংলাদেশ কিংবা মিয়ানমারের পাঠ্যসূচি অনুযায়ী পড়াশোনা করতে পারত না৷ ইউনিসেফের উদ্যোগে তৈরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে শুধুমাত্র প্রাথমিক পর্যায়ের লেখাপড়া করতে পারতো তারা৷
রোহিঙ্গা শিশুদের পড়াশোনা, ধর্মচর্চা ও চিকিৎসা
জীবন বাঁচাতে রোহিঙ্গারা ত্যাগ করেছেন মাতৃভূমি৷ বাংলাদেশে কিভাবে হচ্ছে তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনা আর নিজেদের ধর্মচর্চা? কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে তোলা ছবি দিয়েই তা জানাচ্ছেন জীবন আহমেদ৷
ছবি: Jibon Ahmed
১ম শ্রেণি শেষ করেছে আয়াছ
নয় বছর বযসি মো. আয়াছ-ও শরণার্থীর ঢলের সাথে জীবন বাঁচাতে চলে এসেছে বাংলাদেশে৷ অল্প বয়সেই সাক্ষী হয়েছে বিভৎসতার, নিষ্ঠুরতার৷ তারপরও থেমে থাকেনি আয়াছ৷ এক বছরে শেষ করেছে প্রথম শ্রেণির পড়াশোনা৷ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিও পরিচালিত ‘মুক্তি’ স্কুলে লেখাপড়া করা আয়াছ মেধার পরিচয়ও দিচ্ছে শ্রেণীকক্ষে, জানালেন শিক্ষকরা৷
ছবি: Jibon Ahmed
ডাক্তার হবে উম্মে হাবিবা
ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখে ৬ বছরের উম্মে হাবিবা৷ স্বপ্ন পূরণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হাবিবা ক্যাম্পের স্কুলের দৈনিক তিন শিফটের কোনোটিই বাদ দিতে চায় না৷ ইংরেজিতে ছড়া ও অক্ষর লিখতে শিখেছে ইতিমধ্যে৷ হাবিবা পড়ালেখায় ভালো এবং মনোযোগী বলে জানিয়েছেন তার শিক্ষকেরা৷
ছবি: Jibon Ahmed
রোহিঙ্গা শিশুদের ইংরেজি পড়ান নাহিদা
রোহিঙ্গা তরুনী নাহিদা নিজ দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে৷ নিজ দেশ ছেড়ে এসেও থেমে নেই তিনি৷ বর্তমানে একটি এনজিও পরিচালিত স্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করেন৷ চেষ্টা করছেন রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে নিয়ে যেতে৷
ছবি: Jibon Ahmed
রোহিঙ্গা শিশুদের ধর্ম শিক্ষা
সাত লাখেরও অধিক রোহিঙ্গার ধর্ম শিক্ষার জন্য মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ করেছে বিভিন্ন এনজিও৷ রোহিঙ্গা মুসলিম শিশুদের মাদ্রাসায় পড়ার আগ্রহই বেশী৷ অন্যদিকে মসজিদগুলোতে বয়স্কদের নামাজ পড়ার জন্য রয়েছে ভালো ব্যাবস্খা৷
ছবি: Jibon Ahmed
মা-বাবা নেই, তাই এতিমখানায়
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থাপিত বেশিরভাগ মাদ্রাসাতেই রয়েছে এতিমখানা৷ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে মা-বাবা হারানো সন্তানদের ঠাঁই হয়েছে এ এতিমখানাগুলোতে৷ এতিমখানাগুলোতে সবাই মিলেমিশে মা-বাবা হারানোর শোক ভোলার চেষ্টা করে তারা৷
ছবি: Jibon Ahmed
স্থানীয় চিকিৎসা
ঝার-ফুঁক আর ওঝা দিয়ে জীন তাড়ানোর সংস্কারও আছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক বৈদ্য আগুন দিয়ে একজন ‘রোগীর উপর ভর করা জীন’ তাড়ানোর চেষ্টে করছেন৷ তিনি একজন পেশাদার বৈদ্য৷ জীন তাড়ানো বাবদ প্রতিবার তিনি তিন হাজার এক টাকা করে নেন৷
ছবি: Jibon Ahmed
6 ছবি1 | 6
ফলে কিছু রোহিঙ্গা শিশু ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে বাংলাদেশের স্কুলে ভর্তি হয়েছিল৷ গতবছর অভিযান চালিয়ে তাদের কয়েকজনকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে৷ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সেই সময় বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করেছিল৷
এছাড়া বিভিন্ন ইসলামি গোষ্ঠীর গড়ে তোলা মাদ্রাসাগুলোতেও শিক্ষা নিয়ে থাকে রোহিঙ্গা শিশুরা৷
প্রতিক্রিয়া
রোহিঙ্গা যুব নেতা ও মানবাধিকার কর্মী রফিক বিন হাবিব রোহিঙ্গা শিশুদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের অনুমতি পাওয়ায় খুব খুশি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি কথা দিয়ে আমার আনন্দ প্রকাশ করতে পারবনা... বৈষম্যের কারণে রোহিঙ্গাদের কয়েক প্রজন্ম মিয়ানমারেই তেমন শিক্ষাগ্রহণ করেত পারতনা৷''
এই সিদ্ধান্তের কারণে শিশুদের মৌলবাদী হয়ে যাওয়ার সুযোগও কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি৷
এদিকে, বাংলাদেশে জাতিসংঘের প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো এএফপিকে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত ‘উপযুক্ত সময়ে তাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি সহজ করবে'৷
রোহিঙ্গা নিয়ে কী বলছেন বিশ্ব নেতারা?
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের অন্যতম অ্যাজেন্ডা রোহিঙ্গা ইস্যু৷ অধিবেশনের পাশাপাশি চলা বিভিন্ন সেমিনারে ইতোমধ্যে এ নিয়ে কথা বলছেন বিশ্ব নেতারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
দ্রুত সমাধান চান মাহাথির
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখনি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ৷ এটি একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: Reuters
টেকসই প্রত্যাবাসন চায় চীন
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা যেন নিরাপদে ও স্থায়ীভাবে নিজ দেশে বাস করতে পারে সে পরিস্থিতি চায় চীন৷ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কূটনীতিকদের সাথে এক আলোচনা শেষে গণমাধ্যমকে একথা জানান চীনের কূটনীতিকরা৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
আলাদা জমির দাবি
রোহিঙ্গাদের জন্য শিবির বানিয়ে দিতে বাংলাদেশের কাছে জমি বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের সমস্যার বোঝা বহনের আহ্বানও জানান তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা বাংলাদেশের কাছে রোহিঙ্গাদের জন্য ক্যাম্প তৈরি করতে জমি বরাদ্দ চেয়েছি৷ আমরা তুরস্কে অবস্থানরত সিরিয়ার শরণার্থীদের জন্য শিবির তৈরি করেছি যা এখন বিশ্বের সবচেয়ে ভালো শিবির৷’’
ছবি: AFP/A. Altan
ত্রিপাক্ষিক কমিটি গঠনের প্রস্তাব
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করে ত্রিপাক্ষিক আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে চীন৷ এ লক্ষে তারা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কূটনীতিকদের সাথে একটি আলোচনা সভাও করেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Yu
সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব শেখ হাসিনার
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান বিষয়ে চারটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ এর মধ্যে রয়েছে, জাতিগত নিধন বন্ধ করা, রাখাইনে ‘সেফ জোন’ গড়ে তোলা ও বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করা৷ শুক্রবার সাধারণ পরিষদের সভায় এ প্রস্তাব বিশ্ব নেতাদের সামনে তুলে ধরার কথা শেখ হাসিনার৷