1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গা সংকট: এখন কী করতে পারে বাংলাদেশ?

সমীর কুমার দে ঢাকা 
২০ জুলাই ২০১৮

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে প্রসংশা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ৷ গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি  ব্যক্তিরা বাংলাদেশ সফর করছেন৷ সবাই বলেছেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে ফেরত নিতে হবে৷ কিন্তু ফিরিয়ে নেয়া শুরু হচ্ছে না৷

Bangladesch Rohingya-Familien im Flüchtlingslager
ছবি: Getty Images/A. Joyce

এর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে  মিয়ানমার৷ কিন্তু তারপর কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না৷ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে, সবাই সহানুভুতি দেখাচ্ছে, কিন্তু মিয়ানমার তাদের ফেরত নিচ্ছে না৷ তাহলে কি বাংলাদেশে চেষ্টায় কোনো ত্রুটি আছে বা ভিন্ন কোনো পথে যেতে হবে? বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় সমাধান হবে না্৷ আন্তর্জাতিক তৎপরতা দিয়েই রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে৷ আসলে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য করতে হবে৷

পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ডয়চে ভেলের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ যা করা সম্ভব তার সবই করছে৷ এর কিছু আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, কিছু পাচ্ছেন না৷ রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশের যা করা দরকার তার সবই করা হবে৷''  

‘কিছু আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, কিছু পাচ্ছেন না’

This browser does not support the audio element.

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে তৃতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশন বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দলের প্রধান গানার উইগান্ড রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা করতে ইইউ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এজন্য এগিয়ে আসতে হবে৷ রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান৷

পরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়েছে৷ 

মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাবেক ডিফেন্স অ্যাটাশে মেজর জেনারেল (অব.) শহিদুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০১৯ সালের আগে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আমার মনে হয় না৷ কারণ, আগামী বছর ওই দেশে জাতীয় নির্বাচন৷ সেখানে সামরিক বাহিনী বা সূচি'র পলিসি কী হবে সেটার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে৷ আসলে আমাদের ‘বড় ভাই' ভারত এ ব্যাপারে উদ্যোগী না হওয়া পর্যন্ত সমাধান পাওয়া কঠিন৷ আবার চীন মিয়ানমারকে সাহায্য করছে৷ ফলে তারা সাহস পাচ্ছে৷ আমাদের যে চেষ্টা আছে, তাতেই ফল মিলবে বলে আমি আশাবাদী৷''

‘আগামী বছর ওই দেশে জাতীয় নির্বাচন’

This browser does not support the audio element.

কয়েকদিন আগে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়ন নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) চিঠির জবাব চিঠির জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ৷ অথচ মিয়ানমার সেই চিঠি গ্রহণই করেনি৷ ওই সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেই এ সংকট সমাধানে বেশি আগ্রহী৷ বাংলাদেশ যেহেতু রোম সংবিধিতে সই করেছে, সেহেতু আইসিসির চিঠির জবাব দেওয়ার এক ধরনের বাধ্যবাধকতা বাংলাদেশের ছিল৷ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যেসব তথ্য চেয়েছে, আমরা কেবল সেগুলোই তাদের দিয়েছি৷ বাংলাদেশ এখনও মনে করে, মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেই এ সংকটের সমাধান সম্ভব৷''

এর আগে বাংলাদেশের কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গাদের কাছে মিয়ানমার সেনাদের নিষ্ঠুর নিপীড়নের বর্ণনা শোনেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের আর বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম৷ রোহিঙ্গাদের করুণ অবস্থা দেখে নিজেকে রোহিঙ্গাদের অবস্থানে দাঁড় করিয়ে হতবাক হয়ে পড়েন বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট৷ তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করতে এসে জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ দৃশ্যের মুখোমুখী হলাম৷'' রোহিঙ্গা শিশুদের মাঝে নিজ সন্তান ও নাতিদের মুখচ্ছবিও ভাসতে দেখেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব৷

‘দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সমাধান হবে না’

This browser does not support the audio element.

এছাড়া তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিন এর্দোয়ান রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ যা করছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়৷ রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশে তুরস্কের সহায়তা অব্যাহত থাকবে৷ এস ময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুট ক্যাভুফোগলু৷ শান্তিতে নোবেল বিজয়ী তিন নারী ইরানের শিরিন এবাদি, ইয়েমেনের তাওয়াক্কল কারমান ও যুক্তরাজ্যের মেরেইড ম্যাগুয়ারও রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন৷ তাঁরাও রোহিঙ্গাদের কাছে নির্যাতনের বর্ণণা শুনে আঁতকে ওঠেন৷ বাংলাদেশের প্রসংশা করেন, পাশে থাকার আশ্বাস দেন৷ 

এমন অনেক আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এর মধ্যে বাংলাদেশ সফর করেছেন, গেছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে৷ সবাই বলছে, দ্রুত তাঁদের ফেরত নেয়ার কথা৷ কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না৷ কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিচ্ছে না মিয়ানমার৷ বাংলাদেশের পক্ষে আর কী করা সম্ভব? এমন প্রশ্নের জবাবে শরণার্থী বিশেষজ্ঞ ড. সি আর আবরার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সমাধান হবে না৷ এটা এতদিনে বোঝা গেছে৷ আর রোহিঙ্গা সমস্যা যে দীর্ঘমেয়াদি, সেটাও আমাদের জানা৷ এখন আইসিসির চিঠির জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ, এটা ভালো দিক৷ এসব পথ দিয়েই সমাধানে আসতে হবে৷ কারণ, তারা রোহিঙ্গাদের শরণার্থীই বলছে না, গণহত্যাকে গণহত্যা বলছে না৷ ফলে তাদের কাছে আমরা কী প্রত্যাশা করতে পারি৷ তাই আমাদের আন্তর্জাতিক পথেই যেতে হবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ