রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার যে চুক্তি হয়েছে তাতে এই সংকটের কোনো সমাধান দেখছেন না বিশ্লেষকরা৷ এটাকে মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক চাপ কমানোর কৌশল হিসেবে দেখছেন তাঁরা৷
বিজ্ঞাপন
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ওই চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের পর ও এ বছরের ২৫ আগস্টের পরে মিয়ানমার থেকে যারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে তাদের ফেরত নেবে মিয়ানমার৷ দুই মাসের মধ্যে ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার কথা৷ কিন্তু কতদিনের মধ্যে ফেরত নেয়া হবে তা চুক্তিতে বলা নেই৷ মিয়ানমারের ফেরত নেয়ার পর প্রথমে রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় কেন্ত্রে রাখা হবে৷ আর সম্মতিপত্রে সই করা হয়েছে ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের চুক্তির আলোকে৷
মিয়ানমার ঐ সম্মতিপত্র মেনে নিলে বাংলাদেশ থেকে তারা সাত লাখের মত রোহিঙ্গা ফেরত নেবে৷ কিন্তু বাংলাদেশে এখন রোহিঙ্গা শরণার্থী আছে ১০ লাখেরও বেশি৷ ২০১৬ সালের আগে আসা তিন লাখ রোহিঙ্গা ফেরত নেয়ার কোনো কথা চুক্তিতে নেই৷ এছাড়া দিনে কত জন ফেরত নেয়া হবে আর কতদিনের মধ্যে ফেরত নেয়া হবে তার কোনো সময়সীমার উল্লেখ নেই এতে৷ এর আগে ১৯৯২ সালে দু'দেশের মধ্যে যে সমঝোতা হয় তার অধীনে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে মাত্র দুই লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নিয়েছে মিয়ানমার৷ তবে ১৯৭৮ সালে যে চুক্তি হয় তার অধীনে ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিয়েছিল তারা৷
রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংসতার চিত্র
মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে৷ রয়টার্সের আলোকচিত্রীর ছবিতে সেইসব নৃশংসতার ছবি ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
একবছরের শিশু
মনকে নাড়া দেয়া ব্যান্ডেজে মোড়ানো তুলতুলে ছোট্ট এই দু’টি পা শহিদের৷ বয়স মাত্র এক বছর৷ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হামলা থেকে বাঁচতে দাদি তাহেরা যখন পালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর কোল থেকে পড়ে যায় ছোট্ট শহিদ৷ ছবিটি কক্সবাজারে রেডক্রসের এক হাসপাতালে ২৮ অক্টোবর তোলা৷
ছবি: Reuters/H. McKay
কালাবারো, ৫০
রাখাইনের মংদুতে তাঁদের গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয় সেনা সদস্যরা৷ এতে স্বামী, মেয়ে ও এক ছেলেকে হারান কালাবারো৷ তাঁর ডান পায়ে আঘাত করা হয়৷ যেখানে পড়ে গিয়েছিলেন সেখানেই কয়েক ঘণ্টা মারা যাওয়ার ভান করে ছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
সেতারা বেগম, ১২
নয় ভাই-বোনের মধ্যে একজন সে৷ সেনারা যখন তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন বাকি আটজন বের হয়ে যেতে পারলেও সে আগুনের মধ্যে আটকা পড়ে গিয়েছিল৷ পরে তাকে উদ্ধার করা হয়৷ তবে পা পুড়ে যায়৷ এই অবস্থায় বাংলাদেশে পৌঁছেছে সে৷ বাংলাদেশেই তার চিকিৎসা করা হয়৷ এখন তার দুই পা থাকলেও নেই কোনো আঙুল৷
ছবি: Reuters/J. Silva
নূর কামাল, ১৭
নিজের ঘরে লুকিয়ে ছিল সে৷ সেখান থেকে সৈন্যরা তাকে খুঁজে বের করে প্রথমে রাইফেলের বাট, পরে ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে৷ ছবিতে সেটিই দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
আনোয়ারা বেগম, ৩৬
ঘরে আগুনের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুম থেকে উঠে পালাতে গিয়েছিলেন তিনি৷ তবে এর মধ্যেই পুড়ে যাওয়া ছাদ তাঁর মাথায় ভেঙে পড়ে৷ ফলে শরীরে থাকা নাইলনের কাপড় গলে হাত পুড়িয়ে দেয়৷ ‘‘আমি মনে করেছিলাম, মরে যাব৷ তবে আমার সন্তানদের জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি,’’ রয়টার্সকে বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মমতাজ বেগম, ৩০
সেনারা তাঁর বাড়িতে ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র দিতে বলেছিল৷ তখন মমতাজ তাঁদের দারিদ্র্যের কথা জানালে সৈন্যরা বলেছিল, ‘‘যদি তোমার কোনো অর্থ না থাকে, তাহলে আমরা তোমাকে হত্যা করব৷’’ এই বলে, সৈন্যরা তাঁকে ঘরে বন্দি করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল৷ কোনোরকমে সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে বের হয়ে দেখেন তাঁর তিন ছেলে মৃত, আর মেয়েকে প্রহার করা হয়েছে, তার রক্ত ঝরছে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
ইমাম হোসেন, ৪২
মাদ্রাসায় পড়িয়ে ফেরার পথে তিন ব্যক্তি ছুরি নিয়ে তাঁর উপর হামলা করেছিল৷ পরের দিনই তিনি তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন৷ এরপর তিনিও কক্সবাজারে পৌঁছান৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মোহাম্মদ জাবাইর, ২১
গ্রামের বাড়িতে এক বিস্ফোরণে তার শরীরের এই অবস্থা৷ ‘‘আমি কয়েক সপ্তাহ অন্ধ ছিলাম৷ কক্সবাজারের এক সরকারি হাসপাতালে ২৩ দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম,’’ বলেছে সে৷
ছবি: Reuters/J. Silva
8 ছবি1 | 8
১৯৯২ সালের চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের নাগরিক মর্যাদা দেয়ার বিষয়টির উল্লেখ ছিল না৷ রোহিঙ্গাদের অধিকারসহ মিয়ানমারের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মৌলিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের উল্লেখ ছিল না এতে৷
এবারের চুক্তিতে ফেরত নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রথমে অস্থায়ী পূনর্বাসন ক্যাম্পে রাখার কথা বলা হয়েছে৷ এরপর তাদের ফেলে আসা ঘড়বাড়ি বা অন্যকোথাও পুনর্বাসন করা হবে৷ মিয়ানমারের আইন অনুযায়ী, পুড়িয়ে দেয়া ঘরবাড়ি সরকারি সম্পদ৷
২৩ নভেম্বর মিয়ানমার-বাংলাদেশ চুক্তির পর এর নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ তারা বলছে, যেহেতু মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা হয় তাই তাদের এই অবস্থায় ফেরত পাঠানো ‘অচিন্তনীয়'৷ যেসব রোহিঙ্গা এখনো মিয়ানমারে রয়ে গেছে তাদের অবস্থা বন্দি শিবিরে থাকার মত৷
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চুক্তি প্রসঙ্গে বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিচার্স ইউনিট(রামরু)-এর প্রধান অধ্যাপক সি আর আবরার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই চুক্তি কোনো কার্যকর ফল বয়ে আনবে বলে মনে হয় না৷ এটা মিয়ানমারের সময় ক্ষেপনের একটি কৌশল মাত্র৷ কারণ এখানে ফেরত নেয়ার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়নি৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়নি৷ বিশষ করে ভেরিফিকেশনের জন্য৷ রোহিঙ্গাদের ফাইনাল ভেরিফিকেশন কিন্তু মিয়ামারের হাতেই৷ এটা একপেশে৷''
‘২০১২ সালে যখন মিয়ানমারে ছিলাম তখন দেখেছি আগে ফেরত নেয়া ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে বন্দি শিবিরে রাখা হয়েছে’
অধ্যাপক আবরার আরো বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার সঙ্গে তাদের নাগরিত্ব, নিরাপত্তা এবং সম্মানের বিষয়টি জড়িত৷ কিন্তু চুক্তিতে এই বিষয়গুলোর উল্লেখ নেই৷ বাংলাদেশ কেন তার আগের অবস্থান থেকে সরে এল তা আমার কাছে তা স্পষ্ট নয়৷''
মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক ডিফেন্স অ্যাটাশে মেজর জেনারেল(অব.) শহীদুল হক বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ক্ষেত্রে মিয়ামারের ইমিগ্রেশন, পুলিশ ও সীমান্ত বাহিনী জড়িত৷ এই তিনটিই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হচ্ছেন একজন জেনারেল৷ মিয়ানমারে ক্ষমতার মূল চাবিকাঠি সামরিক বাহিনীর হাতে৷ কিন্তু চুক্তি সইয়ের আগে বা সইয়ের সময় মিয়ানমার সেনা প্রধানের সঙ্গে বাংলাদেশ পক্ষের কোনো আলোচনা হয়নি৷ আর স্মারক সইয়ের সময় মিয়ানমারের সেনা প্রধান ছিলেন চীন সফরে৷ এই বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ সেনা বাহিনী এই চুক্তিকে আদৌ আমলে নেবে কিনা সেটাও ভাববার বিষয়৷''
তাঁর প্রশ্ন, ‘‘২০১৬ সালের অক্টোবরের পর এবং ২৫ আগস্টের পর পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার কথা বলছে তারা৷ তাহলে আগে থেকে যারা আছে, তাদের কি হবে? রোহিঙ্গাদের নিয়ে তারা কোথায় রাখবে?''
‘রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার সঙ্গে তাদের নাগরিত্ব, নিরাপত্তা এবং সম্মানের বিষয়টি জড়িত৷ কিন্তু চুক্তিতে এই বিষয়গুলো নেই’
তিনি জানান, ২০১২ সালে যখন মিয়ানমারে গিয়েছিলেন তখন দেখেছেন আগে ফেরত নেয়া ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে বন্দি শিবিরে রাখা হয়েছে৷ এখনো তারা সেখানেই আছেন৷ মিয়ানমারকে বিশ্বাস করা যায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
শহীদুল হক বলেন, ‘‘আমার মনে হচ্ছে মিয়ারমার এখন আন্তর্জাতিক চাপ কমানোর কৌশল হিসেবে এই চুক্তির আশ্রয় নিয়েছে৷ তারা আসলে এর মধ্য দিয়ে সময় পার করতে চায়৷ এরইমধ্যে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে৷ যা মিয়ানমারের পক্ষেই যাবে৷''
অধ্যাপক সি আর আবরারও একই কথা বলেন৷ তিনি বলেছেন,‘‘মিয়ামনার আসলে সমস্যাটাকে দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে চায়৷ তারা চায় এই ইস্যুটি নিয়ে বাংলাদেশ যেন আন্তর্জাতিক ফোরামে আর কথা না বলে৷ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধনের কোনো ইচ্ছা মিয়ানমারের আছে বলে আমার মনে হয় না৷''
২৫শে আগস্ট থেকে সামরিক বাহিনীর অভিযানের পর মিয়ানমারের রাখাইন থেকে ছয় লাখ ২০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ উগ্রপন্থিরা রোহিঙ্গা পুরুষদের নির্বিচারে হত্যা, নারীদের ধর্ষণ ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার ফলে রোহিঙ্গারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় বলে অভিযোগ রয়েছে৷
ধর্ষণ আর অপহরণের শিকার রোহিঙ্গা এতিম শিশুরা
মিয়ানমার সেনাদের সীমাহীন নির্যাতনের কারণে গত আড়াই মাসে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে৷ সবচেয়ে দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখে পড়েছে শিশুরা৷ জন ওয়েনস এর ছবিতে উঠে এসেছে সেইসব দুর্দশার কিছু কথা৷
ছবি: DW/J. Owens
গুলি আর ছুরিকাঘাত
গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়েছে৷ তাদেরই একজন মোহাম্মদ বেলাল৷ দৌড়ে পালাতে পেরেছিল ১০ বছর বয়সি এই কিশোর৷ সে জানায়, ‘‘সেদিন সেনাবাহিনী এসে পুরো গ্রাম পুড়িয়ে দেয়৷ আমার মা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল, সেসময় তাঁকে গুলি করা হয়৷ আমার বাবা হাঁটতে পারছিলেন না, তারা তাঁকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে৷ আমি নিজ চোখে এসব দেখেছি৷’’
ছবি: DW/J. Owens
আতঙ্কগ্রস্ত
মোহাম্মদ বেলালের বোন নূরও হত্যাযজ্ঞ দেখেছে৷ নিঃসঙ্গ হয়ে সে আর তার ভাই এখন বাংলাদেশে শিশুদের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আছে৷ এখানে সে নিয়মিত খাবার পাচ্ছে এবং খেলতে পারছে৷এ এক অদ্ভুত বৈপরীত্য৷ মিয়ানমারে থাকার সময় তাদের দুই ভাই-বোনকে বেশিরভাগ সময়ই না খেয়ে থাকতে হতো৷ তারপরও সাম্প্রতিক এই ট্রমা থেকে কিছুতেই বের হতে পারছে না সে৷ ‘‘আমি আমার বাবা-মা, বাড়ি আর দেশ, সবকিছুই ভীষণ মিস করছি,’’ জানায় নূর৷
ছবি: DW/J. Owens
গভীর সঙ্কট
৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমারে চলছে এই সঙ্কট৷ সংঘাতে ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত দু’ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে৷ সাম্প্রতিক সেনা নিপীড়নের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে ১২ বছর বয়সি রহমান বলে, ‘‘তারা আমার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়৷ অসুস্থ ছিল বলে আমার মা পালাতেও পারেনি৷’’
ছবি: DW/J. Owens
শিশুদের বাঁচাও
বাবা-মাকে হত্যার দৃশ্য নিজ চোখে দেখার পর দিলু আরা তার বোন রোজিনার সাথে পালায়৷ এখন ক্যাম্পে আছে ৫ বছর বয়সি এই শিশু৷ ‘‘আমি খুব কাঁদছিলাম আর পুরোটা সময়ই আমাদের মাথার উপর দিয়ে বুলেট উড়ে যাচ্ছিল৷ কোনো রকমে আমি পালিয়ে এসেছি,’’ বলে শিশুটি৷ বাবা-মা ছাড়া কুতুপালংয়ে আসা এই শিশুদের সাহয়তা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন৷ বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের শতকরা ৬০ ভাগই শিশু৷
ছবি: DW/J. Owens
পশুদের মতো শিকার
জাদেদ আলমও বাবা-মা ছাড়া কুতুপালংয়ে এসেছে৷তবে ভাগ্য ভালো বলে সে তার চাচীকে সাথে পায়৷চাচীই এখন তার দেখাশোনা করছেন৷ সে বলছিল ‘মান্দি পাড়া’ নামে এক গ্রামে বেড়ে উঠেছে সে৷ ফুটবল খেলতেও সে খুব পছন্দ করতো৷ তবে সেনা অভিযানের পর থেকে সবকিছুই বদলে যায়৷ সে জানায়, ‘‘তারা আমাদের বাড়ি ছেড়ে যেতে বলে৷ আমি আমার বাবা-মা’র সাথে দৌড়ে পালাচ্ছিলাম, এমন সময় তাঁদেরকে গুলি করে সেনারা৷ সাথে সাথে মারা যায় তারা৷’’
ছবি: DW/J. Owens
শিশু অপহরণ
এসব ঘটনার সময় সব পরিবারকেই যে আলাদা হতে হয়েছে, তা নয়৷ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রহমান আলী নামে এই ব্যক্তি এই ক্যাম্পে আছেন৷ তবে এখন তিনি তার ১০ বছর বয়সি ছেলে জিফাদকে খুঁজে পাচ্ছেন না৷ ক্যাম্প এলাকায় প্রায় সারা বছরই শিশু অপহরণের গুজব শোনা যায়৷ রহমানের আশংকা, তাঁর ছেলেও পাচারকারীদের হাতে পড়েছে৷ ‘‘আমি খেতে পারছি না, ঘুমাতে পারছি না৷ আমি মনে হয় পাগলই হয়ে গেছি,’’ বলে রহমান৷
ছবি: DW/J. Owens
‘আমি স্বাভাবিক নেই’
যখন গুলি শুরু হয়, তখন সকিনা খাতুন তাঁর বাচ্চাদের বাঁচাতে প্রাণপণে চেষ্টা করেছে৷ তারপরও ১৫ বছরের ইয়াসমিন আর ২০ বছরের জামালিকে বাঁচাতে পারেননি৷ ঘটনার সময় তারা পাশের গ্রামে ছিল৷ সকিনা বলছিল, ‘‘দাদা-দাদীর সামনে তাদের গলা কেটে হত্যা করা হয়৷ আমি এতটাই অনুভূতি শূণ্য হয়ে পড়েছি যে, এই কষ্টও অনুভব করতে পারছি না৷ তাই এই মুহূর্তে আমি স্বাভাবিক নেই৷’’ দুই সন্তানকে হারালেও বাকি নয় জনকে রক্ষা করতে পেরেছেন তিনি৷
ছবি: DW/J. Owens
হামলা, ধর্ষণ এবং লুটপাট
ইয়াসমিনের বয়স ১৫-র কাছাকাছি৷ তবে তাকে তার চেয়েও কম বয়সি বলে মনে হয়৷ গ্রামে থাকার সময় সে মার্বেল খেলতো আর বাড়ির কাছের মাঠে খেলতো৷ এখন অবশ্য ভিন্ন স্মৃতি তাড়িত করছে তাকে৷ মিয়ানমারের সেনারা তার বাবা ও ভাইদের প্রথমে মারধর ও পরে হত্যা করে৷ একদল সেনা তাকে ধর্ষণও করে৷ এখন ইয়াসমিন কেবল এটুকু বলতে পারে,‘‘আমার শরীরে ভীষণ ব্যথা৷’’
ছবি: DW/J. Owens
8 ছবি1 | 8
এ প্রসঙ্গে আপনার কোন মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷