রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কোনো সম্ভাবনা কি দেখছে বাংলাদেশ? কিভাবে মিয়ানমার ছেড়ে আসতে বাধ্য হওয়া বিশাল জনগোষ্ঠীকে স্বদেশে ফেরানো যায়?
বিজ্ঞাপন
এসব বিষয়েই ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন এক সময় মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসে সামরিক আ্যটাশে হিসেবে কাজ করা সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) এম শহীদুল হক৷
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের আপতত কোনো সম্ভাবনা দেখছেন?
মেজর জেনারেল (অব.) এম শহীদুল হক : আমি এমন কোনো সম্ভাবনা দেখছি না যে রোহিঙ্গারা দ্রুত তাদের দেশে ফেরত যেতে পারবে। ওখানে অন গ্রাউন্ডে অনেকগুলো জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এক নাম্বারে আরাকান। ওখানে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে অনেক বড় এলাকা চলে গেছে। আর আরাকান আর্মি কিন্তু রাখাইন বুদ্ধিস্টদেরই একটা এক্সটেনশন। ওদের পলিটিক্যাল পার্টিও কিন্তু তাদের এক্সটেনশন। তারা এখন রাখাইনে খুবই পাওয়ারফুল।
তারা কি রোহিঙ্গা বিরোধী?
পুরো জনগোষ্ঠী না। কিন্তু তারা মাঝেমধ্যে টেকনিক্যালি তাদের ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের দিকে খেয়াল রেখে কথা বলে। আরাকান আর্মি এবং ওদের রাজনৈতিক দল ইউএনপি বা এআইপির সম্মতি ছাড়া কোনোভাবেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ তো অনেক দিন ধরেই কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। আপনার বিবেচনায় কার্যকর কূটনৈতিক তৎপরতা কি হচ্ছে?
২০১৭ সাল থেকে ২০২৪ সালে এসে এখন আমি বলবো, আমরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যে পলিসি ফলো করছি এতদিন ধরে, এটা পরিবর্তন করা দরকার। এটা তো কোনো কাজে আসছে না।
আমাদের পলিসি তো দ্বিপাক্ষিক। সেটা এখন কীভাবে পরিবর্তন করা দরকার?
হ্যাঁ দ্বিপাক্ষিক। তবে আমি শুরুতেই বলেছিলাম এটা বহুপাক্ষিক করা দরকার। ২০১৭ সাল থেকে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের যে দ্বিপাক্ষিক ডিলগুলো, সেগুলো যদি পর্যবেক্ষণ করেন, তাহলে দেখবেন সেগুলো কোনো কাজে আসেনি। তারা কোনো ট্রাস্টেড পার্টনার না। থার্ড পার্টিকে সঙ্গে রেখে ডিলটা করা উচিত।
মিয়ানমারকে বাংলাদেশ আট লাখের মতো রোহিঙ্গার তালিকা পাঠিয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ৩৭ হাজারের মতো তারা কনফার্ম করেছে। মিয়ানমার তো এখন পর্যন্ত একজনও ফেরত নেয়নি। সমস্যাটি কোথায়?
মিয়ানমার ১৯৮২ সালে যে নাগরিকত্ব আইন করেছে তা তো নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য না। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব থেকে বাদ দেয়ার জন্য। ওই আইন সংশোধন না করলে হবে না। ওরা ভ্যারিফিকেশন কার্ড দেবে। ওটা কিন্তু নাগরিকত্বের কার্ড নয়। ওটা দিয়ে রোহিঙ্গারা সেখানে গিয়ে থাকতে পারবে। পূর্ণ নাগরিক অধিকার পাবে না।
রোহিঙ্গারাও তো পূর্ণ নাগরিকত্ব না পেলে মিয়ানমারে ফেরত যেতে চায় না। এটাও তো একটা সমস্যা...
জ্বী। ভ্যারিফিকেশন কার্ড দিয়ে রোহিঙ্গারা সেখানে গিয়ে থাকতে পারবে, পূর্ণ নাগরিক অধিকার পাবে না। বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারবে না, বার্থ রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে না, ম্যারেজ রেজিষ্ট্রেশন করতে পারবে না. নাগরিক সুবিধা পাবে না। ২০১৯ সালে মিয়ানমারে সর্বশেষ আদমশুমারীতে শতকরা এক ভাগ মুসলিম দেখানো হয়েছে রাখাইনে। কিন্তু সেখানে মুসলিম ৩৫ ভাগ। বাকিদের অন্যান্য ক্যাটাগরিতে দেখানো হয়েছে। এটা পরিস্কার যে, তারা আসলে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায় না।
মিয়ানমারে এখন যে যুদ্ধ চলছে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে তাতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমাদের সমস্যা কি আরো বাড়বে?
এখানে নানা ইন্টারেস্ট গ্রুপ আছে। অ্যামেরিকার স্বার্থ আছে। ভারত ও চীনের স্বার্থ আছে। যার যার স্বার্থ অনুযায়ী এই পরিস্থিতিতে তারা সক্রিয় আছে। কিন্তু আমার আশঙ্কা হলো, পালাতাও নামে একটা জায়গা আছে, যেটা আরাকান আর্মি দখল করেছে। এটা আমাদের বান্দরবন থেকে কাছে। তবে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার- বাংলাদেশের সীমান্ত মিয়ানমারের দিকে মিয়ানমার সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে। এখন এই বর্ডারটাও যদি আরাকান আর্মিও হাতে চলে যায় তাহলে তারা কিন্তু ভিতরে অপারেশন আরো বিস্তৃত করবে । তখন কিন্তু আরো অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসার আশঙ্কা আছে। এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় ঝুঁকির কারণ হবে।তখন আবার আমরা না সামরিক ও জিও পলিটিক্যালি ইনভলব হয়ে যাই সেটাও বড় আশঙ্কা।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে তাদের আগ্রহ কি কমে যাচ্ছে?
রেশন কমে এখন আট ডলার হয়েছে। এখন তারা ইউরোপের শরণার্থীদের নিয়ে বেশি মনোযোগী। ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে ইউরোপে শরণার্থী বাড়ছে। আমাদের পলিসি পরিবর্তন না করলে এই আগ্রহ আরো কমতে থাকবে। রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের পরিবেশ, প্রতিবেশ, নিরাপত্তা সংকটে আছে। আর্থিক চাপ তো আছেই। আমরা এক মিলিয়ন মানুষের বোঝা কাঁধে নিয়ে আছি।
আমাদের নিরাপত্তায় কী প্রভাব ফেলছে?
এখানে রোহিঙ্গাদের নানা গ্রুপ আছে। তার মধ্যে আরসা কিন্তু মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হয়ে কাজ করে। রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে মেরে ফেলা হলো কেন? কারণ, সে চাচ্ছিল রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিয়ানমারে ফিরে যেতে। আরসা কিন্তু প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে। তাই যারাই ফিরে যেতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় আরসা। আরসা ক্যাম্পগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। এটা আমাদের জন্য হুমকি।
নির্বাসিত রোহিঙ্গাদের জীবন ও বাংলাদেশের উভয় সংকট
গত আট দশক ধরে নির্বাসন ও প্রত্যাবাসনের চক্রে আটকা পড়েছেন রোহিঙ্গারা৷ সবশেষ যে আশার আলো দেখা গিয়েছিল তা-ও নতুন বাস্তবতায় ফিকে হতে শুরু করেছে৷ রোহিঙ্গাদের ঘরছাড়া করার ও ঘরে ফেরানোর প্রচেষ্টার কাহিনি থাকছে ছবিঘরে...
ছবি: Mohibulla Mohib
রোহিঙ্গা কারা
বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, আরাকান রাজ্যে বসবাসকারী মুসলিমরা রোয়াইঙ্গা, যাম্ভইকা, কামানচি, জেরবাদি ও দিন্নেত এই পাঁচটি জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত৷ এর মধ্যে রোয়াইঙ্গা জাতিগোষ্ঠিই রোহিঙ্গা নামে পরিচিত৷ উদ্ভব নিয়ে নানা মত থাকলেও বাংলাপিডিয়া বলছে, ‘‘চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আরাকান রাজ্যে বসতিস্থাপনকারী চট্টগ্রামি পিতার ঔরসজাত ও আরাকানি মাতার গর্ভজাত বর্ণসংকর জনগোষ্ঠীই রোয়াইঙ্গা বা রোহিঙ্গ্যা৷’’
ছবি: Zobaer Ahmed/DW
প্রথম দাঙ্গা
১৯৪০ সাল থেকে আরাকানে বৌদ্ধ মগ জনগোষ্ঠী ও মুসলিম রোহিঙ্গাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার শুরু হয়৷ ১৯৪২ সালে এক লাখ রোহিঙ্গা হত্যার শিকার হন৷ অনেকে আরাকান ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন৷ ১৯৪৮ সালে তৎকালীন বার্মার স্বাধীনতার পর এবং ১৯৬২ সালে পুনরায় তারা নিপীড়ন, নির্যাতন ও উচ্ছেদের শিকার হন৷ এ সময় বাংলাদেশে উদ্বাস্তু হয়ে আসতে বাধ্য হন তারা৷
স্বাধীন বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা
আরাকানে জাতিগত আন্দোলন দমনের জন্য মিয়ানমারের (তখন বার্মা) তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল নে-উইন (ছবিতে) ১৯৭৮ সালে ‘নাগামিন ড্রাগন অপারেশন’ নামের অভিযান চালান৷ আরাকান ন্যাশনাল লিবারেশন পার্টির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততার কারণে নির্বিচারে তাদের হত্যা করা হয়৷ অভিযানের কারণে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালাতে বাধ্য হন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্রথম প্রত্যাবাসন
সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য বাংলাদেশের তখনকার সরকার আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আবেদন জানায়৷ জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামের চাপের মুখে নে-উইন সরকার বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরাতে সম্মত হয়৷ দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী, ১৯৭৯ সালের ৬ অক্টোবর থেকে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের বড় অংশ নিজ দেশে ফিরে যান৷ থেকে যান ১৫ হাজার৷ ছবিটি ২০১৮ সালের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য বানানো একটি ‘মডেল গ্রাম’৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. H. Kyaw
আবারও সংকট
মিয়ানমার সরকারের আইন ও নীতির কারণে ১৯৯১ সালে আবারও রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ঘরছাড়া হন৷ ৯০ সালের নির্বাচনে জয়ী অং সান সুচিকে বন্দি করার পর সেনাবাহিনী আবারও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জড়িত রাখাইনসহ রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরু করে৷ রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের কারণে ১৯৯১ সালের ২৬ জুনের মধ্যে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেন৷
ছবি: picture alliance/dpa
দ্বিতীয় প্রত্যাবাসন
দুই দেশের সরকারের মধ্যে ১৯৯২ সালের ২৮ এপ্রিল একটি সমঝোতা চুক্তি হয়৷ সে অনুযায়ী, এই দফায় আগতদের দুই লাখ ৩১ হাজার জনকে মিয়ানমার সরকার ফিরিয়ে নেয়৷ বাকি থাকে ২২ হাজার৷ তাদের ফেরানোর অঙ্গীকার করলেও তা বাস্তবায়ন করেনি দেশটি৷ প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় তারা কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানার কুতুপালং এবং টেকনাফ থানার নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করেন৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/K. Huda
২০১৬ সালের পর
মিয়ানমারে নির্যাতনের জেরে ২০১৬ সালের পর থেকে আবারও বড় আকারে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করেন৷ বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরসিসিসি) হিসাবে ২০১৬ সালে ৮৭ হাজার এবং ২০১৭ সালের আগষ্ট থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারির মধ্যে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন৷ ইউএনএইচসিআর-এর হিসাবে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় নয় লাখ ৭২ হাজারে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তিনটি ব্যর্থ উদ্যোগ
২০১৭ সালের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তিনটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল৷ ২০১৮ সালে, ২০১৯ ও ২০২৩ সালে নেয়া এসব উদ্যোগের কোনোটিরই ফল মেলেনি৷ এর মধ্যে ২০১৮ সালে আট লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর তালিকা মিয়ানমারকে দিয়েছিল বাংলাদেশ৷ তার প্রেক্ষিতে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি ফিরতি তালিকা পাঠানো হয়৷ পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে ১১৪০ জনকে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও পরে তা ভেস্তে যায়৷
ছবি: bdnews24.com
উদ্যোগী চীন
গত বছর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের সবশেষ উদ্যোগটি শুরু হয়৷ প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের একটি দল পরিস্থিতি দেখতে মিয়ানমারে যান৷ প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার জন্য চীনের বিশেষ দূত ডেং জিজুন দেশটি সফরে যান এবং রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্পে না, নিজ গ্রামে ফিরতে পারেন তার উদ্যোগ নেন৷ সেপ্টেম্বরে আলোচনার জন্য মিয়ানমারে যায় বাংলাদেশের একটি দল৷ এর অধীনে সে বছর ১২ হাজার জনকে পাঠানোর পরিকল্পনা করে বাংলাদেশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Qing
দুই ঝড়
এই পরিকল্পনায় প্রথম আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় হামুন৷ এরপর সম্ভাবনাটিকে আরো ফিকে করে দেয় মিয়ানমারের সামরিক জান্তাবিরোধী বিদ্রোহের নয়া ঝড়৷ ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি, তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি এবং আরাকান আর্মি সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রবল লড়াই শুরু করে৷ আরাকান আর্মি রাখাইনে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে জান্তার ১৬০টি ঘাঁটি দখল করে৷
ছবি: Handout/Kokang Information Network/AFP
আন্তর্জাতিক বাধা
মিয়ানমারের পরিস্থিতি বিবেচনায় শুরু থেকেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাগুলো৷ সম্প্রতি নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদের সাথে সাক্ষাৎ শেষে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি বলেছেন, ‘‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য এটি ভালো সময় নয়৷’’
ছবি: AFP
‘ভারাক্রান্ত বাংলাদেশ’
সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘‘রোহিঙ্গা ডিসপ্লেসড পিপলের কারণে আমরা ভারাক্রান্ত। প্রতি বছর ৩৫ হাজার করে নতুন সন্তান জন্মগ্রহণ করে৷ এই পরিস্থিতিতে আসলে; মানবিকতার কারণে তখন আমরা রোহিঙ্গাদের স্থান দিয়েছিলাম৷ আমরা মনে করি, মিয়ানমারে পরিস্থিতি উত্তরণের মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব৷’’ রাখাইনে পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদী৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
শিবিরে বন্দি জীবন
বাংলাদেশে সীমিত জায়গায় বিপুল রোহিঙ্গা শরণার্থী মানবেতর জীবন যাপন করেন৷ কিছুদিন পরপর আগুনে তাদের ঘর পোড়ে, ঝড়ে বিপদে পড়েন৷ ঘটে চলেছে সহিংসতাও৷ তাদের সন্তানেরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, নেই কর্মসংস্থানও৷ এর মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থ সহয়তার হারও চাহিদার চেয়ে ক্রমাগত কমছে৷ সর্বশেষ ২০২৩ সালে যা ৪৭ ভাগে নেমে এসেছে৷
ছবি: AFP via Getty Images
ভাসমান জীবন
ভাগ্যবদলের চেষ্টায় মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন অনেক রোহিঙ্গা৷ ইউএনএইচসিআর-এর হিসাবে, ২০২৩ সালে সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার ও বাংলাদেশের শিবির থেকে নৌকায় সাগরপথে রওনা দেন, যাদের দুই-তৃতীয়াংশ ছিলেন নারী ও শিশু৷ বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান পেরুতে গিয়ে মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন ৫৬৯ জন, যা ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ৷ সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে তাদের আগমনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা৷