1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

র‍্যাব প্রতিষ্ঠার ২০ বছর: অন্তত ২,৯৫৪ বিচারবহির্ভূত হত্যা

৪ নভেম্বর ২০২৪

দেশে ২০০৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কৈফিয়তহীন এ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন অন্তত ২ হাজার ৯৫৪ জন৷ এ হিসাব ২০০৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত৷ মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এ হিসাব দিয়েছে৷

র‍্যাব
২০০৪ সালে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির অবনতিতে অনিরাপত্তাবোধের সৃষ্টি হলে র‍্যাব গঠন তরে তৎকালীন সরকার৷ ফাইল ফটো৷ ছবি: Munir Uz Zaman/AFP

আসক এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ধারাবাহিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে৷ সংবাদপত্র এবং নিজেদের তথ্যানুসন্ধানের ভিত্তিতেই এ তালিকা করেছে আসক৷

দেখা গেছে, এ বিচারবহির্ভূত হত্যার সঙ্গে জড়িত পুলিশ, র‍্যাবসহ সরকারের নানা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ র‍্যাব ও পুলিশ ছাড়াও যে বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ আছে, সেগুলো হলো ডিবি পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবি, কোবরা টিম ও আনসার৷ আসকের হিসাবে, গত ২০ বছরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ আছে পুলিশের বিরুদ্ধে৷ এরপর আছে র‍্যাব৷

কেন ২০০৪ থেকেই বিচারবহির্ভূত হত্যার হিসাব?

আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও পরিস্থিতি উন্নয়নের নামে ২০০৪ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা ক গঠন করে৷ সেই সময় মানবাধিকারকর্মীসহ অনেকেই পুলিশ বাহিনীকে যুগোপযোগী এবং পেশাদার বাহিনীতে রূপান্তর করার দাবি করেছিলেন৷ কিন্তু সে দাবিকে পাশ কাটিয়ে র‍্যাব নামের এলিট ফোর্স গঠন করা হয়৷

মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার প্রথম আলোকে বলেন, র‍্যাবের গঠন নিয়ে মানবাধিকার সংগঠন বা কর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো উদ্বেগ অথবা শঙ্কা প্রকাশ করেননি৷ কিন্তু পরে এ বাহিনী ‘ক্রসফায়ার'–এর নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকেই সন্ত্রাস দমনের সবচেয়ে সহজ কৌশল হিসেবে বেছে নেয়৷ প্রথম দিকে বেশ কয়েকজন চিহ্নিত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী এই প্রক্রিয়ায় নির্মূল হওয়ায় জনগণের একাংশ সন্তোষ প্রকাশও করেছেন৷ কিন্তু মানবাধিকারকর্মীদের পক্ষে এদের এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না৷এই বাহিনী গঠনের বছর না ঘুরতেই ‘ক্রসফায়ারে' নিহত হওয়ার সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়৷ পরে তা আরও বেড়েছে৷

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার প্রথম আলোকে বলেন, ‘র‍্যাব গঠনের পর থেকেই বাহিনীটি ক্রসফায়ার ও এনকাউন্টারের মতো ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে৷ একপর্যায়ে পুলিশ বাহিনীকেও এ ধরনের বেআইনি কার্যক্রমে যুক্ত হতে দেখা যায়৷ এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপি সরকারের নেওয়া নীতির পরিবর্তন আমরা লক্ষ করিনি; বরং ধারাবাহিকতা দেখেছি৷ এরপর আওয়ামী লীগ সরকার আসার পরও বাহিনীগুলো সতর্ক তো হয়ইনি; বরং অনেকটা যেন পরম্পরা রক্ষায় ব্যতিব্যস্ত ছিল৷ গত সরকারের আমলের মাদকবিরোধী অভিযানের নামে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অনেক বেশি লক্ষ করা গেছে৷'

২০১১ সালে ‘অগোচরে অপরাধ: বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড' শীর্ষক এক প্রতিবেদন তৈরি করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ সেখানে বলা হয়, ‘র‍্যাবের বাহিনী গঠনের কয়েক মাসের মধ্যে র‍্যাবের অভিযানগুলো খুনের একটি বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে পরিচিতি পায়, যাকে কর্তৃপক্ষ বলছে ‘ক্রসফায়ারে মৃত্যু' এমন অনেক মৃত্যুতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সুস্পষ্ট৷ দেখা যায়, সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তারের পর নির্জন স্থানে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে৷ কোনো কোনো ঘটনায় গ্রেপ্তারের প্রত্যক্ষদর্শী থাকলেও র‍্যাবের কর্তৃপক্ষ তাদের দাবিতে অটল থেকেছে৷ জানিয়েছে যে ঘটনার শিকার ব্যক্তি ‘ক্রসফায়ার কিংবা গোলাগুলি কিংবা বন্দুকযুদ্ধে' মারা গিয়েছে৷'

বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিন্ন ‘গল্প'

দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাগুলো নানা বাহিনীর মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পর এসব বাহিনীর পক্ষ থেকে ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়৷ সেসব বর্ণনাসংবলিত প্রেস রিলিজ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরবরাহও করা হয়৷ সেগুলো থেকে দেখা গেছে, বাহিনীর মধ্যে ভিন্নতা থাকলেও বিচারবহির্ভূত হত্যার বর্ণনা প্রায় অভিন্ন৷ শুধু স্থান, কাল ও ঘটনার পক্ষ-বিপক্ষের ক্ষেত্রেই যা ভিন্নতা৷

বিচারবহির্ভূত হত্যা: কোন সময়ে বাড়ল, কখন কমল

আসকের হিসাব অনুযায়ী, গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটে ২০১৮ সালে৷ ওই বছর ৪১২ জন এ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হন৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটে পুলিশের হাতে, ২১৬টি৷ র‍্যাবের হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হন ১৩৫ জন৷ অন্যান্য বাহিনীর হাতে এ ধরনের হত্যার ঘটনা ঘটে ১৭টি৷

২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও বাহিনীর সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র৷ ওই বছর দেশে ১৮৮ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হন৷ কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরের বছরই হত্যার ঘটনা ঘটে ৫১টি৷ আসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৪ সালের পর এর আগে বিচারবহির্ভূত কম হত্যা হয় ২০১৩ সালে, ৪২টি৷

ব়্যাব যেভাবে মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করে রাখছে

28:42

This browser does not support the video element.

আসকের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় র‍্যাব আসার পর থেকে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড কমে যায়৷ হয়তো র‍্যাবের পরিস্থিতি দেখে পুলিশ কর্তৃপক্ষ সতর্ক হয়ে ওঠে৷ এখন প্রশ্ন, তাহলে নিষেধাজ্ঞা জারির পর বাহিনীগুলো এ ধরনের ক্রসফায়ার না করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখল কীভাবে? তাহলে আমরা বলতেই পারি, ২০০৪ সাল থেকে সংঘটিত এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ছিল সরকারগুলোর জনমনে ভীতি ছড়ানোর কৌশল৷ একটি সমাজব্যবস্থায় গত ২০ বছরে এত মানুষের জীবনের অধিকার কেড়ে নেওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন৷

বিচার না হওয়া

২০১১ সালে ‘অগোচরে অপরাধ: বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড' শীর্ষক এক প্রতিবেদন তৈরি করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এ ধরনের মৃত্যুকে (বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড) সাধারণত দুর্ঘটনাজনিত বলে চালিয়ে দেওয়া হয় কিংবা বলা হয়, র‍্যাব কর্মকর্তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি করায় ‘ক্রসফায়ার'–এ মারা গিয়েছে৷ অনেক ঘটনায় শিকার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর হত্যা করা হয়েছে৷ তা সত্ত্বেও এ ধরনের মৃত্যুগুলোর ক্ষেত্রে র‍্যাব কিংবা সরকারের বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে কখনোই বিচারিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি৷'

সুলতানা কামাল বলছিলেন, সঠিক অর্থে জবাবদিহি করতে হয়নি বলে এই ২০ বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড তিন হাজারের কাছে পৌঁছেছে৷ এটি মানবাধিকারের দৃষ্টিতে অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং অগ্রহণযোগ্য৷ একটি মানবিক বোধসম্পন্ন সমাজে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটানো এবং তা সহ্য করা—উভয়ই মানবতার বিরুদ্ধে চরম অপরাধ৷

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কী করে

বিচারবহির্ভূত হত্যা, হেফাজতে মৃত্যু, নির্বিচার আটক ও গুম—এই চার ধরনের ঘটনাকে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মনে করা হয়৷ কিন্তু জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ পর্যন্ত মাত্র একটি বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনার তদন্ত করে৷

২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভিযান পরিচালনা করে যশোরের কেশবপুর থানা-পুলিশ কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হন রজব আলী নামের এক ব্যক্তি৷ এ ঘটনা তদন্ত করে ওই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাকে ‘হত্যাকাণ্ড' বলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন৷ ঘটনার সঙ্গে পুলিশের বক্তব্যের অসংগতিও চিহ্নিত করে কমিশন বলেছিল, এই কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার সত্যতা নেই৷ কমিশনের ওই তদন্তের ঘটনা সাড়া ফেলে৷ কিন্তু ওই প্রথম, ওই শেষ তদন্ত৷

এখন এই পরিবর্তিত রাজনৈতিক পটভূমিতে বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচার করার একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন আবু আহমেদ ফয়জুল কবির৷ তিনি বলেন, যদি বর্তমান সরকার মনে করে এ ধরনের হতাকাণ্ডের ঘটনা বিচারের আওতায় আনবে, তাহলে যেন সব হত্যারই বিচারের উদ্যোগ নেয়৷ কেননা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পরিবারগুলো যন্ত্রণা নিয়ে এখনো বেঁচে আছে৷ আর এ দেশের মানবাধিকারকর্মীরা শুরু থেকেই এ হত্যাকাণ্ডগুলোর প্রতিবাদ করে এসেছে এবং প্রতিকারের আশায় এখনো দাবি করে যাচ্ছে৷

এপিবি/এসিবি (দৈনিক প্রথম আলো)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ