নওগাঁয় র্যাব তুলে নিয়ে যাওয়ার পর ভূমি অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিন মারা গেছেন; যাকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে স্বজনদের অভিযোগ।
বিজ্ঞাপন
সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সহকারী পদে কমর্রত ছিলেন।
বুধবার সকালে তাকে র্যাব তুলে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। শুক্রবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। র্যাবের দাবি, সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়েছিল। সুলতানার মামা ও নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু বলেন, তার ভাগনি বুধবার সকালে অফিসের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নওযোয়ান মাঠের সামনে থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র্যাবের পোশাক পরা লোকজন তাকে তুলে নিয়ে যান। তাকে কোন ক্যাম্প নেওয়া হলো এ ব্যাপারে তারা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নেন; কিন্তু সন্ধান পাইনি। দুপুর পৌনে ২টার পর তারা জানতে পারেন সুলতানা নওগাঁ সদর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
র্যাব – বিতর্কিত এক বিশেষ বাহিনী
শুরুটা হয়েছিল ২০০৪ সালে৷ সেসময় বাঘা বাঘা জঙ্গিদের কুপোকাত করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায় ব়্যাব৷ কিন্তু অসংখ্য ক্রসফায়ার, অপহরণ, হত্যার দায়ে এখন সমালোচিত এই ‘এলিট ফোর্স’৷ র্যাব নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP
‘এলিট ফোর্স’
বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব নামক ‘এলিট ফোর্স’-এর যাত্রা শুরু হয় ২০০৪ সালে৷ এই বাহিনীর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ‘‘পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকার একটি এলিট ফোর্স গঠনের পরিকল্পনা করে৷’’ তবে এই বাহিনী এখন তুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন মহল৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সমন্বিত বাহিনী
বাংলাদেশ পুলিশ, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে র্যাব গঠন করা হয়৷ এই বাহিনীর উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাস প্রতিরোধ, মাদক চোরাচালান রোধ, দ্রুত অভিযান পরিচালনা এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কার্যক্রমে নিরাপত্তা প্রদান৷
ছবি: Getty Images/AFP
জঙ্গি তৎপরতা দমন
শুরুর দিকের ব়্যাবের কার্যক্রম অবশ্য বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল৷ বিশেষ করে ২০০৫ এবং ২০০৬ সালে বাংলাদেশে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা উগ্র ইসলামি জঙ্গি তৎপরতা দমনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে র্যাব৷
ছবি: AP
জেএমবির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার
বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় ২০০৫ সালে একসঙ্গে বোমা ফাটিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা জেএমবির শীর্ষ নেতাদের আটক ব়্যাবের উল্লেখযোগ্য সাফল্য৷ ২০০৬ সালের ২ মার্চ শায়খ আব্দুর রহমান (ছবিতে) এবং ৬ মার্চ সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয় ব়্যাব৷ একাজে অবশ্য পুলিশ বাহিনীও তাদের সহায়তা করেছে৷
ছবি: DW
ভুক্তভোগী লিমন
২০১১ সালে লিমন হোসেন নামক এক ১৬ বছর বয়সি কিশোরের পায়ে গুলি করে এক ব়্যাব সদস্য৷ গুলিতে গুরুতর আহত লিমনের বাম পা উরুর নীচ থেকে কেটে ফেলতে হয়৷ এই ঘটনায় ব়্যাবের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ তবে এখনো সুবিচার পায়নি লিমন৷ উল্টো বেশ কিছুদিন কারাভোগ করেছেন তিনি৷
ছবি: DW
‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’
জঙ্গিবাদ দমনে সাফল্য দেখালেও ক্রসফায়ারের নামে অসংখ্য ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব়্যাবের বিরুদ্ধে সমালোচনা ক্রমশ বাড়তে থাকে৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ব়্যাবের বিলুপ্তি দাবি করে জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই বাহিনী ‘সিসটেমেটিক’ উপায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে৷
ছবি: DW
‘ক্রসফায়ার’
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পর্যালোচনা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ব়্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ২৪ জন৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দাবি অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে কমপক্ষে সাতশো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ব়্যাব জড়িত ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলোচিত সাত খুন
২০১৪ সালের মে মাসে ব়্যাবের বিরুদ্ধে ৬ কোটি টাকা ঘুসের বিনিময়ে সাত ব্যক্তিকে অপহরণ এবং খুনের অভিযোগ ওঠে৷ নারায়ণগঞ্জে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিন ব়্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ৷ এই ঘটনার পর ব়্যাবের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আবারো বিতর্ক শুরু হয়েছে৷
ছবি: DW
প্রতিষ্ঠাতাই করছেন বিলুপ্তির দাবি
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ব়্যাবের বিলুপ্তি দাবি করেছেন৷ অথচ তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই ‘এলিট ফোর্স’৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিলুপ্তির দাবি নাকচ
বাংলাদেশে এবং আন্তর্জাতিক স্তর থেকে ব়্যাবকে বিলুপ্তির দাবি উঠলেও বর্তমান সরকার সেধরনের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না৷ বরং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ব়্যাব বিলুপ্তির দাবি নাকচ করে দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘র্যাবের কোনো সদস্য আইন ভঙ্গ করলে তাদের চিহ্নিত করে বিচারিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়৷’’
ছবি: Getty Images/AFP
10 ছবি1 | 10
সেখানে তিনি র্যাবের লোকজনকে দেখতে পান এবং তার ভাগনি সুলতানা কথা বলতে পারছিলেন না বলে জানান নাজমুল। তিনি বলেন, এর কিছুক্ষণ পর সুলতানাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে তিনি মারা যান।
শুক্রবার সকাল মৃত্যু হলেও তাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয় শনিবার বিকালে। সুলতানার একমাত্র সন্তান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।
পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে এ ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান কাউন্সিলর নাজমুল।
সুলতানার ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকত গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, "আমার মা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। র্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে, যে কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।”
র্যাব-৫ রাজশাহী এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাজমুস সাকিব সাংবাদিকদের বলেন, সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে পাওয়া আর্থিক প্রতারণার একটি অভিযোগ রয়েছে। তার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক টাকা লেনদেনের অভিযোগ ছিল।
তিনি বলেন, আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। র্যাবের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আটকের পর ওই নারীকে র্যাবের কোনো ক্যাম্পে নেওয়া হয়নি। আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ হওয়ায় তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পরিবারের লোকজন তার সঙ্গেই ছিল বলে দাবি করেন তিনি।
নওগাঁ সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মৌমিতা জলিল বলেন, ওই নারীকে নওগাঁ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে প্রাথমিকভাবে তার হৃদরোগে আক্রান্ত হবার লক্ষণ পাওয়া যায়। তখন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, "তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল কিনা তা দেখা হয়নি।
এই মৃত্যুর বিষয়ে এখনো পর্যন্ত নওগাঁ সদর মডেল থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি বলে জানান থানার এসআই এনাম।