লংগদুর মানুষ পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে
৭ জুন ২০১৭যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নীরব ভূমিকারও সমালোচনা করেছে৷ অ্যামনেস্টি অভিযোগ,‘অগ্নিসংযোগের সময় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উপস্থিত থাকলেও গ্রামবাসীদের সহায়তায় এগিয়ে যায়নি৷''
বিবৃতিতে একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়ে অ্যামনেস্টি জানায়, এই তদন্তের ফল অবশ্যই জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে এবং সন্দেহভাজন ও দায়ীদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ বিচার করতে হবে৷
২ জুন বৃহস্পতিবার রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় যুবলীগের এক নেতা হত্যাকাণ্ডের শিকার হন৷ পরের দিন, অর্থাৎ শুক্রবার সেখানকার পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়৷ হামলার পর লংগদু উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন৷
অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৫ জুন পর্যন্ত পুলিশ ১২জনকে গ্রেফতার করেছে৷ সরকার ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাসও দিয়েছে৷ সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে অ্যামনেস্টি জানায়, এর আগেও পাহাড়িদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার৷ ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাঙালি ও পাহাড়িদের সংঘর্ষে পাহাড়িদের ২৩টি ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল৷ এখনও সেই হামলায় সংশ্লিষ্ট কারও বিচার হয়নি৷
অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধনে পুলিশের বাধার কথা উল্লেখ করেছে অ্যামনেস্টি জানায়, সেখান থেকে নিতিময় চাকমা ও জীবন চাকমাকে আটক করে পুলিশ৷ তাঁদেরকে গ্রেফতার করে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে৷
এদিকে লংগদুর শিংটিলার বাসিন্দা প্রেমরঞ্জন চাকমা ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘পুলিশ আমাদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েও হামলার সময় আমাদের রক্ষায় এগিয়ে আসেনি৷ চারটি গ্রামের সব বাড়ি ঘরই পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ আমরা জীবন নিয়ে কোনোভাবে পালিয়ে গেছি৷''
তিনি জানান, ‘‘এখন পর্যন্ত আমরা অনেকেই আমাদের গ্রামে ফিরতে পারিনি৷ আমরা ৪০ জন একটি পাহাড়ে নির্জন স্থানে আশ্রয় নিয়েছি৷ কেউ বৌদ্ধ বিহারে অশ্রয় নিয়েছে৷ নারীরা আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে৷ কেউ ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে৷''
প্রেমরঞ্জন চাকমা বলেন, ‘‘আমরা আর গ্রামে ফিরে কী করব! আমাদের তো ঘর-বাড়ি কিছুই নেই৷ খাবার নেই৷ নিরাপত্তা নেই৷''
হামলার শিকার হয়েছেন লংগদু সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুলিন মিত্র চাকমা৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘হামলার পর এখনো আমি বাড়িতে ফিরিনি৷ আমি অসুস্থ৷ রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি৷''
তিনি জানান, ‘‘আমার সামনেই আমার বাড়িতে আগুন দেয়ার পর এক নারী (গুনমালা চাকমা) আগুনে পুড়ে মারা গেছেন৷ আমি তাঁকে বাঁচাতে পারিনি৷ সে আমার বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছিল৷ আমি আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পালিয়ে বেঁচেছি৷ আমার বাড়িঘর সব পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷''
কুলিন মিত্র চাকমা আরো বলেন, ‘‘আমি এখনো এলাকার পুরো খবর জানি না৷ কে কেমন আছে, কোথায় আছে৷ আমি তো হাসপাতালে৷ আমরা চার গ্রামের ২৩৩ টি বাড়ি-ঘর পোড়ানোর তালিকা প্রশাসনকে দিয়েছি৷''
এ বিষয়ে আপনার কোন মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷