করোনা ভাইরাসের কারণে প্রায় পুরো বিশ্ব ‘লকডাউন' হয়ে আছে৷ সচেতনতা আর নিষেধাজ্ঞার কারণে রাস্তাঘাট জনশূন্য৷ এ অবস্থায় মানুষের দেওয়া খাবারের উপর নির্ভরশীল রাস্তার পশুপাখি অনাহারে মরতে বসার ঝুঁকিতে৷
বিজ্ঞাপন
বন শহর ভিত্তিক ‘জার্মান অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ এ বিষয়ে সতর্ক করে বলেছে, জনশূন্য সিটিসেন্টারগুলোতে হাজার হাজার কবুতর খাবারের অভাবে মারা যেতে পারে৷
মানুষ না থাকায় পথচারীদের দেওয়া খাবারের উপর নির্ভরশীল এসব কবুতর এখন ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে৷
দাতব্য সংস্থাটির বিশেষজ্ঞ লিওনি ভেগৎজেন দ্য এক্সপ্রেস পত্রিকাকে বলেন, ‘‘কবুতর সহজে নিজের অভ্যাস বদলাতে পারে না৷ তাই সেগুলো সিটিসেন্টার ছেড়ে যাবে না৷ দ্রুত খাবারের ব্যবস্থা করা না হলে সেগুলো অনাহারে মারা যাবে৷
তার উপর এখন ডিম থেকে বাচ্চা জন্মের সময়৷ মা পাখি খাবার যোগাড় করতে না পারলে বাচ্চাগুলো হয়তো বাসার মধ্যেই মারা পড়বে৷’’
কবুতরের খাবারের জন্য নির্দিষ্ট স্থান ঠিক করে সেখানে তাদের নিয়মিত খাবার দেওয়া আহ্বান জানান তিনি৷ প্রাণী অধিকার সুরক্ষা কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা খাবার বিতরণের কাজটি করতে পারবেন৷
জার্মানির অনেক শহরেই কবুতর অনেক বেড়ে গেছে এবং সেগুলো নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষকে বেগ পেতে হচ্ছে৷ তাই বলে সেগুলোকে এভাবে মরতে দেওয়া উচিত হবে না বলে মনে করেন ভেগৎজেন৷ বলেন, ‘‘একসময় মানুষই কবুতরগুলোকে শহরে নিয়ে এসেছিল৷ এখন সেগুলোকে রক্ষা করাও আমাদের বিশেষ দায়িত্ব৷’’
নিক মার্টিন/এসএনএল/কেএম
করোনার মোকাবিলায় সংহতি ও হাস্যরস
করোনা সংকট মানুষের অনেক ভালো দিক জাগিয়ে তুলেছে৷ সরাসরি সহায়তা থেকে শুরু করে প্রতীকী পদক্ষেপ অথবা অন্যদের উৎসাহ দেবার অসংখ্য দৃষ্টান্ত দেখা যাচ্ছে৷ এমনই কিছু উদাহরণ তুলে ধরা যাক৷
ছবি: picture-alliance/TASS/O. Smolskaya
টেডি বেয়ারের সন্ধানে
সপ্তাহের পর সপ্তাহ স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন বন্ধ থাকায় বাবা-মায়েরা পড়েছেন সমস্যায়৷ বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসের অনেক মানুষ তাই খুদেদের আমোদের ব্যবস্থা করছেন৷ তাঁরা বাচ্চাদের জানালায় টেডি বেয়ার রেখে দিচ্ছেন৷ বাবা-মার সঙ্গে হাঁটতে বের হলে শিশুরা এক মানচিত্র অনুসরণ করে এমন আরও পুতুল খুঁজে পেতে পারে৷
করোনা ভাইরাস বিশেষ করে বয়স্ক মানুষের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে৷ তাঁদের সুরক্ষার জন্য অনেক সুপারমার্কেট বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে৷ দিনের নির্দিষ্ট সময়ে একমাত্র বয়স্কদের বাজারে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/P. Dambarage
দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বৈচিত্র্য
তুরস্কে বয়স্কদের সহায়তা করতে অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷ ৬৫ বছর ও তার বেশি বয়সের মানুষ অথবা যারা দীর্ঘদিন কোনো রোগে ভুগছেন, সুরক্ষার স্বার্থে তাদের জন্য কার্যত কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে৷ ২৫ বছর বয়সি এক তরুণ বয়স্কদের মনোরঞ্জন করতে তাদের বাসার সামনে গানবাজনার ব্যবস্থা করেছে৷ অন্য কিছু দেশে বৃদ্ধাবাসের সামনে গানের খবর পাওয়া গেছে৷ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে কাউকে তাঁদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করতে দেওয়া হচ্ছে না৷
ছবি: picture-alliance/AA/M. U. Uysal
সব ঠিক হয়ে যাবে
ইটালির অনেক মানুষ বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে কার্যত গৃহবন্দি রয়েছেন৷ কবে এই দশা শেষ হবে, কেউ জানে না৷ কমপক্ষে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত জরুরি পদক্ষেপ কার্যকর থাকবে৷ মানুষ পরস্পরকে সাহস জোগাতে অনেক কিছু করছে৷ অনেক জানালা ও বারান্দায় রামধনুর ছবিসহ তিনটি শব্দ শোভা পাচ্ছে, বাংলায় যার অর্থ ‘সব ঠিক হয়ে যাবে’৷
ছবি: picture-alliance/abaca/IPA/P. Tenagli
ইটালির প্রতি সংহতি
কঠিন সংকটের মাঝেও সংহতিবোধের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে৷ রাশিয়ার দক্ষিণ পশ্চিমে বেসলান শহরের মানুষ বারান্দায় মোমবাতি জ্বালিয়ে ইটালির প্রতি সংহতিবোধ জানিয়েছে৷ প্যারাগুয়ে, পোল্যান্ড ও বসনিয়ায় শহরের অনেক ভবনে ইটালির পতাকার রংয়ের আলোকসজ্জা দেখা গেছে৷ চীনেও একটি বাসের গায়ে ইটালির প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/TASS/O. Smolskaya
চলো ছুটি-ছুটি খেলা যাক
আডাস ভাসিলিয়াউস্কাস করোনা মহামারির কারণে ফটোগ্রাফার হিসেবে কোনো কাজ পাচ্ছেন না৷ দমে না গিয়ে তিনি ড্রোনের মাধ্যমে লকডাউন চলাকালীন লিথুয়েনিয়ার মানুষের কার্যকলাপের ছবি তুলছেন৷ তাতে বেশ কিছু মজার দৃশ্য ধরা পড়ছে৷ ছাদের উপর রোদ পোয়ানো থেকে শুরু করে বারান্দায় ব্যায়ামের ছবিতেই মানুষের মনোভাব ফুটে উঠছে৷ কেউ ছদ্মবেশ পরে খেলছে, কেউ বা আগামী ছুটিতে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখছে৷
ছবি: picture-alliance/Cover Images/A. Vasilauskas
প্রাণীর করুণ দশা
অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের জনজীবনও স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ মানুষ বাসার বাইরে বের হচ্ছে না বলে উচ্ছিষ্ট খেয়ে বেঁচে থাকা প্রাণীও সমস্যায় পড়েছে৷ ঢাকায় স্বেচ্ছাসেবীরা পথের কুকুরের খাদ্যের ব্যবস্থা করছেন৷ জার্মানির পশুকল্যাণ সংগঠনও শহরে অভুক্ত পায়রার হাল সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/S. M. Rahman
সম্মান ও মর্যাদা
অনেক দেশে চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন৷ ইউরোপের কিছু দেশে বিকালে ডাক্তার, নার্স ইত্যাদি পেশার মানুষের এই ভূমিকাকে সম্মান জানাতে হাততালি দেবার রেওয়াজ চালু হয়েছে৷ পাকিস্তানে সাদা পতাকা দুলিয়ে ডাক্তারদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো হচ্ছে৷ তবে তাঁদের সহায়তা করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো বাসায় থেকে মহামারির গতি কমাতে অবদান রাখা৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/PPI
সমবেত প্রচেষ্টা
গোটা বিশ্বে স্বেচ্ছাসেবীরা সেলাই মেশিন বার করে সহজ মাস্ক তৈরি করছেন৷ তবে এভাবে সংক্রমণ এড়ানো সব ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না৷ একমাত্র মুখ ও নাক ঠিকমতো ঢাকতে পারলে কমপক্ষে ভাইরাস ছড়ানো বন্ধ করা যায়৷ আর্মেনীয়-সিরীয় এই নারীরা যে মাস্ক তৈরি করছেন, সেগুলি আলেপ্পোর মানুষের কাছে বণ্টন করা হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP
ফাউ হিসেবে টয়লেট পেপার
বর্তমান সংকটের সময় শুধু জার্মানিতেই টয়লেট পেপারের আকাল দেখা যাচ্ছে না৷ অ্যামেরিকার মিনেসোটা রাজ্যে এক রেস্তোরাঁয় ২৫ ডলারের বেশি মূল্যের খাবার অর্ডার দিলে বিনামূল্যে একটি টয়লেট পেপারের রোল পাওয়া যাচ্ছে৷ মালিক বলেছেন, ক্রেতারা সেটা পেয়ে মন খুলে হাসছেন৷ সেটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো পাওনা৷ বলা বাহুল্য, বিপণন কৌশল হিসেবে এমন চমক সত্যি কাজ করছে৷