1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লকডাউনে ঈদযাত্রা, বৈষম্যের অভিযোগ

সমীর কুমার দে ঢাকা
৯ মে ২০২১

বাংলাদেশে আন্তজেলা পরিবহণ বন্ধ ঘোষণা করলেও অনেক রুটেই চলছে যানবাহন৷ অনেকে নিজস্ব গাড়িতে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছেন৷ বিপাকে পড়ছেন তারাই, যাদের নিজস্ব বাহন নেই এবং ফেরি পার হতে হচ্ছে৷

বাংলাদেশে আন্তজেলা পরিবহণ বন্ধ ঘোষণা করলেও অনেক রুটেই চলছে যানবাহন৷ অনেকে নিজস্ব গাড়িতে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছেন৷ বিপাকে পড়ছেন তারাই, যাদের নিজস্ব বাহন নেই এবং ফেরি পার হতে হচ্ছে৷
মুন্সিগঞ্জের মাওয়াতে শনিবার ফেরিতে করে নদী পার হচ্ছেন বাড়ি ফেরা মানুষ৷ছবি: Xinhua/picture alliance

নিষেধাজ্ঞার পরও শনিবার বাংলাদেশে মাওয়া ও পাটুয়ারিয়া ঘাট দিয়ে দিনের বেলায় ফেরি চলাচল করেছে৷ গাড়ির বদলে সেগুলোতে মূলত হাজার হাজার মানুষ পার হয়েছেন৷ শনিবারের পর রোববারের চিত্রটি ছিল আরো ভয়াবহ৷ প্রশাসনের তৎপরতায় ফেরিতে যাওয়ার সুযোগ কমায় অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে করে পদ্মা পাড়ি দিয়েছেন৷ মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে শিমুলিয়া ঘাট এলাকা থেকে পদ্মা নদীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যাত্রী পারাপারের সময় যাত্রীবাহী ১২টি ট্রলার আটক করেছে মাওয়া নৌপুলিশ৷ ট্রলারেগুলো দেড় শতাধিক যাত্রী নিয়ে পদ্মা পারাপারের চেষ্টা করছিল বলে জানিয়েছে নৌপুলিশ৷ ট্রলারগুলোর চালকদের এসময় আটক করা হয়েছে৷ 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা ফেরি বন্ধ রেখেছি৷ কিন্তু জরুরি যানবাহন অর্থাৎ অ্যাম্বুলেন্স বা রোগী পরিবহণের গাড়ি পারাপারের সুযোগ রাখা হয়েছে৷ সমস্যা হয়েছে কোন ফেরি ঘাটে ভেড়া মাত্রই হাজার মানুষ সেটাতে উঠে পড়ছে৷ অথচ যে অ্যাম্বুলেন্সটি নেওয়ার জন্য ঘাটে ফেরিটি ভিড়েছে, সেটি আর উঠতে পারছে না৷’’

ডা. লেলিন চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

মানুষের চাপে মাওয়া ফেরিঘাটে বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স আটকে যায়৷ এতে অক্সিজেনের অভাবে একজন রোগী মারা গেছেন৷ মাওয়া ঘাটে নারায়ণগঞ্জ থেকে খুলনাগামী যাত্রী রেহেনা আক্তার বলেন, ‘‘ছেলেমেয়ে নিয়া ঘাটে দুই ঘণ্টা বসা ছিলাম৷ ভিড় ঠেলে ফেরিতে উঠতে গিয়ে আমি পল্টুনে পড়ে যাই৷ মানুষের চাপ আর পায়ের আঘাতের কষ্ট নিয়েও হাল ছাড়ি নাই৷ ফেরিতে উঠে পার হইছি৷ এখন ভাড়া বেশি হলেও ভালোভাবে বাড়ি যাইতে পারলে হয়৷’’ 

ভিন্ন চিত্র মহাসড়কে

অপরদিকে মহাসড়ক দিয়ে অনেকটা নির্বিঘ্নে প্রাইভেটকার, ট্রাকসহ ছোট যানবাহন চলাচল করছে৷ তবে গাড়ির চাপের কারণে রাস্তায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়৷ বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার সকাল ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত সেতু দিয়ে ২৬ হাজার গাড়ি পার হয়েছে৷ এর মধ্যে পাঁচশতাধিক যাত্রী বোঝাই বাসও রয়েছে৷ ঢাকা থেকে নিজের প্রাইভেটকারে চট্টগ্রামে যাওয়া সাইদুল ইসলাম জানালেন, ‘‘শনিবার রাতে তিনি চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন৷ একটু যানজটে পড়লেও খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয়নি৷’’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আসলে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে আমাদের দেশের মানুষকে এত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে৷ শুরু থেকেই যদি সঠিকভাবে পরিকল্পনা নেওয়া যেত, তাহলে আজকে এই পরিস্থিতি হতো না৷ একদিকে সড়ক চালু রেখে, ফেরি বন্ধ করে লাভ কী? ওই ব্যক্তি ফেরিঘাট পর্যন্ত যাচ্ছেন কীভাবে? তাহলে আমাদের পরিকল্পনাটা নিতে হতো, রাস্তায় বন্ধ থাকবে৷ অর্থাৎ কেউ বাড়ি যাবে না, সবাই এবার ঢাকায় ঈদ করবেন৷ তাহলে তো আর ফেরি বন্ধ করতে হতো না৷’’

ঈদ যাত্রায় বৈষম্য

এদিকে হাজার হাজার মানুষের নদী পারাপারে ছবি ও খবর নিয়ে সরব সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা৷ কেউ কেউ এজন্য যারা বাড়ি ছুটছেন তাদের দায়ী করছেন৷ আবার কেউ কেউ এর মধ্য দিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনাও করেছেন৷ বিশেষ করে ব্যক্তিগত যানে গন্তব্যে যেতে কোন বাধা না থাকায় বাড়ি ফেরা নিয়ে বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে, বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে৷ কেননা এতে বিত্তবানরা ঠিকই নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারছেন, অন্যদিকে নিম্নবিত্তরা ভোগান্তি পড়ছেন বা ঝুঁকি নিতে বাধ্য হচ্ছেন৷ মহাসড়ক চালু রেখে ফেরি বন্ধ করা বৈষম্য কি-না, জানতে চাইলে ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘‘এটা বৈষম্য তো বটেই, আমি এটাকে অন্যায্যতা বলব৷ যার গাড়ি আছে, সে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পাবে, আর যার গাড়ি নেই সে যেতে পারবে না, এটা হতে পারে না৷ এখানে বিত্তের সঙ্গে, অর্থের সঙ্গে ঈদের আনন্দের বিষয়টি মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে৷ রাষ্ট্র যখন এমন বৈষম্য সৃষ্টি করে তখন মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়৷ এই ক্ষোভের কিভাবে বহিঃপ্রকাশ হবে সেটা বলা মুশকিল৷ তবে যেটা হয়েছে সেটা অত্যন্ত অন্যায় হয়েছে৷’’

ফরহাদ হোসেন

This browser does not support the audio element.

এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আসলে কারো জন্য বিশেষ সুবিধা দিচ্ছি না৷ আমরা পাবলিক পরিবহন, ট্রেন, লঞ্চ, ফেরি সবই বন্ধ রেখেছি৷ এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যাতায়াতও বন্ধ করা হয়েছে৷ কিন্তু তারপরও আপনি দেখবেন রাস্তায় মানুষের স্রোত৷ ফেরিঘাটে হাজার হাজার মানুষ৷ আমরা তো বিধিনিষেধ দিয়েছিলাম বলেই এখন সংক্রমণ অনেকটা কমে এসেছে৷ শেষ পর্যন্ত মানুষ যে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এভাবে ছুঁটছেন, তাদের কী বলবেন? আইন কার উপর প্রয়োগ করবেন৷ আইন প্রয়োগ করার দায়িত্ব পুলিশের? কিন্তু তাদের তো সেই সামর্থ্য থাকতে হবে৷ ফলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা না আসলে আপনি কিছুই করতে পারবেন না৷’’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঈদ যাত্রায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে তা সরকারের প্রত্যাশার বাইরে ছিল৷ এখন কিভাবে সামাল দেয়া যায় তা নিয়ে সরকার চিন্তা করছে বলেও জানান তিনি৷  

৩০ এপ্রিলের ছবিঘর দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ