২১ দিনের লকডাউনে ভারতে প্রায় ১২ কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন। ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে বলে রিপোর্টে প্রকাশ।
ছবি: Getty Images/Y. Nazir
বিজ্ঞাপন
প্রথমবার লকডাউন ঘোষণার সময়েও তিনি বলেছিলেন, মঙ্গলবার ৩ মে পর্যন্ত লকডাউন বৃদ্ধির নির্দেশ দেওয়ার সময়ে ফের দেশের প্রধানমন্ত্রী বললেন, সংকট কালে কারও চাকরি যেন চলে না যায়। চাকরিদাতাদের এ দায়িত্ব পালন করতে হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ অন্যরকম। পরিসংখ্যান বলছে, গত এক মাসে প্রায় ১২ কোটি ভারতীয় চাকরি হারিয়েছেন বা চাকরি হারানোর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। পরিস্থিতি এ ভাবেই চলতে থাকলে আরও চাকরি যাওয়ার আশঙ্কা।
সম্প্রতি দেশের চাকরির বাজার নিয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল সেন্টার ফর দ্য মনিটারিং অফ ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই) নামের একটি স্বাধীন সংস্থা। প্রতি বছরেই তারা এই সমীক্ষা চালায়। ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সমীক্ষা চালিয়ে যে রিপোর্ট তারা পেশ করেছে, তা ভয়াবহ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, মাত্র দুই সপ্তাহে ভারতে চাকরি হারানোর হার ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ। অদূর ভবিষ্যতে যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। অর্থনীতিবিদদের মতে, কোনও দেশে যখন বেকারত্বের হার ২০ শতাংশের উপরে চলে যায়, তখন অর্থনৈতিক মন্দা স্পষ্ট হয়। ফলে গত দুই সপ্তাহের হিসেবে স্পষ্ট, ভারতে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হতে চলেছে।
দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্যাম্প
প্রায় এক সপ্তাহ ভয়াবহ পরিস্থিতির সাক্ষী হওয়ার পরে সামান্য স্বস্তি। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য দিল্লিতে তৈরি হল অস্থায়ী ক্যাম্প।
ছবি: Surender Kumar
আর একজন শ্রমিকও রাস্তায় নেই
মঙ্গলবার সকালে দেশের সুপ্রিমকোর্টকে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়ে দিল, দিল্লির রাস্তায় আর একজনও পরিযায়ী শ্রমিক নেই। সকলকেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে বিভিন্ন অস্থায়ী ক্যাম্পে।
ছবি: DW/S. Kumar
স্কুলেই চলছে ক্যাম্প
২১ দিনের লকডাউনে বন্ধ সমস্ত স্কুল-কলেজ। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য তেমনই বেশ কিছু স্কুলে তৈরি করা হয়েছে ক্যাম্প। থাকার ব্যবস্থা তো হয়েছেই, দুই বেলা খাবারও দেওয়া হচ্ছে তাঁদের।
ছবি: DW/S. Kumar
পাশে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন
সরকারকে এ কাজে সাহায্য করতে রাস্তায় নেমেছে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তারাই শ্রমিকদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। স্কুলগুলিতে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে শ্রমিকদের শোয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।
ছবি: DW/S. Kumar
ড্রোন দিয়ে নজরদারি
ড্রোনের সাহায্যে শ্রমিক ক্যাম্পগুলিতে নজরদারি চালানো হচ্ছে। জেনে নেওয়া হচ্ছে তাঁদের প্রয়োজন।
ছবি: DW/S. Kumar
ঘরের বাইরে শৌচাগার
ক্যাম্পের বাইরে এ ভাবেই তৈরি হচ্ছে শৌচাগার। ভাইরাস যাতে না ছড়ায়, তার জন্য সমস্ত রকম ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। যদিও অভিযোগ, এখনও বহু জায়গায় শ্রমিকরা আটকে আছেন। সকলকে এখনও ক্যাম্পে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি।
ছবি: DW/S. Kumar
পুলিশি প্রহরা
ক্যাম্পগুলির বাইরে পুলিশের পিকেটও তৈরি করা হয়েছে। শ্রমিকদের প্রয়োজনের কথা তাঁরা শুনছেন। একই সঙ্গে দেখছেন, কেউ যাতে ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে চলে না যান।
ছবি: DW/S. Kumar
এত সময় লাগল কেন
নাগরিক সমাজের প্রশ্ন, পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা সরকার আগে ভাবেনি কেন? কেন হেঁটে বাড়ি ফিরতে গিয়ে মৃত্যু হল শ্রমিকদের? কেন পুলিশ লাঠি চালালো তাঁদের ওপর?
ছবি: Reuters/A. Abidi
এরপরে কী হবে
আরও একটি প্রশ্ন বার বার উঠছে। এখন না হয় ক্যাম্পে থাকবেন শ্রমিকরা। কিন্তু লকডাউন উঠে গেলে কী হবে তাঁদের? তখন কোথা থেকে খাবার আসবে তাঁদের? দাবি উঠছে, লকডাউনের মধ্যেই শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করুক সরকার।
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
8 ছবি1 | 8
এই মুহূর্তে ভারতের জনসংখ্যা ১৩৭ কোটি। এর মধ্যে ১৫ বছরের উপরে কর্মক্ষম ব্যক্তির সংখ্যা ১০৪ কোটি। রিপোর্ট বলছে, সাধারণত, ১৫ থেকে ৬০-- এই বয়সসীমাকেই কর্মক্ষম প্রজন্ম হিসেবে ধরা হয়। সিএমআইই-র হিসেব অনুযায়ী এর মধ্যে গত এক বছরে লাগাতার কাজ করেছেন এবং উপার্জন করেছেন প্রায় ৪০ কোটি লোক। এর বাইরে কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ। রিপোর্ট বলছে, ওই ৪০ কোটির মধ্যে গত দুই সপ্তাহে কাজ হারিয়েছেন বা হারানোর পরিস্থিতিতে পৌঁছেছেন প্রায় ১২ কোটি লোক। যার মধ্যে প্রায় ৮ কোটি ব্যক্তি পরিবারের একমাত্র বা প্রধান রোজগেরে। আগামী দিনে এই সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা।
ভারতীয় অর্থনীতির বিশ্লেষক এবং ইনকিউবের ডিরেক্টর ত্রিদিবেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ''গত কয়েক বছর ধরেই ভারতীয় অর্থনীতির পতন শুরু হয়েছিল। আমাদের ধারণা ছিল ২০২০ সালের শেষ পর্বে পৌঁছে চার থেকে পাঁচ কোটি লোক কাজ হারাবেন। কিন্তু করোনার কারণে সেই সংখ্যাটা রাতারাতি দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গিয়েছে। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। অর্থনীতির কাঠামোই বদলে যেতে শুরু করেছে।''
অর্থনীতিবিদ এবং ভারত সরকারের প্রাক্তন মুখ্য সংখ্যাতত্ত্ববিদ প্রণব সেন জানিয়েছেন, ''অন্তত পাঁচ কোটি লোক অর্থনৈতিক ভাবে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। করোনা পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেলেও অর্থনীতির এই দৈন্যদশা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। বহু দিন লেগে যাবে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে।''
দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রকের সচিব এবং বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্তন আধিকারিক সুভাষ চন্দ্র গর্গের বক্তব্য, ''করোনার জন্য দেশের অর্থনীতির ৭০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজস্ব আদায় মার খেয়েছে, অভূতপূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন''।
আধুনিক যুগের দাসত্ব
বিশ্বজুড়ে দাস প্রথা নিষিদ্ধ হয়েছে সেই কবে৷ কিন্তু প্রথা নিষিদ্ধ হলেও এখনো দাসত্ব বিলীন হয়নি৷ বিশ্বের চার কোটির বেশি মানুষ এখনো দাসত্বের জালে বন্দি৷
ছবি: Michael Hylton/Anti-Slavery International
অবৈধ শ্রমিক
উন্নত জীবনের আশায় মানবপাচারকারীদের হাতে নিজেকে তুলে দেওয়া অবৈধ অভিবাসীদের বেশিরভাগকে দাসত্বের জীবন বেছে নিতে হচ্ছে৷ কাগজপত্র নেই, ভাষা জানা নেই, নিজের অধিকারে চেয়ে কোথায় অভিযোগ করবে সেটাও জানা নেই৷ ফলে বছরের পর বছর ধরে দাসত্বের জীবন বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাদের৷ এক ইউরোপেই কৃষিক্ষেত্রে কত অবৈধ শ্রমিক আছে তার হিসাব কারো জানা নেই৷ নামমাত্র মজুরিতে তাঁরা উদয়-অস্ত পরিশ্রম করছেন৷
ছবি: Bharat Patel
অপহরণ, পাচার ও বিক্রি
জাতিসংঘের তথ্যানুসারে এখনও মানবপাচার বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং লাভজনক কারবারের একটি৷ পাচারের শিকার হওয়া পুরুষরা বেশিরভাগ সময় নির্মাণ শ্রমিক বা খনি শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হয়৷ নারীদের বেশিরভাগের জায়গা হয় পতিতালয়ে, কেউ কেউ হয় গৃহকর্মী৷
ছবি: AFP/Getty Images/M. Vatsyayana
শিশুরাও যখন দাসত্বের জালে
নিদারুণ অভাবে অনেক পরিবার তাদের শিশুদের দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়৷ ঘানার লেক ভল্টায় বিক্রি হয়ে যাওয়া এইসব শিশুদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে যেতে হয়৷ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) হিসাব অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে প্রায় এক কোটি শিশু এভাবে দাসের জীবন কাটাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Ridley
বালিকা বধূ
ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী বিশ্বে প্রতি পাঁচজনে একজন মেয়েশিশুর বয়স ১৮ হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায়৷ এ বয়সে বিয়ে করতে সবসময় বাধ্য করা হয়, বিষয়টা এমনও নয়৷ তবে অনেক ক্ষেত্রে লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়ে এসব মেয়েশিশুদের জোর করে বিয়ে দেয়া হয়৷ তারা অনেকে শ্বশুরবাড়িতে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হন৷ সঙ্গে ঘরের কাজ তো করতেই হয়৷
ছবি: picture alliance/Tone Koene
বন্দি জীবন
বিশ্বজুড়ে মেয়েশিশুদের এখনো স্কুল ছেড়ে বাড়ির কাজ করতে হয়৷ কখনো পরিবারে বা কখনো অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে তাদের দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে হয়৷ অনেকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়৷
ছবি: David Rose/Panos Pictures
ঋণের বোঝা
অতীতের মত দাস কেনা-বেচা এখন আর খুব একটা দেখা না গেলেও এশিয়া, গল্ফ আরব দেশ, আফ্রিকা ও লাতিন অ্যামেরিকার দেশগুলোতে ঋণের বোঝার নিচে চাপা পড়া মানুষরা দাস হতে বাধ্য হন৷ এমকি পরিবারের শিশুটিকেও দাস হিসেবে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়৷ বিশ্বে এমন দাসের সংখ্যা চার কোটির বেশি৷
ছবি: Anti-Slavery International
জন্মসূত্রে দাস
উত্তরপশ্চিম আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়া ‘হারাতিন‘ সম্প্রদায়ে জন্মই যেন আজন্ম পাপ৷ পুরুষের পর পুরুষ ধরে এই সম্প্রদায়ের মানুষ দাস৷ যদিও সরকারিভাবে দেশটিতে দাস ব্যবসা নিষিদ্ধ৷ তারপরও সেখানে দাস কেনা-বেচা চলে৷ মৌরিতানিয়ায় ছয় লাখের বেশি পুরুষ, নারী ও শিশু দাস রয়েছে৷ যারা গৃহকর্ম এবং কৃষিকাজ করেন৷ যা দেশটির মোট জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/A. Dragaj
7 ছবি1 | 7
ডয়চে ভেলেকে ত্রিদিবেশ জানিয়েছেন, দুই দিক থেকে বর্তমান সংকটকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। এক, দেশের ভিতরে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে মানুষ কাজ হারাচ্ছেন। সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পরিষেবা ইন্ডাস্ট্রি। হোটেল, বিমান, পর্যটন শিল্প কার্যত ভেঙে পড়েছে। অন্য দিকে অসংগঠিত ক্ষেত্রেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। নির্মাণ শিল্প, কারখানার সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকেরা রাতারাতি কাজ হারিয়েছেন। যাঁদের পরিযায়ী শ্রমিক বলা হচ্ছে। ত্রিদিবেশের ধারণা, ''এঁদের অনেকেই আর শিল্পক্ষেত্রে ফিরবেন না। নিজ নিজ গ্রামে কৃষির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবেন। কারণ, এত মন্দা সত্ত্বেও কৃষিক্ষেত্রে এখনও তার প্রভাব সে ভাবে দেখা যাচ্ছে না। নিজের বাড়িতে থেকে কৃষিক্ষেত্রে কাজ করলে অন্তত প্রতিদিনের খাবার তাঁদের জুটে যাবে।'' বিশ্লেষণের দ্বিতীয় পর্যায়ে চলে আসে বিশ্ব মন্দার প্রসঙ্গ। দেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর। কারণ, ইউরোপ এবং অ্যামেরিকার বড় বড় সংস্থাগুলি কম দামে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের নিয়োগ করে। বিশ্ব অর্থনীতির সার্বিক পতনের কারণে সেই কর্মীরাও এখন সমস্যায়। বহু বিপিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চাকরি চলে গিয়েছে অনেকের। অ্যামেরিকায় কর্মরত তথ্য প্রযুক্তি কর্মীদের অনেককেই দেশে ফিরে যেতে বলেছে তাঁদের সংস্থাগুলি।
রাজপথে বিধ্বস্ত শ্রমিকের দল
ভারতের লকডাউন কেড়ে নিয়েছে তাঁদের কাজ। ঘরহীন, খাদ্যহীন শ্রমিকের দল এখনও লড়াই চালাচ্ছেন ঘরে ফেরার।
ছবি: Reuters/R. De Chowdhuri
দিল্লির রাজপথ
না, কোনও মিছিল নয়। রাজনৈতিক দলের সভাও নয়। ওঁরা দাঁড়িয়ে আছেন ঘরে ফেরার জন্য। করোনার লকডাউন তাঁদের কাজ কেড়ে নিয়েছে। খাওয়ার পয়সা নেই। তাই বাড়ি ফিরে যেতে চান ওঁরা।
ছবি: Surender Kumar
ওঁরা পরিযায়ী শ্রমিক
ভারতের বিভিন্ন শহরে কাজের আশায় ঘুরে বেড়ান এই পরিযায়ী শ্রমিকেরা। পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে ভিন রাজ্যে পাড়ি জমান এই তাঁরা। দিন ভিত্তিক কাজের আশায়।
ছবি: Surender Kumar
দিল্লির শ্রমিকেরা
লকডাউনে বন্ধ হয়ে গিয়েছে কাজ। দিল্লিতে আটকে পড়েছেন কয়েক লক্ষ শ্রমিক। কেউ পায়ে হেঁটে পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন হাজার মাইল দূরের বাড়ি। পথে মৃত্যুও হয়েছে অনেকের।
ছবি: DW/S. Kumar
শেষ আশা
উত্তরপ্রদেশ সরকার বাসে করে তাঁদের ফিরিয়ে আনবে বলেছিল। সে কারণেই দিল্লির আনন্দ বিহার বাসস্ট্যান্ডে রাতের পর রাত অপেক্ষা করছেন কয়েক হাজার শ্রমিক।
ছবি: Surender Kumar
যাওয়া হবে না
শ্রমিকদের জমায়েত দেখে টনক নড়েছে সরকারের। কেন্দ্র জানিয়েছে, শ্রমিকদের বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। দেওয়া হবে খাবার। আপাতত তাঁরা যেখানে আছেন, সেখানেই নিরাপদে থাকতে পারবেন।
ছবি: DW/A. Ansari
এত সময় লাগলো কেন
বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, শ্রমিকদের কথা বুঝতে এত সময় লাগলো কেন? কেন অভুক্ত অবস্থায় পথ হাঁটার সময় পুলিশ লাঠি চালালো তাঁদের উপর? কেন মরতে হল অনেককে?
ছবি: Reuters/A. Dave
অন্য ছবি
গত কয়েক দিনে শ্রমিকদের উপর প্রবল অত্যাচার চালিয়েছে পুলিশ। তবে অন্য ছবিও আছে। কোথাও কোথাও পুলিশই তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
ছবি: Reuters/A. Abidi
শুধু দিল্লি নয়
শুধু দিল্লি নয়। গোটা দেশ জুড়েই এ ভাবে আটকে আছেন শ্রমিকরা। বিভিন্ন শহরে। সকলেই ফিরতে চাইছেন নিজের গ্রামে।
ছবি: Reuters/R. De Chowdhuri
এরপর কী
২১ দিনের লকডাউনে না হয় খাবার পাবেন তাঁরা। আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেবে সরকার। কিন্তু তারপর? অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়ে গিয়েছে। কোথায় কাজ পাবেন তাঁরা? কী ভাবে চলবে তাঁদের?
ছবি: Reuters/A. Dave
ব্যবস্থা নিক সরকার
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজ-- অনেকেই সরকারের কাছে আবেদন করেছেন, এই শ্রমিকদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করা হোক।
ছবি: Surender Kumar
10 ছবি1 | 10
এই মুহূর্তে ভারতের পরিষেবা ক্ষেত্র, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র এবং উৎপাদন শিল্প সব চেয়ে সমস্যার মুখে। এই সমস্ত ক্ষেত্রেই সব চেয়ে বেশি কর্মী ছাঁটাই হচ্ছেন। একই সঙ্গে মার খাচ্ছে সংবাদসংস্থাগুলি। কারণ দেশের অধিকাংশ সংবাদ সংস্থাই বিজ্ঞাপন নির্ভর। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিজ্ঞাপন আসছে না। অন্য দিকে নিউজ প্রিন্টের দাম খুব বেড়ে গিয়েছে। ফলে বহু সংস্থা সংবাদপত্রের বহর ছোট করে ফেলছে। ছাঁটাই করা হচ্ছে কর্মীদের। মঙ্গলবারই এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে ভারতীয় নিউজ পেপার সোসাইটি।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, লকডাউনের ফলে অর্থনীতির যে এই অবস্থা হবে, সরকারের তা অজানা ছিল না। ফলে লকডাউন ঘোষণা করার সময় বিপুল পরিমাণ কর্মীর জীবিকার কথা সরকারের ভাবা উচিত ছিল। করোনা থেকে বাঁচাতে গিয়ে দেশের একটা বড় অংশের মানুষকে কার্যত অনাহারের দিকে ঠেলে দেওয়া হলো। মুখে চাকরি রক্ষার কথা বললেও বাস্তবে এ বিষয়ে সরকার কার্যত নির্বিকার। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে না পারলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। বস্তুত, পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৩২-'৩৩ সালে অ্যামেরিকায় গ্রেট ডিপ্রেশন বা মহামন্দার সময়ে কাজ হারিয়েছিলেন দেড় কোটি মানুষ। পৃথিবীর ইতিহাসে সেটাই এক সঙ্গে সব চেয়ে বেশি কাজ হারানোর ঘটনা। ভারত এর মধ্যেই সেই ইতিহাস টপকে গিয়েছে।