স্বাস্থ্য পর্যটন বন্ধ হওয়ায় এ বছর কয়েকশ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হবে ভারতের। মার খাচ্ছে আনুষাঙ্গিক ব্যবসাও।
বিজ্ঞাপন
দিল্লি, কলকাতা, চেন্নাই, ভেলোর, বেঙ্গালুরু সহ ভারতের বড় শহরগুলির বেসরকারি হাসপাতালে গেলেই ছবিটা স্পষ্ট হয়। কান পাতলেই শোনা যাবে বাংলায় কথাবার্তা। কারণ বাংলাদেশ থেকে আসা বহু মানুষ সেখানে ভর্তি। শুধু বাংলাদেশ নয়, বহু বিদেশি ভরিয়ে রাখেন এই হাসপাতালগুলি। তাঁরা ভারতে আসেন শুধুমাত্র চিকিৎসা করাতে। কম খরচে ভালো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও উন্নত মানের চিকিৎসা পরিকাঠামোর সুযোগ নিতে। আবার অনেকে কেরালায় যান আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার জন্য।
সে জন্যই মাত্র কয়েক মাস আগে ভারতের নীতি আয়োগ এবং বাণিজ্য মন্ত্রক স্বাস্থ্য পর্যটন বা হেল্থ ট্যুরিজমকে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। বলা হয়েছিল, অর্থনীতির গ্রাফে ১২টি 'চ্যাম্পিয়ন সেক্টরে'র মধ্যে স্বাস্থ্য পর্যটন অন্যতম। কিন্তু করোনার প্রকোপ এবং তার জেরে লকডাউনের কারণে সেই স্বাস্থ্য পর্যটন সম্পূর্ণ মুখ থুবড়ে পড়েছে। আরও চিন্তার বিষয় হলো, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এই সেক্টরে অর্থনৈতিক উন্নতির কোনও লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। যার প্রভাব সার্বিক ভাবে ভারতীয় অর্থনীতির উপরে পড়বে বলেও মনে করছেন অনেকে।
করোনা: সংকটের শেষ মহাসংকটের শুরু
06:26
প্রতি বছর ভারতের বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে লাখ লাখ বিদেশি চিকিৎসা করাতে আসেন। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১২ সালে চিকিৎসা করানোর জন্য ভারতীয় ভিসা চেয়েছিলেন দেড় লাখ বিদেশি। মাত্র চার বছরে সংখ্যাটি দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে যায়। ২০১৬ সালে চিকিৎসার জন্য ভিসা নিয়েছেন চার লাখেরও বেশি মানুষ। আর ২০১৯ সালে সেই সংখ্যা তারও দ্বিগুণ হয়েছে। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, ইরান, ইরাক, ওমান এবং আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ থেকে সব চেয়ে বেশি নাগরিক ভারতে চিকিৎসা করাতে আসেন। এ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া এবং অ্যামেরিকা থেকে অনেকে আসেন। তবে সব চেয়ে বেশি আসেন বাংলাদেশের নাগরিকরা। ২০২০ সালে সরকার আশা করেছিল শুধুমাত্র স্বাস্থ্য পর্যটন থেকে ভারতের বাৎসরিক আয় হবে ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু করোনা এবং তার জেরে লকডাউনের কারণে ২০২০ সালের প্রথম পাঁচ মাসে সেই আয় তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
বিশ্লেষণে ঢোকার আগে এক দেখে নেওয়া যাক গত কয়েক বছরে স্বাস্থ্য পর্যটন থেকে ভারত কত টাকা আয় করেছে। সরকারি হিসেব বলছে, ২০১৫ সালে এই খাতে ভারত আয় করেছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকায়। ২০১৯ সালে লাভের অঙ্ক একই অনুপাতে বেড়েছে। যা দেখে ২০২০ সালের টার্গেট ঠিক করা হয়েছিল।
কলকাতায় স্বাস্থ্য পর্যটনের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত শমীক ভট্টাচার্য। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''গত এক বছরে শুধুমাত্র বাংলাদেশ থেকেই লাখ দেড়েক নথিভুক্ত রোগী ভারতে এসেছেন চিকিৎসা করাতে। এর বাইরেও বহু ব্যক্তি ভারতে পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ দেশে এসেছিলেন চিকিৎসা করাতে। স্বাস্থ্য পর্যটনে যাঁদের নাম নথিভুক্ত হয়নি। ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসে মনে হচ্ছিল, এ বছর স্বাস্থ্য পর্যটনে আরও বেশি লোক পাওয়া যাবে। কিন্তু মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে টান পড়তে শুরু করে। এখন একজনও বিদেশি রোগী নেই। এ বছরের শেষ পর্যন্ত বাইরে থেকে কেউ আসবেন বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, কোনও ফোন কল আসছে না।''
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে কোন দেশ কী করছে
করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে৷ প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হওয়াসহ আছে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান হারানোর শঙ্কা৷ তবে উন্নত দেশগুলো এই পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন আর্থিক ব্যবস্থাও নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Jordan
জার্মানি
সব ধরনের কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১১০ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে জার্মান সরকার৷ দুর্যোগকালীন এই পরিস্থিতি সামাল দিতে মোট ৮০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছলতা বজায় রাখতে দেয়া হচ্ছে কর-ছাড়৷ দেরিতে ঋণ পরিশোধে গুণতে হবে না জরিমানা৷ প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে দেয়া হবে সাড়ে ১৪ কোটি ইউরো৷
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে ২১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে স্পেন৷ ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানি, কর্মী আর আর্থিক অস্বচ্ছলদের সুরক্ষায় এই অর্থ ব্যয় করা হবে৷ এর মধ্যে শুধু সামাজিক নিরাপত্তায় খরচ করা হবে প্রায় ৬৪ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AAB. Akbulut
পর্তুগাল
১৮ মার্চ থেকে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে পর্তুগাল৷ এখন পর্যন্ত এক হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার৷ এরমধ্যে ৩২২ কোটি ডলার পর্যটন, বস্ত্র, কাঠসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ঋণ সহায়তা হিসেবে দেয়া হবে৷ ৫৩৬ কোটি ডলার আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে কর সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে৷
ছবি: Reuters/M. F. Lopes
ফ্রান্স
প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলার সহায়তা তহবিলের প্রকল্প হাতে নিয়েছে ফ্রান্স সরকার৷ এর বড় একটি অংশ দেয়া হবে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে৷ রেস্টুরেন্ট, দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং কোয়ারান্টিনের কারণে যেসব কর্মী কাজে যোগ দিতে পারছেন না, তাদের জন্য কয়কশ’ কোটি ডলার ব্যয়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Marin
যুক্তরাজ্য
করোনা ভাইরাসের কারণে ১৪৫০ কোটি ডলারের জরুরি আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য৷ জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা এবং সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকসান মেটাতে এই টাকা দেয়া হবে৷ পাশাপাশি খুচরা ব্যবসা এবং পর্যটন শিল্পের জন্য ৪০ হাজার কোটি ডলারের ঋণ তহবিলও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA Video
যুক্তরাষ্ট্র
সম্প্রতি ১০ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের একটি সহায়তা প্যাকেজের অনুমোদন দিয়েছে সেনেট৷ স্বাস্থ্য বিমা ছাড়াই করোনার পরীক্ষা করানো, স্কুলগামী শিশুদের জন্য খাবার সরবরাহ, কর্মীদের ১০ দিনের অসুস্থতাজনিত এবং কিছু ক্ষেত্রে ১২ সপ্তাহের বেতনসহ ছুটির পেছনে এই টাকা ব্যয় হবে৷ পাশাপাশি এক ট্রিলিয়ন ডলারের আরেকটি প্রণোদনা প্যকেজের জন্য আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন৷
ছবি: Reuters/L. Millis
ক্যানাডা
ক্যানাডার জন্য পাঁচ হাজার ৬৪০ কোটি ডলারের সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো৷ এই অর্থ দেশটির জিডিপির তিন শতাংশ ৷ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর-ছাড়, কর্মীদের বেতন, সমাজে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ব্যয় হবে এই অর্থ৷
ছবি: picture-alliance/empics/M. Sudoma
অস্ট্রেলিয়া
১১০০ কোটি ডলারের আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার৷ ৬৫ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষকে এককালীন ৪৫১ ডলার করে দেয়া হবে এই তহবিল থেকে৷ পাশাপাশি এক লাখ ২০ হাজার শিক্ষানবিশ চাকুরিজীবী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতেও খরচ করা হবে এখান থেকে৷ অন্যদিকে অর্থনীতিকে সচল রাখতে ঋণের সুদহার কমিয়ে দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Carrett
তুরস্ক
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ১৫৪০ কোটি ডলারের ব্যয় পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তুরস্ক৷ ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা’ শিরোনামের এই প্যাকেজটির আওতায় মোট ২১ টি খাতে খরচ করা হবে৷ এর মধ্যে অবসরকালীন ভাতা বৃদ্ধি, ব্যবসা সহযোগিতা, মূল্য সংযোজন কর হ্রাসসহ খুচরা, ইস্পাত, গাড়ি ও পর্যটন শিল্পে আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Ozbilici
9 ছবি1 | 9
বেসরকারি হাসপাতালগুলিও একই কথা বলছে। দেশ জুড়ে ছড়িয়ে আছে অ্যাপোলো হাসপাতালের চেইন। তাদের হিসেব বলছে, শুধু কলকাতাতেই প্রতি মাসে অন্তত তিন হাজার বিদেশি চিকিৎসা করাতে আসেন। যার ৬০ শতাংশ বাংলাদেশের নাগরিক। আপাতত সেই সংখ্যাটি শূন্য। চেন্নাইয়ের একটি বিখ্যাত বেসরকারি হাসপাতাল তাদের আউটডোর বন্ধ করে দিয়েছে। সরাসরি স্বীকার না করলেও, সূত্র জানাচ্ছে, ওই হাসপাতালে প্রতিদিন যত রোগী আউটডোরে যেতেন, তার অন্তত ৫০ শতাংশ বিদেশি এবং ভিন রাজ্যের রোগী। রোগী না আসার কারণে এবং করোনার ভয়ে আউটডোর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা কেবল একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিত্র নয়। দেশ জুড়ে বহু বেসরকারি হাসপাতালেই একই ঘটনা ঘটছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রতি বছর যত সংখ্যক বিদেশি ভারতে আসেন, তার পঞ্চাশ শতাংশ দক্ষিণ ভারতে যান। চেন্নাই এবং সংলগ্ন অঞ্চলের অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতালে তাঁরা চিকিৎসা করান। এ ছাড়া বাংলাদেশ, নেপাল এবং আফগানিস্তানের বেশ কিছু রোগী কলকাতাকে প্রথম পছন্দ হিসেবে বেছে নেন। আফ্রিকার দেশগুলি থেকে যাঁরা আসেন তাঁদের অনেকেই মুম্বইয়ে চিকিৎসা করান। দিল্লিতেও অনেকে আসেন। তবে রাজধানীতে যাঁরা আসেন, তাঁদের অধিকাংশই অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট ফর মেডিক্যাল সায়েন্সে চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করেন।
ভ্রমণের পথে বাধা সৃষ্টি করছে করোনা সংকট
করোনা সংকটের কারণে গোটা বিশ্বে জনজীবন প্রায় স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ বিশেষ করে ভ্রমণ ও পর্যটন ক্ষেত্র অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ অদূর ভবিষ্যতেও অনিশ্চয়তা কাটার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷
ছবি: picture-alliance/nordphoto/Bratic
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত বন্ধ
১৭ই মার্চ থেকে এক মাসের জন্য ইইউ-র বহির্সীমানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল৷ সেই সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ ইইউ-র বাইরের কয়েকটি দেশসহ শেঙেন এলাকার বহির্সীমানাও বন্ধ রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/E. Cegarra
জার্মানিতে সতর্কতার মেয়াদ বাড়লো
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস জানিয়েছেন, বিদেশ ভ্রমণে সতর্কতার মেয়াদ কমপক্ষে এপ্রিল মাসের শেষ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে৷ তিনি টুইট বার্তায় জার্মানির মানুষকে বাসায় থেকে নিজের ও অন্যান্য মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছেন৷ অনেক ভ্রমণ সংস্থাও এপ্রিল মাসের শেষ পর্যন্ত কার্যকলাপ বন্ধ রেখেছে৷ জার্মান সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেশিরভাগ দেশের সঙ্গে সীমান্ত ৪ঠা মে পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে৷
ছবি: picture-alliance/nordphoto/Bratic
আটকে পড়া নাগরিকদের দেশে ফেরানোর উদ্যোগ
করোনা সংকট শুরু হবার পর থেকে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে আটকে পড়া দেড় লাখেরও বেশি জার্মান নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছে৷ টিইউআই ভ্রমণ সংস্থার সূত্র অনুযায়ী এই উদ্যোগের ফলে প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ দেশে ফিরে এসেছেন৷ বিশেষ করে মিশর, স্পেন, পর্তুগাল ও কেপ ভ্যার্দ দ্বীপপুঞ্জে বেশিরভাগ জার্মান নাগরিক আটকে পড়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Margais
ভারতে বন্ধ পর্যটন ভিসা
করোনা সংকটের জের ধরে ভারত সব পর্যটক ভিসা কমপক্ষে এক মাসের জন্য বাতিল করেছিল৷ একমাত্র যে সব বিদেশি আগে থেকেই দেশে ছিলেন, তাদের থাকার অনুমতি দিয়েছিল ভারত সরকার৷ আপাতত ৩রা মে পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Kachroo
এশিয়ার পর্যটনে ধস
বিশেষ করে চীনা পর্যটকদের প্রবেশের উপর বিধিনিষেধের কারণে এশিয়ার অনেক পর্যটনকেন্দ্র সংকটে পড়েছে৷ যেমন টোকিওর সেনসো-জি মন্দির ও কম্বোডিয়ার আংকর ওয়াট মন্দিরে দর্শকদের সংখ্যা নাটকীয় মাত্রায় কমে গেছে৷ মার্চ মাসেই থাইল্যান্ডে পর্যটকদের সংখ্যা ৪৪ শতাংশ কমে গিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Taga
অ্যামেরিকায় প্রবেশ নিষেধ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ থেকে বিদেশি নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে৷ ইটালি ও স্পেন করোনা সংকট সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে৷ ফ্রান্স লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ১৩ই এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যে অ্যামেরিকায় প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা ততদিন চালু থাকবে, যতদিন না ইউরোপের দেশগুলিতে উন্নতির লক্ষণ দেখা না যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Stolyarova
মাইয়র্কা দ্বীপে দুশ্চিন্তা
পর্যটনের উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল স্পেনের মাইয়র্কা দ্বীপ৷ পালমা শহরের রাজপ্রাসাদের সামনে এখন প্রায় কোনো মানুষই চোখে পড়ছে না৷ পর্যটকেরা ইস্টারের ছুটি কাটাতে সেখানে যেতে পারেন নি৷ বিশেষ করে জার্মানি ও ব্রিটেনে অনিশ্চয়তার কারণে এমনকি মরসুমের সময়েও অনেক হোটেল বন্ধ রাখতে হবে সেখানকার হোটেল সংগঠন আশঙ্কা করছে৷
ছবি: picture-alliance/GTRES/G3online
আশার আলো
সুইজারল্যান্ডের ম্যাটারহর্ন পর্বতের উপর আলোর এক ইনস্টলেশন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও মানবজাতির মধ্যে সংহতির বার্তা পাঠাচ্ছে৷ বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও পর্যটকদের প্রিয় অনেক স্থানে এমন ইতিবাচক বার্তা তুলে ধরা হচ্ছে৷ যেমন মিশরের গির্জা পিরামিডের সামনে লেখা আছে ‘নিরাপদ থাকুন, বাসায় থাকুন’৷
ছবি: picture-alliance/KEYSTONE/V. Flauraud
অস্ট্রেলিয়ায় নাগরিকদের উপর নিষেধাজ্ঞা
অস্ট্রেলিয়ার সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য নাগরিকদের বিদেশ সফরের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বিদেশে অবস্থানরত সব অস্ট্রেলীয় নাগরিকদের দেশে ফেরার ডাক দিয়েছেন৷ অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করলে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম বে কিছু দিন ধরে চালু রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/Sopa/F. Rols
9 ছবি1 | 9
শমীকের বক্তব্য, মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে একে একে বিদেশের বিমান বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভিসাও দেওয়া হচ্ছে না। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এখন গোটা দেশে আর বিদেশি রোগী নেই। যাঁরা আছেন, তাঁরা আগে এসেছিলেন, এখন আটকে পড়েছেন। খুবই সমস্যার মধ্যে আছেন। সমস্যা হল, লকডাউন উঠলেও আপাতত বিদেশি রোগীরা আসবেন বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, যাঁরা চিকিৎসা করাতে আসেন, তাঁরা তিন থেকে ছয় মাস আগে এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে সব ব্যবস্থা করে ফেলেন। এ বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের বুকিংয়ের জন্যও কেউ ফোন করছেন না। বোঝাই যাচ্ছে, বিদেশি রোগীরা আপাতত সফর করতে ভয় পাচ্ছেন। এবং সেই ভয় আগামী কয়েক মাসে কাটবে বলে পর্যটন এজেন্টরা মনে করছেন না। স্বাস্থ্য পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ কর্তা অভিষেক মৈত্রও জানিয়েছেন, ''এক দেড় মাসে পরিস্থিতি আমূল বদলে যাবে, এমন ভাবার কারণ নেই। এ বছর পরিস্থিতির উন্নতির কোনও সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি না।''
কত টাকা ক্ষতি হতে পারে এর ফলে? হাসপাতালগুলি নির্দিষ্ট অঙ্কসরকারি ভাবে বলতে চায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরের শেষ কোয়ার্টারে ব্যবসা খানিকটা ফিরে এলেও, ভারতের অন্তত ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হবে। মনে রাখা দরকার, এই ক্ষতি হবে কেবল স্বাস্থ্য খাতে। কিন্তু স্বাস্থ্য পর্যটনের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি আনুষাঙ্গিক ব্যবসা জড়িত। হোটেল, হোম স্টে ইত্যাদি ব্যবসাতেও প্রভূত পরিমাণ ক্ষতি শুরু হয়েছে। বছর শেষে সেই অঙ্কটাও খুব কম হবে না।
অনেকেরই প্রশ্ন, কেন ভারতে স্বাস্থ্য পর্যটন এত জনপ্রিয়? বিশেষজ্ঞদের দাবি, গত এক দশকে কম টাকায় উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতি হয়েছে এখানে। উন্নত চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক এবং আফ্রিকা থেকে রোগীরা আসেন এখানে। আর কম টাকায় চিকিৎসার জন্য অস্ট্রেলিয়া এবং অ্যামেরিকা থেকে প্রচুর সংখ্যক রোগী আসেন ভারতে। অনেকে অল্টারনেটিভ মেডিসিনের চিকিৎসা করাতেও আসেন। ভারতও এই রোগীদের গুরুত্ব দেয় কারণ, এর ফলে প্রতি বছর এর থেকে বড় পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা লাভ হয়। করোনা এই পুরো ব্যবস্থাটাই ভেঙে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, বছর শেষে নতুন করে বিদেশি রোগী এলেও চিকিৎসকরা তাঁদের চিকিৎসা করতে ভয় পাবেন। করোনা ভাইরাস তাঁরা বয়ে এনেছেন কি না, সে ভাবনা মাথায় থাকবে। আর বিদেশি রোগীরাও ভারতে আসতে ভয় পাবেন কারণ, এখানকার হাসপাতাল থেকে করোনা নিয়ে ফিরতে হবে কি না, সেই চিন্তা কাজ করবে।