1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লকডাউনে সংকটে ভারতের প্রবীণরা

১ এপ্রিল ২০২০

লকডাউন চলাকালীন শহর ও গ্রামের ছবি সম্পূর্ণ ভিন্ন৷ শহরে হাত বাড়ালেই সব মিলছে৷ গ্রামে ঠিক তার উল্টো৷ তবে ভারতের নিঃসঙ্গ প্রবীণদের অবস্থা শোচনীয়৷ জরুরি সামগ্রী থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধটুকু জোগানোর কেউ নেই৷

Kalkutta Indien Lockdown West Bengal Coronavirus
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

বিশ্বজুড়ে করোনা-আতঙ্কের আবহে সবচেয়ে শঙ্কিত বয়স্ক নাগরিকরা৷ ভারতে ষাটোর্ধ নাগরিকের সংখ্যা মোটামুটি ১১ কোটি৷ অন্যদের মতো গৃহবন্দি রয়েছেন তারাও, যাদের বেশিরভাগই অসহায়৷

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, বয়স্ক নাগরিকদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি৷ তাদেরকে সার্বক্ষণিক ঘরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷

এক্ষেত্রে শহরে প্রবীণদের সমস্যা ততটা না হলেও শহরতলি ও গ্রামীণ এলাকায় নিঃসঙ্গ প্রবীণদের সমস্যার খবর আসছে৷ কেউ কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়েও দিচ্ছেন৷ তা সত্ত্বেও সরকারি উদ্যোগের দাবি উঠেছে৷


এদিকে, সরকারের ঘোষিত ২১ দিন লকডাউনের জেরে শুনসান সড়ক৷ বন্ধ দোকানপাট, যানবাহন৷ স্বভাবতই বাড়ি থেকে বোরনোর জো নেই৷ বন্ধ হয়েছে মর্নিং ওয়াক৷ পরিচিত বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মেলামেশার পাঠ চুকেছে৷ এমনকী, আসছেন না পরিচারিকাও৷ এর ফলে বয়স্ক নাগরিকদের অনেককেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে৷ যেমন, কেউ নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন৷ কারও জরুরি ওষুধের প্রয়োজন মিটছে না৷ কারও আবার পুষ্টিকর পথ্য না পেয়ে শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে৷ সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের৷

অন্যদের পরিবারের যুব সদস্যরা বাজারে গিয়ে সামগ্রী কিনে আনতে পারছেন৷ কিন্তু, নিঃসঙ্গ অসহায় বয়স্ক মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে বাজারে বেরোতেই হচ্ছে৷ আর যাদের সেইটুকু সামর্থ্য নেই, তাঁরা হয় না খেয়ে অথবা আধপেটা খেয়ে দিন গুজরান করছেন৷


সুজিত রায়

This browser does not support the audio element.

ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বিশ্লেষক সুজিত রায় জানিয়েছেন, ‘‘এমন অনেকে রয়েছেন, যাদের একা বসবাস করতে হয়৷ তারা আসলে নিঃসঙ্গ৷ তাদের ছেলেমেয়েরা হয়ত লেখাপড়া অথবা চাকরিসূত্রে বিদেশে বা ভিন রাজ্যে থাকেন৷  এই সকল প্রবীণ মানুষের মধ্যে অনেকেরই শরীরে আগে থেকে অনেক রোগ বাসা বেঁধে রয়েছে৷ যেমন ব্লাড সুগার, ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টরল, হার্ট ব্লকেজ, কিডনি সমস্যা ইত্যাদি৷ এদের নিয়মিত ওষুধ খেতেই হয়৷ চিকিৎসকের পরামর্শে পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হয়৷ আবার এদেরই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি৷ তাই তারা বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন৷ মূলত সমস্যায় পড়ছেন তারাই৷ বাড়ির কাছে দোকান নেই৷ দূরের হাটবাজারে যাওয়ার উপায় নেই৷ বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছেন৷ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের এই ধরনের মানুষের জন্য বিশেষ বন্দোবস্ত করা উচিত৷’’


উল্লেখ্য, ভারতে ২০১৯ সালের হিসেব অনুযায়ী, ১৩৬ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ৯ শতাংশ মানুষের বয়স ষাটের বেশি৷ অর্থাৎ ১১ কোটি মানুষ বয়স্ক নাগরিক৷ পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যাটা ৫৫ হাজার৷ তারা সকলেই এখন গৃহবন্দি৷ তারা বাজারে বের হতে পারছেন না৷ সরকার অনলাইন কেনাকাটায় ছাড় দিয়েছে৷ কিন্তু, বাস্তবে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না৷ পুলিশি ধরপাকড় ও পণ্য সরবরাহকারীর অভাবে কার্যত অনলাইন কেনাকাটা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, এমনটাই জানিয়েছে বিগ বাস্কেট ও গ্রোফার্স-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো৷ এদিকে, বিগ বাজার, রিলায়েন্স ফ্রেশ-এর মতো সংস্থাগুলো ফোন নম্বর প্রচার করে বাড়ি বসে সামগ্রী পাওয়ার এক বন্দোবস্ত করেছিল৷ কিন্তু, তা-ও বাস্তবায়িত হয়নি৷

দেবাশিস গুপ্ত

This browser does not support the audio element.

যদিও উল্টো ছবিও ধরা পড়েছে৷ পশ্চিম বিহার এলাকায় একটি আবাসনে থাকেন প্রাক্তন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা দেবাশিস গুপ্ত৷ আগে প্রতিদিনই মর্নিং ওয়াক থেকে দোকান-বাজারে যেতেন৷ গত কয়েকদিন ধরে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি হয়ে রয়েছেন৷ প্রয়োজনে শাক-সবজি পাচ্ছেন৷ দোকানে ফোন করলেই পৌঁছে যাচ্ছে ওষুধ৷ তবে, বাইরে বের হওয়ার জন্য মাঝে মধ্যেই তার মন কেমন করে উঠছে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানালেন, ‘‘এমনিতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না৷ হাতের কাছেই জরুরি জিনিসের দোকানপাট খোলা রয়েছে৷ তবে ভাবনা হয়, আমার মতো সুযোগ-সুবিধা যাদের নেই, এই লকডাউন চলাকালীন তাঁরা কতটা কষ্টে আছেন৷ বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের গরিব, অসহায় বয়স্ক মানুষগুলো৷ সরকারের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো৷’’

দক্ষিণ দিল্লির পালম এক্সটেনশন এলাকায় স্ত্রী, সন্তান ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে বসবাস করেন ঈশ্বরদীন বর্মা৷ বয়স আশি ছুঁইছুঁই৷ শরীরে অনেক রোগ৷ তিনি জানালেন, ‘‘ওষুধের প্রয়োজন হলেই ছেলেরা কেউ প্রেসক্রিপশন নিয়ে দোকানে যাচ্ছেন৷ কোনও সমস্যা হচ্ছে না৷ তবে, লকডাউন ঘোষণার পর প্রথম দু-দিন সংসারে চাল-ডাল-তেল-মশলার সমস্যা ছিল৷ তারপর বাড়ি বয়ে দিয়ে যাচ্ছেন বিক্রেতারা৷ আগে যাঁরা অন্য পেশায় ছিলেন, এখন তাঁরাও সবজির গাড়ি নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ