করোনায় বাংলাদেশের রেড জোনগুলোতে লকডাউনের সিদ্ধান্ত আছে৷ এখন পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকায় পূর্ব রাজাবাজার এবং ঢাকার বাইরে তিনটি এলাকা লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে৷ বাকিগুলো কবে হবে, কীভাবে হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়৷
বিজ্ঞাপন
টেকনিক্যাল কমিটির সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকার দুই সিটি ও চট্টগ্রামের যেসব এলাকায় প্রতি এক লাখ জনসংখ্যায় সর্বশেষ ১৪ দিনে ৬০ জন আক্রান্ত হয়েছে সে সব এলাকা রেড জোন৷ আর ঢাকার বাইরে প্রতি লাখে ১০ জন৷
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জনসংখ্যার হিসাব করেছে ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী৷ কিন্তু এখন জনসংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে৷ ফলে জনসংখ্যার অনুপাত নিয়ে জটিলতা হচ্ছে৷ স্থানীয় পর্যায়ে তাই লকডাউন ঘোষণা কঠিন হচ্ছে৷
কে লকডাউন ঘোষণা করছে?
ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্রায় তিন লাখ মানুষের বসবাস৷ ওই এলাকায় বুধবার রাতে হঠাৎ করেই লকডাউনের ঘোষণা দেয়া হয় মাইকে৷ আর এই ঘোষণায় পুরো এলাকার মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন৷ তারা নানা জায়গায় ফোন করে জানতে চান বিষয়টি৷ কারণ এটা নিয়ে আগাম কোনো প্রচার ছিল না৷ পরে বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ঢালি দুঃখ প্রকাশ করেন এবং জানান লকডাউনের ঘোষণা ভুল ছিলো৷ এরকম কেন হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আসলে করোনা প্রতিরোধে আমরা আগের চেয়ে একটু বেশি বড়াকড়ি আরোপ করেছি বসুন্ধরা এলাকায়৷ আর তাতেই কিছু যুবক উৎসাহী হয়ে লকডাউনের কথা মাইকে প্রচার করেন৷’’
ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা
লকডাউন পূর্ব রাজাবাজার
লকডাউন ১৪ দিন, না ২১ দিন তা নিয়েও বিভ্রান্তি আছে পূর্ব রাজাবাজারে৷ সেখানে লকডাউন শুরু হয় ৯ জুন থেকে৷ ১৪ দিনের হলে তা আগামী সোমবার শেষ হওয়ার কথা৷ কিন্তু বাসিন্দারা জানেন না ঠিক সোমবারে লকডাউন শেষ হবে কিনা৷ তারা শুনেছেন এটা ২১ দিন হতে পারে৷ তাহলে শেষ হবে ৩০ জুন৷
ওই এলাকার বাসিন্দা গাড়িচালক মাসুদ আহমেদ এই লকডাউনে দুই ধরনের সমস্যায় পড়েছেন৷ তিনি একটি বাসার প্রাইভেট কার চালান৷ সেই বাসা আবার লকডাউনের বাইরে৷ তিনি সেখানে যেতে পারেন না৷ তিনি জানে না এখন তিনি বেতন পাবেন কিনা৷ আবার লকডাউন এলাকায় ভ্যানে করে শাকসবজি বিক্রি করা হলেও তার দাম চড়া বলে জানান তিনি৷ ওই এলাকায় অনেকেই আছেন যারা অন্য এলাকায় চাকরি করেন৷ সেখানে অফিস খোলা৷ এখন তাদের অফিস বেতন দেবে কিনা তা নিয়েও আছে অনিশ্চয়তা৷ সরকার লকডাউন এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও এব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা দেয়নি৷
ওই এলাকার আরেকজন বাসিন্দা সাংবাদিক আমিন আল রশীদ বলেন, ‘‘এলাকার যারা বাইরে বেসরকারি চাকরি করেন তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি আছে যে তারা বেতন পাবেন কিনা৷ একারণে প্রতিদিন সকালেই লোকজন নানা অজুহাতে বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ তাদের থামাতে প্রতিদিনই মাইকিং করতে হয়৷’’
পূর্ব রাজাবাজারের লকডাউন এলাকায় ৫০ হাজার বাসিন্দা আছেন৷ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান জানান, ‘‘এখনো ২১ দিন লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়নি৷ ১৪তম দিনে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে আর বাড়ানো হবে কিনা৷’’
তিনি লকডাউনে তার বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, গভীর রাতে কেউ কোমল পানীয়, কেউ পান-সুপারি, কেউ আইসক্রিম এনে দিতে বলছেন৷
ঢাকার প্রথম রেড জোন পূর্ব রাজাবাজার
মঙ্গলবার রাত থেকে ঢাকার পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় লকডাউন শুরু হয়েছে৷ স্বাস্থ্যকর্মী, জরুরি সেবা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিরা লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবেন৷ ছবিগুলেো বুধবার তোলা৷
ছবি: DW/M. Rashed
স্বাস্থ্যকর্মীর ঘরে ফেরা
স্থানীয় এক হাসপাতালে সারারাত ডিউটি শেষে এক চিকিৎসক ঘরে ফিরছেন৷
ছবি: DW/M. Rashed
গর্ভবতীর জন্য সহানুভূতি
এক গর্ভবতী নারী চিকিৎসকের কাছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁর স্বামীসহ বাসায় ফিরছেন৷
আক্রান্ত বাড়ছে পূর্ব রাজাবাজারে
এদিকে পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন করার পর করোনা আক্রান্ত বেড়েছে৷ ওয়ার্ড কাউন্সিলর জানান, লকডউনের আগে মোট আক্রান্ত ছিলেন ৩১ জন৷ পরীক্ষায় আরো ১৫ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে গত পাঁচ দিনে৷ এখন মোট আক্রান্ত ৪৬ জন৷ তবে ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক বলছেন, এখন প্রতিদিন ২০-২৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ ফলে পজিটিভ শনাক্ত হচ্ছে বেশি৷ এরা আগেই আক্রান্ত৷
মেয়ররা জানেন না
উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৭টি এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৮টি এলাকা, এই মোট ৪৫টি এলাকাকে ঢাকার রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে৷ এর বাইরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১০টি, গাজীপুরের সবকটি উপজেলা, নারায়ণগঞ্জ পুরো সিটি ও জেলার আরো তিন উপজেলা এবং নরসিংদী জেলাসদরসহ তিন উপজেলা রেড জোন৷
ঢাকা দুই সিটির রেড জোন ঘোষণা করা হলেও কবে, কখন লকডাউন করা হবে তা এখনো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়নি৷ ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ফজলে নূর তাপস জানিয়েছেন, লকডাউনে সুনির্দিষ্টভাবে কার কি দায়িত্ব হবে তা জানাতে হবে৷ সেটা না জানানোর আগে লকডাউন নয়৷ ফলে ওয়ারী এলাকার মানুষ আছেন বিভ্রান্তিতে৷ কারণ পূর্ব রাজাবাজারের সঙ্গেই ওই এলাকাও লকডাউন হওয়ার কথা ছিলো৷ সেখানে এখন লকডাউনের মতোই কড়াকড়ি চলছে৷
উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামও তার ১৭টি এলাকা রেড জোন করা হয়েছে বলে জেনেছেন৷ কিন্তু এব্যাপারে বিস্তারিত কোনো নির্দেশনা পাননি৷ তিনি মনে করেন, লকডাউন করা আগে কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টা সময় দেয়া দরকার৷
লকডাউন না করার চাপ
ঢাকার সাভার, আশুলিয়া এবং গাজীপুরে লকডাউন না করার চাপ আছে৷ কারণ ওই সব এলাকায় সবচেয়ে বেশি পোশাক কারখানা আছে৷ পোশাক কারখানার মালিকরা লকডাউন যাতে না হয় তার চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন৷ সাভার এলাকায় কয়েকদিন ধরে লকডাউনের গুজব ছড়াচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান৷ কিন্তু হচ্ছেনা৷ তবে আজ (শুক্রবার) মধ্য রাত থেকে ধামরাই পৌর এলাকায় লকডাউন শুরু হচ্ছে ১৪ দিনের জন্য৷ এজন্য গত দুই দিন ধরে প্রচার চলছে৷ পৌর মেয়র গোলাম কবির বলেন, ‘‘আমরা আগেই সময় দিয়েছি৷ সবাইকে যার যার খাবার কিনে রাখতে বলেছি৷ লকডাউন কয়েকদিন চলার পর দেখে সিদ্ধান্ত নেব যে খাবার সরবরাহ করতে হবে কিনা৷’’
ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ
এখনো চূড়ান্ত হয়নি
রেড জোনের একটি তালিকা করা হলেও বাস্তবে এর অনেক কিছুই চূড়ান্ত হয়নি৷ লাখে কত মানুষ আক্রান্ত হলে রেড জোন হবে তাই চূড়ান্ত নয় বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের পরিচালক এবং টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা৷ লাখে ৩০ না ৬০ জন তাও এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে৷ ঢাকার পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন করা হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে৷ তার ফল দেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে৷
তিনি জানান, ‘‘ঢাকার লকডাউনের ব্যাপারে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক সিদ্ধান্ত নেবেন৷ আর ঢাকার বাইরে সিভিল সার্জন৷ তবে পুরো প্রক্রিয়া কী হবে তা এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে৷’’
বিভ্রান্তিতে সিভিল সার্জনরা
দেশের রেড জোন নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১১ সালে সর্বশেষ আদমশুমারির ভিত্তিতে৷ কিন্তু গত ৯ বছরে জনসংখ্যা আরো অনেক বেড়েছে৷ নারায়ণগঞ্জ পৌর এলাকার পুরোটাই রেড জোন৷ নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘‘লকডাউনের সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারি, কিন্তু জনসংখ্যাইতো ঠিক করতে পারছি না৷ ঢাকার বাইরে এক লাখে ১০ জন আক্রান্ত হলে লকডাউন হবে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তো ২০১১ সালের হিসেবে নারায়ণগঞ্জের জনসংখ্যা ২৫ লাখ ধরে রেড জোন ঘোষণা দিয়েছে৷ কিন্তু বাস্তবে এখন তো জনসংখ্যা এর দ্বিগুণ৷ তাহলে তো আর এটা রেড জোন হয় না৷’’
‘‘আর সর্বশেষ ১৪ দিনে আক্রান্তের হিসেব করলে আক্রান্ত তো অনেক কম৷ আমি কিসের ভিত্তিতে লকডাউন করব৷ তারপরও আলাপ আলোচনা করছি,’’ বলেন ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ৷
ভালোমন্দের স্বাস্থ্যছবি
করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার একটি করুন চিত্র সামনে এসেছে৷ তবে স্বাধীনতার পর স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশ কিছু বিষয়ে সাফল্যও দেখিয়েছে৷
ছবি: DW/H. Ur Radhid
জনবল ও অবকাঠামো সংকট
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, একটি দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে যতজন ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল টেকনলজিস্ট, অ্যানেস্থেটিস্ট থাকা আদর্শ সেটি বাংলাদেশে নেই৷ করোনার কারণে সেই সংকট প্রবলভাবে দেখা গেছে৷ বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলছেন, একজন ডাক্তারের বিপরীতে নার্স থাকতে হয় তিন জন৷ কিন্তু বাংলাদেশে আছে আধা জন৷ এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা দিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবতো আছেই৷
ছবি: bdnews24.com
দুর্নীতি
দুর্নীতি দমন কমিশনের তৈরি এক প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার, ওষুধ সরবরাহসহ দুর্নীতির ১১টি খাত চিহ্নিত করা হয়৷ বলা হয়, দুর্নীতি করার জন্য অনেক অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা হয়, যা পরিচালনার লোক নেই৷ ওইসব যন্ত্রপাতি কখনোই ব্যবহার করা হয় না৷ প্রতিবেদনটি গতবছর জানুয়ারিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে তুলে দেয়া হয়েছিল৷
ছবি: DW
বাজেট বরাদ্দ ও বাস্তবায়নে অক্ষমতা
করোনার কারণে সম্প্রতি পেশ করা বাজেটে গতবছরের চেয়ে এবার স্বাস্থ্যখাতে বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে৷ এবার প্রস্তাবিত ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা জিডিপির ১.৩ ভাগ৷ গতবছর তা ছিল মাত্র ০.৮৯ ভাগ৷ তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বরাদ্দ যেমন প্রয়োজনের তুলনায় কম তেমনি অতীতে দেখা গেছে, বরাদ্দ বাস্তবায়নের হারও কম৷ ফলে স্বাস্থ্যসেবা পেতে মানুষের ভোগান্তি কমছে না৷
ছবি: bdnews24.com/ M. Zaman Ovi
টিকাদানে সাফল্য
ছয়টি রোগের বিরুদ্ধে লড়তে ১৯৭৯ সালে ‘সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি’ কার্যক্রম শুরু হয়৷ বর্তমানে এটি ১০টি রোগের ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়েছে৷ সারা দেশে বিনামূল্যে এসব টিকা দেয়া হয়৷ ২০১৮ সালে সব টিকাপ্রাপ্তির হার ছিল ৯৭.৬ শতাংশ৷ টিকাদান কর্মসূচিতে সফলতার জন্য গতবছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দিয়েছে ‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন এবং ইমিউনাইজেশন’৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
শিশুমৃত্যুর হার কমেছে
জনস্বাস্থ্যবিষয়ক দেশের সবচেয়ে বড় জরিপ ‘বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ’ বা বিডিএইচএস৷ সবশেষ জরিপটি হয়েছে ২০১৭-১৮ সালে৷ এতে বলা হয়, পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মৃত্যুহার সেই সময় ছিল প্রতি হাজারে ৪৫ জন৷ এই সংখ্যা ১৯৭৯ সালে ২০২ জন এবং ২০০৬ সালে ৬৫ জন ছিল বলে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট’-এর এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে৷
ছবি: Imago Images/Zuma/M. Hasan
গড় আয়ু বেড়েছে
গতবছর জুনে প্রকাশিত এক জরিপে ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’ বা বিবিএস জানায়, বাংলাদেশের মানুষের মোট গড় আয়ু এখন ৭২ বছর ৩ মাস৷ ১৯৬০ সালে গড় আয়ু ৪৬ বছর ছিল বলে ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
জন্মনিয়ন্ত্রণে সাফল্য
বিশ্ব ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে নারীদের সন্তান জন্মদানের হার ১৯৭১ সালে ছয় দশমিক নয় থেকে ২০১৭ সালে দুই দশমিক শূন্য ছয়ে নেমে এসেছে৷ এই হার প্রায় ইউরোপের সমান উল্লেখ করে জন্মনিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ আফ্রিকার জন্য রোল মডেল হতে পারে বলে গতবছর মন্তব্য করেছিলেন জার্মান উন্নয়নমন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার৷
ছবি: picture-alliance/AP
খরচ বাড়ছে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যের পেছনে ১০০ টাকা খরচ হলে সরকারি সহায়তা পাওয়া যায় ২৮ টাকা এবং বাকি ৭২ টাকা রোগীকে বহন করতে হয়৷ ২০১২ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১২-২০৩২ সাল মেয়াদি একটি কৌশলপত্র তৈরি করেছিল৷ সেখানে ব্যক্তিগত খরচ ৩২ টাকায় (তখন ছিল ৬৪ টাকা) নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়৷ অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে ৬৪ থেকে ৩২-এ নামার লক্ষ্য থাকলেও উলটো সেটি বেড়ে ৭২ টাকা হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
সবার জন্য স্বাস্থ্যবিমা এখনও নেই
সরকার স্বাস্থ্য বিমা চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলে গতবছর ১৯ জুন সংসদকে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ এর অংশ হিসেবে টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে স্বাস্থ্য বিমা কার্যক্রম চলছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: DW
বেশিরভাগ রোগী এমবিবিএস ডাক্তারের কাছে যান না
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০১৬ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ২০১৯ সালের জুনে৷ এতে দেখা গেছে, ৫৮ শতাংশ রোগী ওষুধের দোকানদার, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক, হাকিম-কবিরাজ, ওঝা, পীর, বৈদ্যসহ অন্যদের কাছ থেকে চিকিৎসা নেন৷ ১৬ শতাংশ যান সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে৷ বাকি ২৬ শতাংশ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসা নেন৷