কঠোর লকডাউনের শুরুতেই বুধবার করোনায় মারা গেছেন ৯৫২ জন৷ জার্মনির রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট (আরকেআই) এ তথ্য জানিয়েছে ৷ মহামারি শুরু হওয়ার পর এটাই দৈনিক মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা৷
বিজ্ঞাপন
এক সপ্তাহ আগে গত শুক্রবার মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫৯৮৷ কঠোর লকডাউনে শুরুতেই বুধবার নতুন সংক্রমণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭,৭২৮৷ করোনভাইরাস সমস্যায় এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছেছে ২৩,৪২৭৷ জার্মানির জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের দেওয়া তথ্য মতে, মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সংক্রমিতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ২৩৮৷ তবে এদের মধ্যে ভাইরাস থেকে আবার সুস্থ হয়ে উঠেছে ১০ লাখেরও বেশি৷
আরকেআই এর হিসেব অনুযায়ী সারা জার্মনিতে গড়ে গত সাত দিনে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৯ দশমিক ৮ এবং স্যাকসনির মতো কয়েকটি রাজ্যে এই হার আরো অনেক বেশি৷ এখন সরকারের লক্ষ্য এই হার কমিয়ে ৫০-এ আনা ৷ তরুণদের মধ্যে সংক্রমণের হার কিছুটা কমেছে৷ তবে এখনও বয়স্কদের মধ্যে যারা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন তাদের মধ্যে সংক্রমণের হার বাড়ছে৷
জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পানের দাবি মঙ্গলবার ইইউ ভ্যাকসিন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এক আশার আলো দেখিয়েছে৷ এর ফলে ২৯ ডিসেম্বর থেকে জার্মানিতে বায়োনটেক ফাইজার ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হতে পারে৷
বুধবার থেকে কঠোর লকডাউনের শুরু থেকে যে পরিষেবাগুলো খোলা থাকতে পারে সেগুলো হচ্ছে, দোকান, সাপ্তাহিক বাজার, পিক আপ এবং ডেলিভারি সার্ভিস,স্বাস্থ্যকর খাবার, পানীয় বিক্রির দোকান, শিশুদের প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান, মেডিকেল স্টোর, পোষা প্রাণী ও পশু খাবারের দোকান, ফার্মেসি ওষুধের দোকান, চোখ-কান সেবা সার্ভিস, পেট্রোল পাম্প, ব্যাংক, পোস্ট অফিস, লন্ড্রি, হকার, পাইকারী ও ক্রিসমাস ট্রি কেনার দোকান ইত্যাদি খোলা রাখা যাবে৷ এবং বইয়ের দোকান রাজ্য অনুযায়ী আংশিক খোলা রাখা যাবে ৷ কঠোর লকডাউন কমপক্ষে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে ৷
জার্মানির গ্রিন পার্টির সংসদ সদস্য এবং ডাক্তার ইয়ানোশ ডাহমেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জার্মানির করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি বর্তমানে সত্যিই চাপের মধ্যে রয়েছে৷ করোনার প্রথম ঢেউ জার্মানি সাফল্যের সাথে কাটিয়ে উঠেছিল৷''
করোনা সংকট মোকাবেলা করে স্বাভাবিকতায় ফিরে যেতে ভ্যাকসিনকেই একমাত্র উপায় বলে তিনি মনে করেন৷
এনএস/কেএম (ডিপিএ,এএফপি, রয়টার্স)
করোনার টিকা বিতরণে জার্মানির পরিকল্পনা
করোনা ভাইরাসের টিকা পাওয়ার পর তা কীভাবে দেয়া হবে সেই পরিকল্পনা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ এখনো কোনো টিকার কার্যকারিতা পুরোপুরি প্রমাণ হয়নি৷ কিন্তু জার্মানিতে কাদের, কখন এবং কীভাবে তা দেয়া হবে এরই মধ্যে সেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/P. Vilela
‘ন্যাশনাল ভ্যাকসিনেশন স্ট্র্যাটেজি’
জার্মানির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার নভেম্বরের শুরুতেই সারাদেশে কীভাবে ভ্যাকসিন দেয়া হবে সেই পরিকল্পনা নিয়েছে৷ ‘ন্যাশনাল ভ্যাকসিনেশন স্ট্র্যাটেজি’তে ১৫ পাতার পরিকল্পনা লেখা হয়েছে৷ যদিও টিকা পাওয়ার পর তা বিতরণের পরিকল্পনাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন তারা৷ তারপরও চেষ্টা করছেন ভ্যাকসিন হাতে পাওয়ার সাথে সাথে বিশাল জনগোষ্ঠীকে যাতে এর আওতায় আনা যায়৷
ছবি: Joel Saget/AFP/Getty Images
পরিকল্পনার লক্ষ্য
টিকা কবে নাগাদ আবিষ্কার হবে এবং কী পরিমাণ উৎপাদন হবে, সেটা এখনও জানা যায়নি৷ কিন্তু টিকা হাতে আসার পর যাতে অন্য কোনো কারণে বিতরণ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত না হয় সেটাই এই পরিকল্পনার লক্ষ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Schmidt
কর্মপরিকল্পনা
টিকা দেয়ার জন্য কর্মপদ্ধতি এবং কাজের ধরন এরইমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভ্যাকসিনের জন্য ছয়টি কোম্পানির সাথে চুক্তি করেছে৷ এই কোম্পানিগুলোর কোনো ভ্যাকসিন বের করলে ইইউ-এর মাধ্যমে তা পাবে জার্মানি৷ তারপর কেন্দ্রীয় সরকার দেশের ৬০টি ভ্যাকসিন বিতরণ কেন্দ্রে তা পৌঁছে দেবে৷
ছবি: Getty Images/P. Vilela
সাধারণ চিকিৎসকদের নাগালের বাইরে
পুরো ব্যাপারটি ঠিক করবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার৷ সাধারণ চিকিৎসকরা এটা বিতরণ করতে পারবেন না৷ ফলে ধরেই নেয়া যায়, প্রথম দফায় সবাই এই ভ্যাকসিন পাচ্ছেন না৷ এছাড়া সাধারণ চিকিৎসকদের অফিসে এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণের সুবিধা নেই৷
ছবি: picture alliance/dpa
যারা প্রাধান্য পাবেন
বয়স্ক মানুষ এবং যাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে তারা এক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবেন৷ এছাড়া স্বাস্থ্যকর্মী এবং করোনা চিকিৎসার সাথে জড়িতরাও থাকছেন এই তালিকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gollnow
বার্লিন
বার্লিনের স্থানীয় সরকার ছয়টি টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করছে৷ ফাইজার এবং বায়োনটেকের তথ্য অনুযায়ী, বার্লিনে প্রথম দফায় ৯ লাখ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ সে হিসেবে প্রথম দফায় বার্লিনের প্রতি ১০ জনের একজন টিকা পাবেন৷ একেকটা কেন্দ্রে দিনে তিন হাজার ৪০০ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করছে বার্লিন৷ এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হলো, ভ্যাকসিন যারা নিতে আসবেন তাদের লাইন এবং সময় নিয়ন্ত্রণ করা৷
ছবি: picture-alliance/Zoonar
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত টিকা আসার পর
জার্মানির রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের ইনফেকশাস ডিজিজ সম্প্রতি জানিয়েছে, ভ্যাকসিন বিতরণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা, টিকা হাতে পাওয়ার পরই করা সম্ভব৷ যখন এটা নিশ্চিত হওয়া যাবে এটা বিভিন্ন বয়সে কীভাবে কাজ করে, কতটা কার্যকর ও নিরাপদ৷
ছবি: picture-alliance/ANE
৩০ কোটি ভ্যাকসিন
জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েনস স্পান জানিয়েছেন, তারা চেষ্টা করছেন ভ্যাকসিন বিতরণের জন্য সবচেয়ে সেরা পরিকল্পনা করতে৷ ইইউ-এর মাধ্যমে ৩০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়ে রেখেছেন তারা৷
ছবি: Tobias Schwarz/AFP
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
জার্মানির এথিক্স কাউন্সিলের প্রধান আলেনা বুইক্স জানিয়েছেন, কোন কোম্পানির ভ্যাকসিনে কী ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে, কোন বয়সের মানুষের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বেশি হবে, সেটা আগে থেকে জানা সম্ভব নয়৷ আশা করা হচ্ছে, দ্বিতীয় দফায় সাধারণ চিকিৎসকদের কাছে এই ভ্যাকসিন পৌঁছানো যাবে, তবে এরজন্য বিশেষ ফ্রিজের প্রয়োজন হবে৷
ছবি: picture-alliance/Sven Simon
প্রয়োজন কর্মী
এই কাজে কেবল চিকিৎসক না, প্রয়োজন নিরাপত্তারক্ষী, গাড়িচালকসহ অন্যান্য কর্মী৷ সেজন্য সেনাবাহিনী এবং ত্রাণ সংস্থাগুলোর কাছে কর্মী চেয়ে আবেদন করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Meissner
গ্রামগুলোতে টিকা সরবরাহের চ্যালেঞ্জ
শহরে যাতায়াত ও অন্য সুবিধা থাকলেও শহর থেকে যারা অনেক দূরে থাকেন, সেসব এলাকায় প্রবীণ মানুষ কীভাবে টিকা দান কেন্দ্রে পৌঁছাবেন সেটা একটা চিন্তার বিষয়৷