1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লক্ষ্মীর ভাণ্ডার: নারী ক্ষমতায়ন, না বাড়তি ঋণের বোঝা?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২

নারী ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্প চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার৷ অথচ বিপুল ঋণের দায়ে ধুঁকছে রাজ্যের অর্থনীতি৷ তাই নগদ অর্থের বদলে অন্য জনমুখী প্রকল্প নেওয়া যেত কি না, এ প্রশ্ন উঠেছে৷

Westbengalen | Laxmir Bhandar Projekt
ছবি: Payel Samanta/DW

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্পের সূচনা করেন৷ গত ২৩ জুলাই এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন তিনি৷ 

২০২১-২২ অর্থবছরে দুই কোটি নারীর অ্যাকাউন্টে মাসে মাসে টাকা পাঠানো হচ্ছে৷ তফসিলি জাতি-উপজাতির জন্য এক হাজার ও অনান্য নারীর ক্ষেত্রে মাসে ৫০০ টাকা দিচ্ছে রাজ্য সরকার৷ লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত রাজ্য চার হাজার ৭৩ কোটি টাকা সহায়তা দেয়া হয়েছে৷ আগামী মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ সাত হাজার কোটি টাকা৷ পরবর্তী অর্থবছর থেকে প্রয়োজন হবে ১২ হাজার কোটি টাকা৷

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত দেড় কোটি নারী এই প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করেছেন৷ তাদের হাতে নিয়মিত ও দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে টাকা পৌঁছে দেওয়ার মতো অবস্থা কি রাজ্যের কোষাগারের আছে?

গত মাসে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাজার থেকে তিনবার ঋণ নিয়েছে৷ তিন দফায় এক হাজার, আড়াই হাজার ও তিনহাজার কোটি অর্থাৎ মোট সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে হয়েছে৷ তার আগের মাসে, ডিসেম্বরে একই অঙ্কের টাকা দুই কিস্তিতে বাজার থেকে ঋণ নিয়েছিল৷ এমনিতে বামফ্রন্টকে সরিয়ে মহাকরণে প্রবেশের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরাধিকার সূত্রে ১.৯৩ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে পেয়েছেন৷ তাই পশ্চিমবঙ্গের কোষাগারের স্বাস্থ্য ভালো নয়৷ বৃহস্পতিবার কলকাতার প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী অর্থের অপচয় রোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন আধিকারিকদের৷ একইসঙ্গে কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলেছেন তিনি৷ তার দাবি, বিভিন্ন খাতে রাজ্যের ৯০ হাজার কোটি টাকা পাওনা৷ কেন্দ্র টাকা না মেটানোয় রাজ্যকে ঋণ নিতে হচ্ছে৷ ইয়াসের জেরে ক্ষতি হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা৷ জিএসটির ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকাও প্রাপ্য৷

চাকরি পেলে আর ওই টাকার দরকার পড়ত না: রতন খাসনবিশ

This browser does not support the audio element.

এই পরিস্থিতিতে নগদ হস্তান্তরের বড় মাপের প্রকল্প হাতে নেওয়া কতটা সমীচীন, এই প্রশ্ন তুলছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ৷

যেমন, অর্থনীতিবিদ রতন খাসনবিশ মনে করেন, স্থায়ী নিয়োগ সৃষ্টি না করতে পারলে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়৷ ‘‘মহিলাদের হাতে ৫০০টাকা তুলে দেওয়ার বদলে তাদের পরিবারের একজন চাকরি পেলে মহিলার আর ওই টাকার দরকার পড়ত না৷ নিয়োগ হলেই প্রকৃত অর্থে মানুষ স্বাবলম্বী হবেন৷''

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়সহ অনেকে মানুষের হাতে সরাসরি টাকা দিয়ে তাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন৷ এ প্রসঙ্গে রতন খাসনবিশ বলেন, ‘‘মানুষের হাতে টাকা দিয়ে চাহিদা সৃষ্টি করে জিনিসের ক্রয় বাড়ানোর কথা অর্থনীতিবিদরা বলে থাকেন৷ কিন্তু লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে টাকা না দিয়ে রাস্তাঘাট তৈরি বা হাঁসমুরগী প্রতিপালন, স্বাস্থ্যপ্রকল্পে স্বাস্থ্যকর্মীদের টাকা দিলেও চাহিদা সৃষ্টি হবে৷ তারাও টাকা খরচ করবেন৷ কিন্তু লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চালাতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে অন্য দপ্তরের বাজেট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে৷''

অর্থনীতিবিদ প্রসেনজিৎ বসু অবশ্য মনে করেন, মহিলাদের হাতে যে পরিমাণ অর্থ লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে দেওয়া হয় তা অপর্যাপ্ত৷ এতে যতটুকু ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়, তা যথেষ্ট নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘এই ধরণের অর্থ হস্তান্তর আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের করা উচিত ছিল৷ রাজ্য সরকারের ক্ষমতা সীমিত৷ কেন্দ্র ও রাজ্য মিলে করলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আরও বাড়ানো যেত৷''

লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে কেবল আর্থিক প্রকল্প হিসেবে দেখতে রাজি নন অর্থনীতিবিদদের একাংশ৷ অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার বলেন, ‘‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে শুধু টাকা সাধারণ মানুষের হাতে যাচ্ছে তা নয়, নারী ক্ষমতায়নও হচ্ছে৷ গরিব দেশের নারী সমাজকে অর্থের সঙ্গে কিছুটা আত্মমর্যাদাও দেয়৷ তাই আমি একে সমর্থন করি৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ