1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লখনউতে ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে ছয়ে ছয় দুর্দান্ত ভারতের

২৯ অক্টোবর ২০২৩

লখনউতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ভারতকে ২২৯ রানে বেঁধে রেখেছিল ইংল্যান্ড। তবে ভারতের জন্য সেই রান হয়েছে যথেষ্টরও বেশি, ইংল্যান্ডকে ১২৯ রানে অলআউট করে ১০০ রানের বড় জয়ে সেমিফাইনাল অনেকটা নিশ্চিত করে ফেলেছে স্বাগতিকেরা।

ইংল্যান্ডকে ১২৯ রানে অলআউট করে ১০০ রানের বড় জয়ে সেমিফাইনাল অনেকটা নিশ্চিত করে ফেলেছে স্বাগতিকেরা।
ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে ভারতছবি: Manish Swarup/AP Photo/picture alliance

টানা পাঁচ জয়ে উড়ছিল ভারত, আর একের পর এক হারে ইংল্যান্ড ছিল পর্যুদস্ত। লখনউতে এসে সেই চিত্রনাট্যটাই সফলভাবে মঞ্চায়িত হলো। ভারত আরও একটি ম্যাচে উড়িয়ে দিল প্রতিপক্ষকে, ইংল্যান্ড আরও একটি ম্যাচে করল অসহায় আত্মসমর্পণ। বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা এই বিশ্বকাপে এসে পথ হারিয়ে ফেলেছে হঠাৎ, আজকের ম্যাচটা আরও একবার সাক্ষ্য দিল কোনোকিছুই ঠিকঠাক হচ্ছে না তাদের। বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবার টানা চার ম্যাচ হারল তারা। অন্যদিকে ভারত এই মুহূর্তে যা করছে, সবটাতেই যেন সোনা ফলছে। আজ ভারতের ব্যাটারদের যদি কোনো আক্ষেপ থাকে, বোলাররা পরে সেটি ভুলিয়ে দিয়েছেন। আর ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা যেন আরও এক ম্যাচে ভুলে গিয়েছেন ব্যাট করা। 

সেই ভুলে যাওয়ার শুরুটা ডাভিড মালান থেকে। ২৩০ রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা একেবারে মন্দ হয়নি ইংল্যান্ডের, ৩০ রান তুলে ফেলেছিল দ্রুত। এরপরেই শুরু মড়কের। জাসপ্রিত বুমরা এবারের বিশ্বকাপে অন্যতম সেরা বোলার, তার বলে প্লেড অন হয়ে ফিরে গেলেন মালান। পরের বলেই এলবিডব্লু দুঃস্বপ্নের একটা বিশ্বকাপ কাটাতে থাকা জো রুট, রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারলেন না। বিশ্বকাপে এই প্রথম কোনো রান না করে ফিরলেন রুট। কাকতালীয়ভাবে ভারতের তিন নম্বর ব্যাটার বিরাট কোহলিরও আজ একই দুর্ভাগ্য হয়েছে, সেটাও বিশ্বকাপে তার প্রথমবার। আর বিশ্বকাপের ইতিহাসেই দুই দলের তিন নম্বর ব্যাটারের ডাক মারার রেকর্ড এটাই প্রথম৷ 

ইংল্যান্ডের ইনিংসে এই শুন্যের হাহাকার খানিক পরেই আবার ফিরে এসেছে। এই রান তাড়া করার জন্য ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় ভরসা হতে পারতেন বেন স্টোকস, কিন্তু মোহাম্মদ শামির বলে বাজে এক শটে তিনি ফিরে গেলেন কোনো রান না করে। তার আগে রুটের পর জনি বেয়ারস্টোকে এলবিডব্লুতে ফিরিয়ে বুমরার মতো হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন মোহাম্মদ শামিও। হ্যাটট্রিক হয়নি, কিন্তু শামি দেখিয়েছেন তাকে শুরুর ম্যাচগুলোতে বসিয়ে রাখাটা আসলে ভুলই ছিল। 

৪৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ডের আশার প্রদীপ তখন নিভে যাচ্ছে একানা স্টেডিয়ামে। খানিক পর কুলদীপ যাদবের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে যখন অধিনায়ক জস বাটলার ফিরে গেলেন, ম্যাচের গল্প প্রায় ওখানেই শেষ। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপর্যয়ের প্রতিনিধি হয়ে বাটলার আউট হয়ে গেলেন ১০ রানেই।

মঈন আলী ও লিয়াম লিভিংস্টোন কিছুক্ষণ চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু এরপর দৃশ্যপটে আবার শামি। দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম বলেই ফেরালেন মঈনকে। এরপর লিভিংস্টোনকে ২৭ রানে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডের বাকি আশা শেষ করে দিয়েছেন কুলদীপ। ইংল্যান্ডের ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান এসেছে লিভিংস্টোনের ব্যাট থেকেই। তার আগে অবশ্য ওকসকে ফিরিয়েছেন জাদেজা, লখনউর শিশিরও ভারতের স্পিনারদের ঘূর্ণিতে কোনো বাধা হতে পারেনি। পরে রশিদকে ফিরিয়ে শামি তুলে নিয়েছেন ম্যাচে তার চতুর্থ উইকেট। রশিদকে ফিরিয়ে শামি পেয়েছেন তার চতুর্থ উইকেট আর বুমরা উডকে বোল্ড করে পেয়েছেন তার তিন নম্বর উইকেট। ১২৯ রানে অলআউট হয়ে ইংল্যান্ড আরও একটি ম্যাচে গুটিয়ে গেল গন্তব্য থেকে অনেক দূরে থাকতেই।

অথচ প্রথম ইনিংস শেষে হাসিটা বেশি ছিল ইংল্যান্ডেরই৷ লখনউর উইকেট কোনোভাবেই রানপ্রসবা ছিল না, তারপরও ২২৯ রানে ভারতের মতো দলকে আটকে রাখতে পারাটা তো সাফল্যই। সেই ২২৯ রান পর্যন্ত যাওয়ার কৃতিত্বও মূলত ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার, পরে যিনি হয়েছেন ম্যাচসেরা। ম্যাচের চতুর্থ ওভারেই প্রথম ধাক্কা খেয়েছিল ভারত, ক্রিস ওকসের ভেতরের দিকে ঢোকা বল ব্যাট-প্যাডের ফাঁক বলে ভেঙে দেয় শুভমান গিলের স্টাম্প৷ ৯ রানে গিল ফেরার সময় স্টেডিয়াম যতটা নিশ্চুপ, পর মুহূর্তে বিরাট কোহলির মাঠে নামার সময় ততটাই যেন জেগে উঠেছিল আবার৷ কিন্তু সেই হর্ষধ্বনিও মিলিয়ে যেতে সময় লাগল না৷ ডেভিড উইলির বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দিলেন কোহলি, ৫০ হাজার দর্শকে ঠাসা একানা স্টেডিয়ামে তখন শ্মশানের নীরবতা৷ 

২৭ রানে ২ উইকেট হারানো ভারত এরপর ৪০ রানে হারিয়েছিল ৩ উইকেট৷ শ্রেয়াস আইয়ারের বড় পরীক্ষা ছিল আজ, কিন্তু ৪ রানেই আউট হয়ে সেই পরীক্ষায় তিনি ফেল করলেন৷ এরপর রোহিত ও কেএল রাহুল পরিস্থিতিটা সামাল দিলেন৷ দুজন শুরুতে দেখেশুনেই খেলছিলেন, ২০ ওভারের পর হাত খুলে খেলতে শুরু করলেন৷ ৬৬ বলে ৫০ রান করার পর রোহিত উডকে ছয় মারলেন, ওদিকে রাহুলও লিভিংস্টোনকে দুই চার মেরে মাতিয়ে তুললেন একানা স্টেডিয়ামকে৷ এর মধ্যে লিভিংস্টোন, মঈন, উড কেউই ভাঙতে পারছিলেন না জুটি৷

শেষ পর্যন্ত সেটা ভাঙতে হয়েছিল উইলিকেই৷ তিনি আবার বোলিংয়ে ফিরলেন, প্রথম বলটাই ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়িয়ে মারতে গিয়ে রাহুল ক্যাচ দিলেন ৩৯ রানে৷ ১৩১ রানে চতুর্থ উইকেট হারিয়েছিল ভারত৷ তবে রোহিত খেলছিলেন দারুণ, এই বিশ্বকাপে আরেকটি সেঞ্চুরিটা হয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছিল৷ কিন্তু ৮৭ রানে আদিল রশিদকে স্লগ করতে গিয়ে বলটা তুলে দিলেন রোহিত৷ ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচটা ধরতে দিয়ে হাঁটুতে ভালোই চোট পেলেন লিভিংস্টোন, কিন্তু ক্যাচটা ফেলে দিলেন না৷ ১৬৪ রানে স্বাগতিকেরা হারাল ৫ উইকেট, রোহিত ফিরলেন ৮৭ রানে৷ 

জাদেজা ও সূর্যকুমারের ওপর নির্ভর করছিল অনেক কিছু৷ কিন্তু রশিদ সেই সুযোগ দিলেন না, জাদেজাকে এলবিডব্লুউ করে ফেরালেন মাত্র ৮ রানে৷ ভারতের ভালো কিছুর আশা টিকে রইল সূর্যকুমারের ব্যাটে৷ শেষ পর্যন্ত ৪৭ বলে ৪৯ করে উইলির বলেই ফিরলেন সূর্যকুমার, ভারত পেরুল ২০০ রান৷ শেষদিকে যশপ্রীত বুমরা ও কুলদীপ যাদবের কল্যাণে এই উইকেটে লড়াই করার মতো পুঁজি পেয়ে যায় ভারত৷

তখন কি কেউ জানত, এই ২২৯ রানই ইংল্যান্ডের কাছে এভারেস্টসম হয়ে থাকবে? এই বিশ্বকাপের আগে কে ভেবেছিল, বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট ইংল্যান্ডের সেমিফাইনাল স্বপ্ন এভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে?  দেশে ফিরে বাটলারদের এখন খুঁজতে হবে অনেক প্রশ্নের জবাব। আর ভারতের দেশের মাটিতে আরও একটি বিশ্বকাপ জয়ের আশার পালে লাগল আরও জোর হাওয়া।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত ৫০ ওভারে ২২৯/৯ (রোহিত ৮৭, সূর্যকুমার ৪৯, রাহুল ৩৯; উইলি ৩/৪৫, ওকস ২/৩৩, রশিদ ২/৩৫)
ইংল্যান্ড ৩৪.৫ ওভারে ১২৯ (লিভিংস্টোন ২৭; শামি ৪/২২, বুমরা ৩/৩২)
ফল: ভারত ১০০ রানে জয়ী

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ