1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লঞ্চে অনুমোদনহীন রিকন্ডিশন্ড ইঞ্জিন!

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ ডিসেম্বর ২০২১

বাংলাদেশে লঞ্চডুবিতে যাত্রী মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়৷ কিন্তু লঞ্চে আগুন লেগে যাত্রীদের মৃত্যু হতবাক করেছে দেশের মানুষকে৷

Bangladesch - ausgebrannt Fähre
আগুনে পুড়ে যাওয়া লঞ্চ অভিযান-১০ছবি: picture alliance/AP

একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ নামে যে লঞ্চটিতে আগুন লাগে সেটি রিকন্ডিশন্ড ইঞ্জিন দিয়ে চলছিল৷ এর আগের ইঞ্জিনটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর গত অক্টোবর মাসে এই ইঞ্জিনটি লাগানো হয়৷

তবে বিষয়টি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষ বা বিআইডাব্লিউটিএকে জানানো হয়নি বলে দাবি কর্তৃপক্ষের৷ আর দুর্ঘটনার পর প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ইঞ্জিন বিস্ফোরণে লঞ্চটিতে আগুন লাগে৷

শুধু অভিযান-১০ই নয়, অনুসন্ধানে জানা গেছে, সমুদ্রগামী জাহাজের রিকন্ডিশন্ড বা পুরোনো ইঞ্জিন লাগিয়েই দেশে অনেক লঞ্চ চালানো হচ্ছে৷ আর এ কারণে ইঞ্জিনে আগুন লাগার ঝুঁকি অনেক বেশি৷ তাছাড়া অনেক যাত্রীবাহী লঞ্চই ফিটনেসবিহীন অবস্থায় চালানো হচ্ছে৷ আর তাই প্রশ্ন উঠেছে সঠিক নজরদারি থাকলে সুগন্ধা নদীতে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা কি এড়ানো যেত না? 

‘যে লঞ্চে আগুন লেগেছে তাতে রিকন্ডিশন্ড ইঞ্জিন লাগানো হয়েছিল’

This browser does not support the audio element.

বিআইডাব্লিউটিএ'র ইঞ্জিনিয়ার ও শিপ সার্ভেয়ার মো. মাহবুবুর রশিদ বলেন, ‘‘নৌযানে নতুন এবং রিকন্ডিশন্ড উভয় ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহার করা যায়৷ তবে আমাদের (কর্তৃপক্ষের) অনুমোদন নিতে হবে৷ সাধারণত বড় লঞ্চে আমরা নতুন এবং ছোট লঞ্চে রিকন্ডিশন্ড ইঞ্জিনের অনুমতি দিই৷ তবে পুরোনো ইঞ্জিন ব্যবহার করতে হলে তার ইনস্টলেশন আমরা ঠিক করে দিই৷ তা না হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে৷’’

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘যেই লঞ্চটিতে আগুন লেগেছে আমরা জেনেছি তাতে সম্প্রতি রিকন্ডিশন্ড ইঞ্জিন লাগানো হয়েছিল৷ এবং তা ছিলো অনুমোদিত হর্সপাওয়ারের চেয়ে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন৷ আর এটা আমাদের অনুমোদন ছাড়াই লাগানো হয়৷ রিকন্ডিশন্ড ইঞ্জিন ঠিকমত ইনস্টলেশন না হলে তা থেকে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়৷ যার ফলে আগুন লেগে যেতে পারে৷ এক্ষেত্রেও তাই ঘটে থাকতে পারে৷ তবে তদন্ত শেষ হলেই আগুনের আসল কারণ জানা  যাবে৷’’

নিজেদের কার্যক্রমের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘গত বৃহস্পতিবার এরকম আরো একটি নৌযানকে চিহ্নিত করা হয়েছে যা অনুমোদন ছাড়াই রিকন্ডিশন্ড ইঞ্জিন দিয়ে চলাচল করছে৷ ওই ইঞ্জিনটি অনুমোদিত মানের নয়৷ নৌযানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছি৷ আরো অনেক নৌযান আছে যা রিকন্ডিশন্ড ইঞ্জিন দিয়ে চলছে৷ সেগুলো খুঁজে বের করার কাজও চলছে৷’’

ঝালকাঠির লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড

01:34

This browser does not support the video element.

এদিকে অনুমোদনহীন ইঞ্জিনে নৌযান চালানোর বিষয়টিই এই খাতের একমাত্র সমস্যা নয়৷ জানা গেছে, সারা দেশে হাজার হাজার নৌযান চলাচল করছে যাদের বেশিরভাগই নিবন্ধিত নয়৷

বিশ্ব্যাংকের হিসাব বলছে,  বাংলাদেশের নদ-নদীতে সাত লাখ ৪৫ হাজার ট্রলার, স্পিডবোডসহ যন্ত্রচালিত বিভিন্ন ধরণের নৌযান চলাচল করে৷ তার মধ্যে যাত্রীবাহী নৌযানের সংখ্যা চার লাখ ৮৪ হাজার৷ 

কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত নৌযানের সংখ্যা বিশ্বব্যাংকের তথ্যের চেয়ে অনেক কম৷ প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশে মোট নিবন্ধিত নৌযানের সংখ্যা মাত্র ১৪ হাজার৷ এর মধ্যে ফিটনেস আছে মাত্র আট হাজার নৌযানের৷ অর্থাৎ ফিটনেস অনুযায়ীই মাত্র আট হাজার নৌযানের চলাচলের অনুমতি রয়েছে৷

এই কর্মকর্তা আরো জানান,  সারাদেশে মাত্র আটশ যাত্রীবাহী নৌযান নিবন্ধিত হয়েছে৷

আর নৌপরিবহণ কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রশিদ বলেন, ‘‘অনেক নৌযানই অনুমোদন না নিয়ে সমুদ্রগামী জাহাজের রিকন্ডিশন্ড ইঞ্জিন ব্যবহার করছে৷’’

তবে তার দাবি, লঞ্চ মালিকরা বিষয়টি গোপন করায় তাদের কিছু করার থাকে না৷ তবে পরিদর্শনে ধরা পড়লে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেন বলে জানান তিনি৷

‘প্রতিমাসেই ফিটসেনবিহীন নৌযানের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়’

This browser does not support the audio element.

এদিকে কী পরিমাণ নৌযান বর্তমানে ফিটনেসবিহীন অবস্থায় চলাচল করছে জানতে চাইলে বিআইডাব্লিউটিএ'র মুখ্য পরিদর্শক মো. শফিকুর রহমান সার্ভার ডাউন থাকার কথা বলে কতগুলো নৌযানের ফিটসেন নেই তা তিনি জানাতে পারেননি৷

তবে অনুমোদনহীন ও ফিটনেসবিহীন নৌযান থাকার কথা স্বীকার তিনি বলেন, ‘‘আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই৷ প্রতিমাসেই ফিটসেনবিহীন নৌযানের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়৷''

তিনি বলেন, ‘‘রেজিষ্ট্রেশনের বাইরেও নকশার সঙ্গে মূল নৌযানের মিল, ইঞ্চিন, বডি, ফায়ার সেফটি এসব কিছু দেখে ফিটনেস দেয়া হয়৷ আর প্রতিবছর এটা নবায়ন করতে হয়৷ কিন্তু অনেক নৌযান আছে যা একবার নিবন্ধনের পর আর নবায়ন করা হয় না৷ নৌযানের ইঞ্জিনসহ কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আনতে হলে তারও অনুমোদন নিতে হয়৷’’

জানা গেছে, নৌযানের ফিটনেস দেখার জন্য সারাদেশে ৩৩ জন পরিদর্শক নিয়োজিত আছেন৷ আর গত এক বছরে তারা ৭৭০টি নৌযানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন৷

শফিকুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা বছরে ২০-২২টির মতো অভিযান পরিচালনা করি৷ গত অক্টোবরে আমরা ২২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছি৷''

উল্লেখ্য ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে, ২০১৬ থেকে ২০২০ এই পাঁচ বছরে বাংলাদেশের সব ধরনের নৌপথে তিন হাজার ৪৮৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ আর তাতে মারা গেছেন তিন হাজার ১১৭ জন৷ আর ‘সেভ দ্য রোডের' হিসাব অনুযায়ী,  চলতি বছরে ৭১২টি নৌপথ দুর্ঘটনায় ১৩৮ জন নিহত হয়েছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ