আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী বুধবার দেশে ফিরে এই সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার বিকেলে তিনি টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং কেবিনেট সচিবসহ অনেকেই দেশের বাইরে থাকায় তাঁর অব্যাহতিপত্র এখনো দেয়া হয়নি৷ তবে তাঁকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়েছে৷ বুধবার প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পরই তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে অব্যাহতি দেয়া হবে৷''
তিনি জানান, ‘‘লতিফ সিদ্দিকী হজ নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তার দায় সরকার বা দল নেয়নি, নিতে পারে না৷ তাই এর দায়দায়িত্ব তাঁকেই নিতে হবে৷ তিনি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত করেছেন৷''
গত রবিবার যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে হজ এবং তাবলিগ নিয়ে ‘আপত্তিকর' মন্তব্য করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী৷ তবে তিনি তাঁর বক্তব্যে এখনো অটল এবং অবিচল রয়েছেন বলে জানিয়েছেন৷
২০১৩ সালের আলোচিত দশ মন্তব্য
২০১৩ সালে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে বাংলাদেশে আলোচনায় ছিলেন অনেকে৷ কোনো কোনো মন্তব্য সাধারণ মানুষের হাসির খোরাকও হয়েছে৷ বাংলাদেশে আলোচিত দশটি মন্তব্য প্রকাশ করা হলো এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
‘হরতাল সমর্থকদের নাড়াচাড়ায় ভবন ধস’
সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ২৪ এপ্রিল বলেন, ‘‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে জানতে পেরেছি৷ ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে৷’’ রানা প্লাজা ধসে প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজারের বেশি মানুষ৷
ছবি: Reuters
‘আমার কাছে তথ্য আছে’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অত্যন্ত সক্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘‘আমার কাছে তথ্য আছে আওয়ামী লীগ আগামীবার আবার ক্ষমতায় আসবে৷’’ ২৩ জুলাই ঢাকায় এক আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি৷
ছবি: Sajeeb Ahmed Wazed
‘লোডশেডিং দিতে বলেছিলাম’
বিদ্যুতের প্রয়োজনীয় উৎপাদন নিশ্চিত হওয়ার পরও লোডশেডিং প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘আমি নিজেই প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং দিতে বলেছিলাম৷ তা না হলে মানুষ ভুলে যাবে দেশে লোডশেডিং ছিল৷’’ ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট ঢাকায় কুড়িল উড়ালসেতু উদ্বোধনকালে একথা বলেন শেখ হাসিনা৷
ছবি: dapd
‘...তারা বাঙালি নয়’ (প্রতীকী ছবি)
একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হকের একটি মন্তব্য আলোচনার ঝড় তোলে৷ ‘‘যারা ঘোমটা পরে, তারা বাঙালি নয়’’ – এ কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও, মিতা জানান, তিনি চোখ পর্যন্ত ঢেকে রাখার যে রীতি দেখা যাচ্ছে, তার সমালোচনা করেছিলেন৷ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি, তাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
‘২০ জন উপদেষ্টা’
বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে থাকা উপদেষ্টাদের নিয়ে নতুন সরকার গঠনের প্রস্তাব করেন৷ ২১ অক্টোবর তিনি বলেন, ‘‘ওই দুই সরকারের ২০ জন উপদেষ্টার মধ্য থেকে বর্তমান সরকারি দল পাঁচজন এবং বিরোধী দল পাঁচজন সদস্যের নাম প্রস্তাব করবেন৷’’ কিন্তু গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপদেষ্টাদের মধ্যে মাত্র ১৪ জন এখন জীবিত আছেন৷ তাদের কয়েকজন আর উপদেষ্টা হতে রাজি নন৷
ছবি: Getty Images
‘...তেঁতুল বলি নাই’
হেফাজতে ইসলামের আমীর আহমেদ শফী এক ওয়াজ মাহফিলে ‘নারীদের তেঁতুল’ বলেন৷ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়৷ পরবর্তীতে ২ নভেম্বর চট্টগ্রামে এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘‘আমি মহিলাদের তেঁতুলের মতো বলেছি, তেঁতুল বলি নাই৷’’
ছবি: Mustafiz Mamun
‘ধ্বংস এখন অবধারিত’
সরকার গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধনের পর ব্যাংকটির ভবিষ্যত সম্পর্কে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘‘এর মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের ধ্বংস অবধারিত হলো৷’’ ৬ নভেম্বর এক বিবৃতিতে একথা বলেন ইউনূস৷ গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বর্তমান সরকারের সঙ্গে তাঁর বিরোধ রয়েছে৷
ছবি: Getty Images
‘মানুষ থুতু দেবে’
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১১ নভেম্বর বলেন, ‘‘সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে গেলে মানুষ আমাকে থুতু দেবে না? এর চেয়ে জেলেই মরে যাওয়া ভালো৷’’ এই মন্তব্যের কয়েকদিন পর তিনি বলেন, ‘‘এই সরকারকে সরাতে হলে নির্বাচন দরকার৷ নির্বাচনে না গেলে মানুষ থুতু দেবে৷’’ শেষ অবধি অবশ্য নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷
ছবি: JEWEL SAMAD/AFP/Getty Images
‘আমরা আপনাদের তৈরি করেছি’
অবরোধের আগুনে পোড়া গীতা সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সব রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘আমরা আপনাদের তৈরি করছি, আপনারা আমাদের তৈরি করেন নাই৷ আমাদের স্বামীরটা আমরা খাই৷ আপনারা আমাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন৷’’ প্রধানমন্ত্রী ১ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিট পরিদর্শনে গেলে তাঁকে এসব কথা বলেন গীতা৷
ছবি: Mustafiz Mamun
‘দিস ইজ বেয়াদবি’
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে স্মৃতিসৌধে যান নি ঢাকায় অবস্থানরত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূতরা৷ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ইইউ রাষ্ট্রদূতদের এই আচরণ প্রসঙ্গে ১৯ ডিসেম্বর বলেন, ‘‘ইইউ রাষ্ট্রদূত স্মৃতিসৌধে গেলেন না, দিস ইজ বেয়াদবি, এক্কেবারে বেয়াদবি৷’’ এরকম বিভিন্ন মন্তব্য করে গত পাঁচ বছর ধরেই আলোচনায় আছেন মুহিত৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
10 ছবি1 | 10
এদিকে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ঢাকা এবং সারাদেশে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক রয়েছে৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পর লন্ডন গেছেন৷ সোমবার থেকে তিনি ঢাকায় দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কয়েকদফা কথা বলেছেন বলে জানা গেছে৷ টেলিফোন আলাপে তিনি লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের ব্যাপারে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন৷ জানা গেছে তাঁকে শুধু মন্ত্রিসভা নয়, দল থেকেও বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ এছাড়া নেয়া হতে পারে আইনি ব্যবস্থা৷ বুধবার তাঁর বিরুদ্ধে ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ শুরু হয়েছে নানা অনিয়মের তদন্ত৷
এদিকে প্রধানমন্ত্রী দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও খবর নিচ্ছেন৷ পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত আইজিপি জাভেদ পাটোয়ারী জানিয়েছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সরাসরি তাঁর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন৷ প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তা আরো জোরদার করতে বলেছেন৷'' পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, ‘‘তাঁরা সারদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করে দিয়েছেন যাতে লতিফ সিদ্দিকীর ঘটনায় প্রতিবাদের নামে কেউ আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে৷''
এদিকে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের প্রতিবাদ সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ৷ আমরা কোনো ধরণের ভাঙচুর বা নাশকতার ঘটনার মধ্যে যাব না। তবে লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা এবং সংসদ সদস্য পদ থেকে বাদ দিলেই হবে না, তাঁকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে৷'' তিনি বলেন, ‘‘তাঁকে বাংলাদেশের মাটিতে আর প্রবেশ করতে দেয়া হবে না৷ তিনি যদি বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা করেন তাহলে বিমানবন্দরেই তাঁকে গ্রেফতার করতে হবে৷ নয়তো তৌহিদী জনতা তাঁকে বিমানবন্দর ঘেরাও করে আটক করবে৷''
জানা গেছে, লতিফ সিদ্দিকীর রাজনৈতিক বন্ধুরা তাঁকে দেশে না ফেরার পরামর্শ দিয়েছেন৷ কারণ তাঁরা মনে করেন এমনিতেই তিনি মন্ত্রীত্ব হারিয়েছেন৷ আর দেশে ফিরলে তাঁকে কারাগারেই যেতে হবে৷ মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, ‘‘তিনি দেশে ফিরবেন কি ফিরবেন না, তা তাঁর বিষয়৷ কিন্তু তাঁর সঙ্গে সরকার বা দল নেই৷''