‘টেট মডার্ন' হচ্ছে লন্ডনের একটি আধুনিক আর্ট গ্যালারি৷ শহরের ব্যাংকসাইড এলাকার যে স্থানে একসময় বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল সেখানে ২০০০ সালে এই গ্যালারির উদ্বোধন হয়৷ সম্প্রতি এর একটি সম্প্রসারিত অংশের উদ্বোধন হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
বিশাল, তবে অনেক বেশি নয়৷ ধারালো এবং একইসঙ্গে নিখুঁত৷ লন্ডনের ‘টেট গ্যালারি অফ মডার্ন আর্ট-এর সম্প্রসারিত নতুন অংশটি কাচ দিয়ে তৈরি অফিস আর আবাসিক ভবনের মাঝে অবস্থিত৷ দেখতে অনেকটা পিরামিডের মতো৷ প্রায় তিন লক্ষ ইট দিয়ে তৈরি নতুন অংশটি এমন জায়গায় নির্মিত হয়েছে, যেখানে আগে বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল৷ ইট ব্যবহার করায় ভবনের নকশা অনেকটা ঐ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতোই হয়েছে৷ সুইজারল্যান্ডের আর্কিটেকচার কোম্পানি ‘হ্যার্ৎসগ অ্যান্ড ডে মিউরন-কে প্রায় ২০ বছর আগে গ্যালারিটির নকশা তৈরির কাজ দেয়া হয়েছিল৷
হ্যার্ৎসগ কোম্পানির আসকান ম্যার্গেনটালার বলেন, ‘‘আমরা জানতাম, এলাকাটা একসময় বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে গড়ে উঠবে এবং এখানে কাচ নির্মিত অনেক টাওয়ার থাকবে৷ আমাদের মনে হয়েছিল, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নকশা যেমন ছিল তার সঙ্গে নতুন ভবনটির মিল থাকা গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকরণ হিসেবে ইটই ভাল৷ তবে আমাদের মতো স্থপতিদের কাছে স্থাপত্য বিষয়টি আসলে একটি সফর, একটি সংলাপ, একটি প্রক্রিয়া৷ তাই শুরুতে শুধু একটি আইডিয়া বা স্কেচের মধ্যে আমরা সীমাবদ্ধ থাকি না৷''
আবর্জনা থেকে বিস্ময় জাগানো শিল্পকর্ম
সমুদ্রসৈকত নোংরা করে ফেলে প্লাস্টিকের ব্যাগ, স্যান্ডেল, খেলনা, টুথব্রাশসহ নানারকম পরিত্যক্ত জিনিস৷ সবার চোখে আবর্জনা হলেও ‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর কাছে এ সব অমূল্য বস্তু৷ তাই এগুলো দিয়েই দারুণ সব শিল্পকর্ম সৃষ্টি করছে তারা৷
ছবি: Washed Ashore
আবর্জনাই যখন শিল্পীর হাতে...
এই বিশাল মাছঠি তৈরি হয়েছে শুধু সমুদ্র সৈকতে কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিকের আবর্জনা দিয়ে৷ ভালো মনের শিল্পীর হাতে আবর্জনাও কত অপরূপ, কত অসাধারণ কিছু হয়ে উঠতে পারে – এ ছবিটা তারই নিদর্শন, তাই নয় কি?
ছবি: Washed Ashore
যেখানে দেখিবে প্লাস্টিক
‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই/পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’ – ছাই কুড়ালে রতন তো পায়ই অনেকে৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ সংগঠন প্লাস্টিক কুড়িয়েই তৈরি করছেন অমূল সব শিল্পকর্ম৷ শিল্প সৃষ্টির আগে ওরেগনের সমুদ্রসৈকত থেকে প্লাস্টিকের জিনিস সংগ্রহ করে, ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করার পর সব জিনিস রং অনুযায়ী আলাদা করাও কিন্তু খুব শ্রমসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ কাজ৷
ছবি: Washed Ashore
আসল উদ্যোক্তা
ছবির এই মানুষটির নাম অ্যাঞ্জেলা হ্যাসেলটিন পোৎসি৷ ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ প্রকল্পের প্রধান তিনি৷ পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের নানা জিনিস দিয়ে নানা ধরনের প্রাণীর যে সব মূর্তি গড়া হয়, সেগুলোর সবচেয়ে কঠিন অংশটুকুও তিনিই করেন৷
ছবি: Washed Ashore
স্বেচ্ছাসেবা দিতে এসে শিক্ষার্থী
‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর উদ্যোগের অংশ হতে আজ অনেকেই আগ্রহী৷ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর হয়ে কাজও করছেন অনেকে৷ পরিবেশ রক্ষা এবং পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে শরিক হয়ে শিল্প সৃষ্টির নেশায়ও মেতেছেন কেউ কেউ৷
ছবি: Washed Ashore
সচেতনতা বৃদ্ধি
প্লাস্টিকের বড় প্রাণী তৈরি করেই কিন্তু কাজ শেষ নয়৷ শিল্পকর্মগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে প্রদর্শনের ব্যবস্থাও করে তারা৷ এ সব প্রদর্শনীর একটাই উদ্দেশ্য – পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি৷
ছবি: Washed Ashore
মনে দাগ কাটার মতো বড়
‘ওয়াশড অ্যাশোর’ সব সময় প্লাস্টিকের বড় বড় মূর্তিই তৈরি করে৷ বেশির ভাগ মূর্তিই সাড়ে তিন থেকে চার মিটার লম্বা এবং প্রায় তিন মিটার উঁচু৷ সবচেয়ে বড় একটি পাখির মূর্তি৷ সেই পাখির ডানার দৈর্ঘ্যই সাত মিটারের মতো!
ছবি: Washed Ashore
সবাই তাদের অনুসরণ করুন
অ্যাঞ্জেলা হ্যাসেলটিন পোৎসি মনে করেন, ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ যে কাজটি করছে তা যদি বিশ্বের সব প্রান্তে অনেক মানুষ করতে শুরু করে তাহলেই তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে৷ যেখানে-সেখানে প্লাস্টিকের জিনিস ফেলার প্রবণতা কমিয়ে পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করা তাহলেই যে সম্ভব৷
ছবি: Washed Ashore
7 ছবি1 | 7
শুরুতে স্থপতিরা ইস্পাত আর কাচ ব্যবহারের কথা ভেবেছিলেন৷ পরে তাঁরা বুঝতে পারেন যে, উপকরণ হিসেবে ইট শুধু অভিজাতই নয়, সাশ্রয়ীও বটে৷ অবশ্য এরপরও সম্প্রসারিত অংশটি তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ইউরো৷ এর ফলে টেট মডার্ন নতুন ১০টি তলা পেয়েছে, যার অর্ধেক অংশে শিল্পকর্ম প্রদর্শনের জন্য গ্যালারি থাকবে৷ পারফরমেন্স আর্টের জন্যও কিছু অংশ থাকবে৷ সেজন্য স্থপতিরা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বেসমেন্টে অবস্থিত তেলের ট্যাংককে নতুনভাবে সাজিয়েছেন৷
‘টেট মডার্ন' এর কিউরেটর ক্যাথেরিন উড বলেন, ‘‘শিল্পীরা উদ্ভট জায়গা পছন্দ করেন৷ সেসব জায়গায় কাজ করা সবসময় সহজ নয়৷ শিল্পকারখানার পতিত এলাকায় শিল্পীদের কাজ করার ইতিহাস থেকে আমরা জানি, একটা জায়গা যেমন আছে তেমন রাখাই ভাল৷ সেখানে শিল্পীরা বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন৷ আমার মনে হয়, উপর তলার গ্যালারিগুলো প্রদর্শনের জন্য ভালো৷''
গ্যালারির সবচেয়ে বড় রুম হওয়ায় টারবাইন হলটি কেন্দ্রীয় সংযোগ পথ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে৷