লন্ডনের যে রেস্টুরেন্টে অসহায় ব্যক্তিদের কাজ দেয়া হয়েছে
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
রেস্টুরেন্টের ওয়েটার জেরেমি কোটস বলেন, ‘‘আমার মতো অনেকে ছোটবেলায় স্থিতিশীল জীবন ও পরিবার পায়নি৷ এমন মানুষেরা জীবনের কোনো উদ্দেশ্য না থাকায়, কোনো নেটওয়ার্ক না থাকায় সহজে হারিয়ে যেতে পারেন৷ এই অবস্থায় সবাইকে নিজের চেষ্টা দিয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে৷''
হোম কিচেন সেই নেটওয়ার্ক হতে চায়৷
এই প্রকল্পের অন্যতম ব্যক্তি শেফ অ্যাডাম সিমন্ডস৷ বছর কয়েক আগে তার নিজেরও এমন কঠিন সময় পার হতে হয়েছে এবং তখন তাকে প্রায় রাস্তায় বসবাসের উপক্রম হতে হয়েছিল৷ সিমন্ডস বলেন, ‘‘সবারই সুযোগ পাওয়ার অধিকার আছে৷ মানুষ রাস্তায় অনেক গৃহহীন ও সমস্যায় থাকা মানুষ দেখে৷ তারা শুধু তাদের বাহিরটা দেখতে পান, ভেতরেরটা না৷ তারা বুঝতে পারেন না, কেন তারা রাস্তায়৷ মানুষ নিজ ইচ্ছায় রাস্তায় থাকতে চায় না৷ পরিস্থিতির কারণে তাদের সেখানে থাকতে হয়৷''
পল, যিনি তার নামের শেষ অংশটি প্রকাশ করতে চান না, তিনি অনেকটা সময় জেলে ছিলেন৷ সেখানে রান্না শিখেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘যখন জেলে ছিলাম তখন আমি আমার নিজের একটি থাকার জায়গা, নিজের ক্যাফে চাইতাম৷ সেটা আমার স্বপ্ন ছিল৷ কিন্তু যখন জেল থেকে বের হলাম তখন মনে হলো, জেলে থাকার কারণে আমার হয়ত সেসব পাওয়া সম্ভব হবে না- কারণ আপনি একজন সাবেক অপরাধী৷ কিন্তু এখানকার মানুষেরা আমার মতো মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন৷ আমার জন্য এটা স্বপ্ন পূরণের মতো ব্যাপার৷ আমি নিজেকে চিমটি কেটে বোঝার চেষ্টা করেছি, এটা সত্যিই ঘটছে?''
মেনুতে কাঁকড়া, সবজি আর মাছ আছে৷ ছয় পদের খাবারের দাম কম নয়৷ তাই অতিথিরা কি অনবদ্য সেবা আশা করেন না? অ্যাডাম সিমন্ডস বলেন, ‘‘হ্যাঁ, আমাদের সেবা দেওয়ার গতি ধীর হতে পারে, কিছু ভুলও হতে পারে৷ তবে আশা করছি, যারা ঐ দরজা দিয়ে ঢুকবেন তারা বিষয়টি বুঝতে পারবেন এবং মেনে নিবেন যে, খাবারের জন্য তাদের আরও ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হতে পারে৷''
হোম কিচেন কিছুটা দানের উপর চলছে৷ তাই শুরুতেই যে তাদের লাভ করতে হবে এমন নয়৷ তবে ব্যবসায় দীর্ঘদিন টিকে থাকতে চাইলে অতিথিরা যেন সন্তুষ্ট হন সেটা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ৷
লিন্ডা ফার্স্টেনডিক নামের একজন অতিথি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, আইডিয়াটা দারুণ৷ আমি আশা করবো তারা এখান থেকে শিখে নিজেদের আরও অনেক দূর নিয়ে যাবে৷ তারা যদি ভবিষ্যতে ক্যাটারিংয়ে যেতে চায় তাহলে একেবারে নীচ থেকে কাজ শিখে উপরে যাওয়া ভালো৷''
সেখানকার অনেক কর্মী সেটিই চান৷ জেরেমি কোটস আজ মন দিয়ে কাজ করছেন৷ ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি আশাবাদী৷
জেরেমি কোটস বলেন, ‘‘আমি ব্ল্যাক হোলের মতো৷ আমি সবকিছু শিখতে চাই এবং তারপর আমাকে পুরোপুরি তৈরি করতে চাই, দক্ষ হয়ে উঠতে চাই৷ এরপর সম্ভবত ভবিষ্যতে এটাকে পেশা হিসেবে নিতে চাইবো৷''
লুকিয়ে থাকা মেধাবীদের লালনপালন করতে চায় হোম কিচেন৷ সেখানে কাজ করা সবার দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক হতে চায় তারা৷
বির্গিট মাস/জেডএইচ