বিশ্বের সবথেকে বড় বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির সম্পর্কে ক্রেতাদের ধারণা দিতে ইংল্যান্ডের লন্ডনের একটি শপিংমলে একটি কর্ণার বসিয়েছিল দেশটির রেডক্রস৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
বিজ্ঞাপন
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির নিয়ে গত সোমবার ওই ‘ইন্টারেক্টিভ ইনস্টলেশনে' দেখানো হয় সেখানে তাঁরা কীভাবে জীবনযাপন করছেন৷ সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের পর ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা৷
রেডক্রস বলছে, মানুষ যাতে রোহিঙ্গাদের ভুলে না যায় তা নিশ্চিত করতে হবে৷ রেডক্রসের মুখপাত্র পল আমাদি রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেন, ‘‘আমরা চাই মানুষ এটা দেখে উদ্বুদ্ধ হোক এবং যেন বুঝতে পারেন রোহিঙ্গারা মানবিক সংকটে এবং ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন৷
পূর্ব লন্ডনের ওয়েস্টফিল্ড মলে ওই প্রদর্শনীতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া নয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার জীবনযাত্রা তুলে ধরা হয়, প্রচার করা হয় তাঁদের সাক্ষাৎকার৷
রোহিঙ্গা শিশুদের পড়াশোনা, ধর্মচর্চা ও চিকিৎসা
জীবন বাঁচাতে রোহিঙ্গারা ত্যাগ করেছেন মাতৃভূমি৷ বাংলাদেশে কিভাবে হচ্ছে তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনা আর নিজেদের ধর্মচর্চা? কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে তোলা ছবি দিয়েই তা জানাচ্ছেন জীবন আহমেদ৷
ছবি: Jibon Ahmed
১ম শ্রেণি শেষ করেছে আয়াছ
নয় বছর বযসি মো. আয়াছ-ও শরণার্থীর ঢলের সাথে জীবন বাঁচাতে চলে এসেছে বাংলাদেশে৷ অল্প বয়সেই সাক্ষী হয়েছে বিভৎসতার, নিষ্ঠুরতার৷ তারপরও থেমে থাকেনি আয়াছ৷ এক বছরে শেষ করেছে প্রথম শ্রেণির পড়াশোনা৷ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিও পরিচালিত ‘মুক্তি’ স্কুলে লেখাপড়া করা আয়াছ মেধার পরিচয়ও দিচ্ছে শ্রেণীকক্ষে, জানালেন শিক্ষকরা৷
ছবি: Jibon Ahmed
ডাক্তার হবে উম্মে হাবিবা
ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখে ৬ বছরের উম্মে হাবিবা৷ স্বপ্ন পূরণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হাবিবা ক্যাম্পের স্কুলের দৈনিক তিন শিফটের কোনোটিই বাদ দিতে চায় না৷ ইংরেজিতে ছড়া ও অক্ষর লিখতে শিখেছে ইতিমধ্যে৷ হাবিবা পড়ালেখায় ভালো এবং মনোযোগী বলে জানিয়েছেন তার শিক্ষকেরা৷
ছবি: Jibon Ahmed
রোহিঙ্গা শিশুদের ইংরেজি পড়ান নাহিদা
রোহিঙ্গা তরুনী নাহিদা নিজ দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে৷ নিজ দেশ ছেড়ে এসেও থেমে নেই তিনি৷ বর্তমানে একটি এনজিও পরিচালিত স্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করেন৷ চেষ্টা করছেন রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে নিয়ে যেতে৷
ছবি: Jibon Ahmed
রোহিঙ্গা শিশুদের ধর্ম শিক্ষা
সাত লাখেরও অধিক রোহিঙ্গার ধর্ম শিক্ষার জন্য মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ করেছে বিভিন্ন এনজিও৷ রোহিঙ্গা মুসলিম শিশুদের মাদ্রাসায় পড়ার আগ্রহই বেশী৷ অন্যদিকে মসজিদগুলোতে বয়স্কদের নামাজ পড়ার জন্য রয়েছে ভালো ব্যাবস্খা৷
ছবি: Jibon Ahmed
মা-বাবা নেই, তাই এতিমখানায়
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থাপিত বেশিরভাগ মাদ্রাসাতেই রয়েছে এতিমখানা৷ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে মা-বাবা হারানো সন্তানদের ঠাঁই হয়েছে এ এতিমখানাগুলোতে৷ এতিমখানাগুলোতে সবাই মিলেমিশে মা-বাবা হারানোর শোক ভোলার চেষ্টা করে তারা৷
ছবি: Jibon Ahmed
স্থানীয় চিকিৎসা
ঝার-ফুঁক আর ওঝা দিয়ে জীন তাড়ানোর সংস্কারও আছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক বৈদ্য আগুন দিয়ে একজন ‘রোগীর উপর ভর করা জীন’ তাড়ানোর চেষ্টে করছেন৷ তিনি একজন পেশাদার বৈদ্য৷ জীন তাড়ানো বাবদ প্রতিবার তিনি তিন হাজার এক টাকা করে নেন৷
ছবি: Jibon Ahmed
6 ছবি1 | 6
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সঙ্গে কাজ করছে ব্রিটিশ রেডক্রস৷ তারা কয়েক হাজার মানুষকে খাবার পানি, খাদ্য এবং স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে৷
মিয়ানমার জানিয়েছে, তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তত৷ কিন্তু জাতিসংঘ বলেছে, মিয়ানমারের পরিস্থিতি এখনো রোহিঙ্গাদের ফেরার জন্য অনুকূল নয়৷ আর রোহিঙ্গারা বলছেন, তারা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি এবং নিরাপত্তার গ্যারান্টি চান৷
আমাদি বলেছেন, তিনি আশা করেন এই ইনস্টলেশনটি ক্রেতাদের বোঝাতে সক্ষম হবে রোহিঙ্গারা সেখানে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন এবং তাঁদের সহায়তায় তারা এগিয়ে আসবেন৷