লন্ডনে মঙ্গলবার এক হোটেলের সামনে থেকে জলবায়ু অ্যাক্টিভিস্ট গ্রেটা টুনব্যার্গসহ কয়েকজনকে আটক করা হয়৷ ঐ হোটেলে তেল ও গ্যাস কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্মেলন চলছে৷
বিজ্ঞাপন
সম্মেলনকে ঘিরে ‘ওয়েলি মানি আউট' বিক্ষোভের আয়োজন করেছিল পরিবেশবাদী সংগঠন ফসিল ফ্রি লন্ডন ও গ্রিনপিস৷ টুনব্যার্গসহ কয়েকশ বিক্ষোভকারী হোটেলের সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন৷ তারা হোটেলে প্রবেশের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছিলেন৷
আটকের আগে টুনব্যার্গ গণমাধ্যমকে বলেন, দরজা বন্ধ করে সম্মেলনের নামে মেরুদণ্ডহীন রাজনীতিবিদেরা ধ্বংসাত্মক জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের লবিস্টদের সাথে চুক্তি এবং আপস করছেন৷
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, জীবাশ্ব জ্বালানি নিয়ে কাজ করা কোম্পানিগুলো বেশি লাভের জন্য ইচ্ছে করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির গতি ধীর করে দিচ্ছে৷
টুনব্যার্গ বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানিতে পৃথিবী ডুবে যাচ্ছে৷ ‘‘আমাদের আশা, স্বপ্ন এবং জীবন মিথ্যার বন্যায় ভেসে যাচ্ছে,'' বলেন তিনি৷ ২০ বছর বয়সি টুনব্যার্গ অভিযোগ করেন, কয়েক দশক ধরে এটি স্পষ্ট যে জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে কাজ করা কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসায়িক মডেলগুলোর পরিণতি সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত ছিল৷ কিন্তু তারপরও তারা কিছু করেনি৷ ‘‘শারীরিকভাবে উপস্থিত হয়ে এই সম্মেলন বিঘ্নিত করা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই৷ এবং আমাদের প্রতিবারই তা করতে হবে৷ আমাদের তাদের দেখিয়ে দিতে হবে যে, এ থেকে তারা রেহাই পাবেন না,'' বলেন তিনি৷
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সম্মেলন চলবে৷ সেই সময় পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা৷
মঙ্গলবার গ্রিনপিসের দুজন কর্মী হোটেলের উপরে উঠে একটি বড় ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছিলেন৷ সেখানে লেখা ছিল, ‘মেক বিগ ওয়েল পে'৷
লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ ‘এক্স'এ বিক্ষোভস্থল থেকে ২০ জনকে আটকের খবর জানিয়েছে৷
এর আগে এই বছর বিক্ষোভ করতে গিয়ে সুইডেন, নরওয়ে ও জার্মানিতে আটক হয়েছিলেন টুনব্যার্গ৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, এপি, রয়টার্স)
সুন্দর পৃথিবী গড়ার লড়াইয়ের ৯ ‘খুদে’ সৈনিক
তাদের বয়স কম৷ তবে বয়সে ছোট হলেও প্রত্যেকেই চায় এবং চেয়েছে পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে, আরো সুন্দর করতে৷ এমন নয় অ্যাক্টিভিস্টের কথা জানুন এই ছবিঘরে...
ছবি: Britta Pedersen/dpa/picture alliance
গ্রেটা টুনব্যার্গ
গ্রেটা টুনব্যার্গ প্রথম পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন ২০১৮ সালের আগস্টে৷ সুইডেনের গণমাধ্যম তখন সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত৷ শুক্রবারের স্কুল বাদ দিয়ে গ্রেটা ঠিক তখনই সংসদের সামনে একা বসে বিক্ষোভ শুরু করেন৷ তার পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি ছড়িয়ে পড়ে সব স্কুলে৷ অনেক শিক্ষার্থী যোগ দেয় তার সঙ্গে৷ গ্রেটা টুনব্যার্গ এখন সারা বিশ্বেই সুপরিচিত৷ ইতিমধ্যে ‘বিকল্প নোবেল’ও জিতেছেন ১৯ বছর বয়সি গ্রেটা৷
ছবি: Hanna Franzén/TT News/picture alliance
সেভের্ন কুলিস-সুজুকি
২২ পেরোনো সেভের্ন কুলিস-সুজুকিকে সবাই বেশি চেনে ১৯৯২ সালে রিও ডি জেনেইরোর আর্থ সামিটে দেয়া দুর্দান্ত এক ভাষণের কারণে৷ সেই থেকে ক্যানাডিয়ান এই তরুণীকে সবাই ‘বিশ্বকে পাঁচ মিনিটের জন্য স্তব্ধ করে দেয়া সেই মেয়ে’ হিসেবেই চেনে৷পরিবেশবিদ ডেভিড সুজুকির সন্তান সেভের্ন মাত্র নয় বছর বয়সে প্রতিষ্ঠা করেন এনভায়র্নমেন্টাল চিল্ড্রেনস’স অর্গ্যানাইজেশন (ইসিও)৷ সেই প্রতিষ্ঠানও শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা দিয়েছে৷
ছবি: UN
শোতেচাত রোসকে-মার্টিনেজ
যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিবেশবিদও বিশ্বখ্যাতি পেয়েছিলেন খুব কম বয়সে৷ বয়স ১৬ হওয়ার আগে জাতিসংঘে তিনবার জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ভাষণ দিয়ে ফেলা শোতেচাত এখন আর্থ গার্ডিয়ান্সের তরুণ পরিচালক৷ ভালো গান জানেন৷ ২০১৫ সালে তার কম্পোজ করা গান ‘স্পিক ফর দ্য ট্রিজ’ সেবছরের জাতিসংঘ পরিবেশ পরিবর্তন সম্মেলনের থিম সং-এর মর্যাদা পায়৷
ছবি: Lev Radin/Pacific Press/picture alliance
মেলাতি উইজসেন এবং ইসাবেল উইজসেন
ইন্দোনেশিয়ার এই দুই বোন বালি দ্বীপ প্লাস্টিকের ব্যাগমুক্ত করার আন্দোলন ‘বাই বাই প্লাস্টিক ব্যাগস’-এর সুবাদে এখন বিশ্ববিখ্যাত৷দুই বোনের এ আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে৷ মেলাতির বয়স তখন ১০ আর ইসাবেলের ১২৷ছবিতে জার্মানির বাম্বি অ্যাওয়ার্ড হাতে মেলাতি এবং ইসাবেল৷
ছবি: Britta Pedersen/dpa/picture alliance
মালালা ইউসুফজাই
২০১২ সালে তালেবান জঙ্গিদের হামলায় গুরুতর আহত হয় স্কুলছাত্রী মালালা৷ সেই মালালা এখন তারকা মানবাধিকারকর্মী৷ ইতিমধ্যে নোবেল শান্তি পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার জিতেছেন৷ ২০১৪ সালে নোবেল জেতেন মাত্র ১৭ বছর বয়সে৷ সেই সুবাদে এখনো তিনি বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সি নোবেলজয়ী৷ ওপরের ছবিতে লেবাননের এক স্কুলে সিরীয় শরণার্থী শিশুদের হাতে নিজের আত্মজীবনী ‘আই অ্যাম মালালা’ তুলে দিচ্ছেন মালালা৷
ছবি: WAEL HAMZEH/EPA/dpa/picture alliance
ইকবাল মাসিহ
বেঁচে থাকলে ইকবালের বয়স হতো ২৯ বছর৷ কিন্তু পাকিস্তানের এই অ্যাক্টিভিস্টকে ২০০৯ সালে কার্পেট মাফিয়ারা গুলি করে হত্যা করে৷ ইকবালের অপরাধ- মাত্র পাঁচ বছর বয়সে কার্পেটের দোকানে কাজ শুরু করে, টানা পাঁচ বছর অনেক অত্যাচার সহ্য করার পর সেই কাজ ছেড়ে দিয়ে অন্য শিশুদেরও মুক্ত করার আন্দোলন শুরু করেছিল৷ শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় তার কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয় কার্পেট মাফিয়ারা৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
থান্ডিয়ে চামা
জাম্বিয়ার এই মেয়েটির স্কুলের অনেক শিক্ষক এইডসে ভুগে মারা যায়৷ এ কারণে বন্ধ হয়ে যায় স্কুল৷ কিন্তু স্কুল বন্ধ হলেও থাণ্ডিয়ে লেখাপড়া বন্ধ হতে দেয়নি৷ ৬০জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে মিছিল করতে করতে পৌঁছে গিয়েছিল এলাকার আরেকটি স্কুলে৷ সেখানে গিয়ে দাবি জানিয়েছিল, ‘‘আমাদের সবাইকে এই স্কুলে পড়ার সুযোগ দিতে হবে৷’’ স্কুল কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নেয়৷ পরে এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর কাজে মন দেয় থাণ্ডিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
এনকোসি জনসন
সাউথ আফ্রিকার এইডসবিরোধী অ্যাক্টিভিস্ট এইডসে ভুগে মারা যায় ২০০১ সালে৷ এইডসে আক্রান্ত বলে ১৯৯৭ সালে জোহানেসবার্গের একটি স্কুলে সে ভর্তি হতে পারেনি৷ বাকি ছোট্ট জীবনে এইডস আক্রান্ত শরীর নিয়েই এইডসের বিরুদ্ধে অনেক কাজ করেছে এনকোসি৷ দত্তক মা-র সহায়তায় এইচআইভি আক্রান্ত শিশু এবং তাদের মায়ের জন্য একটা আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তুলেছিল৷ ২০০৫ সালে তাকে মরণোত্তর চিল্ড্রেনস পিস প্রাইজ দেয়া হয়৷
ছবি: picture alliance / AP Photo
বানা আবেদ
২০১৬ সালে মাত্র সাত বছর বয়সে জীবনের প্রথম টুইটটি করেছিল বানা৷ মাত্র তিনটি শব্দ লিখেছিল সেখানে, ‘‘ আই ওয়ান্ট পিস৷’’ সেই থেকে যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ সিরিয়ার ছোট্ট এই মেয়েটির ফলোয়ার বেড়েই চলেছে৷এখন তার মোট ফলোয়ার দুই লাখ ৭৮ হাজারেরও বেশি৷ টুইটারে ছবি এবং ভিডিওর মাধ্যমে শুধু সিরিয়ায় শান্তি ফেরানোর জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানায় বানা৷