1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লন্ডনে শেখ হাসিনার ভাষণ ও নিষেধাজ্ঞার সীমাবদ্ধতা

৯ ডিসেম্বর ২০২৪

যুক্তরাজ্যের এক সমাবেশে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রেখেছেন শেখ হাসিনা৷ ট্রাইব্যুনাল তার ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য' প্রচার নিষিদ্ধের দু'দিন পরই বিভিন্ন দেশে প্রচারিত হলো ভারতে আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ৷

নির্বাচনের পর ৮ জানুয়ারি বিদেশি গণমাধ্যমের সঙ্গে বৈঠকে বক্তব্য দেয়ার একটি মুহূর্তে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
রোববার ভারত থেকে যুক্ত হয়ে লন্ডনের ভার্চুয়াল সমাবেশে শেখ হাসিনা প্রায় ৩৮ মিনিট বক্তব্য দেনছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের কোনো সংবাদমাধ্যম তা প্রচার করেনি৷ কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশের অনেকেই তা দেখেছেন৷

রবিবার (৮ ডিসেম্বর)-এর ওই সমবাবেশে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ছাড়াও সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদেরও দেখা গেছে৷ তাদের মধ্যে অনেকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও আছে৷

এদিকে মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ওই নিষেধাজ্ঞা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসলে বক্তব্য প্রচার বন্ধ করা যায় না৷ তারা বলেন, আগে তারেক জিয়ার বেলাতেও এমন নিষেধাজ্ঞার সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা গেছে৷ তারা মনে করেন, এমন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে হয়ত বাংলাদেশি মিডিয়ায় শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার রাখা যাবে, কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও দেশের বাইরের সংবাদমাধ্যমে তা ঠিকই প্রচারিত হবে৷ বরং নিষেধাজ্ঞার কারণে তার বক্তব্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়ে যাবে বলেও মনে করেন তারা৷ 

শেখ হাসিনার সরকারের সময় লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল হাইকোর্ট৷ সেই নিষেধাজ্ঞাও তখন তেমন কাজে আসেনি বলে মনে করেন তারা৷

রবিবার ভারত থেকে যুক্ত হয়ে লন্ডনের ভার্চুয়াল সমাবেশে শেখ হাসিনা প্রায় ৩৮ মিনিট বক্তব্য দেন৷ তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন৷ সমাবেশের ফুটেজে দেখা গেছে, দশৃক সারিতে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারকেও দেখা গেছে৷ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বাইরে এই প্রথম তাদের প্রকাশ্যে দেখা গেল৷ তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে৷

লিখিতভাবে ট্রাইব্যুনালের আদেশটি পৌঁছানো হবে: এম এইচ তামিম

This browser does not support the audio element.

‘শেখ হাসিনার বক্তব্য বিদ্বেষমূলক না হলে প্রচারে বাধা নেই'

প্রসিকিউশনের আবেদনে মানবতা বিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ ৫ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য' প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেয়৷ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত তার ওই ধরনের বক্তব্য সরিয়ে ফেলারও নির্দেশ দেয়া হয়৷

ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যেসব হেট স্পিচ এখনো বিদ্যমান আছে, সেগুলো যেন অতি দ্রুত সরিয়ে ফেলা হয় এবং ভবিষ্যতে যেন তার কোনো ধরনের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার বা প্রকাশ করা না হয়, সে আদেশ দিয়েছেন আদালত৷ ফেসবুক, ইউটিউব, এক্সসহ আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে ট্রাইব্যুনালের আদেশটি পৌঁছানো হবে৷”

‘‘তবে শেখ হাসিনার বক্তব্য যদি বিদ্বেষমূলক না হয়, তা প্রচারে কোনো বাধা নেই৷  সম্প্রতি তার যেসব অডিও রেকর্ড বের হয়েছে তা বিদ্বেষমূলক,”বলেন তিনি৷

আইনে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের কোনো সংজ্ঞা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমরা আমাদের আবেদনে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য চিহ্নিত করতে সংবিধানের আর্টিকেল ৩৯, ইন্ট্যারন্যাশনাল কভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস (আইসিসিপিআর) এবং রাবাত প্রিন্সিপলের রেফারেন্স দিয়েছি৷ সংবিধান আমাদের যে বাকস্বাধীনতা দিয়েছে, তা শর্তসাপেক্ষ৷ এর বাইরে   সাধারণ নাগরিক নয়, যারা পাবলিক ফিগার এবং যাদের  বক্তব্য প্রভাব বিস্তার করতে পারে, তাদের বক্তব্যের ব্যাপারে নীতিমালা আছে আইসিসিপিআর এবং রাবাত প্রিন্সিপলে৷”

‘‘আর  ট্রাইব্যুনাল আইনে স্বাক্ষী বা বাদীর জন্য ভয়-ভীতির কারণ হয়, এমন কোনো বক্তব্য প্রচারে বাধা আছে,” বলেন তিনি৷

কোনটা বিদ্বেষমূল তা আমাদের আইনে বলা নাই: মাহবুব শফিক

This browser does not support the audio element.

আদালত শেখ হাসিনার এই সময়েরে কোনো বক্তব্যের তালিকা দেয়নি, তবে  প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে তালিকা দেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, "আদালতের এই নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের জন্য নয়৷” তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘‘ট্রাইব্যুনাল যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেই এখতিয়ার তাদের নাই৷ এটা সংবিধানের মৌলিক অধিকার বাকস্বাধীনতার বিষয়৷ এ ব্যাপারে হাইকোর্ট  আদেশ দিতে পারে ন৷ তারেক রহমানের ব্যাপারে হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন৷ আর তারেক রহমান ছিলেন কনভিক্টেড, শেখ হাসিনার কোনো দণ্ড এখনো হয়নি৷ তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রচার বন্ধ করা গেছে৷ কিন্তু আর্ন্তজাতিক সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধ করা যায়নি৷ শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও তাই হবে৷ আসলে এটা রাজনৈতিক আদেশ৷ তারেক রহমানকে দেয়া হয়েছিলো তাই শেখ হাসিনাকেও দেয়া হয়েছে৷”

‘‘এরশাদকে খুনি বলে স্লোগান দেয়া হয়েছে৷ খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার চামড়া তুলে নেয়ারও রাজনৈতিক স্লোগান হয়েছে৷ তাতে তো কোনো মামলা হয়নি৷ প্রচার বন্ধ করা হয়নি৷ এখন যদি কেউ প্রধান উপদেষ্টার চামড়া তুলে নেয়ার স্লোগান দেয়-এটাও তো রাজনৈতিক বক্তব্য,” বলেন তিনি৷

একই প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক বলেন, ‘‘কোনটা বিদ্বেষমূলক তা আমাদের আইন বা সংবিধানে বলা নাই৷ কারুর পছন্দ না হলে হেট স্পিচ আর পছন্দ হলে হেট স্পিচ হবে না- এটা তো হতে পারে না৷”

"যেকেনো মানুষের কথা বলার আইনগত অধিকার আছে৷ সংবিধান বাকস্বাধীনতা দিয়েছে৷  আসামি হলেও তিনি কথা বলতে পারবেন৷ আর শেখ হাসিনা তো কোনো মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত নন,” বলেন তিনি৷

‘এখন শেখ হাসিনার বক্তব্য মানুষ বেশি করে শুনবে'

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, ‘‘হেট স্পিচের সংজ্ঞা কে নির্ধারণ করবে? নাহিদ ইসলাম করলে একরকম হবে৷ আবার  আসিফ নজরুল করলে আরেক রকম হবে৷ এটা দিয়ে একটা অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে৷ এখন শেখ হাসিনার বক্তব্য মানুষ বেশি করে শুনবে, কারণ, নিষিদ্ধের প্রতি আকর্ষণ বেশি৷   রবিবারের ভাচ্যুয়াল সমাবেশে তার বক্তব্য তো অনেকেই শুনেছেন৷ সোশ্যাল মিডিয়া আপনি আটকাবেন কীভাবে? ফেসবুক, ইউটিউব কি আপনার কথা শুনবে? তারেক রহমানের বক্তব্য আটাকানো গেছে?”

তিনি ভারতে বসে কী বলতে চাইছেন তা শুনতে চাই: জাহেদ- উর- রহমান

This browser does not support the audio element.

‘তারেক রহমানের মতো শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞাও উদ্ভট ও হাস্যকর'

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. জাহেদ- উর- রহমানের কথা, ‘‘শেখ হাসিনা লন্ডনে যে বক্তব্য দিলেন গতকাল ( রবিবার) সেটা কি আমরা শুনিনি? আমরা শুনেছি৷ ফলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আটকানো যায় না, কোনো না কোনোভাবে পৌঁছে যায়৷”

"শেখ হাসিনার পতনের পর তিনি একটা পলিটিক্যাল ইস্যু৷ ভূরাজনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷ তিনি ভারতে বসে কী বলতে চাইছেন তা বুঝতে চাই, শুনতে চাই৷ তার বক্তব্যে তাই নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কিছু নাই, প্রয়োজনও নাই.” বলেন তিনি৷

তিনি মনে করেন, "তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা যেমন হস্যকর ও উদ্ভট ছিল, শেখ হাসিনার ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা উদ্ভট ও হাস্যকর৷”

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি হাইকোর্ট তারেক রহমানের বক্তব্য, বিবৃতি, অডিও ও ভিডিও  প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল৷ তবে সেই নিষেধাজ্ঞা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ২২ আগস্ট প্রত্যাহার করা হয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ