লর্ডসে নাটকীয়ভাবে ইংল্যান্ডকে হারাল ভারত। শেষদিনে রুদ্ধশ্বাস ক্রিকেট দেখা গেল। ইংল্যান্ড মাত্র ১২০ রানে অলআউট।
বিজ্ঞাপন
লর্ডসে আবার এক মহারণ এবং ভারতীয় ক্রিকেটারদের বিক্রমের সামনে ইংল্যান্ডের অসহায় আত্মসমর্পন। লর্ডসের বাইশ গজে ব্যাটে ও বলে কর্তৃত্ব করে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে ভারত। রুটের ইংল্যান্ড চতুর্থ ইনিংসের চাপ সহ্য করতে পারেনি।
এই চাপ তৈরির পিছনে ছিল ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে নবম উইকেটে যশপ্রীত বুমরা ও মহম্মদ শামির ৮৯ রানের পার্টনারশিপ। শামি করেছেন ৫৬। বুমরা ৩৪। গাভাসকার যা দেখে বলেছেন, সিংহহৃদয়ের সিংহবিক্রম। ফলে ৬০ ওভারে ইংল্যান্ডকে ২৭১ রান করতে হতো। কিন্তু মহম্মদ সিরাজ, ইশান্ত শর্মা, বুমরা ও শামির আগুনে বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতে পারল না ইংল্যান্ড। ১২০ রানে অলআউট তারা।
মোহাম্মদ সিরাজ: বল হাতে দারিদ্র্য ও অস্ট্রেলিয়া জয়
একেবারে গরিব পরিবারের ছেলে মোহাম্মদ সিরাজ প্রমাণ করে দিলেন, প্রতিভা থাকলে সর্বোচ্চ স্তরে সফল হওয়া কেবল সময়ের অপেক্ষা। ছবিঘরে থাকছে অটোরিকশা চালকের সন্তানের ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন সেনসেশন হয়ে ওঠার গল্প...
মোহাম্মদ সিরাজের বাবা ছিলেন গরিব অটো-চালক। তার স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় ক্রিকেটার হবে, ভারতের হয়ে খেলবে। । প্রতিদিন ৭০ টাকা দিতেন সিরাজকে। প্র্যাকটিসে যেতে-আসতে খরচ হতো ৬০ টাকা। সেই অবস্থা থেকে প্রতিভা ও পরিশ্রমের জোরে উঠে এসেছেন হায়দ্রাবাদের ছেলে সিরাজ৷
ছবি: Peter Dovgan/Uk Sports Pics Ltd/imago images
ঘরোয়া ক্রিকেটে জ্বলে ওঠা
২০১৬-১৭-র আগে পেসার মোহাম্মদ সিরাজকে কেউ চিনতো না। ওই মৌসুমে রঞ্জি ট্রফিতে হায়দ্রাবাদের হয়ে ৪১ উইকেট নিয়ে চমকে দেন ২৬ পেরোনো এই তরুণ। সেখান থেকে সোজা আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ টিমে। সেখানে সাফল্য তাকে নিয়ে আসে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু টিমে। দুই কোটি ৬০ লাখ টাকায় তাকে কেনে বেঙ্গালুরু। অটো-চালকের ছেলে কোটিপতি হয়ে যান।
ছবি: Peter Dovgan/Uk Sports Pics Ltd/imago images
জাতীয় দলের জন্য তৈরি হওয়া
ইন্ডিয়া এ টিম এবং ইন্ডিয়া গ্রিন টিমে সুযোগ পান সিরাজ। সেটাই তাঁর প্রস্তুতিপর্ব। নিজের বোলিংকে আরো ক্ষুরধার করে নেন তিনি। উইকেট থেকে পেস ও বাউন্স আদায় করা হলো সিরাজের বোলিংয়ের বিশেষত্ব।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে পাশে পেয়েছেন সিরাজ। ভালো পারফর্ম্যান্স দিয়ে প্রথমে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সে, তারপর ভারতের এ টিম ও গ্রিন টিমে স্থান করে নিতেও বেশি সময় লাগেনি৷
ছবি: AFP/D. Sarkar
বাবার স্বপ্নপূরণ
অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতের স্কোয়াডে ছিলেন বদলি বোলার হিসাবে। সিরাজ জানতেন, এই সুযোগ হারানো যাবে না। হারাননি তিনি। অস্ট্রেলিয়ায় বসে তিনি বাবার মৃত্যুর খবর পান। কিন্তু একে একে সব সিনিয়র বোলার ইনজুরিতে পড়ায় তিনি ভারতে ফেরেননি। দেশের স্বার্থে থেকে গেছেন দলের সঙ্গে। সিরিজের তৃতীয় টেস্ট শুরুর সময় মাঠে যখন জাতীয় সংগীত বাজছিল, তখন চোখের জল সামলাতে পারেননি। মনে পড়ছিল বাবার কথা।
ছবি: Peter Dovgan/Uk Sports Pics Ltd/imago images
বোলিংয়ের নেতৃত্বে
ব্রিসবেনের টেস্ট মিলিয়ে মাত্র তিনটি টেস্টে খেললেন মোহাম্মদ সিরাজ। কিন্তু সেখানেই দেখা গেল, তিনি নটরাজনকে উদ্বুদ্ধ করছেন। পিঠ চাপড়ে দিচ্ছেন। পরামর্শ দিচ্ছেন। এই দায়িত্ববোধ বুঝিয়ে দিচ্ছে, তিনি কতটা পরিণত। (ছবিতে ব্রিসবেনে অভিষিক্ত নটরাজন)
ছবি: Tertius Pickard/AP Photo/picture alliance
আজিঙ্কা রাহানের ভরসা
প্রথম টেস্ট খেলে বিরাট কোহলি ভারতে ফিরে আসেন। তার জায়গায় অধিনায়কত্ব করেন আজিঙ্কা রাহানে। ঠান্ডা মাথার এই ক্রিকেটারও সমানে সিরাজকে উৎসাহিত করেছেন। সিরাজও হয়ে উঠেছেন তার বড় ভরসা।
ছবি: Tertius Pickard/AP Photo/picture alliance
টেস্টে পাঁচ উইকেট
ব্রিসবেন টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট পেয়েছেন সিরাজ। চার টেস্টের সিরিজে ইনিংসে পাঁচ উইকেট পাওয়া একমাত্র ভারতীয় তিনি৷ তিন টেস্ট খেলে সব মিলিয়ে পেয়েছেন ১৩টি উইকেট।
অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে পারফরম্যান্স বুঝিয়ে দিচ্ছে সিরাজ লম্বা রেসের ঘোড়া। একসময় ভারতের ক্রিকেটে দাপট ছিল উচ্চবিত্ত ও রাজা-মহারাজাদের। অনেক দিন হলো সেই ট্রেন্ড বদলেছে। আর এখন ক্রিকেটের মাঠ কাঁপাচ্ছেন খুব সাধারণ ঘর থেকে উঠে আসা সিরাজের মতো ছেলেরা।
ছবি: Darren England/Aap Image/ Reuters
9 ছবি1 | 9
ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার শূন্য রানে আউট হন। চা পানের বিরতিতে ইংল্যান্ডের স্কোর ছিল চার উইকেটে ৬৭। পরের পর্বে ছয় উইকেট তুলে নেয় ভারত। রুট ৩৩ রানে ফিরে যাওয়ার পর বোঝা যাচ্ছিল, ম্যাচ বাঁচানো শক্ত হবে ইংল্যান্ডের। তাই হলো। সিরাজ চারটি, বুমরা তিনটি, ইশান্ত দুইটি ও শামি একটি উইকেট পান। স্মরণীয় জয় তুলে নেয় ভারত।