জাবের আল-বকরের গ্রেপ্তার সম্ভব হয়েছে তিনজন সিরীয়র উদ্যোগে৷ জার্মানিতে অবস্থানকারী সিরীয়দের চোখে এই তিনজন আজ হিরো৷ সন্ত্রাসীর খোঁজে সিরীয়দের অনলাইন কমিউনিটিও অবদান রেখেছে৷
বিজ্ঞাপন
পুলিশ আল-বকরের দু'টি ছবিসহ ফেসবুকে যে পোস্ট দিয়েছিল, তা বহু ফেসবুক গ্রুপে শেয়ার করা হয়৷ ‘‘জুইরিশে গেমাইন্ডে ইন ডয়েচল্যান্ড'' বা ‘জার্মানির সিরীয় সম্প্রদায়' তাদের মধ্যে একটি৷ এই ফেসবুক পেজের অনুসরনকারী এক লক্ষ পঁচানব্বই হাজার৷
অপরদিকে ‘‘জার্মান লাইফস্টাইল জিএলএস'' নামের ফেসবুক গোষ্ঠীর নব্বই হাজার সদস্য জার্মানিতে সিরীয় উদ্বাস্তুদের সাহায্য করে থাকেন৷ জিএলএসও পুলিশের পোস্টটি শেয়ার করে বলেছে, ‘‘সিরীয় হিসেবে আমাদের সেই সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে লড়তে হবে, যারা তাদের সাহায্যকারীদের অমঙ্গল করতে চায়৷''
এই ধরনের একটি ফেসবুক পোস্ট পড়ে ‘মোহাম্মেদ' জানতে পারেন যে, তিনি ও তাঁর দুই বন্ধু যে সিরীয়টিকে রাত্রে তাদের বাসায় থাকতে দিয়েছেন, সে একজন ফেরারি, তার নাম আল-বকর এবং পুলিশ তাকে খুঁজছে৷ তিনজনে মিলে আল-বকরকে বেঁধে ফেলেন ও পুলিশকে খবর দেন৷ আল-বকরের গ্রেপ্তারের খবরে ‘জার্মানির সিরীয় সম্প্রদায়' তাদের ফেসবুক পোস্টে লেখে, ‘‘একজন সিরীয় মাথা ঠাণ্ডা রেখে সন্ত্রাসী জাবের আল-বকরকে ধরে ফেলেছেন... আসুন আমরা সিরীয়দের স্বাগত জানাই৷''
জার্মানিতে বসবাসকারী সিরীয়রা সোশ্যাল নেটওয়ার্কে যেমন তাদের হর্ষ প্রকাশ করছেন, তেমনই তারা আল-বকরের মতো ব্যক্তিদের উপর ক্ষিপ্ত, যারা তাদের আশ্রয় সন্ধানী দেশবাসীদের ‘নাম খারাপ' করছে৷ অবশ্য কেমনিৎস-লাইপজিগের ঘটনার অনেক আগে থেকেই জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের নিরাপত্তাগত পটভূমি আরো ভালোভাবে খুঁটিয়ে দেখা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে৷
২০১৫ সালে যখন উদ্বাস্তুরা বিপুল সংখ্যায় জার্মানিতে আসতে শুরু করেন, তখন জার্মান কর্মকর্তারা প্রায় নিরুপায় হয়েই সিরীয়, ইরাকি ও ইরিত্রিয়ান উদ্বাস্তুদের মৌখিক জিজ্ঞাসাবাদ বাদ দিয়ে তাদের জন্য শুধু একটি রেজিস্ট্রেশন ফর্ম চালু করেন৷ তার একটি ফল হয় এই যে, বহু মরোক্কান ও উত্তর আফ্রিকার অন্যান্য দেশ থেকে আগত উদ্বাস্তু সিরীয় হিসেবে নাম লেখাতে শুরু করেন৷ ফলে মৌখিক জিজ্ঞাসাবাদ আবার চালু করতে হয়৷ জাবের আল-বকর সিরীয় হিসেবে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর স্বীকৃতি পান ২০১৫ সালে৷
প্রতিবেদন: জাব্রিনা পাব্স্ট/এসি
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী
৮ তারকা যাঁরা একসময় শরণার্থী ছিলেন
সংগীত শিল্পী, অভিনেত্রী থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ - বিশ্বখ্যাত এমন অনেক তারকাকে নানা কারণে জীবনের একটি সময় শরণার্থীর জীবন বেছে নিতে হয়েছিল৷ ছবিঘরে থাকছে তাঁদের কয়েকজনের কথা৷
ছবি: Getty Images
মারলেনে ডিটরিশ
১৯০১ সালে জার্মানিতে জন্ম নেয়া ডিটরিশ গায়িকা ও অভিনেত্রী হিসেবে বেশ নাম কুড়িয়েছিলেন৷ ১৯৩০ সালে তিনি হলিউডে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান৷ সেখানে থাকলেও নাৎসি আমলের সমালোচনায় মুখর ছিলেন তিনি৷ ১৯৩৯ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি মার্কিন বাহিনীর জন্য গান গেয়েছেন৷ নাৎসি সরকার জার্মানিতে তাঁর মুভি প্রদর্শনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হেনরি কিসিঞ্জার
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জার জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যে জন্মেছিলেন৷ নাৎসি সরকারের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ১৯৩৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schiefelbein
মেডেলিন অলব্রাইট
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অলব্রাইট চেক প্রজাতন্ত্রে জন্মগ্রহণ করেছিলেন৷ ১৯৪৮ সালে সে দেশে কমিউনিস্ট সরকার ক্ষমতায় গেলে তিনি তাঁর পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Loeb
আলবার্ট আইনস্টাইন
জার্মান ইহুদি এই নোবেল বিজয়ী যখন ১৯৩৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন তখনই বুঝতে পারেন যে, তাঁর পক্ষে আর জার্মানি ফেরা সম্ভব নয়৷ কারণ ঐ বছরই হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর হন৷ ফলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন এবং ১৯৪০ সালে সে দেশের নাগরিকত্বও গ্রহণ করেন৷
ছবি: Imago/United Archives International
গেওর্গ ভাইডেনফেল্ড
ইহুদি এই মানুষটির জন্ম অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়, ১৯১৯ সালে৷ নাৎসিরা যখন অস্ট্রিয়া দখল করে নিলে তিনি লন্ডনে পাড়ি জমান৷ সেখানে তিনি একটি প্রকাশনা সংস্থা চালু করেন৷ ইসরায়েলের প্রথম প্রেসিডেন্টের ‘চিফ অফ স্টাফ’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N.Bachmann
বেলা বার্টোক
হাঙ্গেরির কম্পোজার, পিয়ানোবাদক ও লোক সংগীত সংগ্রাহক বার্টোক ইহুদি ছিলেন না৷ কিন্তু নাৎসিদের হাতে ইহুদিদের নিপীড়িত হওয়ার বিষয়টির ঘোর সমালোচক ছিলেন তিনি৷ ফলে ১৯৪০ সালে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে হয়৷
ছবি: Getty Images
ইসাবেল আলেন্দে
১৯৭৩ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে চিলির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সালভেদর আলেন্দেকে হটিয়ে দেয়া হয় এবং সেই সময়ই তাঁর মৃত্যু হয়৷ এরপর একসময় আলেন্দের এক কাজিনের মেয়ে ইসাবেলকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়৷ তা থেকে বাঁচতে প্রথমে ভেনেজুয়েলায়, তারপর যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান ইসাবেল৷ তাঁর লেখা কয়েকটি উপন্যাস আন্তর্জাতিকভাবে বেশ প্রশংসিত হয়েছে৷
ছবি: Koen van Weel/AFP/Getty Images
মিরিয়াম মাকেবা
‘মামা আফ্রিকা’ নামে পরিচিত দক্ষিণ আফ্রিকার সংগীত শিল্পী মাকেবা একবার গান গাইতে যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিলেন৷ সেই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার বর্ণবাদবিরোধিতার অভিযোগে তাঁর পাসপোর্ট বাতিল করে দেয়৷ ফলে তিনি আর দেশে ফিরতে পারেননি৷ কয়েক দশক পর অবস্থার পরিবর্তন হলে দেশে ফিরে যান মাকেবা৷