লাখের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীর জার্মানি থাকার সুযোগ
৭ জুলাই ২০২২
নিয়ম শিথিল করে এক লাখেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীকে স্থায়ীভাবে জার্মানিতে থাকার সুযোগ দিতে চলেছে ওলাফ শলৎস সরকার৷ তবে অভিবাসীদের অধিকার সংস্থাগুলো মনে করছে নিয়ম আরো শিথিল করা উচিত৷
বিজ্ঞাপন
নির্বাচন-পূর্ব অঙ্গীকার অনুযায়ী আরো বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীর জার্মানিতে থাকার সুযোগ সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু করেছে ওলাফ শলৎস সরকার৷ বুধবার ‘ডুলডুং', অর্থাৎ ‘পর্যাপ্ত' সহনশীলতা বজায় রেখে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে জার্মানিতে থাকছেন, এমন মানুষদের জন্য স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ দেয়া এক প্যাকেজ অনুমোদন করেছে সরকার৷ ‘ডুলডুং' হচ্ছে আশ্রয়ের আবেদন খারিজ হয়েছে, অথচ বড় কোনো সমস্যার কারণে দেশে ফিরতে পারছেন না, এমন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সাময়িকভাবে থাকার অনুমতিপত্র৷ নিজের দেশে যুদ্ধ চলছে বা সেখানে ফিরলে মৃত্যু-ঝুঁকি অথবা গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, অথবা জার্মানিতে পড়াশোনা করছেন বা কোনো প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন- এমন ব্যক্তিদের, অথবা অন্তসত্ত্বা বা জটিল রোগে আক্রান্তদের সাধারণত এ ধরনের অনুমতিপত্র দেয়া হয়৷ এ অনুমতির মেয়াদ বিশেষ ক্ষেত্রে বারবার বাড়ানো গেলেও এতে চাকরি করার স্বীকৃত কোনো অধিকার থাকে না৷ চাইলে যে কোনো সময় দেশে ফেরানো যায় ডুলডুংধারীদের৷নতুন প্যাকেজ কার্যকর হলে এক লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি ডুলডুংধারী অভিবাসনপ্রত্যাশীর জার্মানিতে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ হবে৷এ সুখবর জানিয়ে জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ন্যান্সি ফেজার টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আমরা বৈচিত্র্যময় অভিবাসনের দেশ৷ এখন আমরা অন্তর্ভুক্তিকরণেও আারো ভালো হতে চাই৷'' তিনি জানান, নতুন প্যাকেজ অনুযায়ী, (অন্তত ২০২২ সালের পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত) যাদের পাঁচ বছরের ডুলডুং রয়েছে, তাদেরকে প্রাথমিকভাবে জার্মানিতে এক বছর থাকার অনুমতিপত্র (রেসিডেন্স পারমিট) দেয়া হবে৷ ওই এক বছরের মধ্যে জার্মান ভাষা শিখে এবং চাকরি জোগাড় করে নিজের এবং পরিবারের (যদি থাকে) খরচ বহনের সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে জার্মানিতে থাকার সদিচ্ছার প্রমাণ রাখতে পারলে তাদের স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি দেয়া হবে৷তবে বড় ধরনের অপরাধে জড়িত ব্যক্তি, ভুল পরিচয়ে আবেদন করা ব্যক্তি বা একাই অনেক আবেদন করেছেন এমন ব্যক্তিদের এ সুযোগ দেয়া হবে না৷
ইউরোপে বৈধ অভিবাসন: যে তথ্যগুলো জানা দরকার
উন্নত জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থান, উচ্চশিক্ষা, আশ্রয়- নানা কারণেই অনেকের স্বপ্নের গন্তব্য ইউরোপ৷ প্রতিবছর অনেক মানুষ ইইউভুক্ত ২৭টি দেশে বসবাস ও কাজের সুযোগ পান৷ অন্যদিকে অবৈধভাবে আসা বড় একটি অংশকে ফেরতও পাঠানো হয়৷
ছবি: DW/Ani Ruci
অভিবাসীর সংখ্যা
দুই কোটির বেশি অভিবাসী মানুষের বসবাস ইউরোপের ২৭টি দেশে৷ এ অঞ্চলের শ্রমবাজারে নিযুক্ত রয়েছেন ৮৮ লাখ৷ ২০১৯ সালে ইইউ সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে প্রথমবার রেসিডেন্স পারমিট বা বসবাসের অনুমতি পাওয়া তৃতীয় দেশের মানুষের সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
কারা অনুমতি পান
৩৮ ভাগ অভিবাসী রেসিডেন্স পারমিট পেয়েছেন পরিবারের কোনো সদস্য ইউরোপে থাকার কারণে৷ কাজের সূত্রে থাকার অনুমতি পেয়েছেন ১৭ ভাগ৷ আশ্রয়াপ্রার্থী ছিলেন নয় ভাগ৷ শিক্ষাগত কারণে সুযোগ পেয়েছেন চার ভাগ৷ বাকি ৩২ ভাগ অন্যান্য৷
ছবি: Wolfgang Kumm/dpa/picture alliance
অভিবাসীদের দেশ
২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো রেসিডেন্স পারমিট পাওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন ইউক্রেনের নাগরিক৷ প্রথম দশের মধ্যে বাকিরা যথাক্রমে মরক্কো, চীন, ব্রাজিল, সিরিয়া, রাশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও বেলারুশের নাগরিক৷
ছবি: DW/V. Muscella
কর্মসংস্থান
তৃতীয় কোনো দেশ থেকে ইউরোপে চাকুরি নিয়ে আসা দক্ষ কর্মীরা পান ব্লু কার্ড৷ এটি নির্ভর করে চাকরির চুক্তিপত্র, পেশাগত যোগ্যতা ও বেতনের উপরে৷ ২০১৯ সালে ৩৭ হাজার বিদেশি নাগরিক ব্লু কার্ড পেয়েছেন ইউরোপে৷ এর বাইরে প্রতি বছর এক লাখের বেশি মানুষ মৌসুমি কর্মী হিসেবে বিভিন্ন খাতে কাজের জন্য আসেন৷ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও কারখানার কর্মী বা স্বনিয়োজিত কাজেও ইউরোপে বসবাসের সুযোগ পান অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Karmann
পারিবারিক পুনর্মিলন
কোনো অভিবাসী ইউরোপে বৈধভাবে বসবাস ও নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদেরও আনতে পারেন৷ স্বামী বা স্ত্রী, অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান এবং কিছু ক্ষেত্রে অবিবাহিত সঙ্গী, প্রাপ্তবয়স্ক নির্ভরশীল সন্তান, নির্ভরশীল বাবা-মা, দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানিও অনুমতি পেয়ে থাকেন৷ নির্দিষ্ট দেশে পৌঁছানোর পর তাদেরকে রেসিডেন্স পারমিট নিতে হয়৷ শিক্ষা, কর্মসংস্থানের সুযোগ কিংবা প্রশিক্ষণও নিতে পারেন তারা৷
ছবি: picture-alliance/W. Rothermel
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা
এজন্য আগ্রহীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তির অনুমতি, হেলথ ইন্সুরেন্স, অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে অভিভাবকের অনুমতি, কিছু ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণসহ প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ করে ইউরোপের কোনো দেশে আসার আবেদন করতে পারেন৷ কিছু দেশে পড়াশোনার টিউশন ফি নেই, আছে বৃত্তির সুযোগও৷ এছাড়াও খরচ মেটানোর জন্য শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা কাজের সুযোগ রয়েছে৷ পড়াশোনা বা গবেষণা শেষে কর্মসংস্থানের জন্য মেলে নয় মাস সময়৷
ছবি: Getty Images/J. Juinen
দীর্ঘমেয়াদী রেসিডেন্স
ইউরোপের কোনো দেশে টানা পাঁচ বছর অবস্থানের পর নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে অভিবাসীরা দীর্ঘ মেয়াদে বসবাসের অনুমতি পেতে পারেন৷ এর ফলে কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, সামাজিক নিরাপত্তা ও সহায়তা এবং পণ্য ও সেবাপ্রাপ্তির মতো কিছু ক্ষেত্রে ইউরোপের নাগরিকদের মতোই অধিকার ভোগ করতে পারবেন৷ তবে এক্ষেত্রে আলাদা অভিবাসন ও আশ্রয় নীতি অনুসরণ করে আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্ক৷
ছবি: picture-alliance/Geisler-Fotopress
আশ্রয়প্রার্থী
২০১৯ সালে প্রায় সাত লাখ মানুষ ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছেন৷ প্রথমবারের মতো যারা এমন আবেদন করেছেন, তাদের ১২ ভাগই সিরিয়ার নাগরিক৷ আফগানিস্তানের আট দশমিক ছয় ভাগ, ভেনেজুয়েলার সাত দশমিক এক ভাগ, কলম্বিয়ার পাঁচ ভাগ, পাকিস্তানের ছিলেন প্রায় চার ভাগ৷ ঐ বছর দুই দশমিক এক ভাগ বা ১৩ হাজার ১৯০টি আবেদন পড়েছিল বাংলাদেশিদের৷ ২০২০ সালে প্রথম দশ মাসে ইউরোপে মোট তিন লাখ ৯০ হাজার মানুষ আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছেন৷
ছবি: AFP
অবৈধদের ফেরত
২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ১৪ হাজার ৩০০ জন অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন৷ এটি তার আগের বছরের একই সময়ে চেয়ে ১০ ভাগ কম৷ যারা এভাবে আসেন, তাদের একটি বড় অংশকে এক পর্যায়ে ফেরত পাঠানো হয়৷ ২০১৯ সালে চার লাখ ৯১ হাজার জনকে ইউরোপ ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল৷ এক লাখ ৪২ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/G. Papaniko
9 ছবি1 | 9
ক্ষমতাসীন জোট সরকারের শরিক দলগুলোর নেতারা প্যাকেজটির প্রশংসা করলেও সিডিইউ দলের মুখপাত্র আলেক্সান্দার থ্রম- এর সমলোচনা করে বলেছেন, ‘‘এর মাধ্যমে জোট সরকার অভিবাসন আইনকে খাটো করছে৷'' তবে গ্রিন পার্টির ওমিদ নুরিপুর ফুংকে নেটওয়ার্ককে বলেন, এর মাধ্যমে জার্মানিতে দক্ষ কর্মীর যে অভাব রয়েছে, তা অনেকখানি পূরণ হবে৷
অভিবাসনসংস্থারপ্রত্যাশা
শলৎস সরকারের উদ্যোগকে শরণার্থীদের অধিকার সংক্রান্ত সংস্থা প্রো আজিল স্বাগত জানিয়েছে৷ তবে সংস্থার ইউরোপীয় সম্পর্ক বিষয়ক পরিচালক কার্ল কপ মনে করেন, নতুন প্রস্তাবনায় এক বছরের জন্য ‘রেসিডেন্স পারমিট' দিয়ে ওই সময়ের মধ্যে জার্মানিতে থাকা এবং একীভূত হওয়ার সদিচ্ছা প্রমাণের যে শর্ত দেয়া হয়েছে, তা খুব কঠিন৷বিশেষ করে ওই সময়ের মধ্যে চাকরি জোগাড় করে নির্দিষ্ট আয়ের সক্ষমতা দেখানোর শর্তটির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানের যে অর্থনৈতিক সংকট চলছে, কেউ তো এ কারণেও চাকরি পেতে ব্যর্থ হতে পারে!'' এছাড়া জার্মানিতে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন সব মানুষের ওপর থেকে যখন-তখন দেশে ফিরিয়ে দেয়ার নিয়ম প্রত্যাহার করার বিষয়টিও বিবেচনা করে দেখা উচিত মনে করেন কপ৷
তবে ইন্টিগ্রেশন কমিশনার আলাবালি-রাদোভান বলেছেন, বর্তমান প্যাকেজটি ‘প্রথম মাইলস্টোন', চলতি বছরের শেষ নাগাদ অভিবাসীদের জন্য চাকরির সুযোগ অধিকতর উন্মুক্ত করাসহ আরো কিছু নতুন নিয়েম কার্যকর হতে পারে৷