1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লাঠি হাতে নতুন লড়াইয়ে জুলু মেয়েরা

লিওনি মার্চ/দেবারতি গুহ২৫ অক্টোবর ২০১২

জুলু জনগোষ্ঠী বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাহারি পোশাকের কৃষ্ণাঙ্গ কিছু মানুষ৷ তাঁদের মুখে মুখোশ, হাতে লাঠি আর কন্ঠে গান৷ অথবা কিছু অর্ধবসনা নারী, যাঁরা আজও পুরুষতান্ত্রিক নির্মমতার শিকার৷

ছবি: Alexander Joe/AFP/Getty Images

জুলু৷ ইতিহাস বলে, তাঁদের উৎপত্তি দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়া-জুলু নাটাল প্রদেশের একটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী থেকে৷ জাতির জনক জুলু কান্টোমভেলা৷ ১৭০৯ সালে জুলুরা আত্মপ্রকাশ করে মূলত তাঁর কারণেই৷ উনবিংশ শতাব্দীতে জুলুদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়৷ শোনা যায়, কৃষ্ণকায় জুলুদের সে সময় নেহাতই দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখা হতো৷ করা হতো অকথ্য অত্যাচার৷

বর্তমানে অবশ্য তাঁরা দেশটির সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃত এবং তাঁদের অধিকারও সংরক্ষিত৷ অন্ততপক্ষে খাতায়-কলমে৷ দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতিতে আজ খুব উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছেন জুলুরা৷ এই যেমন জ্যাকব জুমা৷ এখন তো তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট!

জুলু জনগোষ্ঠীর এমন অগ্রগতিতে নেলসন ম্যান্ডেলার বর্ণবাদ বিরোধী সংগ্রামের অবদান অনেক৷ কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে? আজও যে অসংখ্য জুলু নারী পুরুষতন্ত্রের নির্মমতার শিকার৷ পুরুষের হাতে নিগৃহীত৷ তবে সময় বোধহয় বদলাচ্ছে৷ জুলু নারীরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বৈরিতার একটা শেষ দেখতে চান এবার৷ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন হাতের লাঠিকে!

আজও অসংখ্য জুলু নারী পুরুষতন্ত্রের নির্মমতার শিকার (ফাইল ফটো)ছবি: picture-alliance/Global Picture Agency

এই লাঠির সাহায্যেই এক সময় জুলুরা বর্ণবাদের বিরুদ্ধেও লড়েছে৷ সেটা ছিল শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গদের লড়াই৷ তবে আজ, নিজ দেশে, নিজ সমাজেই নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছেন নোন্হলে জুঙ্গুর মতো অসংখ্য নারী৷ বলতে গেলে খেলার ছলেই তাঁরা হাতে তুলে নিয়েছেন লাঠি, জুলু ভাষায় যাকে বলে ‘ইন্ডুকু'৷ জুঙ্গুর নিজের ভাষায়, ‘‘আমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, কেন আমি ‘ইন্ডুকু' বেছে নিলাম....কারণটা স্পষ্ট৷ এটা প্রথম থেকেই পৌরুষত্বের অঙ্গ ছিল৷ পুরুষরা এই লাঠি হাতে নিজেদের ক্ষমতাটা জাহির করত৷ রাজা শাকার আমল থেকে চলছে এই প্রথা৷ পরে এটা খেলা হিসেবে স্বীকৃতি পায়৷ আর আমি প্রথমবার খেলেই এর প্রেমে পড়ে যাই৷''

মেয়েদের হাতের এই লাঠি বা ‘ইন্ডুকু' যে অনেক জুলু পুরুষের ভ্রূকুঞ্চনের কারণ হচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য৷ তবে মেয়েদের এই লাঠি-খেলা দেখে তাঁদের প্রতি পুরুষদের মনে যে একটা ভয় বা ক্ষীণ হলেও সম্ভ্রম কাজ করছে না – সেটাই বা কে হলফ করে বলতে পারে?

ডারবান শহরের কোয়া মাশু অঞ্চলে একটা খেলার মাঠে লাঠি-খেলা চলছে৷ খেলছেন ২৪ বছরের সবু ড্লামিনি৷ দু'হাত লম্বা ‘ইন্ডুকু'টি তিনি ছুড়ে দিচ্ছেন আকাশে৷ পর মুহূর্তেই সেটা এক লাফে লুফে নিচ্ছেন, নাচের মতো নিজের প্রতিপক্ষকে বৃত্তাকারে ঘুরে এসে আবারো দাঁড়াচ্ছেন আগের জায়গায়৷ চমৎকার!

Week 43/12 Women2: Young Zulu women takes up 'Stockkampf' - MP3-Mono

This browser does not support the audio element.

মজার বিষয়, কোয়া মাশু ডারবানের এমন একটা অঞ্চল যেখানে অপরাধমূলক রাহাজানি, মারামারি, শ্লীলতাহানী, এমনকি বাড়ি বাড়ি নারীর ওপর অত্যাচারের মতো অপরাধমূলক কাজও নতুন কিছু নয়৷ অথচ শহরের ঠিক এই জায়গায় দাঁড়িয়েই এমন লড়াকু খেলায় মেতে উঠেছেন জুঙ্গু এবং সবুর মতো মেয়েরা৷ সবুর কথায়, ‘‘খেলাটা মেয়েরা এখন ছেলেদের মতোই ভালো খেলছে৷ ফলে আমাদের সঙ্গে ছেলেরা এখন বেশ সম্মানের সঙ্গে মাথা নীচু করে কথা বলে৷ হবে না? তারা এটা ঠিকই বুঝতে পেরেছে যে আমরাও এখন নিজেদের রক্ষা করতে পারি৷ এই তো, সেদিনই একটা ছেলে আমাকে রাস্তায় বেকায়দায় ফেলতে চাইছিল৷ হয়ত তার উদ্দেশ্য ছিল আরো ভয়ঙ্কর কিছু করার৷ কিন্তু আমি ছাড়ি নি৷ লাঠির এমন একটা বারি মারি যে সে সঙ্গে সঙ্গেই কুপোকাত৷ এরপর থেকে আর সে আমায় বিরক্ত করতে আসে না৷''

ঐতিহ্যবাহী একটি লাঠি-খেলার এমন ব্যবহার – ভাবা যায়? জুঙ্গু এবং সবুরাদের একটাই আশা – মেয়েরা যেন আরো বেশি হারে এগিয়ে আসেন লাঠি-খেলায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন লাঠি হাতে, ‘ইন্ডুকু' হাতে তাঁরা যেন ছেলেদের পাশাপাশি মাথা উঁচু করে এগিয়ে যেতে পারেন ভবিষ্যতের দিকে৷ খেলার মঞ্চে তো বটেই, জীবনের মঞ্চেও এই ‘ইন্ডুকু'-ই তাঁদের সাহস জোগাবে৷ বাড়াবে আত্মমর্যাদা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ