লাদাখ সংঘাতের নথি দেখিয়ে সরকারকে প্রশ্ন করছে বিরোধীরা। তাই ২০১৭ সাল থেকে সমস্ত নথি ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে দিল কেন্দ্র।
বিজ্ঞাপন
লাদাখ পরিস্থিতি কি আরও জটিল হয়েছে? ভারতে বহু বিশেষজ্ঞই নতুন করে এই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন কারণ, ২০১৭ সাল থেকে ভারত-চীন সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্ত রিপোর্ট প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ওয়েবসাইট থেকে তুলে নিয়েছে সরকার। কিছু দিন আগেই লাদাখের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রতিরক্ষামন্ত্রকের ওয়েবসাইট থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়েছিল। এ বার ২০১৭ সাল থেকে সমস্ত নথি তুলে নেওয়া হলো।
প্রতিরক্ষামন্ত্রকের সূত্র অবশ্য ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, সাময়িক সময়ের জন্যই সমস্ত নথি তুলে নেওয়া হয়েছে। নথিগুলিকে পরিবর্ধন করে ফের সাইটে আপলোড করা হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একবার যে নথি সাইটে দেওয়া হয়, তা তুলে নিয়ে কি এ ভাবে পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা যায়? তথ্য জানার অধিকার আইনেই সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয়েও জানার অধিকার আছে সাধারণ মানুষের। সে কারণেই গোপন নথি ছাড়া সব কিছুই প্রতিরক্ষামন্ত্রকের ওয়েব সাইটে আপলোড করা হয়। ২০১৭ থেকে সাম্প্রতিক গন্ডগোলের আগে পর্যন্ত বিভিন্ন নথিতে ভারত-চীন সীমান্তের উল্লেখ চারবার করা হয়েছিল। তবে গত অগাস্টের রিপোর্টে বিস্তারিত ভাবে ভারত-চীন সংঘাতের বিষয়ে বলা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, ৫ মে-র পর থেকেই চীনের সেনা স্থান পরিবর্তন করে। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-ও বলেছেন, চীনের সেনা অবস্থান পরিবর্তন করে ভারতের দিকে এগিয়েছে। তবে রাজনাথ একই সঙ্গে বলেছেন, চীনের সেনা এলএসি পার করেনি।
চীন-ভারত: সামরিক শক্তিতে কে কত এগিয়ে
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সেনাবাহিনীকে বলেছেন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে৷ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী ভারতও প্রস্তুত৷ যুদ্ধ কখনো কাম্য নয়৷ তবু দেখে নেয়া যাক সামরিক শক্তিতে চীন আর ভারতের বর্তমান অবস্থা৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
পিডাব্লিউআর ব়্যাঙ্কিং
সামরিক শক্তির এই ব়্যাঙ্কিংয়ে ভারতের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে আছে চীন৷ যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার ঠিক পরে, অর্থাৎ তিন নাম্বারে আছে চীন আর ভারত আছে চার নাম্বারে৷
ছবি: APTN
সক্রিয় সেনাসদস্য
১৩৮ টি দেশের মধ্যে পিআরডাব্লিউ ইনডেক্সে তৃতীয় স্থানে থাকা চীনের মোট ২১ লক্ষ ২৩ হাজার সেনাসদস্য রয়েছে, ভারতের রয়েছে ১৪ লক্ষ ৪৪ হাজার সেনাসদস্য৷ তবে রিজার্ভ সৈন্যর সংখ্যায় ভারত এগিয়ে৷ চীনের পাঁচ লাখ ১০ হাজারের বিপরীতে তাদের রয়েছে ২১ লাখ রিজার্ভ সৈন্য৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Asfouri
প্রতিরক্ষা বাজেট
প্রতিরক্ষা খাতে চীনের বাজেট ২৩৭০ কোটি ডলারের এবং ভারতের ৬১০ কোটি ডলারের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Goya
এয়ারক্রাফট
এখানেও চীন এগিয়ে৷ চীনের ৩২১০টির বিপরীতে ভারতের রয়েছে ২১২৩টি এয়ারক্রাফট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Li Jianshu
যুদ্ধজাহাজ
চীনের ৭৭৭টি আর ভারতের রয়েছে ২৮৫টি যুদ্ধজাহাজ৷
ছবি: Getty Images/AFP
যুদ্ধবিমান
চীনের যুদ্ধবিমান ভারতের দ্বিগুণেরও বেশি৷ চীনের ১২৩২টি আর ভারতের ৫৩৮টি৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: Imago-Images/StockTrek Images
হেলিকপ্টার
চীনের আছে ৯১১টি হেলিকপ্টার আর ভারতের ৭২২টি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/J. Singh
ট্যাঙ্ক
ভারতের ট্যাঙ্ক চীনের চেয়ে অনেক বেশি৷ চীনের আছে ৩৫০০টি ট্যাঙ্ক আর ভারতের ৪২৯২টি৷ ওপরে চীন, রাশিয়া ও ইরানের যৌথ মহড়ার ছবি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Grits
সাঁজোয়া যান
চীনের সাঁজোয়া যানবাহনের সংখ্যা ৩৩ হাজার, ভারতের আট হাজার ৬৮৬৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/Z. Hesong
স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি
এখানে দু দেশের তুলনাই হয় না৷ চীনের আছে ৩৮০০, ভারতের মাত্র ২৩৫৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
ফিল্ড আর্টিলারি
এখানে ভারত কিছুটা এগিয়ে৷ চীনের ৩৮০০-র বিপরীতে তাদের রয়েছে ৪০৬০টি ফিল্ড আর্টিলারি৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
রকেট প্রজেক্টর
চীনের ২৬৫০, ভারতের ২৬৬৷ সুতরাং এখানে চীন প্রায় দশগুণ এগিয়ে৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
সাবমেরিন
সাবমেরিনের সংখ্যার দিক থেকেও ভারত অনেক পিছিয়ে৷ চীনের ৭৪টির বিপরীতে ভারতের আছে ১৬টি সাবমেরিন৷
ছবি: Reuters/S. Andrade
বিমানবাহী জাহাজ
চীনের ২টি, ভারতের ১টি৷
ছবি: picture-alliance/newscom/S. Shaver
ডেস্ট্রয়ার
চীনের ৩৬টি, অন্যদিকে ভারতের ১০টি৷
ছবি: picture-alliance/Imagechina
ফ্রিগেট
চীনের ৫২, ভারতের তার ঠিক চার ভাগের এক ভাগ, অর্থাৎ ১৩টি৷
ছবি: AFP/Iranian Army office
রণতরি
রণতরি চীনের ৫০টি, ভারতের ১৯টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Asfouri
উপকূলীয় টহল
চীনের ২২০, ভারতের ১৩৯৷
ছবি: picture-alliance/Imaginechina/Meng Zhongde
বিমানবন্দর
চীনের আছে মোট ৫০৭টি বিমানবন্দর আর ভারতের ৩৪৭টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Baker
নৌবন্দর এবং টার্মিনাল
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীন প্রায় সব জায়গার মতো এখানেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশের চেয়ে এগিয়ে৷ চীনের২২টির বিপরীতে তাদের রয়েছে মোট ১৩টি বন্দর ও টার্মিনাল৷
ছবি: picture-alliance/Costfoto/Yu Fangping
ভারতের বহরে রাফাল
২০১৬ সালে ফ্রান্সে গিয়ে রাফাল যুদ্ধ বিমান চুক্তিতে সই করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোট ৩৬টি বিমান ফ্রান্সের থেকে কেনার চুক্তি হয়েছিল। এরমধ্যে বুধবার ভারতে পৌঁছেছে নতুন পাঁচটি যুদ্ধ বিমান। সেগুলোকে লাদাখে পাঠানোর কথা রয়েছে৷ চীন-ভারত সংঘাতের কারণে আপাতত সেখানেই রাখা হবে বিমানগুলিকে। এরপর আসবে হ্যামার মিসাইলও।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Indian Air Force
21 ছবি1 | 21
বিতর্ক এখানেই। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সম্প্রতি প্রতিরক্ষামন্ত্রকের ওয়েবসাইটের একটি নথি চিহ্নিত করে প্রশ্ন করেছিলেন, 'প্রধানমন্ত্রী কি মিথ্যে বলছেন?' কেন এই মিথ্যের প্রসঙ্গ আসছে? ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সালের অগাস্ট পর্যন্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রক যে নথি ওয়েবসাইটে দিয়েছিল, তা থেকেই পরিষ্কার, চীনের সেনা ভারতের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী বলছেন, এলএসি পার করে চীনের সেনা ঢুকতে পারেনি। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। ফলে বিতর্ক এড়াতেই সমস্ত নথি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
ভারতীয় সেনার এক উচ্চ পদস্থ অফিসার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, লাদাখ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না মূলত দুইটি কারণে। দুই দেশই নিজেদের পূর্ব অবস্থান থেকে এগিয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্ট দখল করেছে। দুই দেশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার ধারণা ভিন্ন। ভারত যা নিজের এলাকা বলে মনে করে, চীন তা করে না। ফলে, সমাধানসূত্র তৈরি হচ্ছে না।
২০১৭ সালে ডোকালামে ৭২ দিন স্ট্যান্ড অফের পরে সমাধান সূত্র মিলেছিল। লাদাখে বহু মাস পেরিয়ে গিয়েছে কিন্তু সমাধান সূত্র মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে বিরোধীরা বার বার প্রশ্ন তুলছে। সে কারণেই নথি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।