লাদাখ প্রসঙ্গে বৈঠক করলেন ভারত ও চীনের বিদেশমন্ত্রী। তবে সমাধানসূত্র নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বিভিন্ন মহলে।
বিজ্ঞাপন
চীন-ভারত: সামরিক শক্তিতে কে কত এগিয়ে
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সেনাবাহিনীকে বলেছেন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে৷ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী ভারতও প্রস্তুত৷ যুদ্ধ কখনো কাম্য নয়৷ তবু দেখে নেয়া যাক সামরিক শক্তিতে চীন আর ভারতের বর্তমান অবস্থা৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
পিডাব্লিউআর ব়্যাঙ্কিং
সামরিক শক্তির এই ব়্যাঙ্কিংয়ে ভারতের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে আছে চীন৷ যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার ঠিক পরে, অর্থাৎ তিন নাম্বারে আছে চীন আর ভারত আছে চার নাম্বারে৷
ছবি: APTN
সক্রিয় সেনাসদস্য
১৩৮ টি দেশের মধ্যে পিআরডাব্লিউ ইনডেক্সে তৃতীয় স্থানে থাকা চীনের মোট ২১ লক্ষ ২৩ হাজার সেনাসদস্য রয়েছে, ভারতের রয়েছে ১৪ লক্ষ ৪৪ হাজার সেনাসদস্য৷ তবে রিজার্ভ সৈন্যর সংখ্যায় ভারত এগিয়ে৷ চীনের পাঁচ লাখ ১০ হাজারের বিপরীতে তাদের রয়েছে ২১ লাখ রিজার্ভ সৈন্য৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Asfouri
প্রতিরক্ষা বাজেট
প্রতিরক্ষা খাতে চীনের বাজেট ২৩৭০ কোটি ডলারের এবং ভারতের ৬১০ কোটি ডলারের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Goya
এয়ারক্রাফট
এখানেও চীন এগিয়ে৷ চীনের ৩২১০টির বিপরীতে ভারতের রয়েছে ২১২৩টি এয়ারক্রাফট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Li Jianshu
যুদ্ধজাহাজ
চীনের ৭৭৭টি আর ভারতের রয়েছে ২৮৫টি যুদ্ধজাহাজ৷
ছবি: Getty Images/AFP
যুদ্ধবিমান
চীনের যুদ্ধবিমান ভারতের দ্বিগুণেরও বেশি৷ চীনের ১২৩২টি আর ভারতের ৫৩৮টি৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: Imago-Images/StockTrek Images
হেলিকপ্টার
চীনের আছে ৯১১টি হেলিকপ্টার আর ভারতের ৭২২টি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/J. Singh
ট্যাঙ্ক
ভারতের ট্যাঙ্ক চীনের চেয়ে অনেক বেশি৷ চীনের আছে ৩৫০০টি ট্যাঙ্ক আর ভারতের ৪২৯২টি৷ ওপরে চীন, রাশিয়া ও ইরানের যৌথ মহড়ার ছবি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Grits
সাঁজোয়া যান
চীনের সাঁজোয়া যানবাহনের সংখ্যা ৩৩ হাজার, ভারতের আট হাজার ৬৮৬৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/Z. Hesong
স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি
এখানে দু দেশের তুলনাই হয় না৷ চীনের আছে ৩৮০০, ভারতের মাত্র ২৩৫৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
ফিল্ড আর্টিলারি
এখানে ভারত কিছুটা এগিয়ে৷ চীনের ৩৮০০-র বিপরীতে তাদের রয়েছে ৪০৬০টি ফিল্ড আর্টিলারি৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
রকেট প্রজেক্টর
চীনের ২৬৫০, ভারতের ২৬৬৷ সুতরাং এখানে চীন প্রায় দশগুণ এগিয়ে৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
সাবমেরিন
সাবমেরিনের সংখ্যার দিক থেকেও ভারত অনেক পিছিয়ে৷ চীনের ৭৪টির বিপরীতে ভারতের আছে ১৬টি সাবমেরিন৷
ছবি: Reuters/S. Andrade
বিমানবাহী জাহাজ
চীনের ২টি, ভারতের ১টি৷
ছবি: picture-alliance/newscom/S. Shaver
ডেস্ট্রয়ার
চীনের ৩৬টি, অন্যদিকে ভারতের ১০টি৷
ছবি: picture-alliance/Imagechina
ফ্রিগেট
চীনের ৫২, ভারতের তার ঠিক চার ভাগের এক ভাগ, অর্থাৎ ১৩টি৷
ছবি: AFP/Iranian Army office
রণতরি
রণতরি চীনের ৫০টি, ভারতের ১৯টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Asfouri
উপকূলীয় টহল
চীনের ২২০, ভারতের ১৩৯৷
ছবি: picture-alliance/Imaginechina/Meng Zhongde
বিমানবন্দর
চীনের আছে মোট ৫০৭টি বিমানবন্দর আর ভারতের ৩৪৭টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Baker
নৌবন্দর এবং টার্মিনাল
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীন প্রায় সব জায়গার মতো এখানেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশের চেয়ে এগিয়ে৷ চীনের২২টির বিপরীতে তাদের রয়েছে মোট ১৩টি বন্দর ও টার্মিনাল৷
ছবি: picture-alliance/Costfoto/Yu Fangping
ভারতের বহরে রাফাল
২০১৬ সালে ফ্রান্সে গিয়ে রাফাল যুদ্ধ বিমান চুক্তিতে সই করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোট ৩৬টি বিমান ফ্রান্সের থেকে কেনার চুক্তি হয়েছিল। এরমধ্যে বুধবার ভারতে পৌঁছেছে নতুন পাঁচটি যুদ্ধ বিমান। সেগুলোকে লাদাখে পাঠানোর কথা রয়েছে৷ চীন-ভারত সংঘাতের কারণে আপাতত সেখানেই রাখা হবে বিমানগুলিকে। এরপর আসবে হ্যামার মিসাইলও।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Indian Air Force
21 ছবি1 | 21
প্রায় দু'ঘণ্টা বৈঠকের পর কিছুটা হলেও মতৈক্যে এলো ভারত এবং চীন। বৃহস্পতিবার মস্কোয় মুখোমুখি বৈঠকে বসেছিলেন ভারত এবং চীনের বিদেশমন্ত্রী। সূত্র জানাচ্ছে, সেই বৈঠকে পাঁচটি পয়েন্ট স্থির করা হয়েছে। ওই পাঁচ পয়েন্টের মাধ্যমেই সীমান্তে ভারত ও চীনের সংঘাত কমানোর চেষ্টা হবে বলে দুই দেশের প্রতিনিধি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এর আগেও দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক বৈঠক হয়েছিল। সেখানেও ডি এসকালেশন বা সৈন্য পিছিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটেছে। এ দিনের বৈঠকেও যে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা পুরনো ালোচনার সূত্র ধরেই।
মস্কোয় এর আগে বৈঠক করেছেন ভারত এবং চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং চীনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে দু'জনের মধ্যে বৈঠক হয়। সেখানে দুই পক্ষই নিজেদের কূটনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করে। একই সঙ্গে দুই দেশই স্বীকার করে, ভারত এবং চীন বিশ্বের দু'টি শক্তিশালী রাষ্ট্র। নিজেদের মধ্যে সংঘাতের বদলে সুসম্পর্ক রক্ষা করাই তাদের কর্তব্য। বস্তুত, দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকলে দুই পক্ষেরই লাভ বলে স্বীকার করেছেন দুই প্রতিনিধি। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, কিছু কিছু বিষয়ে তাদের মধ্যে বিতর্ক আছে। কিন্তু সীমান্ত সংঘাত তার সমাধান হতে পারে না। পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানসূত্র খুঁজতে হবে।
সূত্র জানাচ্ছে, বৈঠকে ভারত চীনকে বলে, ১৯৯৩ এবং '৯৬ সালে দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল এখন লাদাখ সীমান্তে তা লঙ্ঘিত হচ্ছে। চীন যে ভাবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সেনা এবং যুদ্ধের সরঞ্জাম মজুত করেছে, তা চুক্তির পরিপন্থী। ফলে দ্রুত চীনকে সেনা এবং যুদ্ধাস্ত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বস্তুত, বৃহস্পতিবারই সেনা সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছিল, সীমান্তের ধারে চীন ১৫০ যুদ্ধবিমান এবং সারফেস টু এয়ার মিসাইল এনে রেখেছে।
চীনও বৈঠকে ভারতকে পাল্টা আক্রমণ করে। তাদের দাবি, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারত ফরওয়ার্ড পোস্ট বানিয়ে রেখেছে। ফলে ভারতকে অবিলম্বে সেখান থেকে সেনা সরিয়ে নিতে হবে। চীনের সেনাকে সতর্কবার্তা দিতে ভারত শূন্যে গুলি ছুড়েছে। এ কাজও বন্ধ করতে হবে। ভারত আবার তার জবাবে বলেছে, বর্শা এবং কাঁটাতার লাগানো অস্ত্র নিয়ে চীনের সেনা ভারতীয় সেনাকে মারার চেষ্টা করেছে। প্ররোচনা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
তবে শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষই জানিয়েছে, যুদ্ধ নয়, আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করতে চায় তারা। এবং সীমান্তে এই মুহূর্তে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে, তা কোনও দেশের পক্ষেই কাম্য নয়। ফলে দ্রুত যাতে সেনা পিছিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়, সে দিকে লক্ষ্য রাখা হবে। স্থানীয় স্তরের সীমান্ত সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য ফের সেনা স্তরের বৈঠক হবে বলেও দুই পক্ষ জানিয়েছে।
ভারত-চীন দ্বন্দ্বের কারণ
বার বার সীমান্তে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ভারত ও চীনের সেনা। কেন? ভৌগোলিক-রাজনৈতিক সংঘাতের ইতিহাস একনজরে দেখে নেওয়া যাক।
ছবি: Rouf Bhat/Afp/Getty Images
ভৌগোলিক অবস্থান
ভারত এবং চীনের মধ্যে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে একটি বড় অংশ লাদাখে। বাকি অংশ উত্তর পূর্ব ভারতের সিকিম এবং অরুণাচলে।
ছবি: DW/H. Joshi
সীমান্ত সংঘাত
লাদাখ সীমান্তের একটি বড় অংশে মানুষ বসবাস করে না। এই ভৌগোলিক অঞ্চলকে মূলত আকসাই চীন বলা হয়। ভারত মনে করে আকসাই চীন তাদের অংশ। চীন মনে করে আকসাই চীন তাদের। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পরে যাদের সেনা যেখানে ছিল, সেটাকেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু দুই দেশই নিজেদের এলাকা বাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্যাংগং সমস্যা
১৩৪ কিলোমিটার লম্বা প্যাংগং লেক ১৪ হাজার ফুটে অবস্থিত। নোনতা জলের এই হ্রদকে ঘিরে প্রায় ৭০০ বর্গ কিলোমিটার জমি। প্যাংগংয়ের এক-তৃতীয়াংশ ভারতের দখলে। দুই-তৃতীয়াংশ চীনের। প্রকৃত সীমান্তরেখা এই লেকের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে। ভারতের দাবি, চীন সেই সীমান্তরেখা অগ্রাহ্য করে ভারতের জমি দখল করছে এবং সীমান্তের খুব কাছে রাস্তা বানাচ্ছে। চীনের দাবি, ভারত নিয়ন্ত্রণরেখা মানছে না।
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Karel
গালওয়ান সমস্যা
গালওয়ানের খুব কাছ দিয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা গিয়েছে। চীন তিব্বতের উপর দিয়ে পাকিস্তান পর্যন্ত একটি হাইওয়ে তৈরি করেছে। যাকে কারাকোরাম হাইওয়ে বলা হয়। ভারতের অভিযোগ, ওই হাইওয়ের জন্যই লাদাখের একটি অংশের দখল নিতে চায় চীন। তা করতে পারলে আরও সহজ একটি বাইপাস রাস্তা তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু ভারত তা হতে দিতে চায় না। গালওয়ান সমস্যার মূল কারণ এটিই।
ছবি: Getty Images/AFP/M. Vatsyayana
সিয়াচেন সমস্যা
দারবুক, শাইয়োক হয়ে সিয়াচেন হিমবাহ পর্যন্ত রাস্তা তৈরি করে ফেলেছে ভারত। শুধু তাই নয়, এই অঞ্চলে দৌলত বেগ ওল্ডিতে ১৬ হাজার ৬১৪ ফুট উচ্চতায় বিশ্বের উচ্চতম এয়ার স্ট্রিপ তৈরি করেছে ভারত। এই এয়ার স্ট্রিপ এবং সিয়াচেন পর্যন্ত রাস্তা নিয়ে চীনের আপত্তি আছে।
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Khawer
অরুণাচল সমস্যা
১৯১৪ সালে ব্রিটিশ আমলে উত্তর পূর্ব ভারত এবং তিব্বতের সীমান্ত নির্দিষ্ট হয়েছিল ম্যাকমোহন লাইনের মাধ্যমে। সিমলা চুক্তির মাধ্যমে এই লাইন তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তাতে চীনকে নেওয়া হয়নি। সেই তখন থেকেই অরুণাচল নিয়ে ভারতের সঙ্গে চীনের দ্বন্দ্ব। ১৯৬২ সালের যুদ্ধে অরুণাচল অন্যতম কারণ ছিল। ১৯৯৬ সালে এবং ২০০৬ সালে এই সমস্যার সমাধানে দুই দেশ আলোচনা করেছে। তবে চীন এখনও মনে করে অরুণাচল তাদের।
ছবি: Prabhakar Mani
যুদ্ধ এবং প্রক্সি ওয়ার
সীমান্ত সমস্যার জেরে ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধ হয়েছিল। এরপর সরাসরি দুই দেশের মধ্যে আর কোনও যুদ্ধ হয়নি। কিন্তু ১৯৬৭ সালে সিকিমের নাথু লা-য় দুই দেশের সৈন্য সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৫ সালে অরুণাচলের তুলু লা-তে ফের সংঘর্ষ হয় দুই দেশের সেনার। যদিও কোনওটাই দীর্ঘ সংঘর্ষ বা যুদ্ধের স্তরে পৌঁছয়নি। তবে জুন মাসে গালওয়ানের ঘটনা নজিরবিহীন।
ছবি: DW
7 ছবি1 | 7
বিশেষজ্ঞদের অভিমত
বিশেষজ্ঞদের দাবি, বৃহস্পতিবারের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু এর ফলে লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনা কমবে, এখনই তা মনে করার কারণ নেই। মনে রাখা দরকার, মস্কোয় যখন দুই দেশের বিদেশমন্ত্রী বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ঠিক সে সময়েই ভারতে রাফালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সামনে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, দেশের সার্বভৌমত্ব আক্রান্ত হলে ভারত উচিত জবাব দেবে। চীন ভারতের সার্বভৌমত্বে আঘাত করেছে বলেও প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিয়েছেন রাজনাথ।
বস্তুত, গালওয়ানের ঘটনার পরেও ভারতের এনএসএ অজিত ডোভাল এবং চীনের বিশেষ প্রতিনিধি তথা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছিল। তখনও সীমান্ত থেকে সৈন্য এবং কাঠামো সরিয়ে নেওয়ার প্রসঙ্গে দুই দেশ ঐক্যমত্যে পৌঁছেছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। গালওয়ান অঞ্চলে এক কিলোমিটার পিছিয়ে ছিল চীন। প্যাংগংয়ে ফিংগার পয়েন্ট চার এবং পাঁচের মধ্যবর্তী এলাকা থেকে কিছু কাঠামো সরিয়েছিল। কিন্তু এলাকা থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয়নি। সেপ্টেম্বরে যে স্যাটেলাইট চিত্র পাওয়া গিয়েছে, তাতেও দেখা যাচ্ছে, প্যাংগংয়ের উত্তর প্রান্তে ফিঙ্গার পয়েন্ট পাঁচের পিছনে বিপুল পরিমাণ কাঠামো তৈরি করেছে চীন।
ভারতও ফিঙ্গার পয়েন্ট চারে স্ট্র্যাটেজিক উচ্চতা দখল করেছে। প্যাংগংয়ের দক্ষিণ প্রান্তেও ভারত দু'টি পাহাড় দখল করেছে। যেখান থেকে চীনের সেনার মুভমেন্ট দেখা যায়। যা নিয়ে নতুন করে প্যাংগংয়ের দক্ষিণে দুই তরফের সেনার সংঘাত শুরু হয়েছে।
উচ্চতাই শেষ কথা
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, লাদাখের মতো সীমান্তে উচ্চতা খুব জরুরি বিষয়। পাহাড়ের দখল যে পক্ষের থাকবে, স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে তারা এগিয়ে থাকবে। ভারত-চীন সীমান্তে প্যাংগংয়ের ফিঙ্গার পয়েন্ট অঞ্চলে চীনের এ ধরনের কিছু স্ট্র্যাটেজিক অবস্থান আছে। সে কারণেই ফিঙ্গার পয়েন্ট নিয়ে ভারতীয় সেনার সঙ্গে পিপলস লিবারেশন আর্মির দীর্ঘদিনের বিতর্ক। প্যাংগংয়ের দক্ষিণ অঞ্চলে এবং ফিঙ্গার পয়েন্ট চারে ভারত সম্প্রতি কয়েকটি পাহাড়ে ফরওয়ার্ড পোস্ট তৈরি করেছে। চীন বার বার সেখান থেকে ভারতীয় সেনাকে সরে যেতে বলছে। কূটনৈতিক বৈঠকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা হলেও শেষ পর্যন্ত স্ট্র্যাটেজিক এলাকা ছেড়ে দুই পক্ষের সৈন্য পিছিয়ে যাবে কি না, সেটা একটি বড় প্রশ্ন। সাম্প্রতিক অতীতে তা ঘটেনি। ফলে এ বারেও খুব সহজে তা হবে, এমনটা মনে করছেন না অনেকেই।