দক্ষিণ চীন সমুদ্রে ভারতের যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। চীনের দাবি ভারতকে ওই জাহাজ সরাতে হবে।
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ চীন সমুদ্রে ভারতীয় নৌ বাহিনীর যুদ্ধ জাহাজের উপস্থিতি নিয়ে এ বার সুর চড়ালো চীন। সম্প্রতি ভারত-চীন কূটনৈতিক বৈঠকে এ বিষয়ে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছে চীন। তাদের বক্তব্য, দক্ষিণ চীন সাগরের অধিকাংশ অংশই চীনের। ফলে সেখানে ভারতের যুদ্ধ জাহাজের উপস্থিতি চীন পছন্দ করছে না। তবে ভারতীয় সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত দক্ষিণ চীন সাগর থেকে যুদ্ধ জাহাজ সরানোর কোনও পরিকল্পনা ভারতের নেই।
গত মে মাস থেকে লাদাখ সীমান্তে ভারত-চীন সংঘাত শুরু হয়। জুনে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয়। গালওয়ানে সংঘর্ষে বহু ভারতীয় সেনার প্রাণ যায়। তার পরেই সম্প্রতি দক্ষিণ সাগরে ভারতীয় নৌ সেনার প্রথম সারির যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন করে ভারত। বস্তুত, ২০০৯ সাল থেকেই দক্ষিণ চীন সাগর অঞ্চলে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে ভারত। পেট্রলিং বাড়িয়েছে। তবে গালওয়ান সংঘর্ষের পর খানিকটা আক্রমণাত্মক ভাবেই চীন সাগরে যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে পৌঁছে যায় ভারতীয় নৌ সেনা। যদিও এ বিষয়ে নৌ সেনা বা সরকারের তরফে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য অনুযায়ী, খানিকটা চুপিসারেই ওই অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে ভারত।
দক্ষিণ চীন সাগরে বিভিন্ন দেশের যুদ্ধসজ্জা
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বিতর্কিত এলাকাগুলোর একটি দক্ষিণ চীন সাগর৷ এর আশেপাশে দেশগুলো নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনে বাড়াচ্ছে নৌবাহিনীর শক্তি৷ অন্য সব দেশ মিলে এই এলাকায় যে পরিমাণ খরচ করে, চীন একাই করে তার চেয়ে বেশি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Drake
চীনা নৌবহর
দেশটির প্রথম এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার বা বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ লিয়াওনিং৷ ১৯৮৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে তৈরি হয় এটি৷ ১৯৯৮ সালে এটিকে ভেঙে চীনের কাছে বিক্রি করে ইউক্রেন, তারপর ডাইলিয়ান শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি এটিকে আবার তৈরির কাজ হাতে নেয়৷ ২০১২ সালে নির্মাণ শেষে ২০১৬ থেকে এই জাহাজ যুক্ত হয় চীনা নৌবাহিনীতে৷
ছবি: imago/Xinhua
ভিয়েতনামের ‘ব্ল্যাক হোল’
সম্প্রতি রাশিয়ার কাছ থেকে ছয়টি কিলো-ক্লাস সাবমেরিন পাচ্ছে ভিয়েতনাম৷ এর মধ্যে দুইটি ২০১৭ সাল থেকে আছে দেশটির নৌবাহিনীর সাথে৷ পানির তলদেশে নীরবে চলাচল এবং খুঁজে পাওয়া কঠিন, এ কারণে মার্কিন নৌবাহিনী এই সাবমেরিনের নাম দিয়েছে ‘ব্ল্যাক হোল’৷ এই সাবমেরিন অগভীর পানিতেও চলতে পারে এবং শত্রু জাহাজ বা সাবমেরিন রুখতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে৷
ছবি: Vietnam News Agency/AFP/Getty Images
ফিলিপিন্স মূল শক্তি
ফিলিপিন্স নৌবাহিনীর ফ্ল্যাগশিপের নাম বিআরপি গ্রেগরিও দেল পিলার৷ মার্কিন নৌবাহিনীর তিনটি কোস্ট গার্ড কাটারের একটি পেয়েছে ফিলিপিন্স৷ সর্বপ্রথম এটির ব্যবহার হয় ১৯৬৭ সালে, আধুনিকায়ন হয় ২০১১ সালে৷ ২০১২ সালে দক্ষিণ চীন সাগরের স্কারবরো শোল নিয়ে চীনা নৌবাহিনীর সাথে মুখোমুখি অবস্থানে চলে গিয়েছিল এই জাহাজ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Favila
এশিয়ায় ইউরোপের যুদ্ধজাহাজ
নতুন যুদ্ধজাহাজ কিনে নিজের নৌবাহিনী শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইন্দোনেশিয়া৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে কেআরআই সুলতান হাসানুদ্দিন নামে সিগমা-ক্লাস করভেট৷ ২০০৭ সালে নেদারল্যান্ডসে তৈরি হয় এই জাহাজ৷ জার্মানিও এই অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ সরবরাহ করে৷ মালয়েশিয়ার কস্তুরি-ক্লাস করভেট এবং ব্রুনাইয়ের দারুসসালাম-ক্লাস টহল জাহাজ জার্মানির কারখানায় তৈরি৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Ibrahim
সিঙ্গাপুরের চোরা-জাহাজ
উচ্চপ্রযুক্তির ব্যবহারে এই অঞ্চলে সিঙ্গাপুরের সমতুল্য কেউ নেই৷ ২০০৭ সাল থেকে সিঙ্গাপুর ছয়টি ফরমিডেবল-ক্লাস চোরা-জাহাজ ব্যবহার করে আসছে৷ সহজে অবস্থান সনাক্ত করা যায় না বলে এই ধরনের জাহাজকে চোরা-জাহাজ বলা হয়৷ এর সব কয়টিই তৈরি করেছে ফ্রান্স৷
ছবি: Imago/China Foto Press
এখানেও মার্কিন রণতরী
সত্যিকার অর্থে একমাত্র বৈশ্বিক নৌশক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ প্রশান্ত অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে সপ্তম নৌবহর৷ এতে আছে ৫০-৬০টি জাহাজ, ৩৫০টি যুদ্ধবিমান এবং প্রায় ৬০ হাজার সৈন্য৷ যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অবস্থানরত একমাত্র বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস রোনাল্ড রিগান-ও আছে এই রণতরীতে৷ এর অবস্থান জাপানের ইয়োকোসুকা নৌঘাঁটিতে৷
ছবি: AP
6 ছবি1 | 6
গালওয়ান সংঘাতের পরে ভারত এবং চীনের মধ্যে একাধিক বৈঠক হয়েছে এবং হচ্ছে। সরকারি স্তরে, কূটনৈতিক স্তরে এবং সেনা স্তরে বৈঠক হয়েছে। দুই দেশই লাদাখ সীমান্ত থেকে সৈন্য সরানোর বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছে। কিন্তু সেনা কতদূর পিছোবে, তা নিয়ে ঐক্যমত্য হয়নি। ফলে প্যাংগং, গোগরা হটস্প্রিং অঞ্চল থেকে ভারত এবং চীন কোনও পক্ষই সেনা সরায়নি। এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও পক্ষই কোনও সমাধান সূত্রে পৌঁছতে পারেনি। তবে দফায় দফায় বৈঠক জারি আছে। সূত্র জানাচ্ছে, সাম্প্রতিকতম কূটনৈতিক বৈঠকে নতুন দাবি করে চীন। তাদের বক্তব্য, চীন সমুদ্রে ভারত যে ভাবে যুদ্ধ জাহাজ পাঠিয়ে রেখেছে, তা তাদের পক্ষে মানা সম্ভব নয়। ভারতকে দ্রুত ওই জাহাজ সরাতে হবে। ভারত অবশ্য যুদ্ধ জাহাজ সরানোর বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
আকাশ থেকে লাদাখ
পৃথিবীর অপার সৌন্দর্যের যে অংশকে স্বর্গের কাছাকাছি ভাবা হয় তা হলো লাদাখ৷ পাখির চোখে দেখে নেওয়া যাক সেখানকার দুর্গম পাহাড়ের কিছু ছবি৷
ছবি: DW/S. Ghosh
শুধুই বরফ
দিল্লি থেকে লে-র বিমান রওনা হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে শুরু হয়ে যায় হিমালয় পর্বতমালা।
ছবি: DW/S. Ghosh
শিবালিক আর পিরপাঞ্জাল
প্রথমেই চোখে পড় শিবালিক আর পিরপাঞ্জাল পর্বতমালা। ছবিতে যত দূর চোখ যায়, পুরোটাই ভারতীয় হিমালয়ের অংশ।
ছবি: DW/S. Ghosh
হিমালয়ের দৃশ্য
মুহূর্তে বদলাতে শুরু করল দৃশ্য। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে বিমান। যত দূর দেখা যায়, একের পর এক চেনা অচেনা শিখর।
ছবি: DW/S. Ghosh
যত দুর্গম, তত আলোড়ন
হিমালয়ের এই দুর্গম অঞ্চল ঘিরেই যত সংঘাত। ভারত, চীন, পাকিস্তানের সীমান্ত রয়েছে এই গিরিবর্তের নানা খাঁজে।
ছবি: DW/S. Ghosh
যুদ্ধ সেখানে, যেখানে মানুষ নেই
সিয়াচেন গ্লেসিয়ারেও যুদ্ধ করেছে ভারত-পাকিস্তান। হিমালয় পর্বতমালা ছেড়ে বিমান ঢুকে পড়েছে ট্রান্স হিমালয়। দূরে কারাকোরাম। সেখানেই সিয়াচেন।
ছবি: DW/S. Ghosh
নীল-হ্রদ
১৫ হাজার ফুটে নোনতা জলের হ্রদ। সো মুরারি। লাদাখি ভাষায় সো মানে হ্রদ। সো মুরারি ছেড়ে আর একটু এগিয়ে গেলে প্যাংগং সো। যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে ভারত ও চীনের সেনা।
ছবি: DW/S. Ghosh
লাদাখ-তিব্বত মালভূমি
আমরা ঢুকে পড়েছি লাদাখ-তিব্বতের শীতল মরুভূমিতে। চারিদিক ধূসর। মাঝে মাঝে সামান্য সবুজ। সেখানেই মানুষের বাস।
ছবি: DW/S. Ghosh
আছে শুধু সেনা
এই মনুষ্যবর্জিত ল্যান্ডস্কেপে গাছ নেই, অক্সিজেন খুব কম। তারই মাঝে মাঝে সেনার ছাওনি। যে দেশের সেনা যত বেশি উচ্চতায় থাকতে পারবে, যুদ্ধে তার তত সুবিধা৷
ছবি: DW/S. Ghosh
লাদাখ মানে শান্তি
বিমান পৌঁছেছে লে-র আকাশে। এখন এখানে যুদ্ধের ঘনঘটা। ঘণ্টায় ঘণ্টায় উড়ছে যুদ্ধবিমান। এটা লে-র স্বাভাবিক ছবি নয়। লে মানে শান্তি। সর্বধর্মের সহাবস্থান।
ছবি: DW/S. Ghosh
9 ছবি1 | 9
বস্তুত, শুধু ভারত নয়, দক্ষিণ চীন সাগরে গত কয়েক বছরে অ্যামেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপান তাদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে। সূত্র জানাচ্ছে, ভারতীয় যুদ্ধ জাহাজ লাগাতার মার্কিন যুদ্ধ জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। মহড়াও হচ্ছে। শুধু দক্ষিণ চীন সাগরই নয়, মালাক্কা প্রণালীতেও ভারতীয় নৌ সেনা পর্যাপ্ত যুদ্ধ জাহাজ মজুত রেখেছে। মালাক্কা প্রণালী ভারত মহাসাগর এবং আন্দামান সাগরের যোগসূত্র। বস্তুত, এই অঞ্চলে চীনের নৌ সেনা কোনও রকম কার্যকলাপ চালাচ্ছে কি না, তার দিকে নজর রাখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই বক্তব্য, লাদাখ সংঘাত দ্রুত কাটার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। দুই পক্ষই অনড় মনোভাব দেখাচ্ছে। গত ২৯ অগাস্ট রাতে প্যাংগং অঞ্চলে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ফলে এই পরিস্থিতিতে স্থল সীমান্তে তো বটেই, সমুদ্রেও দুই পক্ষ সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। প্রস্তুতি যত বাড়ছে, বিতর্কও তত তীব্র হচ্ছে।