সোমবার সামরিক অফিসারদের বৈঠকের পরেও লাদাখ সমস্যার সমাধানসূত্র মিলল না। যৌথ বিবৃতিতে সমাধানসূত্র নেই।
বিজ্ঞাপন
এখনও লাদাখ সমস্যার সমাধান সূত্রে পৌঁছনো গেল না। সোমবার ষষ্ঠবারের জন্য লাদাখ নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন ভারত এবং চীনের লেফটন্যান্ট জেনারেল স্তরের অফিসাররা। তাঁদের সঙ্গে এই প্রথম সেখানে হাজির ছিলেন বিদেশমন্ত্রকের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। কিন্তু তার পরেও সমাধানসূত্রে পৌঁছনো গেল না। দীর্ঘ বৈঠকের পরে দুই পক্ষ যে যৌথ প্রেস বিবৃতি দিয়েছে, তাতে সমাধানসূত্রের কোনও উল্লেখ নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত এপ্রিল-মে মাস থেকে লাদাখে ভারত এবং চীনের সেনার মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে গালওয়ান অঞ্চলে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয়। বস্তুত জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং সামরিক পর্যায়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। বরং বেড়েছে।
আকাশ থেকে লাদাখ
পৃথিবীর অপার সৌন্দর্যের যে অংশকে স্বর্গের কাছাকাছি ভাবা হয় তা হলো লাদাখ৷ পাখির চোখে দেখে নেওয়া যাক সেখানকার দুর্গম পাহাড়ের কিছু ছবি৷
ছবি: DW/S. Ghosh
শুধুই বরফ
দিল্লি থেকে লে-র বিমান রওনা হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে শুরু হয়ে যায় হিমালয় পর্বতমালা।
ছবি: DW/S. Ghosh
শিবালিক আর পিরপাঞ্জাল
প্রথমেই চোখে পড় শিবালিক আর পিরপাঞ্জাল পর্বতমালা। ছবিতে যত দূর চোখ যায়, পুরোটাই ভারতীয় হিমালয়ের অংশ।
ছবি: DW/S. Ghosh
হিমালয়ের দৃশ্য
মুহূর্তে বদলাতে শুরু করল দৃশ্য। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে বিমান। যত দূর দেখা যায়, একের পর এক চেনা অচেনা শিখর।
ছবি: DW/S. Ghosh
যত দুর্গম, তত আলোড়ন
হিমালয়ের এই দুর্গম অঞ্চল ঘিরেই যত সংঘাত। ভারত, চীন, পাকিস্তানের সীমান্ত রয়েছে এই গিরিবর্তের নানা খাঁজে।
ছবি: DW/S. Ghosh
যুদ্ধ সেখানে, যেখানে মানুষ নেই
সিয়াচেন গ্লেসিয়ারেও যুদ্ধ করেছে ভারত-পাকিস্তান। হিমালয় পর্বতমালা ছেড়ে বিমান ঢুকে পড়েছে ট্রান্স হিমালয়। দূরে কারাকোরাম। সেখানেই সিয়াচেন।
ছবি: DW/S. Ghosh
নীল-হ্রদ
১৫ হাজার ফুটে নোনতা জলের হ্রদ। সো মুরারি। লাদাখি ভাষায় সো মানে হ্রদ। সো মুরারি ছেড়ে আর একটু এগিয়ে গেলে প্যাংগং সো। যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে ভারত ও চীনের সেনা।
ছবি: DW/S. Ghosh
লাদাখ-তিব্বত মালভূমি
আমরা ঢুকে পড়েছি লাদাখ-তিব্বতের শীতল মরুভূমিতে। চারিদিক ধূসর। মাঝে মাঝে সামান্য সবুজ। সেখানেই মানুষের বাস।
ছবি: DW/S. Ghosh
আছে শুধু সেনা
এই মনুষ্যবর্জিত ল্যান্ডস্কেপে গাছ নেই, অক্সিজেন খুব কম। তারই মাঝে মাঝে সেনার ছাওনি। যে দেশের সেনা যত বেশি উচ্চতায় থাকতে পারবে, যুদ্ধে তার তত সুবিধা৷
ছবি: DW/S. Ghosh
লাদাখ মানে শান্তি
বিমান পৌঁছেছে লে-র আকাশে। এখন এখানে যুদ্ধের ঘনঘটা। ঘণ্টায় ঘণ্টায় উড়ছে যুদ্ধবিমান। এটা লে-র স্বাভাবিক ছবি নয়। লে মানে শান্তি। সর্বধর্মের সহাবস্থান।
ছবি: DW/S. Ghosh
9 ছবি1 | 9
গত ১০ সেপ্টেম্বর মস্কোর অধিবেশনে বৈঠকে বসেছিলেন ভারত এবং চীনের বিদেষশমন্ত্রী। প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠকের পরে তাঁরা পাঁচ পয়েন্টে সমাধানের রাস্তা মিলবে বলে যৌথ ভাবে জানিয়েছিলেন। তারই জেরে সোমবার লাদাখে ভারত-চীন সীমান্তে বৈঠকে বসেন দুই পক্ষের সেনা আধিকারিকরা। এবং সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিদেশমন্ত্রকের আধিকারিকরাও। সূত্র জানাচ্ছে, দীর্ঘ বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। ভারত চীনের বিরুদ্ধে দেশের নাগরিকদের অপহরণের অভিযোগও পর্যন্ত তুলেছে। উল্লেখ্য, কয়েক দিন অরুণাচল থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন পাঁচ জন। পরে অবশ্য চীন তাঁদের ভারতে ফেরতও পাঠিয়ে দেয়।
চীন-ভারত: সামরিক শক্তিতে কে কত এগিয়ে
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সেনাবাহিনীকে বলেছেন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে৷ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী ভারতও প্রস্তুত৷ যুদ্ধ কখনো কাম্য নয়৷ তবু দেখে নেয়া যাক সামরিক শক্তিতে চীন আর ভারতের বর্তমান অবস্থা৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
পিডাব্লিউআর ব়্যাঙ্কিং
সামরিক শক্তির এই ব়্যাঙ্কিংয়ে ভারতের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে আছে চীন৷ যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার ঠিক পরে, অর্থাৎ তিন নাম্বারে আছে চীন আর ভারত আছে চার নাম্বারে৷
ছবি: APTN
সক্রিয় সেনাসদস্য
১৩৮ টি দেশের মধ্যে পিআরডাব্লিউ ইনডেক্সে তৃতীয় স্থানে থাকা চীনের মোট ২১ লক্ষ ২৩ হাজার সেনাসদস্য রয়েছে, ভারতের রয়েছে ১৪ লক্ষ ৪৪ হাজার সেনাসদস্য৷ তবে রিজার্ভ সৈন্যর সংখ্যায় ভারত এগিয়ে৷ চীনের পাঁচ লাখ ১০ হাজারের বিপরীতে তাদের রয়েছে ২১ লাখ রিজার্ভ সৈন্য৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Asfouri
প্রতিরক্ষা বাজেট
প্রতিরক্ষা খাতে চীনের বাজেট ২৩৭০ কোটি ডলারের এবং ভারতের ৬১০ কোটি ডলারের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Goya
এয়ারক্রাফট
এখানেও চীন এগিয়ে৷ চীনের ৩২১০টির বিপরীতে ভারতের রয়েছে ২১২৩টি এয়ারক্রাফট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Li Jianshu
যুদ্ধজাহাজ
চীনের ৭৭৭টি আর ভারতের রয়েছে ২৮৫টি যুদ্ধজাহাজ৷
ছবি: Getty Images/AFP
যুদ্ধবিমান
চীনের যুদ্ধবিমান ভারতের দ্বিগুণেরও বেশি৷ চীনের ১২৩২টি আর ভারতের ৫৩৮টি৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: Imago-Images/StockTrek Images
হেলিকপ্টার
চীনের আছে ৯১১টি হেলিকপ্টার আর ভারতের ৭২২টি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/J. Singh
ট্যাঙ্ক
ভারতের ট্যাঙ্ক চীনের চেয়ে অনেক বেশি৷ চীনের আছে ৩৫০০টি ট্যাঙ্ক আর ভারতের ৪২৯২টি৷ ওপরে চীন, রাশিয়া ও ইরানের যৌথ মহড়ার ছবি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Grits
সাঁজোয়া যান
চীনের সাঁজোয়া যানবাহনের সংখ্যা ৩৩ হাজার, ভারতের আট হাজার ৬৮৬৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/Z. Hesong
স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি
এখানে দু দেশের তুলনাই হয় না৷ চীনের আছে ৩৮০০, ভারতের মাত্র ২৩৫৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
ফিল্ড আর্টিলারি
এখানে ভারত কিছুটা এগিয়ে৷ চীনের ৩৮০০-র বিপরীতে তাদের রয়েছে ৪০৬০টি ফিল্ড আর্টিলারি৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
রকেট প্রজেক্টর
চীনের ২৬৫০, ভারতের ২৬৬৷ সুতরাং এখানে চীন প্রায় দশগুণ এগিয়ে৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
সাবমেরিন
সাবমেরিনের সংখ্যার দিক থেকেও ভারত অনেক পিছিয়ে৷ চীনের ৭৪টির বিপরীতে ভারতের আছে ১৬টি সাবমেরিন৷
ছবি: Reuters/S. Andrade
বিমানবাহী জাহাজ
চীনের ২টি, ভারতের ১টি৷
ছবি: picture-alliance/newscom/S. Shaver
ডেস্ট্রয়ার
চীনের ৩৬টি, অন্যদিকে ভারতের ১০টি৷
ছবি: picture-alliance/Imagechina
ফ্রিগেট
চীনের ৫২, ভারতের তার ঠিক চার ভাগের এক ভাগ, অর্থাৎ ১৩টি৷
ছবি: AFP/Iranian Army office
রণতরি
রণতরি চীনের ৫০টি, ভারতের ১৯টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Asfouri
উপকূলীয় টহল
চীনের ২২০, ভারতের ১৩৯৷
ছবি: picture-alliance/Imaginechina/Meng Zhongde
বিমানবন্দর
চীনের আছে মোট ৫০৭টি বিমানবন্দর আর ভারতের ৩৪৭টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Baker
নৌবন্দর এবং টার্মিনাল
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীন প্রায় সব জায়গার মতো এখানেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশের চেয়ে এগিয়ে৷ চীনের২২টির বিপরীতে তাদের রয়েছে মোট ১৩টি বন্দর ও টার্মিনাল৷
ছবি: picture-alliance/Costfoto/Yu Fangping
ভারতের বহরে রাফাল
২০১৬ সালে ফ্রান্সে গিয়ে রাফাল যুদ্ধ বিমান চুক্তিতে সই করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোট ৩৬টি বিমান ফ্রান্সের থেকে কেনার চুক্তি হয়েছিল। এরমধ্যে বুধবার ভারতে পৌঁছেছে নতুন পাঁচটি যুদ্ধ বিমান। সেগুলোকে লাদাখে পাঠানোর কথা রয়েছে৷ চীন-ভারত সংঘাতের কারণে আপাতত সেখানেই রাখা হবে বিমানগুলিকে। এরপর আসবে হ্যামার মিসাইলও।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Indian Air Force
21 ছবি1 | 21
সোমবারের বৈঠকের শেষে যে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, এমন কিছু করা হবে না, যাতে সমস্যা আরও বাড়ে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এত দিন ধরে লাদাখ সমস্যা চলার পরে, সীমান্তে গুলি চলার পরে এই বিবৃতির কোনও অর্থই হয় না। সত্যি সত্যি সমাধান সূত্রে পৌঁছনো গেলে দুই দেশই জানাতো কী ভাবে সেনা পিছিয়ে নেওয়া হবে। এখনও পর্যন্ত সেই বিষয়ে কোনও দেশই ঐক্যমত্যে পৌঁছতে পারেনি। আর সেনা না পিছোলে লাদাখ সংস্যার আপাতত সমাধানও সম্ভব নয়।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, লাদাখে এই মুহূর্তে দুই দেশের সেনার যা অবস্থান, তা এপ্রিলের পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হলেও দুই দেশের সেনাকে যথেষ্ট আপস করতে হবে। শীতের আগে সে কাজ কোনও দেশই করতে চাইবে বলে মনে করা হচ্ছে না। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ সেনাও ওই এলাকা থেকে ফিরিয়ে নিতে হবে। তাও আপাতত হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করা হচ্ছে না।
সোমবারের বৈঠকের পরে ফের সেনা আধিকারিকরা বৈঠকে বসবেন কি না, সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।