দাওয়ায় বসে রাজু বালার স্বামী, সাথে তিন বছরের মেয়ে৷ উঠানের চুলায় ভাত ফুটছে৷ হঠাৎই শোনা গেল বুটের শব্দ৷ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল ক’জন সেনা৷ এভাবেই ৩ লাখ নারীকে ধর্ষণ করে ওরা, লেখা হয় অন্ধকারের ইতিহাস৷
বিজ্ঞাপন
রাজু বালার কথা
স্বামীকে বাঁচাতে ছুটে যেতেই রাজু বালার কোলের শিশুটিকে ছুড়ে ফেলে দিলো এক পাকসেনা৷ মাটিতে আছড়ে পড়া সেই শিশুকে বুট দিয়ে পিষে ফেললো একজন, যেমন পিষে ফেলে কেউ পোকামাকড়৷ এই দৃশ্য হতভম্ব হয়ে দেখতে দেখতে রাজু বালা টের পেলেন, কয়েকজন মিলে টেনে হিচড়ে তাঁকে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে৷ বাড়ির সামনেই জঙ্গল৷ সেখানে নিয়ে শুরু হলো পাশবিক অত্যাচার৷ ক'জন মিলে সেদিন তাঁকে ধর্ষণ করেছিল, সেটা রাজু বালাকে আর মনে করতে পারেন না৷ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি৷ তবে সেদিন গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে ঘটনাটা দেখেছে যে, সে জানালো ১০ জনের বেশি ছিল তাদের সংখ্যা, সাথে রাজাকারও ছিল সেদিনের সেই পৈশাচিকতায়৷ পাকিস্তানিরা রাজু বালাকে ধর্ষণ করে বিভৎসভাবে৷ কামড়ে তাঁর শরীরের নানা অংশের মাংস তুলে নেয়া হয়৷ সেই দাগ ৪০ বছর পরও আছে রাজু বালার৷ সেই কষ্ট, সেই দুর্বিসহ যাতনা তাঁর কাছে আজও তেমনই তাজা৷
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় স্থাপনা
দীর্ঘ ন’মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার সূর্য উঠেছিল বাংলাদেশে, যাতে ৩০ লাখ নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে পাক বাহিনী৷ প্রাণ বিসর্জন দেওয়া সেইসব শহিদদের স্মরণে দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ ও ভাস্কর্য৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
স্বাধীনতা স্তম্ভ ও স্বাধীনতা জাদুঘর
ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ ও স্বাধীনতা জাদুঘর৷ ১৯৭১-এর ৭ মার্চ এখানে দাঁড়িয়েই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেছিলেন স্বাধীনতা অর্জনের দৃঢ় প্রত্যয়৷৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দলিলও স্বাক্ষরিত হয়েছিল এখানেই৷ স্বাধীনতা স্তম্ভের পাশে আছে বাঙালি জাতিসত্তার অমরতার প্রতীক ‘শিখা চিরন্তনী’৷ স্বাধীনতা স্তম্ভটি বস্তুত ১৫০ ফুট উঁচু একটি গ্লাস টাওয়ার৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
অপরাজেয় বাংলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন চত্ত্বরে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘অপরাজেয় বাংলা’৷ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলার নারী-পুরুষের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং বিজয়ের প্রতীক এই ভাস্কর্যটির স্থপতি সৈয়দ অব্দুল্লাহ খালিদ৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত নিদর্শন ও স্মারকচিহ্নসমূহ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ ঢাকা শহরের সেগুনবাগিচার একটি পুরানো ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়৷ সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য, প্রমাণাদি, নিদর্শন, রৈকর্ডপত্র ইত্যাদি সংগ্রহ করে এখানে রাখা হয়৷ ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে এ জাদুঘর স্থানান্তরিত হয় ঢাকার আগারগাঁও এলাকার নিজস্ব ঠিকানায়৷
ছবি: bdnews24.com/A. M. Ove
বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ
ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের পাশেই শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ৷ ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর দেশের প্রখ্যাত সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে এই স্থানের পরিত্যক্ত ইটের ভাটার পেছনের জলাশয়ে ফেলে রাখে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দোসররা৷ নিষ্ঠুর এই হত্যাকাণ্ড স্মরণীয় করে রাখার জন্য ইটের ভাটার আদলে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয় জায়গাটিতে৷ এর স্থপতি ফরিদ উদ্দীন আহমেদ৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ
ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ৷ ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনী রাজাকার আলবদরদের সহায়তায় এ দেশের সূর্যসন্তান বুদ্ধিজীবীদের নির্বিচারে হত্যা করে৷ তাঁদের স্মরণে ৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর মিরপুরে এ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়৷ এর স্থপতি ফরিদ ইউ আহমেদ ও জামি আল শাফি৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
জাতীয় স্মৃতিসৌধ
ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভারের নবীনগরে জাতীয় স্মৃতিসৌধ৷ স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাণ উৎসর্গকারী শহিদদের স্মরণে ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর প্রথম বিজয় দিবসে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷ স্থপতি সৈয়দ মঈনুল হোসেনের নকশায় এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৮২ সালে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
জাগ্রত চৌরঙ্গী
ঢাকার অদূরে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর চৌরাস্তার সড়কদ্বীপে অবস্থিত৷ ১৯৭৩ সালে নির্মিত এই ভাস্কর্যের স্থপতি আব্দুর রাজ্জাক৷ ডান হাতে গ্রেনেড, বাঁ হাতে রাইফেল, লুঙ্গি পরা, খালি গা, খালি পা আর পেশিবহুল এক মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য এটি৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ
মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের স্মরণে ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর কাছেই এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করেছে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
বিজয় ৭১
ময়মনসিংহের কৃষিবিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘বিজয় ৭১’৷ মহান মুক্তি সংগ্রামে বাংলাদেশের সকল শ্রেণির মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মূর্ত প্রতীক এ সৌধ৷ ভাস্কর্যটিতে একজন নারী, একজন কৃষক ও একজন ছাত্র মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতি রয়েছে৷ ভাস্কর্যটির দেয়াল জুড়ে আছে পোড়া মাটিতে খোদাই করা মুক্তিযুদ্ধের নানান ঘটনাবলী৷ ২০০০ সালে নির্মিত এ ভাস্কর্যের শিল্পী শ্যামল চৌধুরী৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত অন্যতম একটি স্থান মেহেরপুরের মুজিবনগর৷ ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ আম্রকাননে বাংলাদেশের অন্তরবর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করেছিল৷ ১৯৭১ সালের এ ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে ১৯৮৭ সালের ১৭ এপ্রিল সেখানে উদ্বোধন করা হয় এ স্মৃতিসৌধ৷ স্মৃতিসৌধটির নকশা করেন স্থপতি তানভীর করিম৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
সাবাশ বাংলাদেশ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার চত্বরের মুক্তাঙ্গনের উত্তর পাশে অবস্থিত৷ রাকসু এবং দেশের ছাত্রজনতার অর্থ সাহায্যে শিল্পী নিতুন কুন্ডু এই ভাস্কর্য বিনা পারিশ্রমিকে নির্মাণ করেন৷ ১৯৯২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি এর উদ্বোধন করেন শহিদ জননী জাহানারা ইমাম৷ এই স্মৃতিস্তম্ভে আছে দু’জন মুক্তিযোদ্ধার মূর্তি৷ একজন অসম সাহসের প্রতীক, অন্য মুক্তিযোদ্ধার হাত বিজয়ের উল্লাসে মুষ্টিবদ্ধ হয়েছে পতাকার লাল সূর্যের মাঝে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
11 ছবি1 | 11
হামিদা বেগমের কথা
সে সময় সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন হামিদা বেগম৷ মাগরিবের আযান যখন পড়ছে, রান্নাঘরে তখন চার পাকস্তানি সেনা! সাথে এক রাজাকার! স্বামীকে বাইরে গাছের সাথে বেঁধে রেখে তাঁর সামনেই চারজন মিলে ধর্ষম করে তাঁকে! পেটের যে সন্তান তার বয়স তখন সাত মাস৷ যে গর্ভ সন্তানের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা, সেই গর্ভকেই সবচেয়ে কষ্টের বানিয়েছিল পশুরা!! সাত মাসের ছোট্ট মানুষটিকে সেদিন জগতের নির্মমতার কথা বলতে পারেননি, কিন্তু শারীরিক সেই কষ্টের কথা মনে হলে আজও শিউরে উঠেন হামিদা৷ না, বাচ্চাটা মরেনি, বেঁচে ছিল৷ কিন্তু সেই ঘটনার পর স্বামীর পরিবার তাঁকে ত্যাজ্য করেছিল৷ ঘর হারা হামিদা বেগম হয়েছিল সমাজহারাও৷
হালিমার বিবির কথা
হামিদা বেগমের সন্তানটি তবুও তো বেঁচে ছিল৷ কিন্তু হালিমা বিবির সেই সৌভাগ্যও হয়নি৷ ধর্ষণের সময় তাঁর পেটের সন্তানের বয়স ছিল মাত্র পাঁচ মাস৷ ধর্ষণের সেই প্রবল কষ্ট নিতে পারেনি তাঁর শরীর৷ শিশুটি মারা গিয়েছিল গর্ভেই৷ কিন্তু মৃত সেই সন্তানকে পেট থেকে বের করার সুযোগ ছিল না তখন৷ তাই বছরের পর বছর ঋতুস্রাবের সাথে বের হয়েছে সন্তানের টুকুরো টুকরো পঁচে যাওয়া অংশ৷
এমন আরো বহু ঘটেছিল, যার বিভৎসতা হার মানাবে যে কোনো গল্পকে৷ আড়াই থেকে ৩ লাখ নারীকে সে সময় ধর্ষণ করেছিল পাকিস্তানি পশুরা৷ বাবার সামনে, স্বামীর সামনে, এমনকি সন্তানের সামনে লাখো মা-বোনকে সইতে হয়েছে জীবনের সবচাইতে বড় কষ্ট আর অপমান৷
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু দুর্লভ ছবি
সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-র সংগ্রহে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু দুর্লভ ছবি রয়েছে৷
ছবি: AP
উত্তাল মার্চ
১৯৭১ সালের ২৩ শে মার্চ ঢাকার রাস্তায় স্বাধীনতার দাবিতে হারপুন হাতে বিক্ষোভ মিছিল৷
ছবি: AP
যশোরে মুক্তিবাহিনী
২ এপ্রিল ১৯৭১৷ যশোরে মার্চ করছে মুক্তিবাহিনী৷
ছবি: AP
ত্রিপুরায় বাংলাদেশি শরণার্থী
১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল৷ প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে৷ প্রাণ বাঁচাতে ভারতের ত্রিপুরার মোহনপুরের একটি স্কুল ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশিরা৷
ছবি: AP
ভারত সীমান্তের কাছে বাংলাদেশিদের অবস্থান
১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল৷ ভারত সীমান্তের ৩০ মাইলের মধ্যে কুষ্টিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাসহ অনেকেই অবস্থান করছিল৷
ছবি: AP
বেনাপোলের কাছে শরণার্থী শিবির
১৪ এপ্রিল ১৯৭১, যশোরের বেনাপোলের কাছে ভারত সীমান্তে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিল পাঁচ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি৷
ছবি: AP
আহত মুক্তিযোদ্ধা
১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর বোমা হামলায় আহত একজন মুক্তিযোদ্ধাকে চিকিৎসা দিতে নিয়ে যাচ্ছেন বেসামরিক মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধারা৷
ছবি: AP
মুক্তিবাহিনী
১৯৭১ সালের ৩ রা আগস্ট৷ ঢাকার কাছে মুক্তিবাহিনীর সদস্য হেমায়েতউদ্দীন একটি গোপন ক্যাম্প থেকে মেশিনগান তাক করে রেখেছেন৷
ছবি: AP
১৯ বছর বয়সি শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে প্লাটুন
১৩ নভেম্বর ১৯৭১৷ ফরিদপুরে রাইফেল হাতে তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ৷ ৭০ সদস্যের একটি প্লাটুন গড়া হয়েছিল সেখানে৷ সেই প্লাটুন দক্ষিণাঞ্চলে সামরিক ও চিকিৎসা দ্রব্য সরবরাহ করত৷ একদম বামে থাকা ১৯ বছর বয়সি তরুণটি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র৷ ৭০ জনের প্লাটুনের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি৷
ছবি: AP
মুক্তিবাহিনীর পারুলিয়া দখল
১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর৷ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পারুলিয়া গ্রাম দখল করে নেয় মুক্তিবাহিনী৷
ছবি: AP
আখাউড়ায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী
২৯ নভেম্বর, ১৯৭১৷ আখাউড়ায় অস্ত্র পাহাড়া দিচ্ছে পাকিস্তানি সেনারা৷ তাদের দাবি ছিল, ভারতীয় সৈন্যদের কাছ থেকে এসব অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে৷
ছবি: AP
ভারতীয় সেনাদের হামলা
২ ডিসেম্বর, ১৯৭১৷ যশোরে পাকিস্তানি সেনাদের উপর গোলাবর্ষণ শুরু করে ভারত ৷ এক পাকিস্তানি সেনাসদস্য রাইফেল নিয়ে অন্যত্র যাচ্ছে৷ অন্য সেনারা তখন অস্ত্র তাক করে পরিখার মধ্যে রয়েছে৷
ছবি: AP
ভারতীয় সেনা
১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর৷ ভারতীয় সীমান্তের কাছে ডোঙ্গারপাড়ায় খোলা মাঠে মেশিনগান তাক করে রেখেছেন এক ভারতীয় সেনা৷
ছবি: AP
ডিসেম্বরেও ঢাকায় পাকিস্তানি সার্জেন্ট
১২ ডিসেম্বর, ১৯৭১৷ রাজধানী ঢাকার অদূরে একটি এলাকায় একজন পাকিস্তানি সার্জেন্ট দুই সেনাকে নির্দেশনা দিচ্ছে৷
ছবি: AP
যুদ্ধবিরতি
রবিবার ১২ ডিসেম্বর. ১৯৭১৷ ঢাকা বিমানবন্দরে অপেক্ষায় আছেন বিদেশিরা৷ একটি ব্রিটিশ বিমান অবতরণ করেছে৷ ৬ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির সময় বিদেশিদের নিয়ে যাওয়ার জন্যই ঐ বিমানটি পাঠানো হয়েছিল৷
ছবি: AP
ভারতীয় ট্যাংক
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর৷ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ট্যাংক বগুড়ার দিকে রওনা হয়েছে৷
ছবি: AP
চার রাজাকারকে হত্যার পর মুক্তিবাহিনীর প্রতিক্রিয়া
হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা চার রাজাকারকে হত্যার পর আল্লাহ’র উদ্দেশে শুকরিয়া জানাচ্ছেন মুক্তিসেনারা৷
ছবি: AP
16 ছবি1 | 16
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু ঘর হারা, আপনজন হারা, সমাজে অচ্ছুত এইসব মা-বোনের মাথায় হাত রাখলেন৷ বীরাঙ্গনা উপাধী দিয়ে বললেন, তিনিই তাঁদের পিতা৷ তিন বছরের জন্য তাঁদের খাওয়া, বাসস্থান আর লালন-পালনের দায়িত্ব নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু৷ এঁদের স্বাবলম্বী করতে চেয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু অভাগারা আবারো ছায়াহীন হলেন যখন ঘাতকের বুলেট কেড়ে নিয়েছিল তাঁদের পিতা, জাতীর পিতার প্রাণ৷ এরপর কেউ আর তাঁদের খবর রাখেনি তেমন করে৷
অবশেষে বিজয়ের ৪০ বছর পর এইসব বীরাঙ্গনাকে জাতীর পিতার কন্যা স্বীকৃতি দিলেন৷ বলা হলো যে তাঁরা বীরাঙ্গনা নন, তাঁরাও মুক্তিযোদ্ধা৷ স্বীকৃত এইসব বীরাঙ্গনার কথা জানতে সপ্তাহখানেক ঘুরেছি তাঁদের সাথে, সিরাজগঞ্জে৷ ভয়াবহ সব কাহিনি৷ এখনও অনেকের শরীরে রয়েছে সেই বিভৎসতার দাগ৷ মনে আছে সেই ঘটনার ভয়াবহতা৷ চার যুগ পর এই স্বীকৃতিতে অবশ্য দারুণ খুশি তাঁরা৷ সারাজীবনের অপবাদ-অপমান-ধিক্কারের যেন শেষ হয়েছে৷ জীবনের শেষ প্রান্তে এমন এক আনন্দ, এমন এক স্বীকৃতি দিয়েছেন যিনি, সেই শেখের বেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখতে চান তাঁরা৷ হাত ছুয়ে বলতে চান কিছু, জানাতে চান তাঁদের কৃতজ্ঞতা৷
সেই বার্তা আর মনভর্তি অসীম কষ্ট নিয়ে তাঁদের পেছনে ফেলে আসতে হয়েছে আমাকে৷ তবে কথা দিয়েছি, আমার ক্ষুদ্র সমর্থের সবটুক দিয়ে চেষ্টা করবো যাতে তাঁরা একটিবারের জন্য হলেও দেখতে পান তাঁদের শেখের বেটিকে৷ ইতিমধ্যেই দু'বছর হয়ে গেছে সেই প্রতিজ্ঞার৷ আমার সামর্থের গণ্ডির ভেতরই মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর প্রেস উইং৷ সেই পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছি তাঁদের বার্তা৷ কিন্তু কবুতরের পায়ে বাঁধা বার্তার মতোই যেন তা হারিয়ে গেছে কোনো আকাশে৷ এখনও ডাক আসেনি প্রধানমন্ত্রীর৷ এখনও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছায়নি তাঁদের শেষ ইচ্ছার কথা৷ ওদিকে এরই মধ্যে মারা গেছেন দু'জন৷ একটু স্বীকৃতি পেতে লেগেছে ৪০ বছর৷ শেষ ইচ্ছাটা পূরণ হতে কি তাহলে পার হয়ে যাবে গোটা জীবন?
প্রতিদিন কত মানুষই তো প্রধানমন্ত্রীর দেখা পান৷ যাঁরা এই দেশ দিয়েছেন, তাঁদের কি তবে এটুকু অধিকারও নেই? তাঁরা চান শেখ হাসিনা তাঁদের একটিবার বুকে তুলে নিক আর আমি চাই বড় একটি সম্বর্ধনা করে তাঁদের আমাদের কৃতজ্ঞতার কথা জানাতে৷ নিজের সম্মান আর গোটা জীবন দেয়ার কৃতজ্ঞতা, আমাদের স্বাধীন দেশ দেয়ার কৃতজ্ঞতা৷ চাই লাল-সবুজ এক শাড়ি জড়িয়ে দিতে সেই সব শরীরে, যার বিনিময়ে এই পতাকা পেয়েছি আমরা৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চারিদিকের সুকঠিন দেয়াল ভেঙে তাঁদের সেই আকুতি কি কেউ পৌঁছে দেবে?কোনোদিন?
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷